বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সির একটি বহুল পরিচিত নাম। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এখনও বুঝতে পারে না এটি কী। ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে নিচে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হল।
লেখার সূচিপত্র
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি?
ধরা যাক, আপনি আপনার বন্ধুকে কিছু টাকা পাঠাতে চান। যদি আপনি গতানুগতি সিস্টেমে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে চান। তাহলে এই ক্ষেত্রে, ব্যাংক তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করে।
ব্যাংক আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে আপনার বন্ধুর অ্যাকাউন্টে জমা করে দেয়। ব্যাংক এখানে লেনদেনের মধ্যস্থতা করে এবং নিশ্চিত করে যে আপনি এই একই টাকা অন্য কাউকে আরেকবার পাঠাতে পারবেন না।
এখন, যদি আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করেন, তাহলে লেনদেনের জন্য কোনো ব্যাংকের প্রয়োজন হবে না। কারণ এখানে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ব্লকচেইন হলো এক ধরনের ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার (distributed ledger), যেখানে লেনদেনের তথ্য ব্লক আকারে সংরক্ষিত হয় এবং প্রতিটি ব্লক একটির পর একটি চেইনের মতো যুক্ত থাকে।
আপনি যদি আপনার বন্ধুকে ১ বিটকয়েন পাঠাতে চান, তাহলে আপনার ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে তার ওয়ালেট ঠিকানায় বিটকয়েন পাঠাবেন। এই লেনদেনটি তখন ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে রেকর্ড হবে। ব্লকচেইনের হাজার হাজার নোড (কম্পিউটার) এই লেনদেনটি যাচাই করবে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আপনি সত্যিই তাকে ১ বিটকয়েন পাঠিয়েছেন। ফলে এ একই বিটকয়েন পুনরায় ব্যবহার করার সুযোগ নেই (এটি “double-spending” সমস্যা সমাধান করে)।
এই যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার পরে, লেনদেনটি একটি নতুন ব্লকে সংরক্ষণ করা হয় এবং এটি ব্লকচেইন চেইনের সাথে যুক্ত হয়। একবার ব্লকচেইনে রেকর্ড হয়ে গেলে, এটি পরিবর্তন বা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। ফলে হ্যাকাররাও এই তথ্য পরিবর্তন করতে পারবে না।
বইয়ের ভাষায়
ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো একটি ডিজিটাল মুদ্রা, যা লেনদেন নিশ্চিত করতে কোনো ব্যাংক বা তৃতীয় পক্ষের উপর নির্ভর করে না। ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে, লেনদেনের তথ্য ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়।
শুরুতে আপনার নিকট জটিল মনে হতে পারে, তবে একবার বোঝার পর এটি সহজ হয়ে যাবে। বর্তমানে হাজার হাজার ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে, প্রতিটির মূল্য আলাদা। অনেকটা টাকা, ডলার, রিয়েল, পাউন্ডের মত। প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি ছিল বিটকয়েন, যা ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো নামে একজন প্রোগ্রামার তৈরি করেছিলেন।
২০০৮ সালে নাকামোতো একটি “whitepaper”-এ ব্লকচেইনের মাধ্যমে “peer-to-peer electronic cash system” এর ধারণা তুলে ধরেন। ব্লকচেইন প্রযুক্তি এমনভাবে কাজ করে, যা ক্রিপ্টোকারেন্সিকে ব্যাংক বা তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন ছাড়াই লেনদেন করা যায়, ঠিক ফিয়াট মুদ্রার মতো।
বিশেষ করে, ব্লকচেইন “double-spending problem” সমাধান করে, যেখানে একই ডিজিটাল মুদ্রা একাধিকবার খরচ করা সম্ভব নয়।
সাধারণ ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা লেনদেনের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক লেনদেনের বৈধতা নিশ্চিত করে, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে তা ব্যাংক ছাড়াই সম্ভব হয়। ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে লেনদেনগুলো যাচাই করা হয় এবং একবার নিশ্চিত হলে তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এটি লেনদেনকে নিরাপদ রাখে এবং হ্যাকারদের প্রতারণা ঠেকায়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে কাজ করে?
