বর্তমান এই প্রযুক্তির যুগে যে যন্ত্রটি বাসায়, স্কুলে, ভার্সিটি থেকে অফিস পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে তা হলো কম্পিউটার। কম্পিউটার বিজ্ঞানের চমকপ্রদ এক উপহার। তবে অনেকেই জানেন না যে, কীভাবে কম্পিউটার কাজ করে। আজ আমরা কীভাবে কম্পিউটার কাজ করে তা নিয়ে বিস্তারিত এই লেখায় আলোচনা করব।
লেখার সূচিপত্র
কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে?
কম্পিউটারের নাম শুনলেই চোখে একটি বিরাট স্ক্রিন ও কী – বোর্ডের ছবি ভাসে। আর কম্পিউটারেরর এই সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি কাজ বোঝার ক্ষমতা কখনো কঠিন হয়ে পড়ে। নিচে ধাপে ধাপে কম্পিউটার এর কাজ সম্পর্কে আলোচনা করছি।
কম্পিউটারের সাধারণত তিনটি অংশ এবং সেই ৩টি অংশ আবার বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। এই তিনটি অংশ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যথা:
- ইনপুট ডিভাইস (Input Device)
- সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (Central Processing Unit)
- আউটপুট ডিভাইস (Output Device)
এছাড়া আরও একটি অংশ আছে। তবে সেটাকে অপশনাল ধরা হয়। তার নাম ‘ স্টোরেজ ডিভাইস ‘(Storage Device)।
১. ইনপুট ডিভাইস (Input Device)
প্রথমেই জানি ইনপুট ডিভাইস কি। কম্পিউটারের নির্দেশ দেয়ার জন্য এক ধরনের যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হয়। এই যন্ত্রটি কে ইনপুট ডিভাইস বলা হয়।
ইনপুট ডিভাইস কম্পিউটারের বাইরে তথ্য সমূহ সংগ্রহ করে। তথ্য সংগ্রহ করে দিয়ে যেহেতু কম্পিউটারে একটি নির্দিষ্ট ভাষা আছে, কম্পিউটারের সেই ভাষাতে তথ্যগুলো রূপান্তর করে। অতঃপর সেই তথ্যগুলো রূপান্তরিত করে তা আবার কম্পিউটারের মধ্যে পাঠিয়ে দেয়।
ইনপুট ডিভাইস কীভাবে কাজ করে:
প্রতিটি ইনপুট ডিভাইসের কাজের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে, যা কম্পিউটারের সাথে তথ্য যোগাযোগের কাজ সম্পন্ন করে। সাধারণত, ইনপুট ডিভাইসের কাজের ধাপগুলো হলো:
- তথ্য গ্রহণ: ইনপুট ডিভাইস ব্যবহারকারী থেকে সরাসরি তথ্য বা নির্দেশনা গ্রহণ করে। উদাহরণস্বরূপ, কীবোর্ডে টাইপ করার সময় ব্যবহারকারী যেসব বাটন চাপ দেয়, তা ইনপুট ডিভাইস হিসেবে কীবোর্ড গ্রহণ করে।
- ডেটা রূপান্তর করা: ইনপুট ডিভাইস ব্যবহারকারীর প্রদান করা ইনপুট (যেমন, কী বোর্ডে চাপ দেয়া বা মাউসের ক্লিক) কে কম্পিউটারের ভাষায় (ডিজিটাল ডেটা বা বাইনারি কোডে) রূপান্তর করে। এটি একটি বিশেষ কোডিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যেমন ASCII কোড কীবোর্ডের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়।
- কম্পিউটারে ডেটা প্রেরণ করা: ইনপুট ডিভাইস ডেটা বা নির্দেশনাগুলো কম্পিউটারের প্রসেসিং ইউনিটে পাঠায়, যেখানে CPU সেই ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করে এবং নির্দেশনাগুলো কার্যকর করে।
- ফলাফল প্রদর্শন বা আউটপুট প্রাপ্তি: CPU ডেটা প্রক্রিয়াকরণের পর আউটপুট ডিভাইসে সেই ডেটার ফলাফল প্রদর্শন করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট ডিভাইস:
কী বোর্ড (Key Board)
কম্পিউটারের যে অংশটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় তা হলো কী বোর্ড। এই অংশটি আমরা লেখালেখি, সার্চিং সহ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহার করে থাকি। বিশেষ করে কম্পিউটারের কী বোর্ডের সংখ্যা থাকে ১০৪ টি থেকে ১০৬ টি পর্যন্ত। তবে মাল্টিমিডিয়া টাইপের যে কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করা হয়, তাতে ১২৫ টি পর্যন্ত সংখ্যা থাকে।
কী-বোর্ডের মাধ্যমে আমরা কম্পিউটারে ইনপুট দেই। কী-বোর্ডে যখন টাইপ করে যখন ইনপুট দেই ABC তখনি কেবল মনিটরে এটা দেখা যায়।
