যারা নতুন ফ্রিল্যান্সর বা ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাদের একটি কমন প্রশ্ন হলো, ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি? যুগের প্রবর্তন ও উন্নত বিশ্বের প্রবর্তনে ফ্রিল্যান্সিং কাজটি বর্তমানে প্রায় সব মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ঘরে বসে কাজ করে ইনকামের পথকে মানুষ পছন্দ করে। বর্তমানে বিশ্বে এই পেশায় সংযুক্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে ঊর্ধ্বগতিতে। এই ধরনের কাজ দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে অনেক বড় ভূমিকা রাখতেও সহায়ক। যেকোনোও ফুল টাইম বা পার্টটাইম জবের তুলনায় ফ্রিল্যান্সিং করে মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছেন।
ঘরে বসে কাজ করে সফলতা অর্জনের জন্য ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কোন কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশী তা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার প্রয়োজন। এই লেখায় আমরা ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি এ নিয়ে বিস্তার আলোচনা করবো।
লেখার সূচিপত্র
ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং শব্দের অর্থ মুক্ত বা স্বাধীন পেশা। সাধারণভাবে এক কথায় বলতে গেলে, শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ না করে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে মুক্তভাবে কাজ করাকেই ফ্রিল্যান্সিং বলে। যারা ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করেন তাদের ফ্রিল্যান্সার বলা হয়ে থাকে। ফ্রিল্যান্সররা কারো কাছে বা কোনও প্রতিষ্ঠানের অধীনে থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাধ্য-ভাবে কাজ করতে হয় না।
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গঠন
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ২টি জিনিস আপনার থাকতেই হবে। সে দুটো জিনিস হলো:
- কম্পিউটার বা ল্যাপটপ
- ইন্টারনেট সংযোগ।
কাজ খোঁজা থেকে শুরু করে কাজ জমা দেওয়া সবগুলো কাজই ফ্রিল্যান্সিং এর ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আপনার আয় কেমন হবে তা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করছে। আপনি যতোটা প্রজেক্টের অর্ডার নিতে পারবেন এবং কাজ সাবমিট করতে পারবেন, ততোই আপনার আয়ের পরিমাণ ততোই বাড়বে। এই সেক্টরে কাজ করতে হলে ইংরেজি জানতে হবে। চিন্তিত হবেন না, প্রথম দিকে ইংরেজিতে পটু না হলেও হবে।
এখন আসি আপনার মাথায় এতক্ষণ ধরে ঘুরতে থাকা সবচেয়ে কমোন এবং প্রয়োজনীয় প্রশ্নটিতে। কোথায় এবং কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলো পাবেন? ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলো করার জন্য হাজার হাজার সাইট যেকোনোও ব্রাউজারে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। এই হাজার হাজার ফ্রিল্যান্সিং সাইটের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিগেইনারদের জন্য সেরা সাইটগুলো হলো,
প্রথমেই আপনার পছন্দের কাঙ্ক্ষিত সাইটগুলো সিলেক্ট করে, সেখানে নিজের একটি প্রফেশনাল পোর্টফলিও তৈরি করুন। পোর্টফলিও তৈরির প্রফেশনাল আইডিয়ার অনেক ভিডিও ইউটিউবে পেয়ে যাবেন।
আপনি যদি চান একটি নয় অনেকগুলো কাজ একসাথে করতে পারবেন। সমস্যা নেই আপনি যদি কোনও কিছুতেই দক্ষ না হোন। আপনি আপনার পছন্দের কাজগুলোর উপর কোর্স করে নিতে পারেন। সাধারণতও ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে যে কাজগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশী সেগুলোর অর্ডার নেওয়াও সহজ ততোই এবং আয়ের পরিমাণও বেশী। বেশী চাহিদা-সম্পূর্ণ কাজগুলোর ক্লায়েন্টরা নতুন ফ্রিল্যান্সারদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন। যার ফলে, নতুনরা সহজেই খুব দ্রুতই নিজেকে মানসম্পূর্ন একজন ফ্রিল্যান্সারে রূপান্তরিত করে ফেলতে পারেন। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সাধারণত যেসব কাজ পেয়ে যাবন ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে সেগুলো হলো,
- Machine learning
- Automation
- Data analytics
- Mobile application development
- VR (virtual reality)
- Video production
- SEO (search engine optimization)
- Product management
- Web Development
- Graphics Design
- Digital Marketing
- WordPress
- Animation Design
- Content writing
- Logo Design
এসব কাজের মাঝে কিছু কাজের চাহিদা অনেক বেশী। সেগুলো সম্পর্কেই আজ আপনাকে জানাবো,
১. ওয়েব ডিজাইন ও ডেভোলপমেন্ট
সবচেয়ে চাহিদা-সম্পন্ন ও জনপ্রিয় কাজ হলো ওয়েব ডিজাইন। বর্তমানে সকল কোম্পানি এবং সাধারণ মানুষ তাদের কোম্পানির পরিচয়, নিউজ এবং তথ্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানুষের কাছে তুলে ধরে, যার ফলে তাদের ওয়েবসাইট ডিজাইনের প্রয়োজন পরে। আর এই কাজের জন্য তারা ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে ওয়েবসাইট ক্রিয়েটর বা ডিজাইনার খুঁজে থাকেন।
আপনি কি জানেন না ওয়েবসাইট কি?
