এখনকার সময়ে অনেকেই ইউটিউব কিংবা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও আপলোড করে থাকেন। কারো বা এটা আয়ের উৎস। তো একটি ভালো মানের ভিডিওর জন্য দরকার এডিটিং এর।
আজ আমরা এই লেখায় ভিডিও এডিট করার জন্য সেরা ৫ টি সফটওয়্যার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আর আপনাদের যদি ইউটিউব থেকে ভিডিও ডাউনলোড করার প্রয়োজন হয় তাহলে, ইউটিউব থেকে ভিডিও ডাউনলোড করার সফটওয়্যার।
লেখার সূচিপত্র
ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার
১. Final Cut Pro (Video Editor)
Final Cut pro এমন একটি ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে আপনি বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য যেকোনো স্থানের কোনো সম্পাদকদের সাথে এডিটিং লাইব্রেরি ভাগ করে নিতে পারবেন।
এটি প্রোফেশনাল Non Leaner ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার (Video Editing Software)। এই অ্যাপটিতে দারুণ সব টুলস আছে। উন্নত এবং উচ্চ মানের ইন বিল্ট টেমপ্লেট (In Built Template) এর সুবিধা আছে। সাথে এখানে আপনি এমন সব টুলস পাবেন; যার মাধ্যমে কিনা আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ওয়াইডস্ক্রিন ভিডিওকে (Widescreen Project) কাস্টমাইজড করে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য রূপান্তরিত করে। এই অ্যাপের অনেক সুযোগ সুবিধার জন্য সহজেই ভিডিও এডিট করতে পারবেন।
সুবিধা
- এখানে Easy And User Friendly Interface এর সুবিধা আছে।
- এই অ্যাপে ট্রানজ্যাকশন এবং অনেক ধরণের এফেক্ট এর একটি বড় ধরণের কালেকশন আছে।
- রেটিং, Tagging ও লাইব্রেরিসহ শীর্ষস্থানীয় সংস্থার টুলগুলোকে এখানে পাবেন যা দিয়ে ভিডিও দারুণ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
- Youtube, Facebook এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া বা ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্মের জন্য ভিডিওগুলো এই অ্যাপ এর মাধ্যমে একীভূত করা যায়।
- এই অ্যাপ এর তৈরি ভিডিও ইউটিউবের জন্য 4K ইউ. এইচ. ডি. রেজুলেশন সমর্থন করে।
অসুবিধা
- 360° ভিডিওর জন্য গতি ট্র্যাকিং সিস্টেম নেই।
- তুলনামূলকভাবে প্রচুর ব্যয়বহুল।
- কেবল ই-মেইলের মাধ্যমে কাস্টমার সাপোর্ট পাওয়া যায়।
- এর Storyline edit বৈশিষ্ট্য এর পেশাদার সম্পাদকদের বন্ধ করে দিতে পারে।
- ফ্রি স্টক লাইব্রেরি নেই।
- এটি শুধুমাত্র অ্যাপলের উপরেই কাজ করে।
২. Kinemaster

বর্তমানে এই অ্যাপটি ভিডিও এডিট করার জন্য প্রচুর ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব ইউটিউবাররা ছবি আঁকেন তারা এই অ্যাপটি ব্যবহার করেন। এই অ্যাপের মূল লক্ষ্য হ্যান্ডহেড ডিভাইসে মানে স্মার্টফোন বা ট্যাবে ডেস্কটপ এডিটিং এর কার্যকারিতা নিয়ে আসা। এই অ্যাপের সাহায্যে ভিডিও গুলোকে আপনারা দারুণভাবে এডিট করতে পারবেন।
সুবিধা
- এর মাধ্যমে তৈরি ভিডিওগুলো বেশি অ্যাট্রাকটিভ করে।
- ভিডিও ট্রিম করা যায়।
- ভিডিও ভাগ করা যায়।
- আপনার ভিডিওগুলোকে প্রিভিউ করতে পারবেন।
- একের অধিক ট্র্যাকে ভিডিও যোগ করা যায়।
- ভিডিওতে লেখা ও অন্যান্য স্তর এড করা যায়।
- ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড চেঞ্জ করতে পারবেন।
- ভিডিওর মোশন বা গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
- আর্ট টুল এর সিস্টেম আছে।
অসুবিধা
- এটি মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা গেলেও; আপনি আপনার পিসি অর্থাৎ পারসোনাল কম্পিউটারে ব্যবহার করতে আরামবোধ করবেন না।
৩. Shotcut
এটি বর্তমানে আরও একটি জনপ্রিয় অ্যাপ। এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ফাইভ মিলিয়ন। এর মাধ্যমে আপনি অনেকগুলো সুবিধা পেয়ে যাবেন। এটি বিনামূল্যের, ওপেন সোর্স, ক্রস প্লাটফর্ম ভিডিও এডিটর। এটি আপনাকে নেটিভ এডিটিং করতে দেয়।
মাল্টি ফরম্যাট টাইমলাইন, 4K রেজুলেশন সাপোর্ট করে। এটি Drug and Drop সহ একটি অসাধারণ ইন্টারফেসে তৈরি। এতে ভিডিও ওয়াইপ ট্রানজ্যাকশন আছে। এতে এমন একটি কালার সার্কেল আছে যা প্রফেশনাল গ্রেডের কালার কারেকশন এ সাহায্য করে। ভিডিও এডিট করার জন্য আপনি এর মধ্যে অনেকগুলো টুলস পেয়ে যাবেন।
সুবিধা
- লিনাক্স, ম্যাক ও উইন্ডোজে সব ধরণের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য এটি উপযোগী
- এটি ফুল ওপেন সোর্স প্রোগ্রাম।
- ফ্রিতে অনেক ভাল ভাল টুলস ব্যবহার করতে পারবেন।
- ফ্রিতে ১০৮০ Pixel এ সেভ দিতে পারবেন।
- এর কাছে দারুণ সব ফিল্টার ও এফেক্টের এর দারুন সব কালেকশন আছে।
অসুবিধা
- লিনাক্সের জন্য তেমন উপযোগী নয়।
- এটিতে ফিল্টারের কালেকশন থাকলেও তাদের Preview দেখা যায় না।
- রেডি টু ইউজ টেমপ্লেট নেই।
- ২৮০+ সাউন্ড এফেক্ট সহ ফ্রী স্টক লাইব্রেরি থাকলেও তা সীমীত।
- জাস্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই গ্রাহকদের সাপোর্ট দেয়া হয়।
এখানে আপনাদের সুবিধার্থে ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ করে দেখানো হলো-
কিভাবে ভিডিও এডিট করা যায়
প্রথমত আপনি একটি ভিডিও সিলেক্ট করুন। তারপর সেখানে নিচে Edit অপশন থেকে Remove background অপশনে ক্লিক করুন।

