যারা নতুন স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী তাদের অনেকের মনে একটি কমন প্রশ্ন, Meme মানে কি? যদিও অনেক পুরতান ইউজাররাও সত্যিকার অর্থে Meme বা মিমিক্রিম সম্পর্কে তেমন ভালভাবে জানে না। যদিও বর্তমানে Meme খুবই পরিচিত এবং জনপ্রিয় নাম।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু বাস্তব জীবনেও এর প্রভাব লক্ষ করা যায়। ২০১৮ এর দিকে ”এত কষ্ট করে কি হবে একদিন তো মরেই যাব”, এই meme খুব ই জনপ্রিয়তা পেয়েছি। স্কুল কলেজের ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে মেয়ের মুখে মুখে এই কথাটা চলত। এর মাধ্যমে বোঝাই যায়, meme কত টা মোহিত করে রাখে সবাই কে।
আজকের এই লেখায় আমরা জানবো Meme মানে কি? Meme এর শুরুটা কীভাবে হলো? এর প্রকারভেদ ইত্যাদি সম্পর্কে। লেখাটি আপনাদের নিকট বেশ মজার হবে। তাই, চলুন ভূমিকা বড় না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। তবে, যারা হ্যাশট্যাগ কি? হ্যাশট্যাগ জন্মের চমৎকার ইতিহাস সম্পর্কে জানেন না, তারা উক্ত লেখাটি পড়তে পারেন।
Meme মানে কি?

Meme হল মিডিয়ার একটি নান্দনিক রূপ, যা অনলাইনে সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। Meme আকর্ষণীয় বা ফানি ছবি, ভিডিও বা জিআইএফ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এটি একটি সাধারণ ধারণা বা অনুভূতির প্রতিনিধিত্ব করে, এটি সাধারণত একধরনের রসিকতা, যা একটি সংস্কৃতি বা উপসংস্কৃতির অথবা অপসংস্কৃতির সাথে ও সম্পর্কিত হতে পারে ।
জানি উপরের লাইনটা বই পুস্তকের ভাষা হওয়াতে মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। একটু সহজ করে বলি, যখন কোন ছবি, লেখা, ভিডিও কিংবা সামাজিক অবস্থাকেও হাস্য রসাত্নক (Funny) ভাবে তুলে ধরা হয় তখন তাকে Meme বলা হয়।
Meme এর উৎপত্তি
রিচার্ড ডকিন্স একজন জীববিজ্ঞানী ১৯৭৬ সালে “meme ” শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। তিনি জিন এবং meme এর মধ্যে সাদৃশ্য শনাক্ত করেন কারণ meme এর ধারণাগুলি মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যেমন টি জিন জিন মিউটেশন প্রক্রিয়াতেও হয়ে থাকে।

Meme বুঝতে হলে প্রথমে এটি সম্পর্কে ভাল মত জানতে হবে, কি বলা হচ্ছে তা বুঝতে হবে, ছবি গুলো ভালমত দেখতে হবে। কারণ এটি ভালমত বোঝার মাধ্যমে আপনার চিন্তাশীলতার গভীরতা যেমন প্রকাশ পায় তেমনি যিনি meme বানাচ্ছেন তার চিন্তাধারা এবং বুদ্ধির পরিচয়ও পাওয়া যায়। Meme তে আসলে খুব হালকা বিষয় খুব ফানি ওয়েতে তুলে ধরা হয় এবং খুব সিরিয়াস বিষয়কে খুবই হালকা ভাবে তুলে ধরা হয়। এই কাজ গুলি করার জন্য আসলেই সৃজনশীল বুদ্ধি সম্পন্ন হতে হয়।
প্রথম meme ১৯৯৬ সালে একটি শিশুর জিআইএফ এর মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল। এটি ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছিল এবং এমনকি জাতীয় টেলিভিশনেও প্রকাশিত হয়েছিল। তৈরিকৃত একটি নতুন meme মাস বা বছর ধরে জনপ্রিয় থাকতে পারে। কিন্তু প্রতিযোগিতা এবং কন্টেন্ট বৃদ্ধির কারণে meme এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। তবে সত্যি বলতে মানুষ এডাল্ড কন্টেন্ট এর meme বেশি পছন্দ করে।
Meme কত প্রকার?
১. ইমেজ ম্যাক্রো Meme

এটি ব্লক টেক্সট সহ একটি সহজ, অভিব্যক্তিপূর্ণ চিত্র যা কোন আবেগপূর্ণ অবস্থাকে তুলে ধরে এবং দর্শক এবং স্রষ্টার মধ্যে ভাবনার মেলবন্ধন সৃষ্টি করে।যেমন, ২০১৯ সালে চাঁদ দেখার বিষয় নিয়ে পিচে দেখ পিচে তো দেখ,এই লিখার meme অনেক জনপ্রিয় হয়েছিল।
২. জিআইএফ

