সারাক্ষন মোবাইলে ওয়াইফাই ব্যবহার করে কখনও কি মনে প্রশ্ন জাগে না, WiFi কি কিংবা WiFi কিভাবে কাজ করে? যদিও আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে বলেই, এই লেখাটি পড়তে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ। কেননা, অধিকাংশ মানুষ অন্ধের মত শুধু ব্যবহার করে যায়, খুব কম মানুষ তার ব্যবহারের বস্তুটির ব্যাখ্যা জানতে চায়। যেমনটা জানতে চেয়েছিল, স্যার আইজেক নিউটন।
যাইহোক, আজকে কোন আপেলের গল্প হবে না। আজকে গল্প করবো, WiFi কি? WiFi কিভাবে কাজ করে? এ সম্পর্কে। লেখাটি সামান্য একটু বড়, আশা করি লেখাটি আপনার মনের খোরাক জোগাতে পারবে।
লেখার সূচিপত্র
WiFi কি?
Wifi হচ্ছে Wireless Fidelity। একে WLAN ও বলা হয়ে থাকে যার পূর্ণরূপ হচ্ছে Wireless Local Area Network। Wireless internet বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন: Wifi, Wireless fidelity and Wireless LAN।
Wifi তেমন একটি তারবিহীন নেটওয়ার্কিং সিস্টেম যা দিয়ে, ডেস্কটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, স্মার্ট টেলিভিশন, ভিডিও গেম ও অন্যান্য ডিভাইসসমূহে ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করা যায়। রাডার কিভাবে কাজ করে?
তারবিহীন ডিভাইস সমূহ একটি আরেকটির সাথে সংযোগ স্থাপন করার জন্য, এদের একসেট Wifi স্ট্যান্ডার্ড দরকার হয়। Wifi স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে, এক ধরনের প্রটোকল। যা নির্ধারণ করে থাকে Wifi নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করবে।
Wifi হচ্ছে IEEE ( Institute of Electrical and Electronics Engineers ) 802.11 স্ট্যান্ডার্ড। এই IEEE স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে Wifi Alliance দ্বারা সার্টিফিকেট প্রাপ্ত। যেটা একটা ননপ্রফিট সংস্থা যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে IEEE 802.11 কে সার্টিফাই করার জন্য এবং Wireless LAN স্ট্যান্ডার্ড এ প্রমোট করার জন্য।
এই Wifi স্ট্যান্ডার্ড এর বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে যেমন: 802.11a, 802.11b, 802.11g, 802.11n, 802.11ac and 802.11ax.
বেশিরভাগ ডিভাইস এখন 802.11n, 802.11ac and 802.11ax এই স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে থাকে। এই ভিন্ন ভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড ভিন্ন ভিন্ন স্পিড, ফ্রিকোয়েন্সি,ব্যান্ডউইথ এবং রেঞ্জ ব্যবহার করে থাকে ইন্টারনেট প্রবেশের জন্য। একদম আধুনিক ও সবচেয়ে ভালো Wifi অপশন হচ্ছে Wifi 6, যা IEEE 802.11ax এই স্ট্যান্ডার্ড এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি অন্য সবগুলো থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন।
Wifi কিভাবে কাজ করে?
Wifi কাজ করার জন্য দরকার হবে একটি মডেম যা একটি তারবিহীন রাউটারের সাথে যুক্ত থাকবে অথবা দরকার একটি তারবিহীন গেটওয়ে। এটি মডেম ও তারবিহীন রাউটার এর সাথে সংযোগ স্থাপন করবে। এই ডিভাইসটি এক্সেস পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে যেটি সংকেত তৈরি করবে এবং ডিভাইসকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করবে। অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে?

Wifi সাধারনত নিম্নলিখিত তিনটি সাধারন উপায়ে কাজ করে থাকে।
১. মডেমের একটি ক্যাবল বা তার দরকার হয় ইন্টারনেট কানেকশনের জন্য। ইন্টারনেট কানেকশনের ধরনের উপর ভিত্তি করে নির্ধারন করা হয় ঠিক কি ধরনের মডেম প্লাগইন করতে হবে। যেমন DSL, Dial-Up, Cable
২. রাউটার এই মডেমের সাথে যুক্ত থাকবে। এই রাউটার রেডিও তরঙ্গ তৈরি করবে এর এন্টেনার সাহায্যে এবং ছড়িয়ে থাকবে সম্পূর্ণ জায়গায় যার সাহায্যে খুব সহজেই অনেকগুলো ডিভাইসে একসাথে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে। রাউটার ছাড়া ইথারনেট ক্যাবলের সাহায্যেও মডেম এবং কম্পিউটার সংযোগ করে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে।
৩. গ্রাহক অর্থাৎ Wifi কার্ডস যা ডিভাইসের মধ্যে থাকবে সেটি টু ওয়ে রেডিও সিগন্যাল ধারন করবে যার সাহায্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে।
ভালো সিগন্যাল পাওয়ার জন্য অবশ্যই Wifi এক্সেস পয়েন্ট রেঞ্জের মধ্যে থাকতে হবে। যদি খুব বেশি দূরে হয়ে যায় অথবা শেষ প্রান্তে হয় তাহলে নেট স্পিড খুব ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে যাবে অথবা কানেকশন কেটে যাবে।
Wifi কিভাবে বিভিন্ন ডিভাইসের সাথে সংযোগ স্থাপন করে?
