হ্যাশট্যাগ কি? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা মনে হয়না খুব বেশি জরুরি। আমরা সবাই হ্যাশট্যাগ শব্দটির সাথে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। হ্যাশট্যাগকে অবশ্য মেটা ট্যাগ নামেও অনেকে চিনে থাকেন।
বর্তমানে Facebook, Twitter, Instagram এর মতো বড় বড় স্যোশাল মিডিয়াতে টপিক হাইলাইট করতে এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়। সাধারণ মানুষের জন্য হ্যাশট্যাগ এক ধরনের মজার বিষয়। সব রকমের ট্রেন্ডিং এর জন্য এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে থাকে সাধারণ মানুষরা।
স্যোশাল মিডিয়াতে এখন এই হ্যাশট্যাগকে কেন্দ্র করে অসংখ্যা বিষয় যেমন ভাইরাল হয়েছে। তেমনি অনেক অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং ন্যায় বিচার পাওয়া গিয়েছে। সুতরাং, আপনি যদি হ্যাশট্যাগ কি এ নিয়ে কোন ধারণা না থাকে, তাহলে এই লেখাটি আপনার অবশ্যই পড়া উচিত।
লেখার সূচিপত্র
হ্যাশট্যাগ কি?
ল্যাপটপ/ কম্পিউটার এবং মোবাইলে যে আমরা এই ধরনের # চিহ্ন দেখতে পাই তাকেই বলে হ্যাশ। আর ট্যাগ বলা হয়, # হ্যাশ এর সাথে যে অক্ষর বা শব্দ ব্যবহার করা হয় যেমন: #digitalmarketing এই digitalmarketing শব্দটিই ট্যাগ।
বর্তমানে একটি বিষয়কে একত্রিত করে হাইলাইট করার জন্য #হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়ে থাকে স্যোশাল মিডিয়ার পোস্টে। আপনি যখন ফেসবুকে কোন ট্যাগে ক্লিক করেন, তখন সে ট্যাগের রিলেটেড সকল পোস্ট এবং ছবি চলে আসে। আপনি যদি # হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে পোস্ট করেন তাহলে, তাড়াতাড়িই আপনার পোস্ট ভাইরাল হয়ে যেতে পারে।
যখন কোন একটি ট্রেন্ড শুরু হয় সোশাল মিডিয়াতে সে ট্রেন্ড নিয়ে ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবে প্রচুর পরিমাণে লেখা লেখি হয় এবং সেই ভিডিওগুলো এবং বিভিন্ন লেখালেখিতে ট্রেন্ড রিলেটেড হ্যাশ ট্যাগ ব্যবহার করেন তারা। যে কোনও পোস্টে সঠিক # হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে পারলে, পোস্টটি ভিজিটরদের কাছে সহজেই পৌঁছে যায়।

বিশেষ করে গুগলে তার রুলসের মধ্যে এই পয়েন্টটি এড করেছে যে, ইউটিউব ডেসক্রিপশন, টাইটেল এবং ব্লগ পোস্টে যদি কেউ সঠিকভাবে # হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন তাহলে তার ভিডিও গুলো তাড়াতাড়ি রিচ হবে। গুগল সে পোস্টগুলো প্রমোট করবে।
স্যোশাল মিডিয়াগুলোতে # হ্যাশট্যাগ এর চিহ্নটির ব্যবহার হয়ে থাকে কোনও কিছুর প্রতিবাদ করতে বা স্যোশাল আন্দোলনের জন্য। বর্তমানে যারা ডিজিটাল মার্কেটিং করে তারাও হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে, পোস্ট রিচ করার জন্য।
হ্যাস ট্যাগ কিভাবে করে?