ক্রিপ্টোকারেন্সি কীভাবে কাজ করে তা সহজভাবে বোঝানোর জন্য, আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব: মাইনার এবং লেনদেন সিস্টেম।
ক্রিপ্ট মাইনার
মাইনাররা হল সেই ব্যবহারকারীরা, যারা ব্লকচেইনের লেনদেন যাচাই করে। যখন আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন করেন, তখন সেই লেনদেনটি যাচাই করার জন্য মাইনারদের একটি নেটওয়ার্ক প্রয়োজন হয়। মাইনাররা পাওয়ারফুল কম্পিউটারের সাহায্যে লেনদেনগুলোকে যাচাই করে।
লেনদেন প্রক্রিয়া
- লেনদেন শুরু: আপনি যখন কারও কাছে ক্রিপ্টোকারেন্সি পাঠান। তখন আপনার ডিজিটাল ওয়ালেট সেই লেনদেনের তথ্য, ব্লকচেইনে প্রেরণ করে। লেনদেনটি নিরাপদ করতে, প্রাইভেট কী (Private Key) ব্যবহার করে লেনদেনটি এনক্রিপ্ট করা হয়।
- পাবলিক কী দিয়ে যাচাই: মাইনাররা আপনার লেনদেনটি যাচাই করতে পাবলিক কী (Public Key) ব্যবহার করে। তারা দেখে যে, আপনার প্রাইভেট কী (Private Key) টি সঠিকভাবে লেনদেন এনক্রিপ্ট করতে ব্যবহৃত হয়েছে কিনা। এটি নিশ্চিত হওয়ার পর মাইনাররা লেনদেনটি ব্লকচেইনে যুক্ত করে।
- লেনদেনটি ব্লকে সংরক্ষণ: একবার লেনদেন যাচাই হয়ে গেলে, তা একটি ব্লকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ব্লকটি ব্লকচেইনের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেখানে আগের সব লেনদেনের তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
- ব্যালেন্স আপডেট: যখন আপনার লেনদেনটি ব্লকচেইনে যুক্ত হয়, তখন আপনার এবং যার কাছে আপনি ক্রিপ্টো পাঠিয়েছেন, উভয়ের ব্যালেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হয়ে যায়। আপনি কত পাঠালেন এবং গ্রহীতা কত পেল, তা ব্লকচেইনে স্পষ্টভাবে রেকর্ড থাকে।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি সফ্টওয়্যার এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়। লেনদেনের প্রতিটি ধাপ, যাচাই থেকে শুরু করে ব্যালেন্স আপডেট হওয়া পর্যন্ত, কোনো মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই সম্পন্ন হয়।
কেন এটিকে ব্লকচেইন বলা হয়?
ব্লক হলো ব্লকচেইনের মূল উপাদান। সহজভাবে বললে, ব্লক হলো একটি ডেটা প্যাকেট বা তথ্যের সংগ্রহ। প্রতিটি ব্লক ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের তথ্য ধারণ করে। ব্লকগুলোর মাধ্যমে এই লেনদেনের তথ্য ব্লকচেইনে সংরক্ষিত হয়।
ব্লকের ভিতরে কী থাকে?
