জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম, খতিয়ান বের করতে কি কি লাগে, খতিয়আনে কি কি উল্লেখ থাকে ও খতিয়ানের ধরন নিয়ে আলোচনা করা হলো-
লেখার সূচিপত্র
জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম
জমির মালিকানার তথ্য জানতে জমির খতিয়ান প্রয়োজন হয়। আপনার সুবিধা অনুযায়ী দুইটি পদ্ধতিতে জমির খতিয়ান বের করতে পারবেন।
(১) আপনার স্থানীয় উপজেলা ভূমি অফিস কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জমির অবস্থান ভেদে ঠিকানা ও দাগ নম্বরের সঠিক তথ্য দিয়ে জমি খতিয়ান বের করতে পারবেন।
(২) বর্তমান ডিজিটাল ভূমি সেবা কার্যক্রম চালু থাকায় সরকারি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.eporcha.gov.bd থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে জমির খতিয়ানের সকল তথ্য দেখতে পাবেন। এবং অনলাইনে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করে স্বল্প খরচে তা সংগ্রহ করতে পারবেন।
খতিয়ান কি?
সরকারি জরিপ অনুযায়ী জমির মালিকানা প্রমাণের সরকারি দলিল হলো খতিয়ান। প্রায় ২০-৩০ বছর পর পর বাংলাদেশের সকল জমির পরিসংখ্যান করা হয়। সেই পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ফরম নং ৫৪৬২ (সংশোধিত)- এ জমির মালিকানা, দখলদার ও দাগ নম্বর এর বর্ণনা সহ একটি নথিচিত্র প্রণয়ন করা হয়। সেই নথিচিত্রকে খতিয়ান বা পর্চা বলে।
খতিয়ান একটি জমির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। জমির মূল মালিকানা জানতেও প্রয়োজন হয় খতিয়ানের। বিভিন্ন এলাকাতে একে বিভিন্ন নামে চেনা হয়।
খতিয়ান বের করতে কি কি লাগে
জমির খতিয়ান বের করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে হয়। এছাড়াও খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে পেমেন্ট পরিশোধের তথ্য দিতে হয়। আবেদন শুরুর পূর্বেই প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সংগ্রহ করে নিন-
- জমির অবস্থান অনুযায়ী বিভাগ, জেলা, উপজেলা, মৌজার তথ্য।
- জমির দাগ নং/ মালিকানার নাম।
- কোন ধরনের খতিয়ান দেখতে চান তার নাম জানা থাকতে হবে। যেমন-(বি এস, সি এস, বি আর এস নাকি আর এস ইত্যাদি)।
- ভেরিফিকেশনের জন্য মোবাইল নাম্বার।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য।
- খতিয়ানের সার্টিফাইড কপির ফি পরিশোধ করার জন্য উপায়/ ekPay অ্যাকাউন্ট।
উপরোক্ত তথ্যগুলো আপনার কাছে থাকলে অনলাইনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম অনুসরণ করে খতিয়ান সংগ্রহ করতে পারবেন।
জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম
অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার জন্য আপনাকে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের যেকোন একটি ব্রাউজার ওপেন করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.eporcha.gov.bd– এ প্রবেশ করতে হবে। তারপর খতিয়ান বের করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন-
ধাপ-১: খতিয়ান অনুসন্ধান ফরমে প্রবেশ
