মাইক্রোফোনকে সাধারনত মাইক বলা হয়ে থাকে। কিন্তু, কথা হলো মাইক্রোফোন কিভাবে কাজ করে? আসলে, মাইক্রোফোনকে সাধারনত ট্রান্সডিউসার বলা হয়ে থাকে।
ট্রান্সডিউসার হলো এমন একটি যন্ত্র যেটি শব্দকে তড়িৎ সংকেতে রূপান্তর করে। মাইক বা মাইক্রোফোন সাধারনত বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
যেমন টেলিফোন ব্যবস্থায়, বিভিন্ন শ্রবণ মেশিন, বিভিন্ন কনসার্ট ইত্যাদি। এছাড়া সাউন্ড রেকর্ডিং, টু ওয়ে রেডিও , টেলিভিশন ইত্যাদি সম্প্রচারে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কম্পিউটারে ভয়েস রেকর্ডিং, কন্ঠস্বর চেনা, ভিওআইপি ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
লেখার সূচিপত্র
মাইক্রোফোন কিভাবে কাজ করে?
মাইক্রোফোন সাধারনত শব্দকে তড়িৎ সংকেতে পরিণত করে। শব্দকে তড়িৎ সংকেতে রূপান্তর করার অনেক উপায় আছে। সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে দুটি।
- ডায়নামিক পদ্ধতি
- কনডেনসার পদ্ধতি
এই দুইটি পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় রেকর্ডিং স্টুডিওতে, কোন কিছু সম্প্রচার কাজে, ভিডিও তৈরিতে এবং কোন স্টেজের লাইভের সাউন্ড বৃদ্ধিতে।
এক এক ধরনের মাইক্রোফোন এক এক ভাবে শক্তি রূপান্তর করে থাকে। কিন্তু সব মাইক্রোফোনই একটি ডায়াফ্রাম থাকে। ডায়াফ্রাম হলো একটি পাতলা পদার্থ।
- আরও পড়ুন: আইপি ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে
সাধারনত এটি তৈরি হয় কাগজ, প্লাস্টিক বা এলুমিনিয়াম দিয়ে। যখন মাইক্রোফোনের সামনে শব্দ হয় তখন এই শব্দ তরঙ্গ এই ডায়াফ্রামে আঘাত করে। হাতে ধরা যেসব মাইক্রোফোন থাকে সেগুলোতে ডায়াফ্রাম একদম উপরে থাকে।
ডায়াফ্রামের অবস্থান
ডায়াফ্রাম যখন কম্পিত হয়, তখন এর কম্পনের কারণে মাইক্রোফোনের অন্য যন্ত্রাংশগুলো ও কম্পিত হয়। এই কম্পন তখন শব্দ সংকেতকে তড়িৎ প্রবাহে রূপান্তরিত করে। অন্যদিকে লাউড স্পিকার ও একটি ট্রান্সডিউসার। এটি তড়িৎ সংকেতকে পুনরায় শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
মাইক্রোফোনের ধরন
ব্যবহারের ধরনের উপর ভিত্তি করে মাইক্রোফোন কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। সাধারনত একে দুইট শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়।
১. রূপান্তরের কৌশলের উপর ভিত্তি করে
শব্দ শক্তিকে কোন উপায়ে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তর করা হবে তার উপর ভিত্তি করে মাইক্রোফোনের এই শ্রেণি। এই পদ্ধতির কৌশলগুলো হলো ডায়নামিক, কনডেনসার, রিবন ও ক্রিস্টাল। প্রতিটারই সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। প্রতিটি মাইক্রোফোনই বিশেষ ধরনের কাজে পারদর্শী।
২. তৈরি পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে
কিছু কিছু মাইক্রোফোন সাধারন কাজের জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে এবং সেগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। আবার কিছু কিছু মাইক্রোফোন বিশেষভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে এবং সেগুলো সেই বিশেষ একটা কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
মাইক লেভেল এবং লাইন লেভেল
মাইক্রোফোনে যে তড়িৎ প্রবাহিত হয় সেটি খুবই অল্প। মাইক লেভেলের সংকেত পরিমাপ করা হয় মিলিভোল্ট দিয়ে। যদি এটি অন্য কোন জরুরি কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে এই সংকেতকে বিবর্ধিত হতে হয়। সাধারণত একটি লাইন লেভেলের সংকেত ০.৫-২ ভোল্ট।
- আরও পড়ুন: রাডার কিভাবে কাজ করে?
