ফেসবুক তো সম্প্রতি বলে দিয়েছে, ফেসবুক অ্যাকাউন্টে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করতে হবে। কিন্তু কথা হলো, এই টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কিভাবে কাজ করে?
বর্তমানে অনলাইনের যুগে আমরা বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে থাকি, তথ্য আদান প্রদান করার জন্য। এই সব যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন আইডি খুলতে হয় যাতে আমাদের বিভিন্ন তথ্য দেয়া থাকে। আবার এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে ও আমরা বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান করে থাকি।
কাজেই এখানে দেয়া তথ্য বা আদান প্রদান কৃত তথ্য যেন সুরক্ষিত থাকে তার জন্য আমাদের কিছু নিরাপত্তা অবলম্বন করতে হবে। যদিও আমাদের আইডিগুলো পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত থাকে, তবুও হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাদের আরো কিছু নিরাপত্তা অবলম্বন করা উচিত। টু স্টেপ ভেরিফিকেশন তেমনি একটি সার্ভিস যা আমাদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কি?
এটি হচ্ছে একটি আইডেন্টিটি মেথড যার মাধ্যমে বুঝা যায় আইডিতে প্রবেশকারি ব্যক্তি আসল নাকি নকল। তবে এর জন্য অবশ্যই আইডির মালিককে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন একটিভ করতে হবে। আইডির নাম ও পাসওয়ার্ড ছাড়া ও এখানে অন্য একটি ইনফরমেশন চাওয়া হয়ে থাকে যা আইডিতে এক্সেস হবার জন্য তখন দরকার হয়।
এটি হতে পারে কোন পিন নাম্বার বা কোন কোড নাম্বার যেটি ব্যবহারকারীর ফোন নাম্বার বা তার ইমেইল নাম্বারে পাঠানো হয়। এই পিন নাম্বার বা কোড নাম্বার খুব স্বল্প সময়ের জন্য বৈধ থাকে তাই খুব দ্রুত এটিকে প্রবেশ করাতে হয়।
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন দুই ধরনের হতে পারে
১. সিঙ্গেল ফ্যাক্টর টু স্টেপ ভেরিফিকেশন: যখন ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দেয়ার পর একটি কোড নাম্বার পাঠানো হয় ব্যবহারকারীর প্রদত্ত ফোন নাম্বারে তখন এটিকে সিঙ্গেল ফ্যাক্টর টু স্টেপ ভেরিফিকেশন বলে।
২. ডাবল ফ্যাক্টর টু স্টেপ ভেরিফিকেশন: এখানে প্রথম ধাপটি হলো সিঙ্গেল ফ্যাক্টর টু স্টেপ ভেরিফিকেশন এর মতো। এই ধাপ পার করলে দ্বিতীয় ধাপে নিয়ে যায়। এই দ্বিতীয় ধাপটিতে কিছু কোড দেয়া হয়। কোডগুলো এমন যেন এটি কোন ক্রিপটোগ্রাফিক ইউএসবি টোকেন থেকে এলোমেলো ভাবে দেয়া।
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কিভাবে কাজ করে?
সাধারনভাবে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ব্যবহারকারী তার আইডিতে প্রবেশ করার জন্য ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড ও একটি ভেরিফিকেশন কোড প্রদান করে থাকে। ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড দেয়া খুব সাধারণ একটি বিষয়। যেকোন আইডিতে প্রবেশ করতে এটি প্রয়োজন হয়। এই তথ্য প্রবেশের কাজ হলো প্রথম ধাপ।
এরপর দ্বিতীয় ধাপে সেখানে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হয়ে থাকে। এই পর্যায়ে ব্যবহারকারীকে একটি কোড নাম্বার প্রদান করা হয় অন্য একটা মাধ্যমে। এই মাধ্যম হতে পারে মোবাইলে টেক্সট মেসেজ বা কোন ইমেইল আইডি বা কোন যাচাইকরণ এপস। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবশ্যই সেই কোড নম্বরটি নির্ধারিত স্থানে প্রবেশ করাতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি এই কোড প্রবেশ করানো না যায় তাহলে ফলাফল আসবে ফেইলড অথেনটিকেশন এটেম্পট।
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কেন দরকার?
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন সেট করা থাকলে ব্যবহারকারীর আইডি থাকবে সুরক্ষিত। দূরে বসেও কোন হ্যাকার বা অন্য কেউ আইডিতে প্রবেশ করতে পারবেনা। কোন ভাবে যদি হ্যাকাররা পাসওয়ার্ড পেয়েও যায় তবু তাদের ব্যবহারকারীর নিজস্ব ফোন বা পারসোনাল কম্পিউটার প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুন: কিভাবে শক্তিশালী পার্সওয়ার্ড তৈরী করবেন?
