যারা নতুন টিকটকে ভিডিও তৈরি করে তাদের সবার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, কিভাবে টিকটক ভিডিও ভাইরাল করবো? এই প্রশ্নটা আসাই স্বাভাবিক। কারণ আপনি টিকটকে ভিডিও দিলেই ভাইরাল হবে না। এই জন্য কিছু কৌশল আছে।
যাদের ভিডিও টিকটকে ভাইরাল হয়েছে, তাদের থেকে জানা কিছু গোপন টিপস আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আশা করি এই নিয়মগুলো অনুসরণ করলে আপনার ভিডিও ভাইরাল হবে।
টিকটক কি?
টিকটক হল একটি শর্ট-ফর্ম ভিডিও হোস্টিং প্ল্যাটফর্ম। এটি চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন। এটি ব্যবহারকারীর আপলোড করা ভিডিওগুলো প্রচার করে। পৃথিবীর সেরা শর্ট-ফর্ম ভিডিও প্ল্যাটফর্ম হিসেবে টিকটক বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
টিকটক অ্যালগোরিদম কি?
টিকটক বর্তমানে একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পরিণত হচ্ছে। অনলাইনের এসব সেক্টরগুলো নির্দিষ্ট অ্যালগরিদম অনুসরণ করে পরিচালিত হয়। টিকটক ভিডিও কে For You Page এ প্রদর্শিত করার জন্য প্রথমেই টিকটক কিছু বিষয় বিবেচনা করে। মূলত সেই বিষয়গুলোই টিকটক অ্যালগরিদম। আর এই অ্যালগোরিদমের উপর নির্ভর করে আপনার ভিডিও ভাইরাল হবে কিনা!
তাহলে, চলুন জেনে নেই টিকটক অ্যালগরিদমের সাথে কাজ করে কিভাবে টিকটক ভিডিও ভাইরাল করবো।
কিভাবে টিকটক ভিডিও ভাইরাল করবো
টিকটকে ভাইরাল হওয়ার জন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে। আপনি যদি সে অনুযায়ী ভিডিও তৈরি করেন তাহলে, আপনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে। চলুন জেনে নেই বর্তমানে টিকটক ভিডিও ভাইরাল করার উপায়গুলো সম্পর্কে।
১. ইউনিক ভিডিও তৈরি
টিকটকে ভাইরাল হওয়ার প্রধান উপায় হচ্ছে ভালো ও ইউনিক ভিডিও তৈরি। যেহেতু tiktok একটি বিনোদনের প্ল্যাটফর্ম সেহেতু ভিউয়ার সেই ধরনের ভিডিও এর প্রতি আকৃষ্ট হয় যাতে তারা নতুন কিছু দেখে।
আপনার tiktok ভিডিও যদি অন্যান্য টিকটকারদের থেকে ইউনিক হয় এবং তা যদি ভিউয়ারের কাছে ভালো লাগে তাহলে, আপনার ভিডিওতে শেয়ার, লাইক এবং ডুয়েটকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ফলে টিকটক অ্যালগরিদমে আপনার ভিডিওটি বেশি ভিউয়ার এর কাছে যাবে এবং ভাইরাল হতে থাকবে।
২. ফ্রেশ এবং আকর্ষণীয় ভিডিও
স্বাভাবিকভাবেই ফ্রেশ এবং কোয়ালিটি সম্পন্ন ভিডিও না হলে আমরা তা স্কিপ করে যাই। ভিডিওর মেইন ফোকাসটা আপনার উপরেই রাখুন। আপনার ভিডিওতে কি বলছেন এবং ভিউয়ারকে কি বোঝাতে চাচ্ছেন তা অবশ্যই স্পষ্ট হতে হবে।
ভিডিওর ক্যামেরা কোয়ালিটি এবং বাচনভঙ্গি ভিউয়ারদের কাছে ভিডিওটি আকর্ষণীয় করে তোলে। তাই ভিডিও ভাইরাল করতে হলে অবশ্যই এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
৩. ভিডিও এডিটিং
ভিডিওকে ভিউয়ার ফ্রেন্ডলি করে তোলার জন্য আপলোড করার পূর্বে তা ভালোভাবে এডিটিং করতে হবে। ভিডিও ব্যাকগ্রাউন্ড এবং কালার ফরমেটিং এর উপর জোর দিন। ভিডিওতে ইমোজি ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ভালোভাবে সেটআপ করুন, যা ভিউয়ারকে আকৃষ্ট করবে।
৪. ভিডিও নিশ সিলেক্ট
আপনার ভিডিও নির্দিষ্ট নিশ বা ক্যাটাগরি অনুযায়ী তৈরি করুন। আপনি কোন ধরনের ভিডিও করতে আগ্রহী-
- ফানি ভিডিও,
- একশন ভিডিও,
- অ্যাক্টিং,
- ডায়লগ নাকি শায়েরি