খুব শক্তিসম্পন্ন ও স্পষ্ট আওয়াজ পাওয়ার জন্য লাইন লেভেলের মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারনত সিডি প্লেয়ার, টেপ রেকর্ডার মেশিন বা ভিসিআর ইত্যাদিতে লাইন লেভেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
মাইক্রোফোনের যন্ত্রাংশসমূহ
একটি মাইক্রোফোনের সাধারনত ৭টি অংশ থাকে।
উইনস্ক্রিন: মাইক্রোফোনের একেবারে উপরের অংশ এটি যেখানে কথা বলা হয়। এটি মাইক্রোফোনের ভিতরের অংশগুলোকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে থাকে। প্রায় সব ধরনের মাইক্রোফোনেই এই অংশটি থাকে।
ডায়াফ্রাম: সাধারনত এটি একটি পর্দার মতো হয়ে থাকে। এটা অনেকটা মানুষের কানের পর্দার মতো কাজ করে থাকে। যখন মাইক্রোফোনের সামনে কোন শব্দ উচ্চারিত হয় তখন এটি ডায়াফ্রামে গিয়ে আঘাত করে এবং এটিতে কম্পনের সৃষ্টি করে।
তারপর এই কম্পন তড়িৎ সংকেতে পরিণত হয়। ডায়াফ্রামের উপর ভিত্তি করবে একটি মাইক্রোফোন থেকে কি মানের শব্দ তৈরি হবে।
কয়েল: ডায়াফ্রামের সাথে কয়েল সংযুক্ত থাকে এবং এটি শুধুমাত্র ডায়নামিক মাইক্রোফোনে পাওয়া যায়। যেহেতু এটি ডায়াফ্রামের সাথে যুক্ত থাকে তাই ডায়াফ্রাম কম্পিত হলে কয়েলও কম্পিত হবে।
ম্যাগনেটিক কোর: কয়েলের মতো এটিও ডায়নামিক মাইক্রোফোনের একটি অংশ। ম্যাগনেটিক কোরের কাজ হলো ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করা যাতে কম্পনকে তড়িৎ সংকেতে রূপান্তর করা যায়।
ক্যাপসুল :একটি মাইক্রোফোনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অংশ হচ্ছে এই ক্যাপসুল। এখানেই আসল ঘটনা ঘটে। মাইকের সামনে উচ্চারিত শব্দটি এখানে তড়িৎ সংকেতে পরিণত হয়ে স্পিকারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।
বডি: মাইক্রোফোনের সবচেয়ে বড় অংশটি হচ্চে এই বডি। এটি আসলে আক্ষরিক অর্থে কোন কাজ করে না। তবে এর উপর মাইক্রোফোন কতদিন ব্যবহার করা যাবে সেটি নির্ভর করে থাকে।
আউটপুট: সব মাইক্রোফোনেই এই অংশটি থাকে। এটি সাধারনত সেই অংশ যেখানে মাইক্রোফোনটি ক্যাবল দিয়ে প্লাগের সাথে যুক্ত থাকে।
ভালো মাইক্রোফোন নির্বাচন জরুরি কেন
মাইক্রোফোন সাধারনত কথা বলতে বা কিছু রেকর্ড করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই মাইক্রোফোন নির্বাচন করার ক্ষেত্রে দুইটি জিনিস বিবেচনা করতে হবে। এটি যেন ঠিকভাবে শব্দ ধরতে পারে এবং কথা বলার সময় যেন শব্দ কম হয়।
নিচে কিছু মাইক্রোফোনের ধরন আলোচনা করা হলো
১. ডায়নামিক মাইক্রোফোন
লাউডস্পিকারের সাথে তুলনা করলে মাইক্রোফোনের কাজের ধরন ও কৌশল জানা যায়। ডায়নামিক মাইক্রোফোনই বর্তমানে বেশি ব্যবহৃত হয়। এই মাইক্রোফোনে ডায়াফ্রাম ও কয়েল মাইক্রোফোনের একবারে উপরে সংযুক্ত থাকে। এখানে কয়েলের সাথে ম্যাগনেটিক সিস্টেম থাকে।
মাইক্রোফোনের সামনে শব্দ তৈরি হলে সেটি কয়েলে প্রবাহিত হয়। কয়েল থেকে এই প্রবাহ ম্যাগনেটিক ফিল্ডে প্রবাহিত হয়। তারপর স্পিকারে প্রবাহিত হয় এবং সবশেষে শব্দ বাইরে বের হয়। একটি ডায়নামিক মাইক্রোফোন স্পিকারের বিপরীত কাজ করে থাকে।
শব্দের চাপের উপর ভিত্তি করে ডায়াফ্রাম নড়াচড়া করে। অনেক ইন্টারকমেও এখন স্পিকারের সাথে ছোট কোর ব্যবহার করে স্পিকার ও মাইক্রোফোন দুই ধরনের কাজ করে থাকে। এই ধরনের মাইক্রোফোন সাধারনত স্টেজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
২. কনডেনসার মাইক্রোফোন
এটিকে ক্যাপাসিটর মাইক্রোফোনও বলা হয়ে থাকে। এখানে দুইটি ধাতব তড়িৎ ধারক ব্যবহার করা হয়। এখানে যে ডায়াফ্রাম ব্যবহার হয়ে থাকে এটি অবশ্যই তড়িৎ পরিবাহী হতে হবে।
- আরও পড়ুন: পকেট রাউটার কিভাবে কাজ করে?
যখন শব্দ তরঙ্গ ডায়াফ্রামে আঘাত করে তখন এটি পেছন দিকে যায় এবং ধাতব প্লেটে আঘাত করে। তখন ধারকগুলো সুরকে শব্দে পরিণত করে থাকে। এটি সাধারনত রেকর্ড করার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।
৩. রিবন মাইক্রোফোন
এটিও অনেকটা ডায়নামিক মাইক্রোফোনের মতো তবে এতে ডায়াফ্রাম থাকেনা। এর বদলে এতে থাকে একটি চলনশীল কয়েল। এই রিবন সাধারনত পাতলা এলুমিনিয়ামে তৈরি থাকে। এখানে রিবন একইসাথে ডায়াফ্রাম ও ট্রান্সডিউসার এর মতো কাজ করে।
উপসংহার
এই ছিল মাইক্রোফোন কিভাবে কাজ করে, নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আশা করি মাইক্রোফোন কিভাবে কাজ করে এ নিয়ে আর কোন প্রশ্ন নেই। যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে, কমেন্ট করে জানাতে পারেন।