কারণ আইডিতে প্রবেশ করার জন্য যে কোডটি পাঠানো হবে সেটি মোবাইল বা কম্পিউটারে যাবে। ব্যবহারকারীর নিজস্ব ফোন বা কম্পিউটার ছাড়া অন্য কোন ডিভাইস থেকে লগইন করতে চাইলেই মোবাইলে বা ইমেইলে কোড যাবে যা দেখে বুঝা যাবে কেউ অবৈধভাবে আইডিতে প্রবেশ করতে চাইছে বা আইডি হ্যাক করতে চাইছে।
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন সেট করতে কি প্রয়োজন হয়?
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন শুরু করার জন্য দরকার হয় ইমেইল আইডি। এক্ষেত্রে দুইটি ইমেইল আইডি থাকা উচিত। একটি ব্যবহার করে অপরটি ব্যাকআপের জন্য রাখা ভালো। একটি মোবাইল নাম্বার দরকার হয় বা দরকার হয় যাচাইকরণ এপস। যখন নতুন কোন ডিভাইস থেকে বা নতুন কোন স্থান থেকে লগইন করতে চাইবে তখন সেখানে একটি সিকিউরিটি কোড চাইবে যা দিয়ে সাইন ইন করতে হবে।
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করার নিয়ম

ফেসবুকে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করার জন্য প্রথমে যেতে হবে সিকিউরিটি এন্ড লগইন সেটিংসে। তারপর স্ক্রল করে নিচে নেমে “ ইউজ টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ’’ এ এসে এডিট অপশনে ক্লিক করতে হবে। তারপর সেখান থেকে একাউন্টধারী যে নিরাপত্তা কৌশল অবলম্বন করতে চায় সেটি সিলেক্ট করবে এবং সেখানে দেয়া নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করবে।
আরও পড়ুন: ফেসবুক পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি! কী করবো?
যখন ফেসবুকে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন সেট করা হবে তখন সেখানে নিচের তিন ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হবে।
- যেকোন ডিভাইস থেকে সিকিউরিটি কি ট্যাপ
- থার্ড পার্টি অথেনটিকেশন এপ থেকে লগইন কোড
- নিজস্ব মোবাইল থেকে টেক্সট মেসেজ কোড
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন একটিভ করার পর যে ফোন থেকে লগইন করা হবে সেটি সেভ করতে হবে নয়তো যতবার সেখানে এক্সেস হতে চাইবে প্রতিবার সেখানে কোড দরকার হবে।
এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে পাবলিক কোন কম্পিউটার থেকে লগ ইন করার ক্ষেত্রে সেখানে যেন কোনভাবেই সেভ ব্রাউজার অপশন ক্লিক করা না হয়। একবার ব্রাউজার সেভ হয়ে গেলে আর কখনোই সেটি কোড চাইবেনা এবং হ্যাকারদের জন্য তখন আইডিতে প্রবেশ করা সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া মোবাইল ফোনে সেই নাম্বারটিই ব্যবহার করা জরুরি যেই নাম্বার আইডিতে দেয়া আছে অথবা যে নাম্বারে টেক্সট যাবে সেটি সবসময় সাথে সাথে রাখতে হবে।
গুগলে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করার জন্য প্রথমে গুগল একাউন্টে লগ ইন করতে হবে। তারপর বামদিকে থাকা সিকিউরিটি ট্যাব ক্লিক করতে হবে। স্ক্রল করে একটু নিচে নেমে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন ক্লিক করতে হবে। তারপর ক্লিক করতে হবে ‘‘ দ্যা গেট স্টারটেড ’’ বাটন। এরপর স্ক্রিনে আসা নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
আইডেন্টিটি কনফার্ম হবার জন্য পাসওয়ার্ড দিয়ে ‘‘ ট্রাই ইট নাউ ’’ এ ক্লিক করতে হবে।
এরপর সেখানে একটি ফোন নাম্বার যোগ করতে হবে যেখান গুগল থেকে ছয় ডিজিটের একটি ভেরিফিকেশন কোড যাবে। তারপর সেন্ড বাটন ক্লিক করতে হবে।
ছয় ডিজিটের কোড নাম্বারটি প্রবেশ করিয়ে আইডি ভেরিফাই করতে হবে তারপর নেক্সট ক্লিক করতে হবে। সবশেষে এনাবল টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন টার্ন অন করে বের হয়ে আসতে হবে।
উপসংহার
এই ছিল আজকে, টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কিভাবে কাজ করে? নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। এরকম আরও লেখা পাবেন আমাদের টেক জ্ঞান ক্যাটেগরিতে।