একটি ব্লকের ভেতরে প্রধানত তিনটি জিনিস থাকে:
- লেনদেনের তথ্য (Transaction Data): প্রতিটি ব্লকে সেই সময়ে হওয়া লেনদেনের রেকর্ড থাকে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ১ বিটকয়েন কাউকে পাঠান, তাহলে সেই তথ্য ব্লকে সংরক্ষিত হবে—আপনি কাকে পাঠিয়েছেন, কত পাঠিয়েছেন, এবং কখন পাঠিয়েছেন।
- ব্লকের হ্যাশ (Hash): এটি এক ধরনের ডিজিটাল সিগনেচার যা ব্লককে আলাদা করে। আপনি যদি ব্লকের কোনো তথ্য পরিবর্তন করেন, তাহলে এর হ্যাশও পরিবর্তিত হবে, যার ফলে এটি সহজেই শনাক্ত করা যায় যে তথ্য পরিবর্তন হয়েছে এবং কে করেছে।
- পূর্ববর্তী ব্লকের হ্যাশ (Previous Block’s Hash): প্রতিটি ব্লক তার আগের ব্লকের হ্যাশ ধারণ করে, যা ব্লকগুলিকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে। এটি ব্লকগুলোকে একটি চেইনের মতো লিঙ্ক করে রাখে।
ধরা যাক, আপনি ১ বিটকয়েন পাঠালেন এবং আপনার এই লেনদেনটি একটি ব্লকে রেকর্ড হলো। এই ব্লকটিতে আপনার লেনদেনের তথ্য থাকবে এবং তার সাথে সাথে এই ব্লকের জন্য একটি ইউনিক হ্যাশ তৈরি হবে।
এরপর, যখন আপনার বন্ধুও অন্য কারো কাছে বিটকয়েন পাঠাবে, তখন সেই নতুন লেনদেনটি একটি নতুন ব্লকে রেকর্ড হবে, এবং সেই ব্লকটি আপনার ব্লকের হ্যাশ সেভ করবে, যেন বোঝা যায় এটি আগে ছিল। এইভাবে ব্লকগুলো একটির সাথে আরেকটি যুক্ত হয়ে একটি চেইন তৈরি করে, যেটিকে আমরা ব্লকচেইন বলি।
কেন ব্লক গুরুত্বপূর্ণ?
ব্লকগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকায় একবার কোনো তথ্য ব্লকে যুক্ত হলে তা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ একটি ব্লক পরিবর্তন করতে হলে, তার পরবর্তী সব ব্লকও পরিবর্তন করতে হবে, যা খুবই কঠিন। এ কারণেই ব্লকচেইন প্রযুক্তি এতটা নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য।
ক্রিপ্টোকারেন্সি এত জনপ্রিয় হওয়ার কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:
- ক্রমবর্ধমান উপযোগিতা: ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। নতুন নতুন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হচ্ছে, যেমন ডিসেন্ট্রালাইজ ফিনান্স (DeFi) অ্যাপ্লিকেশন, ব্লকচেইন ভিত্তিক গেম, এবং নন-ফাঞ্জিবল টোকেন (NFT)। এই টেকনোলজিগুলো ক্রমাগত পরিবর্তিত এবং উন্নত হচ্ছে। অনেক খুচরা বিক্রেতা এবং সার্ভিস প্রোভাইডার এখন ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণ করছে, যা এর ব্যবহার বাড়িয়ে দিচ্ছে।
- বিনিয়োগের সুযোগ: গত কয়েক বছরে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম অনেক বেড়েছে। যা অনেক বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করেছে। অনেক মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অধিক লাভের আশায় বিনিয়োগ করছে। কারণ এর দাম অনেক সময় দ্রুত বাড়তে পারে এবং বড় আকারে রিটার্ন দিতে পারে।
- ভবিষ্যতের প্রযুক্তি (ফিউচারিজম): অনেকে বিশ্বাস করেন যে ক্রিপ্টোকারেন্সি ভবিষ্যতের টাকা। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া ডেভোলপ করছে। এর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা এবং গতিশীলতা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। আমরা ক্রিপ্টোকারেন্সির টেকনোলজির প্রথম স্তরে আছি, এবং সামনে আরও বড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে বাজারে কয়েকটি বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে, যা তাদের মার্কেট ক্যাপ (Market Cap) অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে কিছু হলো:
- টিথার (Tether): $72 বিলিয়ন
- বিটকয়েন (Bitcoin): $1.156 ট্রিলিয়ন
