দিক কয়টি? চারটি? না, দশটি। তবে মুখ্য দিক চারটি। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিন। পূর্ব – পশ্চিম এই দুই দিক আমরা প্রায়ই গুলিয়ে ফেলি। নতুন কোনো স্থানে গেলে তো পূর্ব, পশ্চিম এই দুই দিকও হঠাৎ করে চেনা যায় না। যাদের, পশ্চিম দিক চেনার উপায় জানা আছে তাদের অবশ্য সমস্যা হয় না।
পশ্চিম দিক চেনার জন্য বেশ কয়েকটি উপায় আছে। সবচেয়ে সহজ উপায় হলো সূর্যের সাহায্যে চেনা। আর বর্তমানে তো স্মার্টফোনে কম্পাস আছেই। যদিও এই লেখায়, পশ্চিম দিক চেনার উপায় হিসাবে কম্পাস ছাড়াও আরও অনেকগুলো উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
পশ্চিম দিক চেনার উপায়
১. সূর্যের উদয়
সূর্য সাধারনত ওঠে সকাল ৫ টার খানিকটা পরেই। আমরা জানি যে সূর্য ওঠে পূর্ব দিকে। এসময় সূর্য উঠলে তা নিশ্চয়ই পূর্ব দিক দিয়ে উঠছে তাতে সন্দেহ নেই। তাহলে., সূর্য পূর্ব দিকে উঠলে পশ্চিম দিকে অস্ত যায় বা ডোবে এটাও আমরা সবাই জানি।
আর পূর্ব দিকের বিপরীত দিকই হলো পশ্চিম। তাহলে সূর্য যেদিক দিয়ে উঠছে তার উল্টো দিক দেখেই আপনি পশ্চিম দিক চিনে নিতে পারবেন।
২. সূর্যের অস্ত যাওয়া
সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে ডুবে যায়। তাহলে বলা যায়, আপনি কোনো এক সন্ধ্যার সময় আকাশপর চারদিকে তাকিয়ে যেদিকে গাঢ় লাল আভা দেখতে পাবেন, যেদিকে দেখতে পাবেন সূর্য রক্তিম বর্ণ ধারন করে কোনো কিছুর আড়ালে চলে যাচ্ছে, সে দিকটাই পশ্চিম দিক। পশ্চিম দিক চেনার উপায় হিসাবে এটা কিছু খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৩. সকালের খানিকটা গড়ালে
ধরুন সময়ের একটা অনুমান তো আমাদের থাকেই। সকালে সময় আনুমানিক ৯টা থেকে ১১ টার মধ্যে বাজে ( অনুমান করলাম )। এখন আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে ভালোভাবে লক্ষ করুন। যেহেতু পূর্ব থেকে একবার চারদিক ঘুরে আবার পূর্বে আসলে ৩৬০° অর্থাৎ রাউন্ড শেইপের একটা আকার তৈরি হয়।
তাহলে যখন অনুমান করতে পারবেন যে সূর্যটা এখন ৬০° থেকে ৮০° অবস্থানের মধ্যে আছে, এমন অবস্থায় আপনি সূর্যটাকে মনে মনে বাম দিকে একটু কল্পনা করে ৬০° পিছনের অবস্থানে নিয়ে যাবেন। তাহলে যে দিকটা পাচ্ছেন সেখানে সূর্য উঠেছে, এর বিপরীত দিকটাই তবে পশ্চিম। এভাবেও পশ্চিম দিকটা খুঁজে নিতে পারেন।

৪. ছায়া দেখে
আগের কালের সময়ে ঘড়ির প্রচলন ছিল না। তারা চন্দ্র, সূর্য, তারা এসবের অবস্থান দেখেই বলে দিতে পারতেন কোন দিকটি পূর্ব, আর কোন দিকটি পশ্চিম। তবে তাদের সবচেয়ে কমন যে প্রক্রিয়াটি ছিল তা হলো ছায়া দেখে সময় চেনা। এটা করা হতো কোনো একটি লাঠির মাধ্যমে।