এরপর ব্যাকগ্রাউন্ড চলে যাবে। এরপর আপনি কোনো কালারের ব্যাকগ্রাউন্ড এড করতে চাইলে, সেখানের Background অপশনে ক্লিক করে নিজের পছন্দমতো কালার চয়েস করুব।

অতঃপর উপরর সেভ অপশন থেকে Export করলেই হয়ে যাবে।

৪. WeVideo
এটির ব্যবহারও এখন প্রচুর। এটির ইন্টারফেস অন্য ভিডিও এডিটরগুলোর মতোই। Basic Streaming And Splitting Function ছাড়াও এটি স্টক ফুটেজ এবং অডিও অ্যাক্সেস সাপোর্ট করে। এতে স্লো মোশন, গ্রীন স্ক্রিন, স্ক্রীন এবং ওয়েবক্যাম রেকর্ডিং এর সুবিধা আছে। এছাড়া Facebook ও Twitter এর সাথে ভিডিওগুলো একীভূতকরণের নানা সুবিধা পাওয়া যায়।ব্যবসা নিয়ে যারা ভিডিও তৈরির কাজ করেন এটা তাদের জন্য উপযোগী হতে পারে।
সুবিধা
- গ্রীন স্ক্রীনের মাধ্যমে রিমুভ করা যায়।
- স্লো মোশন ভিডি করা যায়।
- ওয়েবক্যাম রেকর্ডিং।
- মোশন টেক্সট, অডিও এক্সপার্ট।
- 4k UHD রেজুলেশন।
- এদের ক্লাউড লাইব্রেরিতে রেডি টেমপ্লেট রয়েছে।
অসুবিধা
- ওয়াটার মার্ক নেই।
- স্টক ফুটেজ অ্যাক্সেস নেই।
- কিছু সিস্টেমের জন্য পে করতে হয়।
প্রথমে উপরের দেয়া লিংকে ক্লিক করুন, অথবা গুগল প্লে স্টোরে লিকে সার্চ করুন ‘WeVideo’। এতে Video Editor নামে একটি অ্যাপ দেখতে পাবেন। এরপর এর পাশে ইনস্টল লেখা দেখতে পাবেন। ইনস্টল লেখা সবুজ বাটনটিতে ক্লিক করুন।

এটি ইনস্টল করার পর ওপেন করুন। এরপর সেখানে আপনাকে লগইন করতে বলা হবে। আপনি ই-মেইল, গুগল, ফেসবুক এর মাধ্যমে লগ ইন করতে পারবেন। আমি এখানে গুগল এর মাধ্যমে লগ ইন করছি।

এরপর Continue বাটনে ক্লিক করে আপনার একাধিক অ্যাকাউন্ট থাকলে কোন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লগ ইন করবেন তা সিলেক্ট করবেন। আবারও কন্টিনিউ করবেন। ব্যাস, এবার আপনার পছন্দমতো ভিডিও এডিট করতে পারেন।
৫. DaVinci Resolve
এটি এমন এক ধরনের সফটওয়্যার যা অস্থির আর উন্নতমানের ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। মোশন গ্রাফিক্স এন্ড ভিজ্যুয়াল এফেক্ট থেকে শুরু করে কালার কালেকশন পর্যন্ত সবকিছুর সুযোগ সুবিধা আপনি এখানে পাবেন।
ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করলে এই অ্যাপ দিয়ে সেই ভিডিও এডিট করতে পারবেন। এই সফটওয়্যার এর দ্বারা আপনি দ্রুত ভিডিও এডিট করতে পারবেন, উচ্চ মানের জন্য কাজে ফোকাস করতে পারবেন। ভিডিওর তথ্য, টেক্সট, কালার এড করতে পারবেন।
সুবিধা
- লিনাক্স, ম্যাক ও উইন্ডোজে কাজ করে।
- সেভ করার সময় ফাইলের সাইজ ছোট করে। তবে কোয়ালিটি ভাল রাখে।
- ভিডিও ট্রিমিং সিস্টেম আছে।
অসুবিধা
- রেডি টু ইউজ টেমপ্লেট নেই।
- বিনামূল্যে স্টক লাইব্রেরি নেই।
- কেবল ই-মেইলের মাধ্যমে গ্রাহক সাপোর্ট পাওয়া যায়।
পরিশেষে
এই লেখাতে আমি আপনাদের দারুন ৫টি ভিডিও এডিট করার সফটওয়্যার এর নাম বললাম। সহজভাবে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং কাজে আসবে।