বাংলাদেশ ইন্টারনেট স্পীডের দিক দিয়ে উগান্ডা কিংবা সুদানেরও পিছনে। কিন্তু তারপরও, ইন্টারনেট ফাস্ট করার উপায় আছে কিছু। ইন্টারনেট আধুনিক জীবনের একটি মূল অংশ।
ধরুন, আপনি সারা দিনের কাজের পরে বাড়ি ফিরে গেছেন এবং আপনার প্রিয় শো দেখতে বসেছেন। কিন্তু ক্রমাগত বাফারিং এর কারণে দেখতে পারছেন না, ফলে বিরক্ত হচ্ছেন। এখনকার সময়ে সবচেয়ে ভয়ানক কথা হল, আমার ইন্টারনেটের গতি কম, মানে ধীর, একদম কচ্ছপের মত।
যাইহোক, চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই, এই লিখায় আপনাকে ইন্টারনেট সংযোগ দ্রুত করার উপার বলে দেওয়া হবে। রাউটার থেকে ডিভাইসের দূরত্ব এবং তার সাথে ডিভাইসের সমস্যা ইন্টারনেটের গতি কম হওয়ার কারনগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে এই সমস্যা গুলি সমাধান করে সংযোগের গতি বাড়িনো সম্ভব।
ইন্টারইন্টারনেট ফাস্ট করার উপায়গুলো নাম্বার ডায়াল করার মতো সহজ নয়। তবে এই লিখাটি আপনাকে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়। একবার আপনার নেটের গতি বেড়ে গেলে, আপনি অনায়াসে স্ট্রিমিং সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন। আপনার বন্ধুদের সাথে অনলাইনে গেমিং করতে পারবেন বা আপনার স্মার্টফোনে নেট ব্রাউজ করতে পারবেন। এইখানে প্রদত্ত ১০ টিপস অনুসরণ করে আপনি আপনার ইন্টারনেটের গতির সমস্যা সমাধান করতে পারবেন।
লেখার সূচিপত্র
ইন্টারনেট ফাস্ট করার উপায়
১. রাউটার বন্ধ এবং চালু করা
হাসছেন নাকি! হ্যাঁ, এই প্রথম পরামর্শটি সত্যিই কাজ করে। নেট ধীর গতির হয়ে গেলে আপনার রাউটারটি আনপ্লাগ করুন, অথবা আপনি পাওয়ার বাটন টিপতে পারেন বা আপনার ব্রাউজারের মাধ্যমে এটি বন্ধ করতে পারেন।
ইন্টারনেট জগতে যেসব ভুল করা উচিত নয়!
এটি পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ১০ সেকেন্ডের মত অপেক্ষা করুন। ব্যাস, এবা দেখেন তো? ইন্টারনেট ফাস্ট করার উপায় হিসাবে অধিকাংশ আইএসপি কোম্পানি এই কথাটিই বেশী বলে।
২. ডাটা ক্যাপ পরীক্ষা করা
ডাটা ক্যাপ বলতে আপনার স্পিড লিমট করে রাখা আরকি।। কিছু ইন্টারনেট সরবরাহকারী আপনার ইন্টারনেট প্লান ডেটা ক্যাপ রেখে থাকে। যদিও বেশিরভাগ আইএসপি কেবল এর জন্য আপনাকে অতিরিক্ত চার্জ করবে এবং তা পরিশোধ না করা পর্যন্ত আপনাকে খারাপ ইন্টারনেটের সার্ভিস দিবে। সুতরাং বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
৩. রাউটার কাছাকাছি রাখা
আপনার থেকে যদি রাউটার দূরে হয় তাহলে, অবশ্যই আপনার নেট সার্ভিস ভাল হবেনা। আপনি কাজ করছেন ৩ তলায় আর আপনার রাউটার হল ২ তলায়, তাহলে এতে আপনার নেটের অবস্থা খুব একটা ভাল হবেনা। সুতরাং আপনার রাউটারটিকে আপনার কাজের কাছাকাছি জায়গায় সেট করুন।
৪. নেটওয়ার্কে অন্যান্য সংযুক্ত ডিভাইসগুলির সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা
আপনার নেটওয়ার্ক থেকে অন্যান্য ওয়্যারলেস ডিভাইস – যেমন হোম- সিকিউরিটি এবং স্মার্ট- হোম ডিভাইসগুলি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলুন। যে ডিভাইস দিয়ে কাজ করছেন না, অযথা সে ডিভাইস সংযোগ রাখার কোন দরকার নেই। যে ডিভাইস টি দিয়ে কাজ করছেন, সে ডিভাইস টি শুধু মাত্র সংযুক্ত রাখুন, ভাল নেট পাবেন।
৫. ওয়াই-ফাই এর পরিবর্তে একটি ইথারনেট ক্যাবল ব্যবহার করা

যদিও বিষয়টি খানিক টা ঝামেলার হতে পারে, তবে বেশিরভাগ কম্পিউটার এবং ল্যাপটপের একটি ইথারনেট পোর্ট রয়েছে যা আপনি আপনার রাউটারের সাথে একটি সংযোগ তৈরি করতে ব্যবহার করতে পারেন। একটি স্ট্যান্ডার্ড CAT5 কেবল ১০০ এমবিপিএস অবধি নিতে পারে, আদর্শ পরিস্থিতিতে প্রায় দ্বিগুণ ২.৪ গিগাহার্জ সংযোগ নিতে পারে।