ধরুন, আপনি এমন কোনো স্থানে পৌঁছালেন যেখানে জনমানব নেই বললেই চলে। আবার নামাজের সময় হয়ে গেছে। এখন আপনার পশ্চিম দিক খুঁজে বের করতে হবে। উপরের নিয়মগুলো দিয়ে টেস্ট করতে গেলে আরও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।
- এসময় খুঁজে একটি লাঠি নেবেন। হাতের কাছে লাঠি না থাকলে লাঠি জাতীয় লম্বা ও চিকন কিছু নেবেন। এরপর তা মাটির কোনো একটি স্থানে পুঁতবেন।
- এখন সূর্য যেকোনো অবস্থাতেই থাকুক না কোনো কোনো না কোনো ছায়া তো থাকবেই। এবার সে ছায়াতে একটি দাগ কাটুন।
- এরপর আবার প্রায় ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পার হপয়ার জন্য খানিকটা অপেক্ষা করুন। এরপর আবার ছায়াটা যেহেতু একটু সরে যাবে, সেখনে আবার একটি দাগ কাটুন।
- এবার সেই দুইটি দাগ যোগ করুন।
- এখন এই দাগটি যে দুই দিকে মুখ করে রয়েছে সেটাই পূর্ব দিক আর পশ্চিম দিক। অর্থাৎ এক দিক পূর্ব আর অন্য দিক পশ্চিম। এখন মাথায় প্রশ্ন আসছে, কীভাবে বুঝবেন কোনটি পূর্ব আর কোনটি পশ্চিম?
- এর সমাধানের জন্য প্রথম দাগটিকে পয়েন্ট করুন। প্রথম ছায়া থেকে দ্বিতীয় ছায়াটি যেদিকে সেটাই হলো পূর্বদিক। তাহলে পূর্বদিকে বিপরীত দিকটাই পশ্চিম দিক, এটা তো বুঝতেই পারছেন।
৫. মসজিদ দেখে
বাংলাদেশের প্রায় সকল মসজিদেই প্রবেশ করার দরজা থাকে পূর্ব দিকে। মানে প্রধান দরজা থাকে পূর্ব দিকে মুখ করে। তাহলে এর বিপরীতটাই পশ্চিম দিক। আর মসজিদ যেহেতু থাকবে, মানুষও থাকবে। তারা তো পশ্চিম দিকে মুখ করেই ইবাদত করে। এটা দেখে তখন এমনিতেই বোঝা যায়।
৬. মন্দির দেখে
আমাদের দেশে মন্দিরের দরজা সাধারনত দক্ষিণ দিকে মুখ করে তারপর তৈরি করা হয়। আর দক্ষিণ দিক চিনতে পারলে পশ্চিম দিক চেনাটাও সহজ। এসময় প্রথমে মন্দিরের দক্ষিণ দিকটা লক্ষ করবেন।
দক্ষিণ দিকে মুখ করে দাঁড়াবেন। এরপর হাত দুটি দুদিকে ছড়িয়ে দিন। আপনার বাম হাতটা যেদিকে সেটা পূর্ব দিক। আর ডান হাত যেদিকে সেটাই পশ্চিম দিক। তবে, এই পদ্ধতি সব সময় কাজ নাও করতে পারে।
৭. শুকতারা
শুক্র গ্রহই হলো শুকতারা। সূর্যের পাশে এটি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় দেখা যায়। তাই সকালে শুকতারার অবস্থান দেখলে পূর্ব দিক চিহ্নিত করা যায়। আর এর বিপরীত পশ্চিম।
আবার বিকালে, শুকতারা একদম সূর্য ডোবার সময় দেখা যায় না। তার খানিকটা আগে দেখা যায়। তখন শুকতারা থাকে দক্ষিণ দিকে। আর দক্ষিণ দিক চিহ্নিত করতে পারলে পশ্চিম কীভাবে বুঝবেন তা তো উপরে বললামই।
৮. উত্তর দিক দেখে
আপনি যদি কোনো ভাবে উত্তর দিক চিহ্নিত করতে পারেন, তাহলে পশ্চিম দিক বের করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরন করতে হবে।
- প্রথমত, উত্তর দিকে মুখ করে দাঁড়ান।