তা পূর্বেই বাছাই করে নিন। এতে আপনার দক্ষতা অনুযায়ী ভিডিও কোয়ালিটি ভালো হবে। এছাড়া, আপনি যদি প্রতিদিন ফানি ভিডিও দিতে থাকেন, তাহলে যেসব ভিউয়াররা ফানি ভিডিও দেখে, তাদের নিকট আপনার ভিডিও শো করাবে। কিন্তু, আপনি যদি একেক সময় একেক ক্যাটেগরির ভিডিও দেন, তাহলে টিকটক অ্যালগোরিদম কনফিউজড হয়ে যাবে। ফলে ভাইরালও হবে না।
৫. ভিডিও লেনথ
টিকটক একটি শর্ট-ফর্ম ভিডিও প্ল্যাটফর্ম। তাই আপনার ভিডিওটি সর্বনিম্ন ৫ সেকেন্ড থেকে ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে রাখুন। ভিডিওতে বাড়তি কথা না বলে, মেইন টপিকে ফোকাস রেখে ভিউয়ার ফ্রেন্ডলি ভিডিও লেনথ রাখুন।
৬. ট্রেন্ডিং সাউন্ড ব্যবহার

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হচ্ছে ট্রেন্ডিং সাউন্ড ব্যবহারকারী ভিডিওগুলো। কিছুদিন পরপরই কোন না কোন সাউন্ড ট্রেন্ড হয়ে যায়। যেমন- কাঁচাবাদাম সং, আজকে আমার মন ভালো নেই ইত্যাদি ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড।
বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সাউন্ড থাকে যা ভিউয়ারের আকর্ষণকে বৃদ্ধি করে। তাই যখন যে সাউন্ড ট্রেন্ড হয়ে যায় সেই সাউন্ড এর উপর ফোকাস রেখে ভিডিও তৈরি করুন। এটি টিকটক অ্যালগরিদম কে আপনার ভিডিও ভাইরাল করতে সহায়তা করবে এবং ভিউয়ারকেও খুব আকৃষ্ট করবে।
৭. ট্রেন্ডিং ভিডিও স্ক্রিপ্ট
ভিডিও আপলোড করার পূর্বে কোন ধরনের ভিডিও স্ক্রিপ্ট ট্রেন্ডিং এ আছে তা লক্ষ্য রাখুন। বিভিন্ন ফানি ভিডিও করলে বা অ্যাকশন ভিডিও করলে সেই রিলেটেড ট্রেন্ডিং স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে ভিডিও আপলোড করুন।
এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, স্ক্রিপ্ট অন্য কারো হলেও ততে যেন অবশ্যই কিছু নতুনত্ব থাকে। যা আপনার ভিডিওকে ইউনিক করে সকলের কাছে প্রেজেন্ট করবে।
৮. সেলিব্রিটিদের সাথে ডুয়েট

বিভিন্ন বড় tiktoker দের সাথে ডুয়েট করলে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ, বড় টিকটকার দের ফ্যান-ফলোয়ারের কাছে সেই ভিডিও প্রচার হয় এবং আপনার ভিডিও আকর্ষণীয় হয়। সেলিব্রিটিদের সাথে ট্রেন্ডিং ভিডিও ডুয়েট করে অনেকেরই ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে।
৯. নিজের অডিও ব্যবহার
অন্যের ভিডিও নিজের টিকটক আইডিতে ছেড়ে লক্ষ লক্ষ ভিউ ও লাইক পেলেও তাতে আপনার উপকার হবে না। কারণ, টিকটকের সেলিব্রেটি হতে চাইলে অবশ্যই নিজেকে প্রেজেন্ট করতে হবে।
তাই, আপনার মাঝে থাকা সুপ্ত প্রতিভা অনুযায়ী বিভিন্ন আকর্ষণীয় কথা ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করুন।
১০. গল্প ও শায়েরি ভিডিও
বর্তমানে টিকটকে সবচেয়ে বেশি ভাইরাল ভিডিওগুলো হলো বিভিন্ন কষ্টের শায়েরি ও অনুপ্রেরণামূলক ছোট্ট গল্প। তাই আপনি যদি মেধাবী হন ভালোবাসা, টাকা ও জীবনের নানা পর্যায় নিয়ে শায়েরি ভিডিও তৈরি করুন।
১১. টিপস এন্ড ট্রিকস ভিডিও

বিভিন্ন ইউনিক টিপস এন্ড ট্রিকস ভিডিও যা ভিউবারের প্রয়োজনে লাগে এবং নতুন কিছু শিখা যায় এমন ভিডিও তৈরি করুন। এ ধরনের ভিডিওতে লাইক, শেয়ার এবং কমেন্ট বেশি হয়। ফলে ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় তাড়াতাড়ি।
১২. লাইক, কমেন্ট এন্ড শেয়ার
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার। তাই ভিডিও শেষে লাইক এবং শেয়ারের কথা বলতে পারেন। আকর্ষণীয় ভিডিও করলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার বৃদ্ধি পায়।