৬. ব্রাউজারের ক্যাশ পরিষ্কার করা
ব্রাউজার ক্যাশ সাধারণত আপনার ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা দ্রুত করার উদ্দেশ্যে করা হয়। কিন্তু যদি এটি অপ্রয়োজনীয় ফাইল দিয়ে পূর্ণ হয়, এটি বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং, ব্রাউজারের ক্যাশ যথাযথ ভাবে পরিষ্কার করুন।
৭. ভাইরাসের জন্য কম্পিউটার স্ক্যান করা
কখনও কখনও, আপনার ইন্টারনেট গতি ধীর হয়ে যেতে পারে ভাইরাসের কারনে। আপনি ধরুন অনেক বড় কোন ফাইল ডাউনলোড বা আপলোড করছেন, সেই সময় অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাস অ্যাটাক হতে পারে, জাড় ফলে গতি কমে যায়, ফাইল আপলোডে অনেক সমস্যা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাস কম্পিউটারের ফাইল তাদের নিজস্ব সার্ভারে আপলোডও করে, ফলে নেট স্লো হয়।
আরও পড়ুন: ভাইরাস কাটার সফটওয়্যার ডাউনলোড।
এই ক্ষেত্রে অবশ্যই স্ক্যান করতে হবে, কোন ভাইরাস আছে কিনা বুঝার জন্য। যদি ভাইরাস থাকে তাহলে তা অপসারণ করতে হবে। নাহলে আপনার পিসি বা ফোন বিপর্যস্ত হবে এবং নেট ও ভাল পাবেন না।
আর বর্তমান সময়ে কোন ডিভাইস নষ্ট হওয়া মানে হল মাথা টাই নষ্ট হয়ে যাওয়া। ভাগ্যক্রমে, এখন প্রচুর ভাল অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার রয়েছে। এমনকি আপনি বিনামূল্যেও অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার নিতে পারেন।
একটি নির্ভরযোগ্য প্রোগ্রাম ইনস্টল করে কোথাও কোনও বাগ লুকিয়ে আছে কিনা তা জানতে খালি স্ক্যান করুন আর যথাযথ পদক্ষেপ নিন।

৮. ভাল রাউটার
এতে হয় তো আপনার কিছু অর্থ বেশি খরচ হবে তবে তা একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হবে আপনার ডিভাইস এবং নেট সংযোগের জন্য। একটি ভাল ওয়্যারলেস রাউটার আপনাকে দ্রুত ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড বা ওয়াইফাই প্রোটোকল ব্যবহার করার সুযোগ দিবে,এবং আপনি পাবেন ঘোড়ার মত গতিশীল নেট।
আরও পড়ুন: WiFi কি? WiFi কিভাবে কাজ করে (বিস্তরিত)
এছাড়া আপনি যদি একটি ভিপিএন রাউটার কিনে থাকেন তাহলে এর মাধ্যমে আপনার অবস্থান ও লুকাতে পারবেন। এছাড়া একটি নতুন রাউটার আপনাকে আপনার বর্তমান রাউটারটি পুনরায় মূল্যায়ন করার সুযোগ দেয়। চেষ্টা করবেন Dual-Band বা Tri-Band এর রাউটার কিনতে স্পিড যেন মিনিমাম ৩০০ এমবিপিএস থাকে। এটাও ইন্টারনেট ফাস্ট করার উপায় হিসাবে বেস্ট।
৯. ইন্টারনেট সরবরাহকারীর কাছে অভিযোগ করা
যদিও এটি তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করবে না। কিন্তু প্রচুর অভিযোগ করা হলে, সরবরাহকারীরা তাদের সার্ভিস উন্নত করার দিকে নজর দেয়। এমনকি আপনাকে জানানো হবে যে আপনার নেটের অবস্থার উন্নত করার জন্য তারা কাজ করছে এবং কাজ শেষ হলে তারা আবার কল দিয়ে জিজ্ঞেস ও করবে যে নেট ঠিক আছে নাকি। তবে এই ক্ষেত্রে অনেক দিন সময় লাগে।
১০. নতুন ইন্টারনেট সার্ভিস নেওয়া
সবকিছু চেষ্টা করার প্র ও যদি আপনার নেটের গতি ধীর ই থাকে তাহলে সবচেয়ে ভাল হয় সংযোগ চেঞ্জ করে ফেললে। নতুন সংযোগের জন্য আপনি একটি নতুন আইএসপির প্যাকেজ কিনতে পারেন। ইন্টারনেট সংস্থাগুলি সর্বদা আপনাকে বিভিন্ন ধরনের সংযোগ অফার করে থাকে সুতরাং, একটি নতুন, দ্রুততর সার্ভিস আপনি নিতেই পারেন।
পরিশেষে
যাইহোক, এই ছিল আজকে ইন্টারনেট ফাস্ট করার উপায়। আপনি আপনার সমস্যা বুঝে যদি পদক্ষেপ নেন তাহলে বেশি কার্যকরী ফলাফল পাবেন। আর যদি আপনার ফোন স্লো থাকে তাহলে, মোবাইল স্লো হলে কি করব? লেখাাটি পড়তে পারেন।