ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে যারা জড়িত কিংবা পরিচিত, কমবেশি সবার কানে fiverr শব্দটি এসেছে। আসবেই না কেন, ফেসবুক-ইউটিউব খুললেই তো শুধু আউটসোর্সিং-ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আলোচনা। তো এই আলোচনার আরেকটি বিষয় fiverr কিভাবে কাজ করে?
যদিও নতুনদের মধ্যে fiverr কিভাবে কাজ করে, এইগুলো কি জিনিস, খায় না মাথায় দেয়! এই টাইপের প্রশ্ন বেশি ঘুরপাক খায়। খাবেই বা না কেন? একবার শুনি গিগ আবার শুনি বিড, একবার শুনি Upwork আবার শুনি Fiverr. এগুলো আসলে কি?
তাহলে, ১ লাইনে বলি, Fiverr হচ্ছে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেখানে সারা বিশ্বের ফ্রিল্যান্স সার্ভিস পাওয়া যায় খুবই কম খরচে। এটি এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে ফ্রিল্যান্সারদের খুব সহজেই কাজে নিয়োগ দেয়া যায় এবং এখান থেকে ফ্রিল্যান্সাররা খুব সহজেই কাজ খুঁজে পায়।
এটা সত্য, এই দুই লাইনের লেখা আপনার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে, যাবেই, আমি নিজেও চাইনি এটা মাথার ভিতর দিয়ে যাক। কেননা, মূল লেখা তো একটু পর শুরু করছি।
লেখার সূচিপত্র
Fiverr এর শব্দসমূহ
fiverr এ কয়েকটি শব্দ সব সময় শুনবেন তাই আগে এই শব্দগুলোর সাথে পরিচিত হয়ে নিন।
গিগ- এটা Fiverr ওয়েবসাইটের একটি সার্ভিস। সেলাররা গিগ অফার করে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, আমি আপনার জন্য সুন্দর একটি লিখা লিখে দিব ৫ ডলারের বিনিময়ে। এরকম কিছু লিখে fiverr এ পোস্ট করাকে গিগ বলে। তারপর যার ইচ্ছা হবে, সে ৫ ডলার দিয়ে গিগ কিনবে। এবং তখন আমি তাকে ৫ ডলারে সার্ভিস দিবো। এই গিগ ৫ ডলার থেকে ১০০০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
সেলার- একজন নিবন্ধনকৃত ব্যবহারকারি অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সারকে সেলার বলা হয় যে গিগ অফার করে থাকে এবং কাজ করে দেয়।
বায়ার- একজন নিবন্ধনকৃত ব্যবহারকারি যে গিগ ক্রয় করে তাকে বায়ার বলে। যখন একটি গিগ কেনা হবে, তখন তাকে বলে অর্ডার।
পোস্ট এ রিকুয়েস্ট- যখন দেখবে তার প্রয়োজনীয় কাজের গিগ কেউ তৈরি করেনি। তখন একজন বায়ারও গিগ রিকুয়েস্ট করতে পারে, তার একটি নির্দিষ্ট প্রয়োজনে।
fiverr কিভাবে কাজ করে?
