ক্লাউড স্টোরেজ কি? এটি ব্যবহারের সুবিধা কি কি এই ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো। ক্লাউড স্টোরেজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে লেখা টি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ক্লাউড স্টোরেজ কি? (Cloud Storage)
ইন্টারনেট ব্যবকারীদের কাছে টি চেনা জানা শব্দ হলো ক্লাউড স্টোরেজ বা কম্পিউটিং যদিও দুটা মধ্যে একটু আলাদা রয়েছে । ক্লাউড শব্দটি এসেছে নেটওয়ার্কিং এর বিষয় বস্তু থেকে , নেটিওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে দেখা যায় একটি নেটওয়ার্ক অনেক বড় হয়ে থাকে আমরা আকাশের মেঘের দিকে থাকালে অসংখ্য মেঘ দেখতে পাবো যারা একে অপরের সাথে যুক্ত হয়তো এই ধারণা থেকেই ক্লাউড জিনিস টি এসেছে । তো আসল বিষয় হচ্ছে ক্লাউড শব্দটি সাধারণত কোন বিশেষ অনলাইন পরিসেবা কে বুঝানো হয়ে থাকে ।
ক্লাউড স্টোরেজ একটি অনলাইন সার্ভিস যার মাধ্যমে অনালাইনের অসংখ্য ব্যবহারকারী তাদের প্রয়োজনীয় ফাইল গুলো নিরাপদে সংরক্ষণ করতে পারে । অনেকের ধারণা ক্লাউড স্টোরেজ বা ক্লাউড মানেই আমাদের সমস্ত কিছু মেঘের মধ্যে থাকবে কিন্তু তা না ক্লাউড শুধু মাত্র একটি শব্দ যা এসব উন্নত অনলাইন পরিসেবা কে বুঝিয়ে থাকে । আমাদের যেসব ফাইল গুলো থাকে তা আমরা মেঘে জমা রাখি না আসলে এটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক জমা বা স্টোর করা হয়ে থাকে এবং সেই সকল কম্পিউটার কে আমরা বলি থাকি সার্ভার বা সার্ভার কম্পিউটার বা ক্লাউড কম্পিউটিং ।
যে সব কোম্পানি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস সুবিধা টি দিয়ে থাকে তাদের আমরা সার্ভিস প্রোভাইডার বা ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস প্রোভাইডারও বলে থাকি । ক্লাউড স্টোরেজ সেবাদান কারী অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মধ্যে আমরা অনেকেই একটি বা দুটি এর মধ্যে ব্যবহারও করেছি কিন্তু জানি না যে এটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস , কি অবাক হচ্ছেন ! অবাক হওয়া কিছু নাই আপনি আমি বা আমরা অনেকেই গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করেছি গুগল ড্রাইভ ও একটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস । কয়েকটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস কোম্পানির নামঃ- Google Drive, Mediafire, Mega, Dropbox, i cloud, Amazon cloud ইত্যাদি ।
ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহারের সুবিধা !
১। ক্লাউড স্টোরেজ একটি অনলাইন ভিত্তিক সার্ভিস হওয়া তে যেকোন জায়গা থেকে সার্ভিস টি গ্রহণ করা যাবে ।
২। আপনার প্রয়োজনীয় ফাইল গুলো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার রক্ষার্থে ব্যাক আপ হিসাবে ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন ।
৩। আপনার সকল প্রয়োজনীয় ফাইল আপলোড করে এখানে রেখে দিলে হারানোর কোন ভয় নাই । ক্লাউড স্টোরেজ কোম্পানি গুলো আপনার ডাটার আরেকটি কপি ব্যাক হিসাবে রেখে দেয় যেন যাতে আপনার তথ্য গুলো যে হার্ড ডিস্কে আছে তা কোন কারণে নষ্ট হলে পুনরায় আপনাকে দিতে পারে এবং এসব কিভাবে হবে তা আপনি বুঝতে পারবেন না অথচ আপনার ফাইল সুরক্ষিত থাকবে ।
৪। সার্ভিস টি অনলাইন ভিত্তিক হওয়া আপনি একবার আপনার ফাইল গুলো আপলোড করে রাখলে তা প্রয়োজনে যেকোন জায়গা থেকে অ্যাক্সেস করতে পারবেন । এর ফলে আপনার অন্য কোন স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহারের প্রয়োজন হচ্ছে না শুধু ইন্টারনেট কানেকশন থাকলে হবে ।
৫। যেকারো সাথে আপনার ফাইল গুলো শেয়ার করতে পারবেন এবং আপনার যদি কোন গোপনীয় ফাইল থাকে তাহলে সেই গুলো এখানে সুরক্ষিত ভাবে রাখতে পারেন ।
ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ
অনলাইন অনেক ক্লাউড স্টোরেজ কোম্পানি বা অনলাইন ফাইল স্টোরেজ আছে যারা তাদের কোম্পানির প্রচারের জন্য ব্যবহারকারীদের কয়েক জিবি স্পেস ফ্রি দিয়ে থাকে । ক্লাউড স্টোরেজ সিস্টেম টি এতই সুবিধা সম্পন্ন যে লোকে পরে এই সার্ভিস টি কিনেও ব্যবহার করতে দেখা যায় যদিও আমাদের দেশে এমন টা খুব কম হয় বিভিন্ন কারণে । তো চলুন নিচে আমি কয়েক টি ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ সম্পর্কে জানি সংক্ষেপেঃ
