ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় জানা থাকলে, ফ্রিজ কিনে ঠকতে হয় না। বর্তমান জীবনে ফ্রিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এটি আমাদের খাবার সংরক্ষণ করে, ভাল রাখতে সহায়তা করে। আমরা অনেক কিছু কিনে ফ্রিজে রাখতে পারি, এতে আমাদের দৈনিক বাজার করা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।
আমরা আমাদের সুবিধা মত বাজার করে নিতে পারি এবং ফ্রিজে রাখতে পারি। কিন্তু, সমস্যা হয়, যখন সে ফ্রিজটা খারাপ হয়, তখন তাজা খাবার রাখলেও নষ্ট হয় যায়। কিছু কিছু ফ্রিজে খাবার নষ্ট না হলেও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
সুতরাং, ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় জানা রাখাটা অনেক জরুরি। তাই, আজকে এই লিখায় ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে, আসুন জানা যাক।
লেখার সূচিপত্র
ভালো ফ্রিজ চেনার উপায়
একটি ফ্রিজ কেনার আগে নিচের বিষয়গুলি যাচাই করতে হবে। আর নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার ফ্রিজে থাকার মানে ভাল ফ্রিজ।
১. সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত?
ফ্রিজ কেনার আগে বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করে নিবেন ফ্রিজের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত? যদি ফ্রিজের তাপমাত্রা 1C এবং 4C এর মধ্যে হয় :তাহলে আপনাকে এমন খাবার রাখতে হবে যার জন্য 1C থেকে 4C ই যথেষ্ট।
তবে কিছু ফ্রিজের তাপমাত্রা 5C ও হয়, এই ক্ষেত্রে আপনি যে কোন খাবার সেখানে সংরক্ষণ করতে পারবেন, তাই ফ্রিজের তাপমাত্রা একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় , একটি ভালো মানের ফ্রিজ চেনার জন্য।
২. ক্যাপাসিটি
ছোট পরিবারের জন্য খুব বেশী ক্যাপাসিটির প্রয়োজন হয় না। আবার বড় পরিবারের জন্য ছোট ফ্রিজেও কাজ হয় না। সুতরাং, আগে ঠিক করুন আপনার পরিবারের লোক সংখ্যা তারপর সেই অনুপাতে ফ্রিজ কিনুন। অযথা টাকা খরচ করার কোন মানে হয় না।

৩. কিভাবে পরিষ্কার করা যায়?
কোন ফ্রিজ আছে যা এক মাস অন্তর পরিষ্কার করতে হয়, কোন ফ্রিজ আছে তিন মাস অন্তর পরিষ্কার করতে হয়। ফ্রিজ কেনার সময় এই বিষয়গুলো জেনে নেওয়া জরুরী। তবে যে ফ্রিজ পরিষ্কারে ঝামেলা কম, সেই ফ্রিজ কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আরেকটি বিষয় হল, কি দিয়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে হয় তা জানা, অনেক ফ্রিজ আছে যা তোয়ালে বা টিস্যু বা নরমাল কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করা যায়, আপনি এর জন্য সাধারণ সাবান পানি বা ডিটারজেন্ট পানি ইউজ করতে পারেন। অনেক ফ্রিজ আছে যেগুলোতে আবার সব কিছু ইউজ করে পরিষ্কার করা যায়না, এই ধরনের ফ্রিজ ইউজ করা একটু কষ্ট সাধ্য। সহজভাবে ইউজ করা যায় এমন ফ্রিজ অবশ্যই একটি ভালো ফ্রিজের আওতায় পড়ে।
৪. ফ্রিজের যে কোন পার্টস সহজলভ্য কিনা?
একটি ফ্রিজ অনেকগুলো যন্ত্রাংশের মাধ্যমে তৈরি হয়, এই ফ্রিজে একেকটি যন্ত্রাংশের একেকটি কাজ করে থাকে। তবে আসল কথা হল এই যন্ত্রাংশ গুলো সহজলভ্য কিনা। কারণ যে কোন সময় যে কোন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আগের থেকেই বুঝে নিতে হবে যে আপনি যে ফ্রিজ কিনছেন তার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সহজলভ্য কি না। যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা ও একটি ভালো ফ্রিজের গুনাগুণের মধ্যে পড়ে।

৫. ফ্রিজের কোথায় কি রাখতে হবে?
- উপরের শেল্ফ: যে কোনও কিছু যা রান্না করার প্রয়োজন হয় না যেমন (কাটা মাংস, ডিপস, অবশিষ্টাংশ, ডেলি ডিশ, হিমায়িত খাবার ইত্যাদি), সেইসাথে কোনও ক্যান জাতীয় জিনিস এই খানে রাখা যেতে পারে।
- মাঝখানের শেলফঃ এইখানে ডেইরি ফার্মের জিনিস পত্র যেমন, দুধ, ডিম, পনির, মাখন, ঘি, এসব রাখা হয়।
- নীচের শেলফ: এইখানে মাংস এবং মাছ এগুলো রাখা যেতে পারে।
- ভেজ ড্রয়ারঃ ফ্রিজের আলাদাভাবে শাক সবজি রাখার জন্য ড্রয়ার আছে নাকি, সে বিষয়টি খেয়াল করে কিনতে হবে, ভেজ ড্রয়ারে আপনি সব ধরনের শাক সবজি সংরক্ষণ করতে পারবেন। তাই ফ্রিজ কেনার আগে এই ভেজ ড্রয়ার কতটা বড় সেটি খেয়াল করে কিনবেন।
- দরজার রেক: এই জায়গায় বিভিন্ন বোতল জাতীয় দ্রব্য ,মশলা বা যা অনেকদিন সংরক্ষিত রাখা যায় এমন জিনিস রাখা যেতে পারে।
আপনি ফ্রিজ কেনার আগে এই জায়গাগুলো পরীক্ষা করে দেখবেন যে যথার্থ জায়গা আছে কিনা। যথার্থ জায়গা এবং স্পেস থাকা একটি ভালো ফ্রিজের গুণাগুণের মধ্যে পড়ে। এই বিষয়টি হল মাংসের সাথে মাংস এবং মাছের সাথে মাছ; পৃথক ভেজ ড্রয়ারগুলিতে ভেজ এবং ফল (দুটি মিশ্রিত করার ফলে প্রায়শই ইথিলিন মিশ্রিত হয় যা ফলটি ভেজকে নষ্ট করে দেয়)।
৬. বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী
কপার কনডেন্স এবং উন্নত মানের কম্প্রোসার ব্যবহার করা ফ্রিজগুলো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়। এ ধরণের ফ্রিজগুলো ব্যবহার করলে অনেক কম বিদ্যুৎ বিল আসে। সাধারণত, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজগুলোতে স্টার মার্ক দেওয়া থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলাও থাকবে।
৭. কপার কনডেন্সার যুক্ত ও কম্প্রেসর ভাল কিনা
ফ্রিজটি কপার কনডেন্সার তথা তামার তার যুক্ত কিনা এটা যাচাই করে নিবেন। কপার কনডেন্সারের অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে। যেমন:
- ফ্রিজ অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয়।
- অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে।
- খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়।
- ফ্রিজের গ্যাস লিকেজ হয় না।
- তারে কোন মরিচা পড়ে না।
- ক্যাপেলরী জ্যাম হয় না।
এছাড়া, আপনার ফ্রিজের কম্প্রেসরটিও ভাল কিনা দেখতে হবে। সাধারণত, একটি কম্প্রেসরের ১০ বছরের গ্যারান্টি থাকে। মানে বুঝতেই পারছেন, এটার গুরুত্ব। এটা যত ভাল হবে, আপনার ফ্রিজ তত বেশী দিন টিকবে এবং সবচেয়ে কম বিদ্যৎ বিল আসবে। মূলত ইনর্ভাটার টেকনোলজির কম্প্রোসার যুক্ত এবং উন্নত মানের কপার বাইন্ডিং তার দ্বারা তৈরীকৃত কম্প্রোসার গুলোকে উন্নত মানের কম্প্রোসার হিসাবে ধরা হয়।
এয়ার কন্ডিশনারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হয়। এয়ার কন্ডিশনার কিভাবে কাজ করে লেখাটি পড়লেই বুঝতে পারবেন।

৮. কি ধরণের গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে
চেষ্টা করবেন R600a গ্যাসের ফ্রিজ কিনতে। এছাড়া নিচের ছকের গ্যাসগুলোও কিনতে পারেন। ন্যানো হেলথ কেয়ার টেকনোলজির স্বাস্থ্য সম্মত ফ্রিজগুলোতে আপনি স্টিকারই দেখতে পাবেন। চেষ্টা করবেন স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশের জন্য ভাল এমন ফ্রিজ কেনার।
গ্যাস | বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী | গ্লোবার ওয়ার্মিংয়ে প্রভাব | ওজন স্তরের ক্ষতি করে |
---|---|---|---|
R134a | না | ১৪৩০ | না |
R290a | হ্যাঁ | ৩ | না |
R600a | হ্যাঁ | ৩ | না |
৯. ফ্রস্ট নাকি নন ফ্রস্ট ফ্রিজ
ফ্রস্ট ফ্রিজ: এই ধরণের ফ্রিজে বরফ জমে যায়। ফলে, যদি বিদ্যুৎ চলে যায়, তারপরেও খাবার ভাল থাকে এবং কম বিদ্যুৎ খরচ হয়। তবে, মাসে একবার ফ্রিজের বরফ পরিষ্কার করতে হয়।
নন ফ্রস্ট ফ্রিজ: এই ধরণের ফ্রিজে বরফ জমে না। বরফ গলানোর জন্য এই ফ্রিজ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ করে এছাড়া, বিদ্যুৎ ছাড়া ৩ থেকে ৪ ঘন্টার বেশী খাবার ভাল থাকে না। তবে, ফ্রিজ পরিষ্কার করা কিংবা খাবার বরফে জমে যাওয়ার মত ঝামেলা থাকে না।

১০. ফ্রিজের দরজা কিভাবে খুলবেন লাগাবেন পরীক্ষা করা
আপনি যখন একটি নতুন ফ্রিজ কিনতে যাবেন , তখন সেই ফ্রিজের দরজা কীভাবে খুলবে তা পরিকল্পনা করতে ভুলবেন না। আপনি যদি আপনার ছোট রান্নাঘরে রাখার জন্য ফ্রিজ কিনতে চান তাহলে আপনি ছোট ফরাসি ফ্রিজ কিনতে পারেন। এতে একটি দরজা থাকে যা রাবার সিলিকনের মাধ্যমে লাগানো হয়। আপনি সহজেই টান দিলেই তা লাগাতে বা খুলতে পারেন।
আপনি যদি আপনার ডাইনিং রুমের জন্য কোন ফ্রিজ কিনতে চান তাহলে আপনি ডাবল দরজার ফ্রিজ কিনতে পারেন, সে ক্ষেত্রে ও আপনি চেক করে নিবেন কিভাবে দরজা খুলতে হয় বা লাগাতে হয়। অনেক ফ্রিজের দরজা আছে, একটু swipe করে খুলতে হয় বা ডান দিক থেকে না খুলে বাম দিক থেকে খুলতে হয়, এই বিষয়গুলো ফ্রিজ কেনার সময় খেয়াল করতে হবে।
১১. ফ্রিজের ট্রে সাথে আছে কিনা?
আপনি ফ্রিজ কেনার সময় অবশ্যই দেখে নিবেন যে আপনাকে ঠিকমত ফ্রিজ সেটিং ট্রে দেওয়া হচ্ছে নাকি। আপনি ট্রে বুঝে নেওয়ার সময় ট্রে ভালমতো পরীক্ষা করে নিবেন দেখবেন যে সব ঠিক আছে কি না। ট্রে ভাঙ্গা কিনা বা কোন দাগ আছে কিনা, একটি মজবুত ট্রে ফ্রিজের সাথে পাওয়া ও ভাল ফ্রিজ চেনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।
আশা করি উপরিউক্ত বিষয় গুলো থেকে ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।
শেষ কথা
আজকের এই লিখা পড়ার পর, আপনি এখন সহজেই একটি ভালো ফ্রিজ চিনে বাজার থেকে কিনে আনতে পারবেন, সাথে আপনি বুঝতে ও পারবেন যে বিভিন্ন ফ্রিজের মধ্যে পার্থক্য কি কি। কারণ উপরিউক্ত বিষয়গুলো যাচাই করতে গেলে আপনাকে একাধিক ফ্রিজ যাচাই করে তাদের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চে ভালোটা চিনে কিনতে হবে। সামনে কুরবানির ঈদ আসছে , এখনি বাজারে গিয়ে একটি ভালো ফ্রিজ চিনুন এবং তারপর আপনার বাজেট অনুযায়ী কিনে ফেলুন।