ধরুন আপনি একজন ওয়েবসাইট ডিজাইনার এখন আপনি সুন্দর সুন্দর ওয়েবসাইট বানাতে পারেন? এই যে সুন্দর সুন্দর ওয়েবসাইট বানাতে পারেন, এই কথাটি লিখে আপনি চাইলে fiverr এ পোস্ট তথা গিগ তৈরি করতে পারেন। এরপর, যদি অন্য কারও ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হবে, তখন সে আপনার গিগ দেখে আপনাকে বলবে, ভাইয়্যা, আমাকে একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে দিন। fiverr এ মূলত এইভাবেই কাজ করে।

এছাড়া, বায়াররা তাদের প্রয়োজনমতো অগ্রীম গিগ অফার করতে পারে যে কোন ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য। ওয়েব ডিজাইন, সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং, কপিরাইটিং ইত্যাদি যে কোনো কাজ করা যায়।
যখন Fiverr প্রথম কাজ শুরু করে তখন সব গিগস এর প্রাথমিক মূল্য থাকে ৫ ডলার। কিন্তু এখন ফ্রিল্যান্সার সেলাররা তাদের কাজের জন্য নির্ধারিত গিগ অফার করতে পারে বা তারা যেকোন প্যাকেজ অফার করতে পারে। অর্ডার সাধারনত এক দিন বা দুইদিনের মধ্যে শেষ করতে হয়।
কিন্তু সেলার চাইলে এই সময় বাড়াতে পারে, যদি তার হাতে অর্ডারের পরিমান বেশি হয়। যখন একটি অর্ডারের কাজ শেষ হয় তখন সেলার সেই অর্ডারের ৮০% টাকা পায়। যেমন গিগ যদি ৫ ডলার হয় তাহলে ফ্রিল্যান্সার তার থেকে ৪ ডলার পাবে।
এই সাইট ভিজিট করা যায় দুই ভাবে।
- বায়ার হিসেবে
- সেলার হিসেবে।
Fiverr এ কাজ করার জন্য অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সার বা সেলার হওয়ার জন্য একটি নিয়ম রয়েছে। এখানে একাউন্ট খুলতে হয়। একাউন্ট খোলার পর তাতে সাইন আপ করে গিগ অফার করা যায়। প্রথমবার একাউন্ট খুলে গিগ অফার করার পর সেখানে আইডিতে নিউ সেলার শো করবে। এখানে কিছু লেভেল সিস্টেম আছে।
আস্তে আস্তে কাজ করতে করতে এই লেভেল বাড়বে এবং কাজ শেষে বায়ারদের পজিটিভ রিভিউর মাধ্যমে পরিধিও বাড়বে। এই লেভেলের বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা ও রয়েছে।
- New Sellers (Without a level status ): ৭ একটিভ গিগস
- Level one Sellers: ১০ একটিভ গিগস
- Level two Sellers:২০ একটিভ গিগস
- Top Rated sellers: ৩০ একটিভ গিগস
বায়াররা Fiverr ভিজিট করে তাদের পছন্দমত বাজেট অনুযায়ী গিগ বাছাই করে থাকে। এছাড়া তারা সেলারদের রিকুয়েস্টও করতে পারে তাদের বাজেট অনুযায়ী কাজ করার জন্য।
Fiverr এ কাজ খোঁজার জন্য কিছু ফিল্টার রয়েছে। এই ফিল্টার ব্যবহার করে নতুন বায়াররা খুব সহজেই তাদের চাহিদার কাজটি খুঁজে পায়। এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিল্টার অপশনটি হচ্ছে Service Options। এখানে একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির সমস্ত কাজ শো করবে। যেমন আমি যদি খুঁজি Writing an article তাহলে এখানে শুধুমাত্র এই সম্পর্কিত লেখা, ভাষা বা তথ্যগুলোই দেখাবে।
এই জন্য এই ফিল্টার অপশনগুলি খুবই সাহায্য করে থাকে। দ্বিতীয় অপশনটি হলো Seller details। এখানে সেলার লেভেল সম্পর্কে দেয়া থাকে। এখানে একদম হাই রেট ফ্রিল্যান্সার থেকে লো রেট ফ্রিল্যান্সারদের সবাইকে দেখা যায়। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য আর বাজেটের মধ্যে হলে লেভেল টু ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে কাজ শুরু করা যায়।
কিভাবে Fiverr এ কাজ শুরু করা যায়?