- এরপর দুই হাত দুই দিকে সম্প্রসারিত করুন।
- এবাট হলো দক্ষিণ দিকের উল্টো। মানে আপনার ডান হাতের দিকটিই হলো পূর্ব দিক। এবং বাম হাত যেদিকে ইশারা করে আছে সে দিকটা হলো পশ্চিম দিক।
৯. চুম্বক এর সাহায্যে
আপনার এসময় একটি চুম্বক ও মোটাসোটা একটা দড়ির প্রয়োজন হবে।
- প্রথমে এক খন্ড লম্বা চুম্বককে একটি সুতা বা দড়ির সাহায্যে ভালোভাবে বাঁধুন।
- এবার এটাকে হাতে নিন বা কোনো কিছু সাথে ঝুলিয়ে দিন।
- এবার এটা ধীরে ধীরে স্থির হয়ে যাবে।
- এটা যেই দুই দিকে মুখ করে রয়েছে সেটা হলো উত্তর ও দক্ষিণ দিক।
তবে কোনটা উত্তর বা কোনটা দক্ষিণ তা নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না। তবে পদার্থবিদ্যার কিছু মত অনুযায়ী ধনাত্মক দিক থাকে উত্তর দিকে। আর তাহলে তো পশ্চিম দিকটা চিনতেই পারবেন। তবে এটা সবসময়ের জন্য সত্য নয়। এ সময়ে অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করতে পারেন। বিশেষ করে সূর্যের অবস্থান লক্ষ করে নির্ধারণ করতে পারেন।
৯. সুইয়ের মাধ্যমে
চুম্বক এবং সুইয়ের প্রক্রিয়া দুইটি একই। মানে উপরে চুম্বককে যেভাবে সুতা দিয়ে বেঁধে রাখ হয়েছিল, এখানেও একটি সুইকে সুতা দিয়ে বেঁধে উত্তর দক্ষিণ দিক চিহ্নিত পারেন। এসময় একটি বিষয় ভালো করে খেয়াল রাখবেন।
চুম্বকটি এমন হতে হবে যেন তা চুম্বক আকর্ষন করে। স্টেইনলেস হলে চলবে না। কারন, চুম্বক যদি সুঁইকে আকর্ষণ না করে তবে সে সুঁই উত্তর দক্ষিণ দিকে মুখ করবে না। আর এই নিয়মটির থেকে বাকি নিয়মগুলো অধিক গ্রহনযোগ্য। এটি খুব একটা যুক্তিযুক্ত নয়।
১০. কম্পাসের সাহায্যে
মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তো? নিশ্চয়ই করেন। নইলে তো আর আমার এই লেখা পড়তে পারতেন না! তাহলে মোবাইল ফোনের প্লে স্টোরে যান। এরপর Compass লিখে সার্চ করুন। তাহলে আপনি ঘড়ির মতো একটি কম্পাস দেখতে পাবেন।
এরপর সেই কম্পাস অ্যাপটি ডাউনলোড করুন। এতে আপনি সেখান থেকে যেকোনো জায়গায় যেকোনো মূহুর্তে যেকোনো দিক খুঁজে বের করতে পারবেন। পশ্চিম দিকও খুব সহজেই দেখতে পারবেন।
তবে কিছু ক্ষেত্রে অনেকের মোবাইলেই কম্পাস সেন্সর কাজ নাও করতে পারে। তবে এটা খুব বেশি একটা দেখা যায় না। এখন এই প্রযুক্তির যুগে সকলের ফোনেই কম্পাস সেন্সর কাজ করে। আর যদি ফোন স্লো থাকে তাহলে, মোবাইল স্লো হলে কি করব? লেখাটি পড়তে পারেন।
পরিশেষে
এই লেখায় আমরা আলোচনা করলাম কীভাবে কম্পাসের মাধ্যমে, কম্পাস ছাড়া, লাঠির সাহায্যে আরও অনেক মাধ্যমে পশ্চিম দিক চেনার উপায়। আর আপনারা যদি পশ্চিম দিক খুঁজে পান তাহলে অন্য দিকগুলোও সহজেই পেয়ে যাবেন। আশা করি, লেখাটি আপনাদের জীবনের কোনো এক মুহূর্তে কাজে আসবে, ইন শা আল্লাহ।