ভালো মানুষ চেনার উপায়, কি অদ্ভুদ কথা তাই না! মানুষ আবার চেনা যায় নাকি? সত্যি কথা বলতে কি, প্রত্যেক প্রাণী জন্মগতভাবে তাদের পরিচয় লাভ করে, একমাত্র মানুষকেই মানুষ হয়ে উঠতে হয়। হাসান আজিজুল হকের এই কথাটার গভীরতা অনেক।
জন্মসূত্রে একজন মানুষ অবয়বে মনুষ্য আকৃতি ধারণ করলেই, তিনি মানুষ বলে বিবেচিত হন না। আচার, আচরণ, চরিত্র সব কিছুর উত্তম মিশেলে মানুষকে তার ভালো গুণ দিয়ে মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠতে হয়।
চলমান পৃথিবীতে নানান কাজে নিত্য নতুন মানুষের সাথে আমাদের পরিচিত হতে হয়। কাজের কথা বলুন, আত্মীয়তার কথা বলুন, বৈবাহিক সম্পর্ক বলুন, ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রে বলুন, প্রতিটা সময়েই সম্পর্কটা ভালো মানুষের সাথে হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা থাকে।
কিন্তুু কী এক বিপদ! ভালো মানুষের গায়ে তো আর সাইন বোর্ড ঝুলানো নেই যে, সে ভালো মানুষ। মানুষ আসলেই কেমন তা আমরা তার চরিত্র এবং বৈশিষ্ট্য দিয়ে কিছুটা আঁচ করতে পারি। মানুষের চারিত্রিক গুণ দেখেই আমরা ভালো মানুষ চেনার কাজটা করতে পারি।
যদিও মানুষ চেনা ভীষণ কষ্ট তথাপি ভালো মানুষ কেমন বৈশিষ্ট্যের হন, তার একটা সুনির্দিষ্ট সম্ভাব্য স্ট্রাকচার মানুষ অতীতের ভালো মানুষদের আচরণের উপর নির্ভর করে ধরে থাকেন। ভালো মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই কোটি মানুষের মাঝে, হরেক রকমের মানুষের মাঝে ভালো মানুষ চিনতে সহয়তা করবে।
লেখার সূচিপত্র
ভালো মানুষ চেনার উপায় হিসাবে যেসব বৈশিষ্ট্য থাকে
১. সততা
সততা একজন মানুষের সবচেয়ে প্রধান বৈশিষ্ট্য, যে কারণে তাকে ভালো বলা যায়। ভালো মানুষ জীবনের প্রতিটা কাজে সৎ থাকেন, কোন ভাবে মিথ্যার আশ্রয় নেন না। মিথ্যা বলা কোন মানুষকে না আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন, না ভরসা।
একজন ভালো মানুষ তার সততা দিয়েই সম্মানিত হন। কারও নিকট সততা থাকলে, তাকে ভাল মানুষ হিসাবে চিহ্নিত করতে পারেন। তবে, খেয়াল রাখতে হবে তার সততা যেন, কোন প্রতারণা না হয়।
২. সহমর্মিতা
অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া ভালো মানুষের লক্ষণ। সমাজে অনেক মানুষ দেখা যায়, যারা অন্যের দুঃখে কিংবা পরাজয়ে নিজে জয়ী হওয়ার মত আনন্দ পায়। কিন্তু একজন ভালো মানুষ অন্যের বিপদে তার দুঃখ বুঝতে চেয়ে সহমর্মি হয়ে পাশে থাকেন। বিপদে মানুষের পাশে থাকতে পারলে তিনি নিজ মন থেকে খুশি হন।
এই বৈশিষ্ট্যের মানুষদের আপনি চোখ বন্ধ করে ভাল মানুষের কাতারে ফেলতে পারেন। সমাজে এই ধরণের ভাল মানুষগুলোই প্রয়োজন।
৩. ভুল স্বীকার
নিজের অপরাধ হয়েছে বুঝতে পেরেও অনুতপ্ত না হওয়া ব্যপারটা, মানুষকে আরও বেশি অপরাধী করে তোলে। আর এই কাজটা ভালো মানুষ কখনোই করেন না। নিজের ভুল বুঝতে পারলে একজন ভালো মানুষ অনুতপ্ত হন এবং ক্ষমা চান। যেটা মানুষের অনেক বড় গুণ।
৪. ক্ষমা করার প্রবণতা
