আমাদের দেশে এখন সবচেয়ে বেশি যে পেশাতে মানুষজন জড়াচ্ছে তা হচ্ছে পুলিশের চাকরি। বর্তমানে পুলিশের পেশায় চাকরি করা লোকের সংখ্যা অনেক। অনেক অনেক মানুষ এই চাকরিতে যোগদান করছেন।
এর পিছনে সবচেয়ে বড় একটি কারণ পুলিশে চাকরি করতে খুব বেশি যোগ্যতা লাগেনা। উচ্চপদে যেতে অবশ্য মাস্টার্স বা ডিগ্রি কমপ্লিট করা লাগে তবে সাধারণ পজিশনে যোগদান করার জন্য কেবলমাত্র এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেই হয়।
বর্তমানে আমাদের দেশে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও পুলিশের চাকরিতে যোগদান করছে সমানতালে। আজ আমরা এই লেখায় মেয়েদের পুলিশ হওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করছি। তার আগে, পুলিশের পদক্রম ও বেতন সাথে পুলিশ র্যাংক ব্যাজ সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়ে নিতে পারেন।
লেখার সূচিপত্র
মেয়েদের পুলিশ হওয়ার যোগ্যতা
১. বয়সের ধরন?
মেয়েদের পুলিশ হওয়ার যোগ্যতা হিসাবে প্রথম বিষয় হলো, তার বয়স কমপক্ষে ১৮ হতে হবে। ১৮ বছর বয়সের নিচে কাউকে নেয়া হয় না। আর ২০ বছর বয়স পর্যন্ত এই আবেদন করা যায়। ২০ বছর বয়সের পর সময়সীমা থাকে না।
তবে, যদি আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে থাকেন, তবে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত আপনি আবেদন করতে পারবেন। ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যের সকলে প্রাধান্য পাবে।
২. উচ্চতা
মেয়েদের জন্য নূন্যতম ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। ৫ ফুট ২ ইঞ্চির নিচে কোনো মেয়েকে পুলিশের চাকরি নেয়া হবে না। আর ৫ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার বেশি হলে তাতে কোন প্রকার সমস্যা নেই।
৩. ওজন
বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ মানের মধ্যে যদি ওজন থাকে তবে, সেক্ষেত্রে তাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের ওজন উচ্চতার উপর নির্ভরশীল। ধরুন একজন নারীর উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি আর ওজন ৫৩ কেজি। তাহলে তার বি এম আই ২০.৬৫। এটি সুস্বাস্থ্যের আদর্শ মান নির্দেশ করে।
আর একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনাকে অবিবাহিত হতে হবে। বিবাহিত হলে আপনি এই চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন না।
৪. শিক্ষাগত যোগ্যতা
পুলিশের চাকরির জন্য প্রার্থীর নূন্যতম এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত পড়াশোনা থাকতো হবে। যদি উচ্চ কোনো পদের জন্য অ্যাপ্লাই না করে সাধারন পদের জন্য অ্যাপ্লাই করা হয়, তবে এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত পড়াশোনা বাধ্যতামূলক। আর এ পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ থাকতে হবে ২.৫। তাহলে, সহজেই পুলিশের চাকরিতে আবেদন করা যায়।
কী কী ধাপ পার হতে হয়?
পুলিশের চাকরি করার জন্য বেশ কয়েকটি ধাপ আপনাকে পার হতে হবে। নিচে তা পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করা হলো-
ধাপ ১
প্রথম ধাপে পুলিশের চাকরির আবেদনের পর আপনাকে নির্ধারণ করা কোনো একটি তারিখে নিজের জেলার পুলিশ লাইনস মাঠে সঠিক সময়ে উপস্থিত থাকতে হবে। আপনাকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। আপনার জন্ম নিবন্ধন পত্রের ফটোকপি, পিতা মাতার এন. আই. ডি. কার্ডের ফটোকপি এসব কাগজগুলো অবশ্যই সাথে করে নিয়ে যাবেন।
ধাপ ২
সেখানে আপনার বয়স পরীক্ষা করা হবে। শারীরিক কিছু বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আপনার বয়স নির্ধারণ করা যায়। বিশেষ করে দাঁত চেক করেও বয়স নির্ণয় করা যায়। এরপর আপনার উচ্চতা পরীক্ষা করা হবে। আগেই বলেছি উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি হতে হবে। এরপর তারা আপনার বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন দেখবেন।
ধাপ ৩
বয়স, উচ্চতা ও ওজন পরীক্ষা জরার পর আওনার শারীরিক ফিটনেস পরীক্ষা করা হবে। এক্ষেত্রে একেক জায়গায় একেক ধরনের টাস্ক দেয়া হয়ে থাকে। দৌড়ের পরীক্ষা হতে পারে। আবার লং জাম্প এর পরীক্ষাও হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনাকে একটি প্রবেশপত্র দেয়া হবে।

ধাপ ৪
৩ নম্বর ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আপনাকে যে প্রবেশপত্রটি দেয়া হবে, তা আপনার ৪ নম্বর ধাপে কাজে লাগবে। এই ধাপে তিনটি পরীক্ষা হয়। লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা।