ই-পর্চা সাইটে প্রবেশ করলে হোমপেজে বেশ কিছু ভূমি সেবার অপশন দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আপনার প্রয়োজনীয় খতিয়ান অনুসন্ধান অপশন এ ক্লিক করুন। পরবর্তী পেজে খতিয়ানের তথ্য অনুসন্ধান ফর্ম দেখতে পাবেন।
ধাপ-২: খতিয়ান অনুসন্ধান ফরমের তথ্যপূরণ
১. খতিয়ান অনুসন্ধান ফরমে জমির অবস্থান অনুযায়ী বিভাগ ও জেলা পর্যায়ক্রমে ড্রপডাউন মেনু থেকে সিলেক্ট করুন।
২. তারপর, আপনি কোন ধরনের খতিয়ান দেখতে চান তা খতিয়ানের টাইপ নির্বাচন করুন অপশন থেকে বাছাই করুন। এখানে বিভিন্ন প্রকার পর্চা/খতিয়ান, যেমন- বি এস, সি এস, বি আর এস, আর এস, এস এ, পেটি, দিয়ারা, নামজারি ইত্যাদি খতিয়ানের তথ্য জানতে পারবেন।
৩. এবার জমির অবস্থান অনুযায়ী উপজেলা ও মৌজা সিলেক্ট করুন। আপনার জমির মৌজা সম্পর্কে পূর্বেই জেনে নিন।
৪. জমির খতিয়ান নং / দাগ নং / মালিকানা নাম / পিতা বা স্বামীর নাম দিয়ে খতিয়ানের তথ্য অনুসন্ধান করতে পারবেন। তবে মালিকানা নাম এবং পিতা বা স্বামীর নাম দিয়ে তথ্য অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই খতিয়ান নং ও দাগ নং জেনে যেকোনো একটি এখানে লিখুন।
৫. সর্বশেষ নিচে একটি ক্যাপচা দেখতে পাবেন। সেখানে থাকা সংখ্যাগুলো পাশের বক্সে পূরণ করুন এবং ‘অনুসন্ধান করুন’ বাটনে ক্লিক করুন।
আপনার দেওয়া সকল তথ্য সঠিক হলে উপরোক্ত জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম অনুসরণ করে নির্দিষ্ট খতিয়ানের তথ্য দেখতে পাবেন।
ধাপ-৩: জমির খতিয়ানের নমুনা
আপনার জমির খতিয়ানে নিজের ছবির মত মালিকানা সকল তথ্য ও দাগ নম্বর উল্লেখ থাকবে-
এখান থেকে জমির খতিয়ানের অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে পারবেন। তবে সার্টিফাইড কপি ব্যতীত অনলাইন কপিটি কোন স্থানে জমির মালিকানা প্রমাণস্বরূপ ব্যবহার করতে পারবেন না।
খতিয়ানের তথ্য পেজের নিচের ‘আবেদন করুন’ লেখাটিতে ক্লিক করে জমির খতিয়ানের সার্টিফাইড কপির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
খতিয়ানের সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন
খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার জন্য আবেদন ফরমে প্রবেশ করলে উপজেলা, মৌজা ও খতিয়ান নং এর তথ্য দেখতে পাবেন। এবার নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন-
ধাপ-১: আবেদনকারীর তথ্যাবলী প্রদান
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নং ও জন্মতারিখ সঠিকভাবে লিখুন।
- ভেরিফিকেশন এর জন্য একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিন।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সম্পূর্ণ নাম ইংরেজিতে লিখুন।
- নিচে আবেদনকারীর ঠিকানার বিস্তারিত তথ্য দিন। ঠিকানার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক যোগাযোগের বিবরণ দিতে হবে। খতিয়ানের সার্টিফিকেট কপি এই ঠিকানাতেই প্রেরণ করা হবে।
- প্রয়োজনে একটি ইমেইল দিতে পারেন, এটি অপশনাল।
ধাপ-২: মোবাইল ভেরিফিকেশন