এটি একটি অ্যানিমেটেড চিত্র বা শব্দহীন ভিডিও যা খুবই হাস্য রসাত্নক ভাবে তুলে ধরা হয়। ফেসবুক এবং টুইটারে মুলিত জিআইএফগুলি বেশি শেয়ার করা হয়।যেমন একটা বানরের পাপেটের জি আইএফ আছে খুব ই পরিচিত।
৩. ভিডিও
২০০৫ সালে ইউটিউবে প্রকাশের সাথে সাথে ভিডিও meme জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মুলত প্যাঁরোডি এই ধরনের meme এর মধ্যে পড়ে। ২০১৬ সালের দিকে জেন মালিকের পিলো টোক গানের প্যাঁরোডি খুবই সাড়া ফেলেছিল।
৪. আডভাইস এনিমেল

এইখানে কোন প্রাণীকে নিয়ে ফানি কন্টেন্ট বানানো হয় এবং তাদের ফেসে মানুষের মত এক্সপ্রেশন যোগ করা হয়। যেমন, কিছু দিন একটি বিড়ালের ছবি খুব ভাইরাল হয়েছিল।
৫. ডিমোটিভেটর

এটি মুলত কাল বেকগ্রাউন্ডের উপর সাদা কালারের লিখা থাকে। মানে এইটার উপস্থাপনই এমন যে যা দেখার সাথে সাথেই আপনি একটু ডিমোটিভেটেড হয়ে যাবেন। এখানে মুল কথার বিপরীতে কিছু বোঝায়। যেমন একটি কাল বেকগ্রাউন্ডের উপর সাদা ফাকা স্পেস আপনাকে একটু হতাশ ই করবে, বা আপনি অনেক ক্ষন ধরে একটি লিংক ওপেন করলেন কিছু দেখার আশায়,কিন্ত ওপেন হাওয়ার পর দেখলেন সেটি ফাঁকা, এগুলো আসলে প্রাঙ্ক, এগুলোই ডিমোটিভেটর টাইপড MEME.
৬. কমিকস

এইখানে ব্লক আকারে মানে কোটেশনের মত করে কন্টেন্ট সাজানো হয়। মানে এইখানে ডাইলগের ব্যবহার করে ফানি কন্টেন্ট তুলে ধরা হয়। প্রথম আলোতে প্রকাশ হওয়া গণতন্ত্র বিষয়ক যে কার্টুন ছাপা হয় বা রসালো এইগুলো কমিকস MEME এর উদাহরণ।
৭. ডানক meme
এই ধরনের meme সাধারণত অতিমাত্রায় ভাইরাল হওয়া বিষয়বস্তু নিয়ে বানানো হয়, যেমনঃ চিত্রনায়িকা সানাই এর প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে বানানো MEME বা মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের ফিনালের এক প্রতিযোগীর h2o মানে যে পানি এটি ণা বুঝতে নিয়ে তৈরি হওয়া MEME ডানক meme এর অন্তর্ভুক্ত।
MEME সম্পর্কে আরও কিছু চমৎকার তথ্য:
- অর্থ বা টাকাঃ meme স্টক, সাধারণভাবে ইন্টারনেট meme এর একটি বিশেষ শাখা যেখানে , তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলি তাদের অপারেটিং পারফরম্যান্সের পরিবর্তে সামাজিক মিডিয়ায় গুঞ্জনের তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই ধরনের meme যত শেয়ার করা হয় তত বেশি টাকা কামানো যায়।
- নির্বাচন বা রাজনীতি : ২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ মিট রমনির “নারীপূর্ণ বাইন্ডার” শব্দ টি ব্যবহার কে ঘিরে সবচেয়ে বিখ্যাত নির্বাচনভিত্তিক meme তৈরি করা হয়েছিল। তারপর ২০১৮ সালে অর্থ মন্ত্রীর ভেট আরোপ করার উপর রচিত প্যাঁরোডি গান দেশবাসী তো,একপ্রকার রাজনীতি বিষয়ক meme.
- সামাজিক আন্দোলন: meme সামাজিক সমস্যাগুলিকে তুলে ধরতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
বর্তমানে Meme এর জনপ্রিয়তা ক্রমাগত বাড়ছে। আসলে জাগতিক,কিংবা দৈনন্দিন বিষয় থেকে শুরু করে সমালোচনামূলক জীবন এবং বিশ্বের ঘট্বে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার উপর ও বিভিন্ন ধরণের meme রয়েছে। তাছাড়া প্রতিদিন আরও নতুন উপাদান ক্রমাগত যোগ হচ্ছে meme এর বিষয় বস্তুতে। এমন কি করোনা ভাইরাস নিয়ে ও meme বানানো হয়েছে।
উপসংহার
আপনি যদি আপনার কাছে আসা কোনও ছবি বা ভিডিও দ্বারা অনুপ্রাণিত হন তবে meme জেনারেটর দিয়ে আপনার নিজের meme তৈরি করে নিজের সেন্স অফ হিউমার কে একটু চাখিয়ে দেখতে পারেন।