পকেট রাউটারের নাম শুনেছেন কোন দিন? জানেন নাকি, পকেট রাউটার কিভাবে কাজ করে? প্রযুক্তি দিন দিন অনেক উন্নত হচ্ছে। প্রযুক্তি সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আজ আমাদের সব কিছুই ইন্টারনেট নির্ভর।
কোন কিছু জানার জন্য আমরা সব সময় গুগল সার্চ করি, তাই সব সময় সাথে থাকতে হয় ইন্টারনেট কানেকশন। ডাটা ব্যবহারে অনেক সময় সমস্যা হয়। তাই এর জন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো পকেট রাউটার বা পকেট ওয়াইফাই।
অনেক জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে পকেট রাউটার সব সমস্যার সমাধান করে দিবে। পকেট রাউটার বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন: মোবাইল হটস্পট, মাইফাই, পোর্টেবল ওয়াইফাই, ওয়াইফাই ডংগল, মোবাইল ওয়াইফাই, ওয়াইফাই এগ ইত্যাদি।
লেখার সূচিপত্র
পকেট রাউটার কি?
পকেট রাউটার এমন একটি যন্ত্র যা দেখতে ছোট মোবাইল ব্যাটারির মতো। এটা ওজনে খুবই হালকা হয়ে থাকে এবং খুব সহজেই হাতের তালু বা পকেটে জায়গা হয়ে যায়।
এটার কাজ হচ্ছে মোবাইল, ট্যাবলেট, ক্যামেরা বা অন্য কোন ডিভাইসে ইন্টারনেট কানেকশন দেয়া। এটা খুব সহজেই বহন করা যায়, তাই কোথাও ভ্রমনে এটা দেয় নিশ্চিত নেট কানেকশন।
পকেট রাউটার দিয়ে একইসাথে ১০ টি বা তার বেশি মোবাইল ফোন কানেক্ট করা যাবে। এটা পাসওয়ার্ড দিয়ে সিকিউরড করা থাকে, যাতে শুধুমাত্র নিজেদের ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
পকেট রাউটার কিভাবে কাজ করে?
পকেট রাউটারগুলো থ্রিজি বা ফোরজি কানেকশন তৈরি করতে পারে; এক ধরনের সংকেতের মাধ্যমে। বাসাবড়িতে আমরা যেভবে ওয়াইফাই কানেকশন ব্যবহার করি, এটাও তার মতই। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে বাসারটা আমরা কোথাও নিয়ে যেতে পারিনা, কিন্তু পকেট রাউটার সাথে সাথে নিয়ে যেতে পারি।
পকেট রাউটার এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সাধারনত ১০-১৫ মিটার হয়ে থাকে। এতে কোন তার সংযোগের দরকার হয়না এবং কোন সফটওয়্যারের দরকার হয় না। শুধুমাত্র সুইচ অন করতে হয় এবং নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হয়।
এটা মোবাইল হটস্পটের মতো কাজ করে। এতে একটি সিম কার্ড থাকে যার মাধ্যমে এটি বিভিন্ন ডিভাইসে ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে থাকে। একবার সিম কার্ডের সাথে সংযোগ হয়ে গেলে এটি মোবাইলের মতো কাজ করে থাকে।
কোনো কোনো কোম্পানি লক করা পকেট রাউটার বিক্রি করে থাকে। এতে সমস্যা হয় ঐ রাউটারে শুধুমাত্র ঐ নির্দিষ্ট সিম কার্ড ব্যবহার করা যায়। এতে অনেক সময় খরচ বেশি হয়। তাই পকেট রাউটার কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এটি অনলক থাকে।
- আরও পড়ুন: আইপি ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে।
এতে নিজের ইচ্ছামত যেকোন সিম কার্ড ব্যবহার করা যাবে। রাউটারের কভারেজ যেসব এলাকা পর্যন্ত থাকবে সেই জায়গা পর্যন্তই এটি ব্যবহার করা যাবে।
ভালো কিছু পকেট রাউটারের নাম হলো
- TP-Link M7350
- Huawei Mobile Wifi 3s (E5576-320)
- TP-Link M7200
- TP-Link M7450
- Huawei 5G Mobile Wifi Pro E6878-370
পকেট রাউটার কেন ব্যবহার করব?
আশা করি ইতোমধ্যে বুঝে গিয়েছেন, পকেট রাউটার কিভাবে কাজ করে? এবার কথা হলে, পকেট রাউটার কেন ব্যবহার করব?