খেয়াল রাখবেন নিজের অন্য কোন মোবাইল বা বন্ধুর মোবাইল দিয়ে লাইক, কমেন্ট এন্ড শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এতে অ্যাকাউন্ট ফিউজ হয়ে যেতে পারে।
১৩. ভিউয়ার কমেন্ট অপশন
কমেন্ট টিকটক অ্যালগরিদম এর উপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। আপনার ভিডিওতে অবশ্যই এমন কিছু রাখুন যা ভিউয়ারকে কমেন্ট করতে উৎসাহিত করে। বিভিন্ন ভিডিওতে শুধু হিন্টস দিয়ে সম্পূর্ণ তথ্য গোপন রাখুন। এতে করে ভিউয়ার কমেন্ট করে সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইবে।
১৪. হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন

দর্শকদের সামনে আপনার বিষয়বস্তু তুলে ধরার জন্য হ্যাশট্যাগগুলি একটি দুর্দান্ত উপায়। যেমন- #কষ্টের_গল্প, #ফানি_ভিডিও, #viral_song ইত্যাদি। হ্যাশট্যাগ কি? হ্যাশট্যাগ জন্মের চমৎকার ইতিহাস।
আপনি যখন প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন, তখন আপনার ভিডিওগুলি সেই হ্যাশট্যাগগুলির জন্য অনুসন্ধানের ফলাফলে প্রদর্শিত হবে, যা লোকেদের জন্য আপনার বিষয়বস্তু খুঁজে পাওয়া সহজ করে তুলবে।
১৫. আপনার ভিউয়ারদের সাথে সম্পর্ক করুন
টিকটকে বিশাল ফলোয়ার গড়ে তোলার জন্য আপনার দর্শকদের সাথে অ্যাটাচ থাকা প্রয়োজন। তাই ভিউয়ার কমেন্টের উত্তর দিন এবং অন্যান্য টিকটকারদের ভিডিওতে লাইক ও মন্তব্য করে সুসম্পর্ক তৈরি করুন।
১৬. রেগুলার ভিডিও আপলোড
টিকটক, ইউটিউব কিংবা ব্লগ যেখানে আপনি কাজ করুন না কেন অবশ্যই নিয়মিত কাজ করতে হবে। এতে করে তা প্ল্যাটফর্ম অ্যালগরিদম এর সাথে কাজ করে। রেগুলার ভিডিও আপলোড করলে ধীরে ধীরে সেই আইডির ভিডিওগুলো For You Page এ প্রদর্শিত হতে থাকে।
উপরোক্ত উপায় গুলো অনুযায়ী কিভাবে টিকটক ভিডিও ভাইরাল করবো তার সম্পূর্ণ তথ্য জেনে আপনি টিকটকে ভিডিও ভাইরাল করতে পারবেন।
Frequently Asked Questions (FAQ’s)
টিকটকে কিভাবে ভাইরাল হওয়া যায়?
সঠিকভাবে টিকটকের অ্যালগরিদম অনুযায়ী আইডিতে কোয়ালিটি সম্পন্ন ইউনিক, ফ্রেশ, এডিটিং করে, ট্রেন্ডিং সাউন্ড ব্যবহার করে, নিজের কন্ঠে বিভিন্ন শায়েরি ও ডায়ালগ, ভিডিও নিশ সিলেট ও হ্যাশট্যাগ ব্যবহার এবং ভিউয়ারদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে টিকটকে ভাইরাল হওয়া যায়।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার কারণ কি?
টিকটকের অ্যালগরিদম অনুযায়ী ভিডিও তৈরি করলে তা For You Page এ আসে এবং অন্যান্য উপায়ে ভিডিওতে বেশি ভিউ হলে টিক টক ভিডিও ভাইরাল হয়।
Tiktok প্রচার করা কি ভালো?
টিক টক ভিডিও ভাইরাল করা ইসলামিক ভাবে এবং সমাজ জীবনের জন্য অনেকটাই ক্ষতিকর। টিকটকের ফলে ইসলামের নীতি নীতি কথা ক্ষুন্ন হয়। বিভিন্ন কিশোর কিশোরীরা নিজেদেরকে ভাইরাল করার জন্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। এছাড়াও এটি আমাদের সময় এবং সাধারণ জ্ঞানকে নষ্ট করে।
ভাইরাল হতে কত ভিউ লাগে?
ভাইরাল হওয়ার কোন ভিউ লিমিট নেই। কোন ভিডিও যত বেশি ট্রেন্ডিংয়ে আসবে, ভিডিওটি ততই ভাইরাল বলে গণ্য হবে। তবে সাধারণত প্রতি ঘন্টায় সর্বনিম্ন ১-১০ হাজার ভিউ হলে তাকে ভাইরাল ভিডিও বলা যায়।
পরিশেষে
এই ছিল আজকে কিভাবে টিকটক ভিডিও ভাইরাল করবো এই প্রশ্নের উত্তর। আশা করি, উপরে উল্লেখিত নিয়মগুলো অনুসরণ করলে আপনার ভিডিও ভাইরাল হবে। তারপরেও যদি ভাইরাল না হয়, তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানান।