কম্পিউটার বা স্মার্টফোন যারা ব্যবহার করে তারা কমবেশি সবাই ভাইরাস এবং এন্টিভাইরাসের সাথে পরিচিত। কিন্তু অনেকেই এন্টিভাইরাস কিভাবে কাজ করে, এই বিষয়ে তেমন ধারণা রাখে না।
ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত কম্পিউটার বিভিন্ন ভাবে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। আমরা যখন নেট থেকে বিভিন্ন জিনিস ডাউনলোড করি, তখন সেইসব ফাইলের সাথে এই ভাইরাসও ডাউনলোড হয়ে যায়।
ভাইরাস আমাদের কম্পিউটারের বিভিন্ন ক্ষতি করে থাকে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডাটা নষ্ট করে ফেলতে পারে, কম্পিউটার থেকে রিমুভ করে দিতে পারে, কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা ধীরগতি করে দিতে পারে। এছাড়াও এই ভাইরাসের আক্রমণের ফলে আমাদের কম্পিউটার থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অনুমতি ছাড়াই অন্য কারো হাতে চলে যেতে পারে।
কম্পিউটারকে এই ক্ষতির হাত থেকে বাচানোর জন্য আমাদের প্রয়োজন এন্টিভাইরাস। বাজারে বিভিন্ন ধরনের এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার আছে। যেমন
- Avast Antivirus
- AVG Technologies
- Avira Antivirus
- Bitdefender
- Kaspersky
- Malwarebytes
- Norton Antivirus
- Windows Defender
- ZoneAlarm
- Panda Security
- আরও পড়ুন: ভাইরাস কাটার সফটওয়্যার ডাউনলোড।
এন্টিভাইরাস কিভাবে কাজ করে?
এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার কোন ফাইল, প্রোগ্রাম বা কোন এপ্লিকেশনকে স্ক্যান করে এবং সেটাকে একটি নির্দিষ্ট কোডের সাথে মিলিয়ে দেখে। এই তথ্যটি তাদের ভাইরাসের ডাটাবেসের সাথে মিলিয়ে দেখে। কোন ভাইরাস সম্পর্কে কোন তথ্য সেই ডাটাবেজে থাকলে এবং সেটি সেই কোডের সাথে মিলে গেলে তাকে ভাইরাস নামে সেটি সিলেক্ট করে এবং রিমুভ করে দেয় এন্টিভাইরাস।
মানে, এন্টিভাইরাস কোম্পানির নিকট অনেকগুলো ভাইরাসের তথ্য থাকে। এখন আপনার কম্পিউটারে যখন কোন ভাইরাস ফাইল থাকে তখন, এন্টিভাইরাস সাথে সাথে ওকে ধরে ফেলে এবং রিমুভ করে দেয়। পুলিশের নিকট যেমন, সকল অপরাধীর তথ্য থাকে, সেই তথ্য অনুযায়ী অপরাধী ধরে। এন্টিভাইরাস ঠিক একই প্রক্রিয়ায় কাজ করে।
আশা করি এন্টিভাইরাস কিভাবে কাজ করে এ নিয়ে কিছুটা ধারণা হয়েছে। আরেকটু বিস্তারিত বললে, এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার নিম্নলিখিত ভাবে কাজ করে থাকে।
1. Heuristic-based detection
কম্পিউটারকে ভাইরাস মুক্ত করতে এটি সবচেয়ে উপযোগী এবং উত্তম একটি পদ্ধতি। এটি একটি নির্দিষ্ট এলগরিদম ব্যবহার করে থাকে, যার সাহায্যে এটি একটি সাইনের মাধ্যমে ভাইরাসকে সনাক্ত করে থাকে। এটি দ্বারা এমন ভাইরাসও সনাক্ত করা যায়, যেটি এখনো অজানা। কোন কোন ভাইরাস মডিফাইড হয়ে থাকে বা ছদ্মবেশ ধারন করে থাকে এবং পরবর্তীতে এটি আবার আক্রমন করে থাকে, Heuristic-based detection দ্বার সে সকল ভাইরাস ও সনাক্ত করা যায়।
মোট কথা, যে কোন ধরনের নতুন ভাইরাস সনাক্ত করতে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও অনেক সময় অনেক ভালো ফাইল ভাইরাস হিসেবে সনাক্ত হয়ে থাকে এবং কাজ করতে সমস্যা করে। এই Heuristic-based detection দ্বারা সেই সব সমস্যা দূর করা যায়। অর্থাৎ ভালো যে ফাইল ভাইরাস হিসেবে সনাক্ত হয়ে আছে, সেটি Heuristic-based detection দ্বারা খুজেঁ পাওয়া যায়। যদিও এই সমস্যাটি খুব কম দেখা যায়, কিন্তু একেবারে দেখা যায়না এমনটি নয়।
2. Signature-based or virus dictionary detection
প্রতিটা এন্টিভাইরাস স্ক্যানারেই ভাইরাস ডেফিনিশন ফাইল, ডাটাবেস এবং ডিকশনারি থাকে, যা হাজার হাজার ভাইরাস চেনার সাইন বহন করে থাকে। এইসব সাইন দ্বারা এমন এন্টিভাইরাস সনাক্ত হয়ে থাকে, যেগুলো আগে থেকেই ভাইরাস হিসেবে লিপিবদ্ধ থাক। এখন প্রায় এক লাখ ভাইরাস এই পদ্ধতিতে সনাক্ত করা যায়।
Signature-based or virus dictionary detection পদ্ধতিটি হচ্ছে চমৎকার একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে পূর্বের সব জানা ভাইরাস খুব সহজেই সনাক্ত করা যায় কোন রকমের ভুল ছাড়া। তবে এটি দ্বারা নতুন কোন ভাইরাস সনাক্ত করা যায় না যতক্ষণ পর্যন্ত এটির ফাইল আপডেট করা না হয়ে থাকে।