স্যোশাল মিডিয়াতে তথ্য যাতে ওভারলোডেড হয়ে ভিজিটরদের বিরক্তি ও অপ্রীতিকর অবস্থায় না পড়ে যায় তাই, এই #হ্যাশট্যাগের ব্যবহার করে তথ্যকে সুশৃঙ্খল করতে হয়। যাতে এক ক্লিকে সেই রিলেটেড সকল তথ্য ভাণ্ডার একসাথে হয়ে যায় সব ভিজিটরের সামনে।
হ্যাশট্যাগ শব্দটির সাথে আমরা অনেক আগে থেকেই পরিচিত কিন্তু এর ব্যবহারের সঠিক নিয়ম কি আমরা জানি? অবশ্যই #হ্যাশট্যাগ ব্যবহারে কিছু নিয়ম – কানুন রয়েছে যা না জেনে বুঝে যদি ব্যবহার করেন তাহলে, আপনার লেখা হ্যাশট্যাগ শব্দটি হাইপার লিংক বা ওয়েব লিংক তৈরি করবে না। তাই নিয়ম গুলো বুঝে নিতে হবে। নিয়মগুলো নিচে পয়েন্ট আকারে সাজিয়ে লিখেছি। আশা করি, আপনার অনেক কাজে আসবে।

নিয়মগুলো হলো:
- হ্যাশ এর পর যে শব্দ বসাবেন, সে শব্দগুলোর মধ্যে ফাঁকা রাখা যাবে না যেমন: #onlineincome। যদি স্পেস দিয়ে লিখেন তাহলে # হ্যাশট্যাগ তৈরি হবে না। কোনও স্পেস ছাড়াই শব্দ বা সংখ্যা একসাথে থাকতে হবে।
- হ্যাশট্যাগটি যদি সঠিক ভাবে কার্যকর হয় তবে, নীল বর্ণ এর হয়ে যাবে। এতেই বুঝবেন আপনার # হাশট্যাগের কাজটি সম্পন্ন হয়েছে।
- কোনও ধরনের দাড়ি কমা কলন ব্যবহার করবেন না # হ্যাশট্যাগ এর সাথে।
- আন্ডাস্কোর এর মতো চিহ্ন ( _ ) ব্যবহার করবেন না কখনই। এতে লিংক তৈরি হয়েছে নীল বর্ণের হয়ে গেলেও আপনার পোস্ট রিচ করবে না স্যোশাল মিডিয়াতে
- হ্যাশট্যাগে কোনও রকম ব্রাকেট ( ) ব্যবহার করা হতে নিজেকে বিরত রাখুন। ব্রাকেট ( ) ব্যবহার করলে হ্যাশট্যাগ তৈরি হয় না।
- হ্যাশট্যাগ নীল হলে বুঝতে পারবেন আপনার # হ্যাশট্যাগ সফল ভাবে ক্রিয়েট হয়েছে।
- যখন # হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করবেন চেষ্টা করবেন অনেকগুসো শব্দ এড না করতে।যথাসম্ভব ছটো রাখার চেষ্টা করবেন যাতে মানুষ বুঝতে পারে সহজে।
- আপনার পোস্টের টপিকের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ রেখে # হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করবেন অবশ্যই।ওলটা পাল্টা # হ্যাশট্যাগ ব্যবহারে ভিজিটররা বিরক্ত হয়ে যাবে।
- আমি #আজ, # বলবো, # অনলাইনে, # আয়, #সম্পর্কে এভাবে কখনই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করবেন না। নির্দিষ্ট টপিকের ওপর হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করবেন যেমন: #Healthtips or #Onlineinometips যেটাই আপনার পোস্ট এর টপিকের সাথে মিলে তাই- ই ব্যবহার করুন।
- আপনার তৈরিকৃত # হ্যাশট্যাগে কোনোরকম যতি চিহ্ন বা যে কোনও চিহ্ন যেমন: , । ! ~ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- হ্যাশট্যাগ যদি সংখ্যা দিয়ে তৈরি করতে চান তাহলে সাথে অবশ্যই অন্তত একটা অক্ষর ব্যবহার করতে হবে আপনাকে।তা না হলে শুধু মাএ সংখ্যা দিয়ে # হ্যাশট্যাগ কখনোই তৈরি হবে না।
এই # হ্যাশট্যাগ এর রয়েছে চমৎকার একটি ইতিহাস। যা আগে হয়তো আপনি শোনেননি কখনো।
হ্যাশট্যাগ জন্মের চমৎকার ইতিহাস