ওয়েবসাইট হলো নির্দিষ্ট সার্ভারের অধীনে পাবলিশ করা ওয়েব পাতা, ছবি, আর্টিকেল ইত্যাদি। ওয়েবসাইটটি দেখতে কেমন হবে? কোথায় কোন টপিক থাকবে, লেখাগুলো কিভাবে দেখানো হবে এসব কিছু ওয়েব ডিজাইন। আপনি এখন Projuktibidda.info তে যে আমার লেখা আর্টিকেলটি পড়ছেন এটাও একটি ওয়েবসাইট। আপনার যদি কোনও ধারনাই না থাকে এই সম্পর্কে তাহলে, কিন্তু আপনি কাজটি করতে পারবেন না। প্রথমে অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইট সম্পর্কে সাধারণ ধারণা নিতে হবে। ওয়েব ডিজাইনিং কাজের জন্য ৫টি ওয়েবসাইট।
কিভাবে শিখবেন ওয়েব ডিজাইন?
আমাদের দেশে এমন অনেকগুলো নামকরা ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে যেখানে সরাসরি এবং অনলাইনে বর্তমানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ওয়েব ডিজাইনিং কাজে যুক্ত রয়েছেন অনেকেই। প্রফেশনাল একজন ওয়েব ডিজাইনার হয়ে উঠা সম্পূর্ণ আপনার চেষ্টা ও সৃজনশীলতার উপর নির্ভর করছে। নিচে কিছু কোর্সের লিংক দেয়া হলো:
- FULL STACK WEB DEVELOPMENT (WOVXKFGR7G – এই কুপন কোডটি ব্যবহার করলে ১০% ডিসকাউন্ট পাবেন।)
- HTML5, CSS3 & Bootstrap4 (ফ্রি)
- Laravel – দিয়ে ব্যাক-এন্ড ডেভেলপমেন্ট শিখুন
কেমন আয় হয় ওয়েব ডিজাইনিং করে?
সাধারণতও একজন ওয়েব ডিজাইনার মাসিক সর্বনিম্ন ৮০,০০০ টাকারও বেশী আয় করে থাকেন।
২. কন্টেন্ট রাইটিং
চার ধরনের কন্টেন্ট রাইটিং নিয়ে ফ্রিল্যান্সররা কাজ করে থাকেন – অডিও কন্টেন্ট রাইটিং, ভিডিও রাইটিং, টেক্সট রাইটিং ও ইমেজ কন্টেন্ট। এই কাজের জন্য আপনার লেখার আগ্রহ এবং কোনও বিষয় নিয়ে রিসার্চ করার আগ্রহ ও ধৈর্যের খুবই প্রয়োজন।
কিভাবে শিখবেন কন্টেন্ট রাইটিং?
এই কাজ শিখতে কোনও কোর্স করার প্রয়োজন নেই আপনার। রাইটিং শিখতে হলে আপনার একটি অভ্যাস তৈরি করতে হবে, সেটি হলো প্রতিদিন অন্তত পক্ষে ৩-৪টি ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন টপিকের আর্টিকেল পড়ুন। খুব ভালো হয় যদি এটিকে নিজের প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করে নেন আপনি। তারপরেও যদি গাইডলাইনের প্রয়োজন হয় তাহলে, নিচের কোর্সটি করতে পারেন।
- SEO Content Writing (WOVXKFGR7G – এই কুপন কোডটি ব্যবহার করলে ১০% ডিসকাউন্ট পাবেন।)
আনুমানিক আয়
কন্টেন্ট রাইটিং এর হাজার হাজার কাজ আপনি অনাশায়েই পেয়ে যাবেন ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো থেকে। সাধারণতও ফ্রিল্যান্সিং সাইটের ক্লায়েন্টরা প্রতি ১০০০ ওয়ার্ডের জন্য সর্বনিম্ন ১,০০০-৫,০০০+ বাংলাদেশী টাকা পে করে থাকে।
৩. ডিজিটাল মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং খুবই ডিমান্ডিং জব ফ্রিল্যান্সিং জগতে। এই কাজটির ডিমান্ড অনেক হওয়ার পেছনের কারণ কারোরই অজানা নয়। যে কোনও প্রতিষ্ঠান সেটা যে কাজেরই হোক না কেনও, তার মার্কেটিং এর প্রয়োজন অবশ্যই হয় প্রতিষ্ঠানের প্রসারিত করার জন্য। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মার্কেটিং এর কাজগুলু ডিজিটাল মার্কেটরা করে থাকেন। বর্তমানের এই প্রতিযোগিতার দৌড়ে ডিজিটাল মার্কেটারদের প্রয়োজন ও চাহিদা দুটোই অনেক।
কিভাবে শিখবেন ডিজিটাল মার্কেটিং?
ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে হলে সবার প্রথমে সার্চ ইঞ্জিন অপটামাইজেশন সম্পর্কে জানতে হবে। সোশাল মিডিয়া ব্যবহারের সম্পর্কে জানা থাকা প্রয়োজন। এছাড়া অনলাইন ও অফলাইনে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোর্স ও এসইও এর কোর্স পেয়ে যাবেন।
৪. অনুবাদ
আপনি কয়েকটি ভাষায় দক্ষ? আপনার জন্য এই কাজটি যথাযথ। এর জন্য আপনাকে ক্লায়েন্ট একটি ভাষা থেকে আরেকটি ভাষায় অনুবাদ করার কাজ দিবে। তাই, যদি কয়েকটি ভাষায় দক্ষ হয়ে থাকেন, তাহলে এখনি শুরু করে দিন ট্রান্সলেটর ফ্রিল্যান্সিং জব। আর আয় করুন প্রতি মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত।
৫. ডাটা এন্ট্রি
ফ্রিল্যান্সরদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ ডাটা এন্ট্রি। সাধারণত সব বিগেইনার ফ্রিল্যান্সররা ডাটা এন্ট্রি দিয়েই নিজের ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার তৈরি করে থাকেন। কারণ, এ কাজের চাহিদা ও কাজটি সহজ হওয়াতে ফ্রিল্যান্সিং অন্যান্য কাজের তুলনায়।
কিভাবে কাজটি শিখবো?
ইউটিউব বা যে কোনও পেইড কোর্স করে শিখতে পারেন।
আনুমানিক আয়
ডাটা এন্ট্রি করে সর্বনিম্ন ২০০-৩০০ মাসিক আয় করা যায়।
৬. গ্রাফিক্স ডিজাইন
কোনও তথ্যকে সৃজনশীল মাধ্যমে রেখা ও রঙের মাধ্যমে সাজানো বলা যায় গ্রাফিক ডিজাইনে। এটি পরিপূর্ণভাবে সৃজনশীল কাজ। প্রত্যেক কোম্পানীরই নিজস্ব বিজনেস কার্ড, লগো ও ওয়েব ডিজাইনিং এর তৈরিতে গ্রাফিক ডিজাইনারের প্রয়োজন হয়। যার ফলে, এ কাজের ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা অনেক বেশী।
কিভাবে কাজটি শিখবেন?
ইন্টারনেট হতে Adobe Illustrator ও Photoshop এর সাথে পরিচিত হয়ে নিন। এরপর ইউটিউব থেকে বা যেকোনও ভালো পেইড কোর্স করে নিতে পারেন।
- Graphic Design Fundamentals
- Master Class on Graphics Design (WOVXKFGR7G – এই কুপন কোডটি ব্যবহার করলে ১০% ডিসকাউন্ট পাবেন।)
আনুমানিক আয়
গ্রাফিক ডিজাইনের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশী আয় করা সম্ভব ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে।
৭. ভিডিও এডিটিং
বর্তমানে সকল টিউটোরিয়াল, কোম্পানী এড তৈরি, কোনও মুভির ভিডিও ম্যানেজমে্ট ইত্যাদি অনেক কিছুই ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। যর ফলে ভিডিও এডিটরের এর চাহিদা অনেক বেশী।
কিভাবে কাজটি শিখবেন?
পেইড কোর্স করে শিখতে পারেন।
- Master Class On Video Editing (WOVXKFGR7G – এই কুপন কোডটি ব্যবহার করলে ১০% ডিসকাউন্ট পাবেন।)
আনুমানিক আয়
মাসিক ৫০০০০০ পর্যন্ও আয় করা যায়।
এই ৫টি কাজের চাহিদা ফ্রিল্যান্সিং জগতে অনেক বেশী। এছাড়া আরও কয়েকটি কাজ রয়েছে যার চাহিদা রয়েছে এবং জবের সুযোগ অনেক। সেগুলো হলো:
- Email designer
- Market research
- Virtual assistant
- Software and App Development
- SEO expert
পরিশেষে
আশা করি আপনি বুঝে গিয়েছেন এই কাজগুলো করতে পারলে আপনি দ্রুতই একজন সফল ফ্রিল্যান্সারে পরিণত হয়ে যাবেন। আপনি নিজেকে যতটা দক্ষ করে তুলতে পারবেন ততোই বেশী কাজ পাবেন। তো, আর বসে না থেকে এখনই নিজের পছন্দের কাজটি বেছে নিন এবং সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার একেকটি ধাপ পেরিয়ে এগিয়ে যান।