আমরা যখন কোথাও ঘুরতে বের হব, নিজে অথবা পরিবারের সবাইকে নিয়ে, বা কোন বিজনেস ট্যুর এটেন্ড করতে যাব তখন আমরা এটি ব্যবহার করতে পারি। এতে একই সাথে পরিবারের সবাই বা বিজনেস কলিগ সবাই নেট সুবিধা পাব।
অনেক জায়গায় নেট কানেকশন থাকলেও সেগুলো সব সময় নিরাপদ থাকেনা। তাই পকেট রাউটার থাকলে নিশ্চিন্তে সবাই মিলে নেট কানেকশন ব্যবহার করতে পারব।
এটি ছোট হওয়াতে যে কোন স্থানে বহন করে নিয়ে যাওয়া যাবে। তবে খেয়াল করতে হবে রাউটারে ব্যবহৃত সিম যেন আনলক হয় এবং ডাটা রেট যেন ভালো হয়।
পকেট রাউটার কেনার ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় বিষয়
পকেট রাউটার খুব কাজের জিনিস কিন্তু ক্রয় করার ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয় খেয়াল করতে হবে।
১. আকার: কিছু কিছু রাউটারের আকার বড় হয় আবার কিছুর ছোট হয়। ক্রয় করার ক্ষেত্রে আমাদের ছোট রাউটার প্রাধান্য পাওয়া উচিত।
২. কাজের ধরন: কিছু কিছু রাউটার আছে যেগুলো শুধুমাত্র ইন্টারনেট কানেকশন ট্রান্সফার করে আবার কিছু কিছু রাউটার একটু উন্নত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। সেগুলার সাথে একটা পাওয়ার ব্যাংক থাকে রাউটার চার্জ করার জন্য এবং সেই রাউটারগুলো এসএসএস রিসিভ ও সেন্ড করতে পারে।
৩. উপযোগিতা: সব ধরনের পকেট রাউটারই হটস্পটের মতো ওয়াইফাই কানেকটেড থাকে। তবে কিছু কিছু থাকে সেগুলো ইউএসবি দিয়ে ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট করতে হয় আবার কিছু কিছু থাকে সেগুলো ল্যাপটপে কানেক্ট করা ছাড়াই কাজ করে থাকে।
৪. মূল্য: রেঞ্জের উপর ও স্পিডের উপর ভিত্তি করে রাউটারের মূল্য নির্ভর করে থাকে। শুধুমাত্র নিজের ব্যবহারের জন্য হলে একরকম রাউটার কেনা উচিত।
আবার যদি ছোটখাটো কোন অফিসের জন্য হয় তখন সেখানে সবার ব্যবহারের জন্য বা কোন কিছু দ্রুত ডাউনলোড করার জন্য একটু বেশি মূল্যের রাউটার ব্যবহার করা উচিত।
৫. স্পিড: বাজারে বিভিন্ন ধরনের রাউটার আছে যেমন থ্রিজি, ফোরজি এবং ফোরজি প্লাস। সবচেয়ে বেশ স্পিড হলো ফোরজি প্লাসের, তারপর ফোরজি।
৬. লকড অথবা অনলকড: এই বিষয়টি আমরা আগেই আলোচনা করেছি যে রাউটারের মধ্যে যে কোন সিম ব্যবহার করার স্বাধীনতা আমার থাকতে হবে এবং এই জন্য অবশ্যই রাউটার আনলকড হতে হবে। যদি আমি অন্য কোন দেশ ভ্রমণে যাই তখন যেন সেই দেশের সিম ব্যবহার করতে পারি। এতে আমার খরচ সাশ্রয় হবে।
পকেট রাউটার সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা থাকা জরুরি
কেউ কেউ ভাবে যে পকেট রাউটার দিয়ে অন্য কোন ওয়াইফাই কানেকশন চুরি করে আনা যাবে। এ ধারণাটি ভুল। প্রথমত এই চুরি করতে চাওয়া এক ধরনের অপরাধ।
আর দ্বিতীয়ত এটা আসলে করাই যাবেনা। কারণ, পকেট রাউটার ব্যবহার করার জন্য এতে একটি সিম ব্যবহার করতে হবে এবং এই সিমে ডাটা থাকতে হবে। কাজেই অন্যের ওয়াইফাই চুরি করার কোন উপায়ই এতে নেই।
অনেক সময় কোম্পানিরা বিভিন্ন প্যাকেজ ডাটা অফার করে। সেখান থেকেও পছন্দ মতো ডাটা ক্রয় করা যাবে।
পকেট ওয়াইফাই ব্যবহারের সুবিধা
আমরা আগেই আলোচনা করেছি যে পকেট রাউটার আকারে খুবই ছোট তাই এটি বহনে খুবই সুবিধা। অন্য কোন অজানা ওয়াইফাই কানেকশন ব্যবহার করার চেয়ে নিজস্ব রাউটার ব্যবহারে নিরাপত্তা ও নিশ্চিত হয়। কোথাও ভ্রমণে গেলে একইসাথে অনেকে ব্যবহার করা যায়।
উপসংহার
এই ছিল আজকে পকেট রাউটার কিভাবে কাজ করে নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। আশা করি, এই লেখার মাধ্যমে পকেট রাউটার কিভাবে কাজ করে এই নিয়ে আপনার সংশয় দূর হয়েছে। তারপরেও যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে, কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
৩২ জিবি মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে পকেট রাউটার দিয়ে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
বুঝিয়ে বললে বিশেষ উপকার হবে।