ক্ষমা করে দেয়া ভালো মানুষের লক্ষণ। একজন উত্তম মানুষ নিজে ভুল করলে অনুতপ্ত হয়ে যেমন ক্ষমা চান, তেমনি অন্য কেউ তার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে, কারো উপর কষ্ট পেলে ক্ষমা করে দেন। ক্ষমা করে দেওয়ার এই গুণে তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে সুবিধা হয়।
৫. নিঃস্বার্থভাবে উপকার
একজন উৎকৃষ্ট মানুষ কখনো উপকার করার সময় নিজে তা ফিরে পাবেন কিংবা কোন সুবিধা পাবেন, এই আশা করে উপকার করেন না। তিনি নিঃস্বার্থভাবে অন্যের সাহায্য করেন। সাহায্য করতেই পছন্দ করেন এবং এটা তার সহজাত বৈশিষ্ট্য।
৬. ধৈর্যশীল
ধৈর্য একটা মানুষের অন্যসব গুণের প্রাথমিক গুণ বা কেন্দ্র। যার ধৈর্য আছে তার অন্য গণগুলোও অবধারিত ভাবে চলে আসে। যেমন একজন ধৈর্যশীল মানুষ কখনোই মেজাজ গরম করেন না, অতি মাত্রায় ক্রোধী হন না এবং বিপদে শান্ত থাকেন, ধৈর্য ধরে থাকেন।
৭. ধার্মিকতা
একজন ভালো মানুষ যে ধর্মের অধিকারী হন না কেন, সে ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী তার জীবন পরিচালনা করেন।ধর্মের রীতিনীতি পালন করেন। ধর্মিকতা তার জীবনধারাকে খুবই সুন্দর এবং মর্যাদা পূর্ণ করে তোলে। ধার্মিকতা একজন মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব।
নাস্তিক মানুষ কিংবা অজ্ঞেয়বাদীরা হয়তো আমার এটা পড়ে খেপে যাবেন। কিন্তু, আপনারা চাইলে, সত্যিকারের ধার্মিক মানুষের সাথে কিছুটা সময় কাটিয়ে দেখতে পারেন।
৮. দায়িত্ববান
দায়িত্ব অবহেলা করে ,মানুষ কখনো ভালো মানুষ হতে পারে না। ভালো মানুষ মাত্রই দায়িত্ববান। পরিবার, সমাজ, পেশাগত জীবন, সবখানেই তিনি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।
৯. সন্তুষ্ট থাকা
এর এই আছে, তার সেই আছে আমারও তাই থাকতে হবে, এমন করে ভাবেন না কোন ভালো মানুষ।অন্যের কত বেশি আছে তার দিকে না তাকিয়ে নিজের যা কিছু আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা ভালো মানুষের স্বভাব।
১০. ওয়াদা রক্ষা করা
কাউকে কথা দিয়ে কথা না রাখার মত মন্দ কাজ কখনোই ভালো মানুষরা করেন না। যখন যার কাছেই কথা দেন সেই কথার মর্যাদা তিনি রাখেন। ভালো মানুষ চেনার উপায় হিসাবে এই জিনিসটাকে সবসময় মাথায় রাখুন।
১১. পরিবারের কাছে ভালো হওয়া
অনেক সময় দেখা যায় মানুষ বাইরের লোকের কাছে এবং সামাজিক মাধ্যমে শো অফ করে নিজের বাইরের রুপ প্রকাশ করে কিন্তু ভিতরগতভাবে এবং নিজের পরিবারের কাছে ভালো নয়।অথচ উত্তম মানুষ সে যে তার পরিবারের কাছে ভালো। একজন ভালো মানুষ সবসময়ই তার পরিবারের সদস্যদের কাছে ভালো।
১২. নিরহংকার
এরকম একটা কথা আছে যে, ” মানুষকে চেনা যায় যখন তার কিছু থাকে না আর যখন তার অনেক কিছু থাকে, এই দুই অবস্থায়।” একজন উত্তম চরিত্রের মানুষ কখনো তার জীবনের প্রাপ্তি আর অর্জনগুলো নিয়ে অহংকার করেন না।
তিনি তার এসব প্রাপ্তির জন্য স্রষ্টার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন এবং বিনয়ী হয়ে থাকেন। আর অপ্রাপ্তি নিয়ে হতাশ হন না, ধৈর্য ধরে সুন্দর সময়ের অপেক্ষা করেন। জ্বি, নিরঅহংকারী ভালো মানুষ চেনার উপায় হিসাবে ধরা হয়।