মাউস (Mouse)
মাউস অর্থ ইঁদুর। তবে আক্ষরিক অর্থে কম্পিউটারে এটি ভিন্ন কাজ করে। যেহেতু কম্পিউটারের এই অংশটি দেখতে প্রায় একটা ইঁদুরের মতো তাই একে মাউস নামে আখ্যায়িত করা হয়।
আমরা যেমন ফোনে চাইলেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গার স্ক্রিনে টাচ করতে পারি, কম্পিউটারে তা করা যায় না। সেখানে মাউসের সাহায্যে নড়াচড়া করতে হয়। এটি নির্দেশ করার জন্য একটি তীর চিহ্ন থাকে। আপনি একটি বাটনে ক্লিক করতে চাইলে মাউসটা সরিয়ে একটু অন্য জায়গায় নিয়ে আসবেন। যখন মাউসের জন্য তীর চিহ্নটি বাটনের উপর পড়বে তখন মাউসের বাটনে ক্লিক করবেন। এভাবে মাউস কাজ করে। বলা যায়, এটি কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রক।
মাউসের মাধ্যমেই মূলত আমরা কম্পিউটারে আসল ইনপুট দেই। যেমন আমরা কোন সফটওয়্যার আইকনে মাউস দিয়ে ক্লিক করলে চালু হয়ে যায়। এটা হয়, মাউসের কারণেই।
মাউস দুই ধরনের। যথা:
- বল মাউস ( Ball Mouse)
- অপটিক্যাল মাউস (Optical Mouse)
বারকোড রিডার (Barcode Reader)
আমরা বাজার থেকে তো সাধারণত আটা, ময়দা -সুজি কিংবা চিপসের প্যাকেট কিনে থাকি। এসব প্যাকেটের পিছনে আমরা নিশ্চিয়ই বর্গাকার কোন সাদা ঘর দেখেছি। আর তার ভিতরে কালো চিকন অনেক ডিজাইন দেখেছি। এটা মূলত হচ্ছে বার কোড।
এটি এই কারনে থাকে যেখান থেকে সে পন্য সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পরিপূর্ণভাবে দেখা যাবে। কম্পিউটারের বারকোড রিডার এ কারণেই। এটা দিয়ে আপনি যে কোন পন্যের কিছু দেখতে পাবেন।
যেমন আপনি যদি এর সাহায্যে বারকোড স্ক্যান করেন তাহলে সে পন্যের যাবতীয় তথ্য যেমন, এটি কবে উৎপন্ন করা হয়েছে, দাম কত, কত দিন মেয়াদ আছে সব বিস্তারিত দেখতে পাবেন। আর যেহেতু সে ভাষাটিকে পড়া হয়, তাই একে বারকোড রিডার বলে।
এই যন্ত্রটি দিয়েও কম্পিউটারে ইনপুট দেয়া হয়।
স্ক্যানার (Scanner)
স্ক্যানার হলো একটি ইনপুট ডিভাইস, যা ছবি, ডকুমেন্ট, বা অন্য কোনো ফিজিক্যাল অবজেক্টকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তর করে কম্পিউটারে ইনপুট হিসেবে পাঠায়। এটি মূলত কোনো হার্ডকপি ডকুমেন্ট বা ছবির সঠিক ডিজিটাল কপি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। স্ক্যানার সাধারণত ইমেজ বা টেক্সট ফাইল হিসেবে সেই তথ্যকে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে।
জয়স্টিক (Joystick)
জয়স্টিক (Joystick) হলো একটি ইনপুট ডিভাইস, যা মূলত কম্পিউটার গেম খেলার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একটি লিভার বা স্টিকের মতো ডিভাইস, যা ব্যবহারকারী বিভিন্ন দিকনির্দেশনা (উপরে, নিচে, ডানে, বামে) দিতে পারে। এটি ব্যবহারকারীর নির্দিষ্ট অ্যাকশন বা কমান্ড অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করে, বিশেষত গেমিং এবং সিমুলেশন অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে।
২. সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (Central Processing Unit)
ইনপুট ডিভাইসের সাহায্যে কিছু নির্দেশনা প্রসেস করতে হয়, আর সে তথ্য একটু পর আউটপুট ডিভাইসের সাহায্যে ফলাফল দেখয়। এই সম্পূর্ন কাজটি একটি যন্ত্রাংশ করে থাকে। এটাকেই বলা হয় সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট। একে সংক্ষেপে সিপিইউ ( CPU ) বলা হয়।
CPU কীভাবে কাজ করে:
- ইনপুট ডিভাইস থেকে তথ্য গ্রহণ: প্রথমে, ইনপুট ডিভাইস (যেমন কীবোর্ড, মাউস) থেকে CPU তথ্য গ্রহণ করে।
- তথ্য ডিকোড করা: CPU সেই তথ্য ডিকোড করে বুঝে, কোন নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