১. একাউন্ট খোলা
কাজ শুরু করার জন্য প্রথমেই এখানে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। প্রথমে সাইন আপ করতে হবে। সেখানে কিছু তথ্য চাওয়া হবে। সেসব ঠিকমত পূরণ করলে একটা মেইল পাঠানো হবে। সেই ইমেইল কনফারমেশন লিংক পাওয়ার পর নিউ একাউন্ট ওপেন হবে এবং তখন কাজ খোঁজা যাবে Fiverr এ।
২. সেলার প্রোফাইল তৈরি করা
কাজ পাওয়ার জন্য একটি সুন্দর প্রোফাইল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, তথ্য খুব সুন্দরভাবে বায়ারদের নিকট উপস্থাপন করার সুযোগ রয়েছে। এই প্রোফাইল এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন বায়াররা তা দেখেই বিশ্বাস করে এবং কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে ভরসা পায়। কারন প্রোফাইল দেখেই বায়াররা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
৩. গিগ তৈরি করা
যখন প্রোফাইলটি খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়ে যাবে তখন গিগ অফার করতে হবে যাতে নির্ধারিত বায়াররা তা দেখতে পায়। এখানে কাজের বিবরণ, চাহিদা এবং কাজের মজুরি সব দেয়া থাকবে। বায়াররা সেলারের প্রোফাইল দেখে তারপর তার গিগ দেখবে। এরপর নির্ধারন করবে যে এই কাজ করার জন্য সেলার উপযুক্ত কিনা।
৪. বায়ারদের কাছে অফার পৌঁছানো
যদিও একটি সুন্দর প্রোফাইল তৈরি করার পর এবং একটি আকর্ষণীয় গিগ অফার করার পর বায়ার নিজেই সেলারের প্রোফাইল খুঁজে নেয়। তবে কখনো কখনো বায়াররাও রিকুয়েস্ট পোস্ট দেয়।
যেখানে লেখা থাকে কাজের সম্পূর্ণ বিবরণী অর্থাৎ কি ধরনের কাজ করতে হবে,কতদিনে সম্পন্ন করতে হবে এবং একাজের জন্য ঠিক কি পরিমান পারিশ্রমিক দেয়া হবে। একজন সেলার হিসেবে সেই সব রিকুয়েস্ট চেক করে পছন্দমত কাজটি করার জন্য সেই বায়ারকে অফার পাঠানো যাবে।
- আরও পড়ুন: বৈধভাবে Paypal একাউন্ট খোলার নিয়ম।
৫. Fiverr এর খরচ
Fiverr এ একাউন্ট খোলার জন্য কোন খরচ নেই। এটা একদম ফ্রি। তবে একাউন্ট খোলার পর যখন গিগ অফার করা হবে তখন সেখান থেকে কিছু ফি কাটা হবে। তবে তা অবশ্যই কাজ শেষ হবার পর। সেলার সবসময় তার নির্ধারিত ফি এর ৮০ ভাগ পাবে এবং বাকিটা Fiverr তার কমিশন ফি হিসেবে কেটে রাখবে।
Fiverr এর কি কি কাজ করা যায়?
Fiverr এ প্রায় সব ধরনের কাজ পাওয়া যায়। এখানে প্রায় ২০০ ধরনের বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্র রয়েছে। এখানে কিছু জনপ্রিয় কাজের ক্ষেত্র দেয়া হলো। যারা এখনও কম্পিউটার পারেন না তারা, ফ্রি কম্পিউটার শেখার কোর্স এই লেখাটি পড়তে পারেন।
ওয়েবসাইট ডেভলপমেন্ট জব
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা, ডিজাইন করা এর প্রধান কাজ। এছাড়াও ওয়েবসাইট সম্পর্কে ভালো ধারনা দিতে পারা বা কোডিং করতে পারলে এক্সট্রা আয়ের সুযোগ রয়েছে। এই ধরনের কাজের অফার গিগ হচ্ছে ১০০-২০০০ ডলার। ওয়েব ডিজাইনিং কাজের জন্য ৫টি ওয়েবসাইট।
গ্রাফিক ডিজাইন জব
Fiverr এ এই ধরনের কাজ প্রচুর রয়েছে। টি শার্ট, লোগে বা বিজনেস কার্ডে ডিজাইন করা ইত্যাদি প্রচুর পরিমানে গ্রাফিক ডিজাইন কাজ রয়েছে Fiverr এ। এই কাজের অফারকৃত গিগ ১০-১০০০ ডলার।
এছাড়াও রয়েছে কপি রাইটিং, ভিডিও মার্কেটিং,ট্রান্সলেশন সার্ভিস, সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ইত্যাদি আরো বহু কাজ।
পরিশেষে
এই ছিল আজকে fiverr কিভাবে কাজ করে, এই নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। আপনি যদি ওয়েব ডিজাইনার হিসাবে ফাইবারে কাজ করতে চান তাহলে, ফ্রি ওয়েব ডিজাইন শেখার ওয়েবসাইট লেখাটি পড়তে পারেন।