১৩. সম্পর্কের যত্ন নেয়া
উৎকৃষ্ট মানুষ সবসময়ই তাকে কেন্দ্রিক সব সম্পর্কেরই যত্ন নেয়। বাবা-মা, ভাই-বোন, প্রতিবেশী,আত্মীয়ের সম্পর্কে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে চেষ্টা করেন।
১৪. রাগ নিয়ন্ত্রণ
রাগ মানবচরিত্রের একটি স্বাভাবিক পক্রিয়া। প্রত্যেকেরই রাগ ব্যাপারটা কাজ করে, কেউ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন আর কেউ না পেরে সকলের সামনেই প্রকাশ করে ফেলেন। কিন্তু একজন ভালো মানুষ যখন তখন রাগ প্রকাশ না করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
১৫. সুন্দর ব্যবহার
একজন ভালো মানুষের ব্যবহার সবসময়ই ভদ্র সুন্দর।তার কথা বলা থেকে শুরু করে সব ধরন কাজে নৈতিকতা ও নমনীয়তা থাকে। ভালো মানুষ চেনার উপায় হিসাবে এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
১৬. সহজ সরল
ভালো মানুষের আরেকটি স্বভাব হলো তার সারল্য।তিনি কখনো ঔদ্ধত্য কিংবা উগ্র স্বভাবের হন না। তিনি সব সময় বিনয়ী হন।
১৭. গীবত মুক্ত থাকা
অন্যের দোষ নিয়ে কথা বলতে থাকলে এই কথার কোন শেষ নেই। ভালো মানুষ অন্যের ভুল নিয়ে কথা না বলে নিজেকে নিয়ে থাকেন।নিজের ভুলগুলো শুধরানোর চেষ্টা করেন।পরনিন্দা করা তার বৈশিষ্ট্য নয়। ভালো মানুষ চেনার উপায় এর মধ্যে অন্যতম হলো, ভালো মানুষ কারও গীবত করবে না।
১৮. নিজেকে আহামরি কিছু না ভাবা
নিজেকে একটা কিছু ভেবে বসে থাকা মানুষ ধীরেই অহংকারি হয়ে উঠেন।আশপাশের কাউকে খুব একটা পাত্তা দেন না। কিন্তু ভালো মানুষ বরাবরই নিজেকে বড় করে দেখেন না।আপনাকে বড় বলে বড় সে নয়,লোকে যারে বড় বলে বড় সে হয়।
১৯. লোভ না করা
লোভ মনুষ্য প্রজাতির ধ্বংসের অনেক বড় একটা কারণ। মাত্রাতিরিক্ত লোভ মানুষকে ভোগবিলাসে অন্ধ করে রাখে। কিন্তু একজন ভালো মানুষ কখনোই লোভী হননা তিনি বরাবরই সন্তুষ্ট এবং তৃপ্ত থাকেন নিজের যা আছে তা নিয়েই।
২০. চারিত্রিক শুদ্ধতা
পার্থিব মানুষের একটি স্বভাবগত স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য তাদের জৈবিক চাহিদা।বীপরিত লিঙ্গের প্রতি মানুষের স্বভাবগত আকর্ষণ মানুষের থাকবেই।ধর্ম পরিবার স্বীকৃত এই জৈবিক চাহিদা নিবারণের উত্তম পন্থা বিবাহ।একজন ভালো মানুষ কখনো বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কে যুক্ত থাকেন না।এসব সম্পর্কের ক্ষেত্রের চারিত্রিক পবিত্রতা ও শুদ্ধতা একজন মানুষকে ভালো এবং সম্মানীয় করে তোলে।
উপসংহার
এই ছিল আজকে ভালো মানুষ চেনার উপায় নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। জীবনের পথচলায় মানুষ চিনতে পারার কাজটা খুব যেমন জরুরী তেমনই কঠিন। যে কোন নতুন সম্পর্কে সৃষ্টিতে ভালো মন্দ যাচাই করে সম্পর্কে এগিয়ে নিতে হয়। সেক্ষেত্রে এই লেখা আপনার উপকারে আসতে পারে। চারিত্রিক গুণ আর বৈশিষ্ট্য দেখে ভালো মানুষ চিনে নিন আপনার বিবেচনায়।
যাইহোক অনেকে ভাল মানুষ ফেসবুকে আসক্ত হয়ে ডিপ্রেসনে পরে যান, তারা চাইলে ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় লেখাটি পড়তে পারেন।