এইতো গত সাপ্তাহে বন্ধুকে বললাম বন্ধু চল, কানাডা থেকে ঘুরে আসি? বন্ধু বললো কিভাবে? বললাম ভিপিএন দিয়ে! কেমন ছিল জোকসটা? আসলে ভিপিএন এই কাজটাই করে আপনার সাথে। ভিপিএন কিভাবে কাজ করে, এটা জানলে এই বিষয়টা বোঝা সহজ হবে।
ভিপিএন এর পূর্ণরূপ হলো Virtual private network। ভিপিএন হলো কম্পিউটার বা মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার একটি নিরাপদ উপায়। এর মাধ্যমে নিচের পরিচয় গোপন রাখা যায়। একটি নিরাপদ ভিপিএন ব্যবহার করার ফলে ব্যবহারকারীর কোন পরিচয় কেউ দেখতে বা জানতে পারেনা। এমনকি হ্যাকার বা সেই দেশের সরকার ও সেটি জানতে পারে না।
কিছু জনপ্রিয় ভিপিএনের নাম হচ্ছে:
- ExpressVPN
- NordVPN
- CyberGhost
- Surfshark
- Hotspot Sheild
- ProtonVPN
- PureVPN
- TunnelBear
- Avast SecureLine VPN
- VyprVPN
লেখার সূচিপত্র
ভিপিএন কিভাবে কাজ করে?
প্রতিটা কম্পিউটারেই একটি আলাদা আইপি এড্রেস থাকে, যখন সেটি কোন ইন্টারনেট দ্বারা কানেকটেড হয়। এই এড্রেস দ্বারা বলা যায় যে, কম্পিউটারটি কোন এলাকা বা বিশ্বের কোন জায়গা থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভিপিএন এর মাধ্যমে এই আইপি এড্রেস পরিবর্তন করা যায় এবং এটি অন্য এক ধরনের লোকেশন শো করে থাকে। ভিপিএনের মাধ্যমে একটি মিথ্যা লোকেশন খুব সহজেই সিলেক্ট করা যায়।
- আরও পড়ুন: এন্টিভাইরাস কিভাবে কাজ করে?
ভিপিএন আইপি এড্রেস লুকিয়ে রেখে ব্যবহারকারীকে নিরাপত্তা প্রদান করে। এই নিরাপত্তা ভিপিএন হোস্ট দ্বারা দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। ভিপিএন ব্যবহার করার ফলে অন্য কোন তৃতীয় পক্ষ বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কেউ দেখতে পারবে না, কোন কোন ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী ভিজিট করছে বা কোন কোন ডাটা সে প্রেরণ বা গ্রহণ করছে। ভিপিএন একটি ফিল্টারের মতো কাজ করে থাকে। যদি কোনভাবে কেউ কোন ডাটা পেয়েও যায় তবু তা কোন কাজে লাগাতে পারবেনা।
কিছু কিছু দেশ আছে যারা তাদের কিছু ওয়েবসাইট বন্ধ করে রাখে। ভিপিএনের মাধ্যমে খুব সহজেই সেইসব ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাবে। তবে, একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, ফ্রি ভিপিএন আপনাকে সর্বচ্চো নিরাপত্তা দিতে পারে না। এমনি পেইড ভিপিএনও মাঝে মাঝে ভালো নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়।
ভিপিএন ব্যবহারের সুবিধা
ভিপিএন কানেকশন ডাটাকে সুরক্ষিত রাখে যাতে অন্য কেউ তা অপব্যবহার করতে না পারে। ভিপিএন সাধারনত নিম্নোক্তভাবে সুবিধা দিয়ে থাকে।
ব্যবহারকারীর যেকোন ডাটা ভিপিএন ব্যবহারের ফলে সুরক্ষিত থাকে। ডাটা পড়ার জন্য, এনক্রিপশন কি দরকার হয়। এটা ছাড়া একটি কম্পিউটারের লক্ষ লক্ষ বছর লেগে যাবে এর অর্থ বের করার জন্য। কাজেই ভিপিএন সমস্ত অনলাইন একটিভিটিস গোপন রাখে।
এনক্রিপশন জিনিসটা কি আসলে? মাথায় ঘুরপাক খায় নিশ্চই। সহজভাবে বুঝিয়ে বলি, ধরুন আপনি আপনার বন্ধুকে চিঠি লিখলেন, Hello Bhondhu লিখে। এখন, এই চিঠি মাঝখান দিয়ে যে নিয়ে যাবে সে চাইলেই পড়ে ফেলতে পারবে।
কিন্তু কেমন হয়, যদি আপনি আপনার বন্ধুকে বলে দেন, বন্ধু আমি যে চিঠি লিখবে সেই চিঠির অক্ষর গুলো ১টা করে পেছেনের অক্ষর ব্যবহার করবো। মানে, Gdkkn agncgt. এখন ১টা করে অক্ষর বাড়িয়ে বললে হয় Hello Bhondhu. এনক্রিপশন এই পদ্ধতিতেই কাজ করে।
2. Disguising your whereabouts
ভিপিএন এক প্রকার প্রক্সি হিসেবে কাজ করে। কারণ এটা নিজস্ব লোকেশন গোপন রেখে অন্য কোন লোকেশন শো করে। এর ফলে আসল লোকেশন কখনোই নির্ধারন করা যায় না। এছাড়া বেশিরভাগ ভিপিএন সার্ভিসই কোন প্রকার তথ্য জমা রাখেনা তাদের সার্ভারে। কিছু কিছু ভিপিএন সার্ভিস গতিবিধি খেয়াল করলেও তারা কখনোই অন্য কারো কাছে কোন তথ্য পাচার করে না। তার মানে যে কোন ধরনের কার্যক্রম এখানে গোপন থাকে।
3. Access to regional content