- ইথেরিয়াম (Ethereum): $533 বিলিয়ন
- বিনেন্স কয়েন (Binance Coin): $93 বিলিয়ন
- সোলানা (Solana): $74 বিলিয়ন
ক্রিপ্টোকারেন্সির সুবিধা:
- দ্রুত লেনদেন: ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন কয়েক মিনিটের মধ্যেই নিশ্চিত করা যায়। একবার লেনদেন সম্পন্ন হলে, গ্রাহক সাথে সাথেই সেই টাকা ব্যবহার করতে পারে। যেখানে নরমাল পদ্ধতিতে অর্থ স্থানান্তর করতে সাধারণত এক দিন বা তার বেশি সময় লাগতে পারে।
- কম খরচ: ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের খরচ তুলনামূলকভাবে কম। অনেক ব্যাংকের মতো কোনো মাসিক ফি নেই এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও রেমিটেন্স সার্ভিসের চেয়ে খরচ কম হয়।
- প্রবেশের সহজতা: ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের জন্য বৈধ আইডি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বা ক্রেডিট চেকের প্রয়োজন নেই। এর ফলে ব্যাংকবিহীন মানুষরাও সহজে এটি ব্যবহার করতে পারে।
- নিরাপত্তা: ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন নিরাপদ, কারণ এটি ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে সুরক্ষিত। প্রাইভেট কি ছাড়া কেউ আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করতে পারবে না। তাছাড়া, লেনদেনগুলো সাধারণত বেনামী থাকে, যা গোপনীয়তা রক্ষা করে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির অসুবিধা
- অস্থিরতা: অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য স্থিতিশীল নয়। এটি পণ্য বা সেবার জন্য অর্থ প্রদানে সমস্যা তৈরি করতে পারে, কারণ মুদ্রার অস্থিরতার কারণে দাম দ্রুত উঠানামা করতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য এক দিনে ১০% বা তার বেশি পরিবর্তিত হতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
- বীমার অভাব: ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রাখা তহবিলের কোনো বীমা নেই। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এফডিআইসি বীমা দেয়, কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে এ ধরনের সুরক্ষা নেই। যদি আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি হারিয়ে যায়, আপনি তা ফেরত পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা পাবেন না।
- লেনদেনের বিরোধ মেটানোর উপায় নেই: একবার লেনদেন ব্লকচেইনে নিশ্চিত হয়ে গেলে, তা চূড়ান্ত হয়ে যায়। যদি ভুলক্রমে বেশি পরিমাণ ক্রিপ্টো পাঠান, বা আপনি আপনার পণ্য বা সেবা না পান, তাহলে সমস্যা সমাধানের উপায় নেই। কেবলমাত্র লেনদেনের অন্য পক্ষ রাজি হলে টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব।
- প্রাইভেট কি হারানোর ঝুঁকি: আপনার প্রাইভেট কি হারালে, আপনি আপনার অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস হারাতে পারেন। প্রাইভেট কী লেনদেনে স্বাক্ষর করার জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটি একাধিক জায়গায় নিরাপদে সংরক্ষণ করা উচিত।
ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং কীভাবে কাজ করে?
ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং হলো ব্লকচেইনের ট্রানজেকশন ভেরিফাই করার প্রক্রিয়া, যেখানে মাইনাররা তাদের কম্পিউটারের কম্পিউটিং পাওয়ার ব্যবহার করে জটিল ম্যাথমেটিক্যাল প্রবলেম সল্ভ করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিটি ট্রানজেকশন যাচাই হয়ে ব্লকে যুক্ত হয়। মাইনাররা একটি ব্লক ভেরিফাই করতে পারলে নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ট্রানজেকশন ফি, রিওয়ার্ড হিসেবে পায়।
কীভাবে মাইনিং শুরু করবেন?