মোবাইল নম্বরের পাশেই- যাচাই করুন বাটনটিতে ক্লিক করলে আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে। তা পূরণ করে ভেরিফাই করে নিন। মোবাইল ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গত এক মাসে এই সাইটে ব্যবহৃত হয়নি এমন নাম্বার প্রদান করতে হবে। একটি নম্বর দিয়ে মাসে সর্বোচ্চ ১ বার ভেরিফাই করা যায়।
ধাপ-৩: আবেদনের তথ্যপূরন
আবেদনের ধরন অপশনে- সার্টিফাইড কপি সিলেক্ট করা থাকবে।
- ডেলিভারি নেওয়ার মাধ্যম হিসেবে ডাকযোগে নির্বাচন করুন।
- ডেলিভারি স্থান দেশের অভ্যন্তরে নাকি দেশের বাইরে তা সিলেক্ট করুন।
- উপায় এবং ekPay এ দুটি পেমেন্ট অপশন থেকে আপনার পছন্দমত একটি সিলেক্ট করুন।
- সর্বশেষ, নিচে একটি ক্যাপচা দেখতে পাবেন। এখানে গাণিতিক সমস্যার সমাধান (যোগফল/বিয়োগফল) প্রদান করে- ‘পরবর্তী ধাপ (পেমেন্ট)’ বাটনটিতে ক্লিক করুন।
ধাপ-৪: পেমেন্ট পরিশোধ
আপনার সিলেক্ট করার মাধ্যম টিতে অনলাইনে পেমেন্ট পরিশোধ করতে পারবেন। পরবর্তীতে আপনাকে সিলেক্ট করা পেমেন্ট মডিউলে নিয়ে যাবে। খতিয়ানের সার্টিফাইড কপির অনলাইন আবেদনের ফি ৫০ টাকা তবে সর্বমোট খরচ মিলিয়ে ৯০ টাকা ফ্রি পরিশোধ করতে হয়।
ফি আদায়ের পর আপনার জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম সম্পন্ন হবে। তারপর সর্বোচ্চ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার জমির খতিয়ানের সার্টিফিকেট কপি স্থানীয় ডাক যোগাযোগের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবেন।
খতিয়ানে কি কি তথ্য উল্লেখ থাকে
জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম অনুযায়ী পাওয়া খতিয়ানের অনলাইন কপি বা সার্টিফাইড কপিতে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো উল্লেখ করা থাকে-
- জমির মালিকানার নাম, জমি দখলদারের নাম ও ঠিকানা।
- দখলদারের পিতার নাম, ঠিকানা ও দখলদার কোন শ্রেণীভুক্ত তা উল্লেখ থাকে।
- মালিকানা ভিত্তিতে জমির অবস্থান, পরিমান ও সে অনুযায়ী সীমানার তথ্য থাকে।
- খতিয়ান তৈরীর সময় যে পরিমাণ খাজনা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা উল্লেখ থাকে।
- পরবর্তীতে খাজনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া কিভাবে হবে তা।
- যে পদ্ধতিতে খাজনা নির্ধারণ করা হয়েছিল তার বিস্তারিত।
- যারা যারা জমি হলে সে ক্ষেত্রে মালিকের অধিকার সম্পর্কিত তথ্য।
- প্রজাস্বত্বের শর্তসমূহ ও বিধি-বিধান।
- জমির মাঝে চলাচলের পথ থাকলে তার তথ্য।
জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম অনুযায়ী আপনি উপরোক্ত তথ্যগুলো খতিয়ানে দেখতে পাবেন।
খতিয়ানের ধরন
খতিয়ার কয়েক ধরনের হতে পারে। বর্তমানে সবচেয়ে ব্যবহৃত খতিয়ান গুলো হলো-
- বি এস খতিয়ান
- আর এস খতিয়ান
- সি এস খতিয়ান
- বি আর এস খতিয়ান
এসব খতিয়ানের মালিকানার তথ্যই উল্লেখ করা থাকে। তবে একেক সময় এ সকল খতিয়ান গুলোর জরিপ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তাই এগুলোর তথ্যভিত্তিক গুরুত্বও বিভিন্ন হয়ে থাকে।
পরিশেষে
উপরোক্ত জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম অনুযায়ী আপনার মোবাইল ব্যবহার করেই অনলাইনে আপনার জমির মালিকানা তথ্য জানতে পারবেন।