কিছু কিছু দেশ তাদের কিছু কিছু ওয়েবসাইট বা তথ্যবহুল কোন বিষয় দেশের বাইরের জন্য লক করে রাখে। অন্য কোন দেশ থেকে তা দেখা যায়না। আমরা যদি নরমাল আইপি এড্রেস ব্যবহার করে সে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে চাই তাহলে সেখানে প্রবেশ করা যাবেনা কখনোই।
ভিপিএন ব্যবহার করে এই কাজটি খুব সহজেই ব্যবহার করা যাবে। ভিপিএন সহজেই যেকোন লোকেশন পরিবর্তন করতে পারে । তাই ভিপিএন দিয়ে লোকেশন পরিবর্তন করে খুব সহজেই সে দেশের ওয়েবসাইট ভিজিট করা যাবে।
4. Secure data transfer
বাসায় বসে কাজ করলে বা অফিস থেকে দূরে কোথাও বসে কোন কাজ করলে অবশ্যই মেইল করার দরকার পড়ে। এসব ডাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয় যা বাইরের কারো হাতে পড়লে মারাত্নক ক্ষতি হতে পারে। কোনো নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যখন ডাটা বা ফাইল আদানপ্রদান হবে তখন সেটা অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে। ভিপিএন সার্ভিস এই নেটওয়ার্কটি নিরাপদ করে ও এনক্রিপশন মেথড প্রয়োগ করে ডাটা হ্যাক হবার হাত থেকে রক্ষা করে।
কেন ভিপিএন ব্যবহার করা উচিত?
কম্পিউটারে যখন ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয় তখন সেখানে একটি আইপি এড্রেস থাকে যেটি আইএসপি বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ব্যবহারকারীর নেটওয়ার্কটি এই সার্ভার দ্বারা সবসময় নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার চাইলেই যেকোন সময় ব্যবহারকারীর যেকোন তথ্য বের করতে পারে এবং তা প্রকাশ করতে পারে।
- আরও পড়ুন: পকেট রাউটার কিভাবে কাজ করে?
যদিও এই সার্ভিস বিশ্বস্ত। কিন্তু এর চাইলেই ব্যবহারকারীর যেকোন তথ্য অনুমতি ব্যতীত অন্য কোথাও ব্যবহার করতে পারে। অথবা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও অনেক সময় হ্যাকিং এর শিকার হতে পারে। যদি তা হয় তাহলে খুব সহজেই পারসোনাল অনেক ডাটা হ্যাকারের হাতে পড়তে পারে এবং ব্যবহারকারী বিড়ম্বনার শিকার হতে পারে।
এসব সমস্যা থেকে বাচার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করা উচিত। আবার যদি নিয়মিত পাবলিক কোন ওয়াইফাই ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার আরো জরুরি। কারন পাবলিক কোন সংযোগ থেকে খুব সহজেই আমাদের পাসওয়ার্ড, পারসোনাল ডাটা বা কোন পেমেন্ট প্রসেস বা ইনফরমেশন চুরি হতে পারে।
ভিপিএন কত প্রকার?
সাধারনত তিন ধরনের ভিপিএন দেখা যায়।
1. SSL VPN
একটা কোম্পানির সকল কর্মচারি সব সময় অফিসে বসে কাজ করতে পারেনা। আবার সবাইকে অফিসের ল্যাপটপ সরবরাহ করাও সম্ভব হয়না। অনেক সময়ই বাসায় বসে কাজ করতে হয় তাই সে সময় কোম্পানি এই কানেকশন ব্যবহার করে থাকে। এটা হচ্ছে এক ধরনের ব্রাউজার। এটা অনলাইন যেকোন অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করে। এখানে এক্সেসের জন্য ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিতে হয়।
2. Site-to-site VPN
এটা হচ্ছে এক ধরনের অন্তসম্পর্কীয় নেটওয়ার্ক যেটা দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের নিরাপদ নেটওয়ার্ক তৈরি করে থাকে। একটা কোম্পানির যখন কয়েকটা লোকেশন থাকে তখন সবার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বড় বড় কোম্পানিতে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটা SSL VPN এর মতো এত সহজ নয় তবে এটাও খুব উপকারি সংযোগ যা দ্বারা অনেক বড় একটা যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।
- আরও পড়ুন: আইপি ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে?
3. Client-to-Server VPN
এটা এমন এক ধরনের ভিপিএন সার্ভিস যেমন বাসার কম্পিউটারকে ক্যাবলের মাধ্যমে অফিসের সাথে সংযোগ দেয়া। এই সংযোগের সাহায্যে কোম্পানির নেটওয়ার্ক এমনভাবে ব্যবহার করা যায় যেন মনে হয় অফিসে বসেই কাজ করা হচ্ছে।
পরিশেষে
এই ছিল আজকে ভিপিএন কিভাবে কাজ করে এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। আশা করি vpn কিভাবে কাজ করে এ নিয়ে আর কোন প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন থাকলেও সমস্যা নেই, কমেন্ট করে আমাদের প্রশ্ন করতে পারেন।