- গণনা বা লজিক্যাল অপারেশন করা: ALU তথ্য প্রসেস করে, যা গাণিতিক বা লজিক্যাল অপারেশন হতে পারে।
- আউটপুট প্রদান বা মেমোরিতে সংরক্ষণ: CPU প্রক্রিয়াকৃত তথ্য আউটপুট ডিভাইসে পাঠায় অথবা প্রয়োজনে মেমোরিতে সংরক্ষণ করে।
৩. আউটপুট ডিভাইস (Output Device)
কম্পিউটারের যে প্রসেসিং ইউনিটের সমস্যা সমাধান করার পরে তার আবার ফলাফল পাঠানো হয়, সে ফলাফল যে যন্ত্রাংশের কারনে প্রদান করা সম্ভব হয় তাকে বলা হয় আউটপুট ডিভাইস। এটাই আউটপুট ডিভাইসের কাজ। এর উদাহরণ গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
আউটপুট ডিভাইসের কাজ:
আউটপুট ডিভাইসের প্রধান কাজ হলো সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (CPU) থেকে প্রক্রিয়াকৃত তথ্য বা ডেটাকে ব্যবহারকারীর কাছে উপস্থাপন করা। এটি হতে পারে দৃশ্যমান আকারে (যেমন স্ক্রিনে লেখা বা ছবি), প্রিন্ট করা কাগজ বা শব্দ আকারে (যেমন স্পিকারের মাধ্যমে অডিও)।
মনিটর (Monitor)
মনিটরকে ‘Video Display Unit’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সকল কম্পিউটারের জন্যই। মনিটরের স্ক্রীনে এসময় সাদাকালোও হতে পারে আবার রঙিনও হতে পারে। এসময় মনিটরের যে স্ক্রীন সেখানে আমরা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিটের দেয়া সেই নির্দেশনা ও তথ্যের সাথে ফলাফল দেখা যায়।
এখনকার সময়ে আপনি মার্কেটে দুই ধরনের মনিটর দেখতে পাবেন। একটি হলো এল ই ডি মনিটর ও আরেকটি এল সি ডি মনিটর। তবে এল ই ডি মনিটর বেশি ভালো। এটি পাতলা হয়। তাই সহজে বহনযোগ্য। এটি কেনাই উত্তম। তবে এটি দামীও হয়। আর এল ই ডি মনিটরে আপনি ৩৬০° হিসেবে কোনো ছবিকে ভালোভাবে দেখতে পাবেন না। তাছাড়া কোনো ছবিই খুব একটা স্পষ্ট আসে না (মাঝেমাঝে)।
প্রিন্টার
কম্পিউটারের আর একটি আউটপুট ডিভাইসের অংশ হলো প্রিন্টার। এর সাহায্যে আপনি যেকোনো ছবি বা ডকুমেন্টস প্রিন্ট করতে পারেন। প্রিন্ট করা বলতে এখানে ছাপানোকে বোঝায়। আপনি কম্পিউটারে প্রিন্ট করার জন্য কোনো এক সাইজের কাগজ নির্ধারণ করবেন। এরপর নির্দিষ্ট কোনো পেপার, ছবি বা ডকুমেন্টস সিলেক্ট করে প্রিন্ট করে নেবেন। এটাকে বলে প্রিন্ট আউট। প্রিন্টার কিভাবে কাজ করে?
এখানে প্রিন্টিং সিস্টেমও দুই ধরনের-
- ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার (Impact Printer)
- নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার (Non Impact Printer)
সাউন্ড বক্স স্পিকার (Sound Box Speaker)
এটিও এক ধরনের আউটপুট ডিভাইস। এর সাহায্যে অনেক কিছু করা যায়। এখন অ্যানিমেশনের যুগ। আবার, মাল্টিমিডিয়ার বিচরনও এখন সবক্ষেত্রে। এর সাহায্যে আমরা গান শুনতে পারি। তাছাড়া যে কোনো ধরনের আওয়াজই আপনি শুনতে পারবেন স্পিকার এর সাহায্যে। আপনি যেকোনো অডিও বা ভিডিও এর সাহায্যে শুনতে পারেন।
৪. স্টোরেজ ডিভাইস (Storage Device)
RAM
আপনি যখন কোনো তথ্য ইনপুট করতে যাবেন সে সময় থেকে প্রসেসর কাজ করার সময় পর্যন্ত একটি জিনিস অস্থায়ী মেমোরি হিসেবে কাজ করে। আর এটিই RAM। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন কোনো প্রোগ্রাম চালান (যেমন ব্রাউজার, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, বা গেম), তখন সেই প্রোগ্রামের ডেটা এবং ইনস্ট্রাকশনগুলো RAM-এ সংরক্ষিত হয়, যাতে CPU সেগুলো দ্রুত এক্সেস করতে পারে।
হার্ড ড্রাইভ (Hard Drive)
এটি দীর্ঘমেয়াদী মেমোরি, যেখানে ডেটা স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি কোন ছবি, গান বা মুভি ডাউনলোড করে অনেক দিন রাখতে চান। সেই রাখার কাজটা হার্ড ড্রাইভ করে থাকে।
পরিশেষে
এই ছিল কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। যদি কোন বিষয় বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।