১। Google Drive
আমরা প্রায় সবাই গুগল ড্রাইভের সাথে পরিচিত গুগল ড্রাইভও একটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস । গুগল ড্রাইভে আমরা ফ্রি অ্যাকাউন্ট এ ১৫ জিবি পর্যন্ত ডাটা রাখতে পারব । কিন্তু আপনার কি ১৫ জিবি যথেষ্ট মনে হচ্ছে না তাহলে আপনার যদি আরো অন্য কোন জিমেইল অর্থ্যাৎ গুগল অ্যাকাউন্ট থাকে তাহলে আপনি আরো ১৫ জিবি স্পেস পাবেন । গুগলের ক্লাউড সার্ভিস টি নিতে আপনাকে নতুন করে অ্যাকাউন্ট করার প্রয়োজন নাই একটি জিমেইল থাকলে আপনি গুগল ড্রাইভ কেন গুগলের যত সেবা আছে ব্যবহার করতে পারবেন এটাই গুগলের মজা ।
২। Mega.nz
নাম্বার দু ই আমি রেখেছি মেগা কে কারণ এটি একটি ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস যেটি আমার জানা সর্ব্বোচ ফ্রি তে বেশি স্পেস দিচ্ছে । মেগা তে আপনি অ্যাকাউন্ট করলে ফ্রি অ্যাকাউন্টে আপনি পাবেন ৫০ জিবি স্টোরেজ যেটা অনেক এখানে আপনি সহজে আপনার পার্সোনাল ফাইল যেমন ছবি ভিডিও ইত্যাদি রেখে দিতে পারেন এবং তা ৫০ জিবির মধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা । শুধু ৫০ জিবি স্টোরেজ দিচ্ছে তাই না মেগা তে রয়েছে ফাইল প্রটেক্টশনের সিস্টেম ধরুন আপনার একটি ফাইল আছে মেগা তে আপলোড করা এখন ঐ ফাইল টি যে ডাউনলোড লিংক বা শেয়ার লিংক ঐ তে সবাই ঢুকতে পাবে কি পাবেন না সেটি কন্ট্রোল করার সুবিধা রয়েছে । ফাইলের উপর রাইট ক্লিক করলে Get link/Manage link নামে একটি অপশন পাবেন সেটি রয়েছে তিনটা সুবিধা ১ম টি হলো Link without key তে আপনি একটি লিংক পাবেন ফাইল ঐ ফাইল শেয়ার জন্য কিন্তু যখন কেউ ঐ লিংকে ভিজিট করবে তার কাছে Decrypt কি চাইবে সেটা ম্যানেজ লিংক Decryption Key তে পেয়ে যাবেন এটি যাকে আপনি দিবেন সেই ওই লিংকের ফাইল দেখতে বা ডাউলোড করতে পারবে এবং যদি শুধু link with key দিয়ে লিংক যে লিংক পাবেন এটি তে যেকেউ ডাইরেক্ট লিংক ভিজিট করতে পারবে কোন পাসওয়ার্ড বা ডিক্রিপ্ট কী চাইবে না ।
মিডিয়াফায়ার ডট কম একটি জনপ্রিয় ফাইল স্টোরেজ সাইট এখানে সহজেই সবাই ব্যবহার করতে পারবে । মিডিয়াফায়ারের ইন্টারফেস সুন্দর এবং সহজ ফলে যেকেউ বুঝতে পারবে তাদের দেওয়া অপশন গুলো । মিডিয়া ফায়ার ফ্রি তে ১০ জিবি স্পেস স্পেস পর্যন্ত ফ্রি দিয়ে থাকে কিন্তু আপনি একাধিক অ্যাকাউন্ট করার মাধ্যমে স্পেস বাড়াতে পারেন ।
নোটঃ এটি বাংলাদেশে এখন বন্ধ
৪। One Drive
ওয়ান ড্রাইভ মাইক্রো সফট এর একটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস যেখানে ৫ জিবি পর্যন্ত ফ্রি তে ফাইল গুলো রাখতে পারেন । উইন্ডোজ ও মাইক্রোসফট এর উন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ফোনে আগের থেকে ওয়ান ড্রাইভের সফটওয়্যার ইনস্টল করা থাকে যাতে তাদের গ্রাহক সহজেই সেবা গ্রহণ করতে পারে ।
৫। Yandex Disk
Yandex একটি ক্লাউড স্টোরেজ হওয়ার পাশাপাশি একটি সার্চইঞ্জিন,মেইল সার্ভিস,ব্রাউস ইত্যাদি সার্ভিস প্রদান করে থাকে । এখানে আপনি ফ্রি তে ১০ জিবি পর্যন্ত ফ্রি স্পেস পাবেন ।
আশা করি ক্লাউড স্টোরেজ কি? এটি ব্যবহারের সুবিধা জানতে পেরেছেন। এখানে আমি শুধু মাত্র পাঁচটি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস কোম্পানি শেয়ার করেছি যেগুলো আমার কাছে এবং অন্যদের প্রিয়ও ফ্রি মধ্যে । এই পাঁচটি ছাড়াও আরো অনেক ছোট বড় কোম্পানি রয়েছে যারা ফ্রি ও পেইড সার্ভিস প্রদান করে থাকি । আমি যে পাঁচটি সার্ভিস সম্পর্কে বলেছি এই পাঁচটি তেই একজন মানুষের পার্সোনাল ফাইল গুলো রেখেও জায়গা আরো থাকার কথা , এর প্রত্যেক টা তে একটি করে অ্যাকাউন্ট থাকলে আপনি অনেক স্পেস পাবেন ফাইল রাখার জন্য ।
ধন্যবাদ
আরো পড়ুনঃ
মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার 10 টি উপায়।
সি ড্রাইভ ফুল ! কিভাবে সি ড্রাইভের স্পেস বাড়াবেন?
Image credit: Image by Merhan Saeed from Pixabay