মাইনিং শুরু করতে হলে আপনার কিছু নির্দিষ্ট সরঞ্জাম এবং সফ্টওয়্যার দরকার:
- কম্পিউটার: ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করার জন্য পাওয়ারফুল কম্পিউটার প্রয়োজন। সাধারণ কম্পিউটার দিয়ে মাইনিং করা সম্ভব নয়। কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে?
- প্রসেসরের ধরন: মাইনিংয়ের জন্য দুধরনের প্রসেসর ব্যবহৃত হয়:
- GPU (Graphics Processing Unit): এটি সাধারণত গেমিং পিসিতে ব্যবহৃত হয় এবং এটি মাইনিংয়ের জন্য বেশ কার্যকর। GPU অনেক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করতে সক্ষম।
- ASIC (Application-Specific Integrated Circuit): এটি বিশেষভাবে নির্দিষ্ট একটি কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেমন বিটকয়েন বা নির্দিষ্ট কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করা। ASIC অনেক বেশি কার্যকর এবং দ্রুত, তবে এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েন মাইনিং করতে পারে এবং GPU-এর মতো ফ্লেক্সিবল নয়।
- সফ্টওয়্যার সেটআপ: মাইনিং শুরু করতে, আপনার একটি মাইনিং সফ্টওয়্যার দরকার। এই সফ্টওয়্যারটি আপনার মাইনিং কম্পিউটারকে ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে এবং আপনার কম্পিউটিং শক্তি ব্যবহার করে ব্লক যাচাই করতে সাহায্য করে।
- ডিজিটাল ওয়ালেট: আপনার মাইনিং থেকে অর্জিত ক্রিপ্টোকারেন্সি রাখার জন্য একটি ডিজিটাল ওয়ালেট দরকার। এই ওয়ালেটটি আপনার মাইনিং থেকে অর্জিত কয়েনগুলি সংরক্ষণ করতে সাহায্য করবে।
মাইনিং কম্পিউটার প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে, তাই এটি একটি শীতল এবং ভালো বায়ুচলাচল যুক্ত স্থানে রাখতে হবে। তাপ বেশি হলে কম্পিউটার ঠিকমতো কাজ করবে না এবং বিদ্যুৎ খরচও বেশি হবে। তাই একটি সঠিক স্থানে মাইনিং ডিভাইস স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ।
একবার সবকিছু ঠিকমতো সেটআপ হয়ে গেলে মাইনিং প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে। তবে মাইনিং প্রক্রিয়ার সময় আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য নজরে রাখতে হবে, কারণ মূল্য হঠাৎ হ্রাস পেলে মাইনিং লাভজনক নাও হতে পারে। বিদ্যুৎ এবং হার্ডওয়্যারের খরচ মাইনিং থেকে প্রাপ্ত আয়ের চেয়ে বেশি হলে, সেটি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কতগুলি ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে?
বর্তমানে হাজার হাজার ক্রিপ্টোকারেন্সি বিদ্যমান রয়েছে। কয়েনমার্কেটক্যাপ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১৩,৬৬৯টি ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু ছিল। এত বেশি সংখ্যক ক্রিপ্টোকারেন্সি থাকার মূল কারণ হলো, ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
সেরা ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনগুলো?
বিটকয়েন এবং ইথার অন্য সবার মধ্যে আলাদা।
বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ
না
ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি কি একটি ভাল বিনিয়োগ?
ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি বিনিয়োগ হিসাবে অনেক “ভাল” ও বলা যায় না আবার “খারাপ”ও বলা যায় না
পরিশেষে
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি, এটি কীভাবে কাজ করে এবং ফিয়াট মুদ্রার উপর এটি কী মূল্য সরবরাহ করতে পারে তা বোঝা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অর্থ বিনিয়োগের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ।আশা করি,উপরোক্ত তথ্য গুলি এই বিষয়ে হেল্পফুল হবে।