Wifi সাধারনত রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে থাকে, বিভিন্ন ডিভাইসের সাথে সংযোগ স্থাপন করার জন্য। এই তরঙ্গ পরিমাপ করা হয় গিগাহার্জ দ্বারা, সংক্ষেপে বলা হয় GHz।
Wifi 2.4GHz বা 5GHz ব্যবহার করে থাকে সংকেতের জন্য। এখানে এক ধরনের ডুয়াল ব্যান্ড ডিভাইস, থাকে যার সাহায্যে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে কি ধরনের তরঙ্গদের্ঘ্য ব্যবহার করা হবে তা ঠিক করা যায়। এই 2.4GHz ব্যান্ড এর সাহায্যে অনেকখানি ওয়াইফাই কভারেজ দেয়া যায় কিন্তু এর স্পিড কম থাকে।
আর 5GHz ব্যান্ড খুব দ্রুতগতিসম্পন্ন হয়ে থাকে কিন্তু এর কভারেজ কম হয়। প্রতিটি ওয়াইফাই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডেরই অনেকগুলো চ্যানেল থাকে যার সাহায্যে এটি আমাদের ডিভাইসে ডাটা গ্রহণ ও প্রেরণ করতে পারে। এই ওয়াইফাই চ্যানেলগুলোর কাজ হচ্ছে এক ওয়াইফাই ডিভাইসের সাথে যেন আরেক ওয়াইফাই ডিভাইস ওভারল্যাপ না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
এই ধরনের সমস্যা হলে নেট স্পিড কমে যায়। যেমন যদি কোন রাস্তার লেন একটা থাকে তাহলে খুব দ্রুত এটি যানজটে পূর্ণ হয়ে যাবে। আর যদি অনেকগুলো লেন থাকে তাহলে একটা বন্ধ হয়ে গেলে অপর রাস্তা দিয়ে সহজেই চলাচল করা যাবে।
ওয়াইফাই ডিভাইসের নিজে নিজেই ওয়াইফাই চ্যানেল এক্সেস করতে পারে। যদি কেউ এই চ্যানেল সম্পর্কে জানতে চায় বা চ্যানেল বদলাতে চায় তাহলে কয়েকটি এপস ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন Wifi Overview 360, WiFi Analyzer,WiFi Router Booster.
ডিভাইস কিভাবে Wifi এর সাথে সংযোগ স্থাপন করে?
তারবিহীন প্রযুক্তি অনুসরণে বলা যায় যে, বিভিন্ন ডিভাইস যেমন কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন বা স্মার্ট টেলিভিশন ইত্যাদির মধ্যে একটি তারবিহীন এডাপটর শুরু থেকে যুক্ত থাকে।
এই এডাপটর থেকে Wifi কার্ডে সংযোগ যায় এবং তারপর সেই কার্ড রেডিও তরঙ্গ গ্রহণ করে এবং সেই ডিভাইসকে ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত করে থাকে। IEEE 802.11 স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ডিভাইস কি পরিমান ফ্রিকোয়েন্সি গ্রহণ করবে এবং কি পরিমান গতি সম্পন্ন হতে পারবে সেটি নিজেই নির্ধারন করে থাকে।
Wifi এর নিরাপত্তা

অন্য সব প্রযুক্তির মতো Wifi এর ও কিছু নিরাপত্তা কৌশল রয়েছে। এবং এই সংযোগ নিরাপদ না হলে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। Wifi মানুষ বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার করে থাকে যেমন বাসাবাড়িতে বা বিভিন্ন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বা রেস্টুরেন্টে। তাই Wifi এর কিছু প্রটোকল রয়েছে যার মাধ্যমে মোবাইল ডিভাইসকে অনিরাপদ সংযোগ থেকে রক্ষা করা যায়। মোবাইল টাওয়ার কিভাবে কাজ করে?
WEP – এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Wired Equivalent Privacy। এটি হচ্ছে Wifi এর প্রথম ভার্সন যেটা ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে এটি একেবারেই নিষিদ্ধ এবং অধিকাংশ আধুনিক মোবাইল এই নেটওয়ার্কটি মোবাইলে কানেক্ট হতেই বাধা দেয়। এটি খুব দুর্বল একটি কানেকশন।
WPA – এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Wifi Protected Access। এটি তৈরি করা হয়েছিল হ্যাকিং হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। কিন্তু এটিও বেশিদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি কারন হ্যাকাররা এর কোড ভেঙ্গে ফেলেছিল। এটি ও এখন পরিত্যাক্ত।
WPA2 – এটি হচ্ছে সবচেয়ে পুরাতন ওয়াইফাই সিকিউরিটি যেটি এখনো বিভিন্ন মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়। বাসাবাড়িতে ব্যবহার করার জন্য এটি নিরাপদ। তবে এটিও হ্যাকিং এর শিকার হতে পারে।
WPA3 – এটি আধুনিক ওয়াইফাই সিকিউরিটি এবং এটি খুব বেশি গ্রহণযোগ্য একটি সংযোগ। ২০১৯ থেকে প্রায় সকল ডিভাইস WPA3 এর উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে।
পরিশেষে
এই ছিল আজকে WiFi কিভাবে কাজ করে এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। আশা করি ওয়াইফাই কিভাবে কাজ করে, এ নিয়ে আর কোন প্রশ্ন নেই। এবার আপনার মনে যদি প্রশ্ন আসে, পকেট রাউটার কিভাবে কাজ করে? তাহলে এই লেখাটি পড়তে পারেন।