# এই চিহ্নটির টেকনিক্যাল নাম হ্যাশট্যাগ নয়। এই চিহ্নটির একটি ট্যাকনিকের নাম রয়েছে। চিহ্নটির টেকনিক্যাল নাম হলো অক্টোথর্প। আসলে প্রথম দিকে # হ্যাশট্যাগ এর ব্যবহার শুরু করা হয় সামাজিক যোগাযোগ ও মাইক্রোব্লগিং সাইটের মাধ্যমে। পরবর্তীতে ফেসবুকে ২০১৩ সালে প্রথম প্রথম হ্যাশট্যাগ এর ব্যবহার শুরু হয়। ২০১৪ সালে Oxford Dictionery – তেও হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা শুরু হয়। এখন সব সামাজিক মাধ্যমেই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার হয়।
এই বহুল ব্যবহৃত হ্যাশট্যাগ এর ধারনা দেন ২০০৭ সালে ক্রিস্টোফার রিভস্ মেসিনা। তিনি পেশায় একজন প্রোডাক্ট কনসালটেন্ট এবং মার্কিন ব্লগার ছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম ২৩ শে আগস্ট ২০০৭ সালে তার একটি টুইটার পোস্টে #barcamp ব্যবহার করেন। সর্ব প্রথম সামাজিক মাধ্যম twitter থেকেই # হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের শুরু হয়। আসলে এই ট্যাগ কোনও রকম কোডিং ছাড়াই ওয়েব লিংক তৈরি করে ফেলে।
হ্যাশ ট্যাগকে সমগ্র গ্রুপ এবং সকল বিষয়কে একএিত করে লেবেল করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে ছিল। যাতে ব্যবহার কারীরা নিজের প্রয়োজনে সেই টপিকের # হ্যাশট্যাগ অনুসন্ধান করে এবং # হ্যাশট্যাগটির সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য সামগ্রী এক ক্লিকেই পেয়ে যেতে পারেন।
২০০৭ সালের অক্টোবরে স্যান ডিয়েগোয়ের এক নাগরিক নেট রিডার নামক একজন যখন # হ্যাশট্যাগ এর সাথে সব পোস্ট সংযুক্ত করে দেন। সে সময় এলাকার চলাচল রতো বন্য প্রাণী সম্পর্কে বিশ্বের সকল মানুষকে জানানো হচ্ছিল।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে টুইটার অফিশিয়াল ভাবে # হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের স্বীকৃতি দেয়।আর তারা এনাউন্স করেন, কোনও শব্দের আগে # হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করলে শব্দ গুচ্ছ গুলো একটা হাইপার লিংকে পরিণত হবে। টুইটার নিজের এই এনাউন্সমেন্ট আরও জড়ালও করতে তাদের সাইটে ট্রেন্ডিং পেইজে জনপ্রিয় কিছু # হ্যাশট্যাগ দেখানো শুরু করে যাতে অন্যরা আকর্ষিত হয়ে তা ব্যবহার করে।
এভাবেই ধীরে ধীরে # হ্যাশ ট্যাগের ব্যবহার অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠে সকলের কাছে। বিশেষ করে ইউটিউবার, ব্লগার, ফেসবুক পেইজের এডমিনদের কাছে খুবই জনপ্রিয় পর্যায়ে চলে যায়।
হ্যাশট্যাগ মিনিং ইন বাঙ্গালী?
হ্যাশট্যাগের সঠিক কোন বাংলা মিনিং নেই। হ্যাশ মূলত # একটি চিহ্ন/প্রতীক আর হ্যাশ প্রতীকের আগে যা বসে তা ট্যাগ। এই দুটিকে একসাথে বলে হ্যাশট্যাগ।
হ্যাশট্যাগ এর উপকারিতা কি?
যেকোন টপিককে ভাইরাল করা যায়। যা মার্কেটিংয়ে অনেক বেশী উপকারী। এছাড়া, অন্যায়ের প্রতিবাদেও এটা বেশ উপকারী। কোন নির্দিষ্ট টপিক বা পোস্টকে গ্রুপিং করতেও হ্যাশট্যাগ উপকারী।
ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ কিভাবে করতে হয়?
ফেসবুকে পোস্ট কিংবা কমেন্ট করার সময় # দিয়ে লেখা দিলেই হয়। যেমন আপনি চাচ্ছেন, projuktibidda.info ওয়েবসাইট সম্পর্কে একটা রিভিও দিতে। তখন পুরো পোস্ট লিখে নিচে #projuktibidda লিখে দিলেই হবে।
হ্যাশট্যাগ কিভাবে কপি করতে হয়?
টুইটারে ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ নামে অপশনই পাবেন সেখান থেকে কপি করতে পারেন। এছাড়া, top hashtag লিখে গুগলে সার্চ দিলেও অনেক সাইট পাবেন। প্রতিদিনের টপ হ্যাশট্যাগগুলো দেখাবে। গুগল সার্চের নিয়ম | ১০টি মজার ও দরকারি সার্চ টিপস।
পরিশেষে
এই ছিল আজকে, হ্যাশট্যাগ কি? হ্যাস ট্যাগ কিভাবে করে? এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। ইন্টারনেটে থাকলে আপনাকে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতেই হবে। তবে, ইন্টারনেট জগতে কিছু ভুল কখন করা যায় না, যা লেখাতে উল্লেখ করেছি।