লিখিত পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষার জন্য আপনার প্রস্তুতি ভালো থাকলে খুব সহজেই এই ধাপ আপনি পার হয়ে যেতে পারবেন। যেহেতু বলা হয় এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত পড়াশোনা যথেষ্ট, তাই ৮ম থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত বই থেকে তারা প্রশ্ন করে থাকেন। এর বাইরে তারা কোনো প্রশ্ন করেন না।
কারণ সর্বনিম্ন এসএসসি যোগ্যতা থাকা দরকার। এই পরীক্ষা সরাসরি কাগজে কলমে অনুষ্ঠিত হয়। অনলাইনে হয় না। এই পরীক্ষার সময়সীমা ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট অর্থাৎ ৯০ মিনিট। এই পরীক্ষার পূর্নমান ৪০।
আর এই ৪০ মার্কের পরীক্ষায় যারা ভালো করেন তাদেরকে বাছাই করেন। তবে পরীক্ষার পাস মার্ক ১৮। অর্থাৎ কমপক্ষে সকলকে ৪৫% নম্বর পেতেই হবে। আর যদি কেউ এ থেকে কম পায় তবে সে বাতিল। সে আর পরবর্তী কোনো ধাপে যেতে পারবে না।
৮ম থেকে ১০ম শ্রেনীর বাংলা, ইংরেজি ও গনিত এই তিনটি বইয়ের ধারনা ভালোভাবে আয়ত্তে থাকলে সহজেই এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায়। কারন তারা বিজ্ঞান, সমাজ এসব বিষয়ে লিখিততে খুব একটা প্রশ্ন করেন না।
মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা
আপনার জ্ঞান যাচাই করার জন্য কোনো বুদ্ধির প্রশ্নের উপর ভিত্তিতে করে আপনাকে এই পরীক্ষা দিতে হবে। এখানে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হতে পারে। তবে খুব কঠিন প্রশ্ন করা হয় না। একটু মাথা খাটালেই পারা যায়।
মৌখিক পরীক্ষা
এখানে মৌখিক পরীক্ষায় বেশি কিছু জিজ্ঞেস করা হয় না। সাধারণত, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সমূহ বেশি জিজ্ঞেস করা হয়। তাছাড়া আপনাকে সাধারন জ্ঞান নিয়ে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন তারা।
কোন মুদ্রার নাম কী, প্রধানমন্ত্রী কে এসব বিষয়ে দুই একটি প্রশ্ন করেন। সাম্প্রতিক বিষয় সমূহ নিয়েও এখানে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। আর মৌখিক পরীক্ষার সময় আপনাকে অবশ্য মার্জিত পোশাক পড়ে উপস্থিত হতে হবে এবং জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে যাওয়া যাবে না।
আপনাকে অবশ্যই ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে। আর সবকিছু যদি ভালেভাবে লক্ষ রেখে আপনি প্রশ্ন গুলের সঠিক উত্তর দিতে পারেন, তবে আপনি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন সহজেই।
ধাপ ৫
এই সবগুলো পরীক্ষা শেষ হওয়ার অল্প কয়দিনের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। আর সে ফলাফল প্রকাশের সময় প্রার্থীদেরকে তাদের রোল নম্বর অনুসারে ডাকা হয়। উল্লেখ্য, প্রার্থীদেরকে আবেদন করার পর তাদের রোল নম্বর তাদের জানিয়ে দেয় হয়। এই ধাপে উত্তীর্ণ হতে পারলে, পরের ধাপে সহজেই টিকে যাওয়া যাবে।
ধাপ ৬
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সকলকে পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হয়। এটি এক ধরনের সত্যায়িত সার্টিফিকেট। এটি এই মর্মে প্রত্যয়ন করা হয় যে, কোনো ব্যক্তি সমাজে কোনো ধরনের ফৌজদারী অপরাধ করেননি। ইতোমধ্যে আমরা এই নিয়ে একটি লেখায় আলোচনা করেছি।
ধাপ ৭
পুলিশ ভেরিফিকেশন এর পর আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সকল বিষয়গুলোই এখানে প্রাধান্য দেয়া হবে। আপনার হেপাটাইটিস বি রয়েছে কি না, কোনো ধরনের ভাইরাস দ্বারা আপনি আক্রান্ত কি না, তাও এখানে পরীক্ষা করা হবে। আবার আপনি শারীরিক ভাবে ফিট কিনা তাও দেখা হবে।
সকল তথ্যের ডক্টরি সার্টিফিকেট তাদেরকে শো করতে হবে। শরীরের কোথও কোনো প্রকার ড্যামেজ থাকলে, হাড় ভাঙা থাকলে, অস্ত্রোপচার এর চিহ্ন থাকলে আপনি কোনো অবস্থাতেই এখানে যোগদান করতে পারবেন না। এখানে টিকতে পারলেই হলো।
ধাপ ৮
এরপর আপনাকে প্রশিক্ষণপর জন্য নির্বাচন করা হবে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারস এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। সপখানে আপনাকে বেশ কয়েকদিন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। অতঃপর শারীরিক যোগ্যতা যাচাই করা হবে।
সাথে অন্যান্য তথ্য যাচাই করে এক পর্যায়ে আপনাকে কনস্টেবল পদে অর্থাৎ TRC পদে নিয়োগ করার জন্য ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এটাকে বলে ট্রেইনিং রিক্রুট। এরপর আপনাকে চাকরি দেয়া হবে। এবং ধীরে ধীরে আপনার পদোন্নতি হবে।
আর পুলিশের চাকরিতে বেতনের পাশাপাশি অনেক ভাতা আর রেশন সুবিধা তো আছেই।
পরিশেষে
এই ছিল আজকের আমাদের মেয়েদের পুলিশ হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে আলোচনা। লেখায় সবকিছু খুব সহজভাবে সাবলীল ভাষায় আলোচনা করেছি। আশা করি লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং কাজে আসবে। শুভকামনা রইল।