3. Behaviour-based detection
যদি কোন ভাইরাস পূর্বের ন্যায় আচরন করে থাকে তাহলে, এর সাহায্যে সেটি সনাক্ত করা যায়। অথবা কোন প্রোগ্রাম যদি অস্বাভাবিক কোন আচরণ করা শুরু করে তাহলে এন্টিভাইরাস সতর্কতা সংকেত প্রদান করতে থাকে।
এটির সংকেত প্রদান করার ভাষা সাধারনত নিম্নরূপ। যেমন-
- কম্পিউটারের কোন সেটিংস পরিবর্তন হয়েছে।
- কোন ফাইল ডিলিট হয়েছে।
- কম্পিউটার দূর থেকে কানেক্ট করা হয়েছে ইত্যাদি।
যে সকল ভাইরাস কোন তথ্য চুরি করার কাজে ব্যবহার করা হয় সেসকল ভাইরাস খুব সহজেই Behaviour-based detection দ্বারা সনাক্ত করা যায়।
4. Sandbox detection
যদি কোন ধরনের প্রোগ্রাম সন্দেহজনক হয় তাহলে এটি ব্যবহার করে থাকে কোন কোন এন্টিভাইরাস। এটি সেই প্রোগ্রামের মতো একটি অনুরূপ পরিবেশ তৈরি করে যার ফলে সেই প্রোগ্রামটির আচরণ সম্পর্কে জানতে পারে। যখন সেই পরিবেশ তৈরি হয় তখন যদি প্রোগ্রামটির আচরণ অস্বাভাবিক বা ধ্বংসাত্নক মনে হয় তাহলে এন্টিভাইরাস এক ধরনের সতর্কতা সংকেত প্রদান করে থাকে।
5. Cloud antivirus detection
এটি সাধারনত ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যদি কোন কম্পিউটার কোন ইন্টারনেট কানেকশন থেকে কিছু ডাউনলোড করে থাকে। এর দ্বারা সেই কানেকশন পরীক্ষা করে তারপর সেই কম্পিউটার থেকে কাজ শুরু করা হয়ে থাকে। তবে এর জন্য ইন্টারনেট কানেকশন দরকার হয়।
6. Full system scan
এটির সাহায্যে পুরো কম্পিউটার স্ক্যান করা হয়ে থাকে। ব্যবহারকারি তার পুরো কম্পিউটারটিকে একবারে স্ক্যান করতে চাইলে এই পদ্ধতিতে করে থাকে। এর জন্য এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি ওপেন করতে হবে এবং তারপর Full system scan সিলেক্ট করতে হবে অথবা যে ফাইলটি স্ক্যান করতে চায় সেটি সিলেক্ট করে দিবে।
এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার যদি ঠিকমত সবকিছু মনিটরিং করে থাকে তাহলে সাধারনত Full system scan দরকার হয় না। তবে যদি কম্পিউটার কিছু অস্বাভাবিক কাজ করে অথবা নতুন কোন এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল করা হয় তাহলে Full system scan করা যায়। এটি যেহেতু পুরো কম্পিউটারকে স্ক্যান করে থাকে তাই এর জন্য বেশি কিছুটা সময় দরকার হয়ে থাকে।
এছাড়াও এন্টিভাইরাস আরো কয়েকভাবে কম্পিউটার স্ক্যান করে থাকে। ইন্টারনেট জগতে যেসব ভুল করা উচিত নয়!
1. On- Demand Scan
এটি সাধারনত ব্যবহারকারী দ্বারা আগেই সেট করা হয়ে থাকে। কম্পিউটারে কোন ভাইরাস সনাক্ত হলে অথবা ব্যবহারকারী একটি নির্দিষ্ট সময়ে কম্পিউটার স্ক্যান করতে চাইলে এটি রান হয়ে থাকে। এটি ডিস্কে থাকা বিভিন্ন কনটেন্ট, বিভিন্ন ফাইল, কম্পিউটার বুট সেক্টর বা সিস্টেম স্ক্যান করে থাকে। এটি সাধারনত ব্যবহৃত হয় তখনই যখন কম্পিউটার কোন নিষিদ্ধ কাজ করতে চায় বা কোন ভাইরাস সন্দেহ করে থাকে।
2. Real- Time Protection
প্রায় সব ধরনের আধুনিক এন্টিভাইরাসে এই প্রোগ্রামটি থাকে। এটি এক ধরনের অটোমেটিক প্রোগ্রাম যেটি সব সময় চালু থাকে যাতে কোন ভাইরাস কোন ফাইলকে আক্রান্ত করতে না পারে বা নষ্ট করতে না পারে।
এই ধরনের স্ক্যান সাধারনত Background guard নামে পরিচিত। এটি সাধারনত কোন একটিভ ফাইলের যেকোন ধরনের সন্দেহজনক আচরন ধরতে সাহায্য করে থাকে। যেমন কোনো ইউএসবি ড্রাইভ যদি কোন কম্পিউটারে প্রবেশ করানো হয় অথবা কোন ফাইল যদি ডাউনলোড করা হয় তখন এই স্ক্যান কাজ করে থাকে।
3. Smart Scans
একটি এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামের এই অপশনটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ফাইল স্ক্যান করে থাকে। এর সাহায্যে সাধারন কিছু ভাইরাস স্ক্যান করা হয়ে থাকে।
পরিশেষে
এই ছিল আজকে এন্টিভাইরাস কিভাবে কাজ করে, এই নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। আপনি যদি ভাইরাস নিয়ে চিন্তিত থাকনে তাহলে, কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় লেখাটি পড়ে নিতে পারেন।