আপনি কি নিজের হাতে থাকা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে মোবাইল এপ্স তৈরি করে ইনকাম করতে চাচ্ছেন? তাহলে এই লেখাতে জানবো, মোবাইল এপস তৈরি করার নিয়ম। পুরো লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে মোবাইল এপস তৈরি করার নিয়ম নিয়ে অনেক সংশয় দূর হয়ে যাবে এবং মোবাইল এপস তৈরি করার নিয়মও জেনে নিতে পারবেন।
লেখার সূচিপত্র
মোবাইল এপ্স তৈরির গুরুত্ব
বর্তমান যুগে মোবাইল একটি গুরুত্তপূর্ণ ডিভাইস। মোবাইল ব্যবহার করে না এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা অনেক এপ্স দেখে থাকি। অনেক ধরনের মোবাইল এপ্স আমাদের মোবাইলে আমরা ব্যবহার করি।
কিন্তু কখন কি ভেবে দেখেছি যে কিভাবে এই এপ্স তৈরি করা হয় বা আমরা নিজে তৈরি করতে পারব কিনা? কেমন হবে যদি আমরা নিজেই মোবাইল এপ্স তৈরি করতে পারি?
আজকে আপনাদের জানাব মোবাইল এপস তৈরি করার নিয়ম, কি কি এপ্স তৈরি করা যায়, কেমন খরচ হয় এপ্স তৈরিতে,কিভাবে আপনারা সহজেই মোবাইল এপ্স তৈরি করে ইনকাম করতে পারবেন। তাহলে দেরি না করে জেনে নেয়া যাক মোবাইল এপ্স তৈরির নিয়ম।
মোবাইল এপস তৈরি করার নিয়ম
এপ্স তৈরি করার জন্য অবশ্যই আপনার মোবাইলে ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হবে। এরপর আপনার একটি জিমেইল আইডির প্রয়োজন হবে। আপনার জিমেইল আইডির মাধ্যমে আপনি একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সেখানে মোবাইল এপ্স তৈরি করার নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো ধরনের মোবাইল এপ্স তৈরি করতে পারবেন।
মোবাইল অ্যাপস তৈরি করার ৫টি ওয়েবসাইট:
- Appsgeyser Free App Builder
- Mobincube
- Appyet App Creator
- Andromo.com – Mobile App builder for Android and iOS
- Quickappninja.com
আবার যদি প্রফেশনাল এপ তৈরি করার ইচ্ছা থাকে তাহলে বিভিন্ন পেইড ওয়েবসাইটে একাউন্ট করা যায়। অথবা আপনি মোবাইল এপ্স ডেভেলপমেন্ট শিখেও এপ্স তৈরি করে ইনকাম করতে পারবেন। মোবাইল দিয়ে প্রোগ্রামিং শিখার ৫টি অ্যাপ। এছাড়া, নিচে ইউটিউবের ভিডিও টিউটরিয়াল দিয়ে দিলাম, যেটার মাধ্যমে আপনি এপস ডেভোলপমেন্ট শিখে এপ তৈরি করতে পারবেন।
মোবাইল এপ্স তৈরি
এপ্স তৈরি করার জন্য খুব ভালো একটি ওয়েবসাইট হলো Appsgeyser Free App Builder। এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার সাথে সাথেই আপনার সামনে অনেক ধরনের অপশন আসবে। যেভাবে সহজেই এপ্স তৈরি করবেন:
ধাপ ১ – ক্যাটাগরি সিলেক্ট
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আপনার পছন্দ অনুযায়ী ক্যাটাগরি সিলেক্ট করতে হবে। আপনি যেই ধরনের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে চান সেই ক্যাটাগরি সিলেক্ট করতে হবে। আমরা আপাতত ওয়ালপেপার তৈরির অ্যাপ তৈরি করবো। তাই Wallpaper নির্বাচন করলাম। তারপরে প্রিমিয়াম প্লান নেয়ার একটা বিজ্ঞাপন আসবে সেটা ক্রস বাটনে ক্লিক করে কেটে দিবো। তারপর Next এ ক্লিক করবো।
ধাপ ২ – নাম, আইকন এড
একটি ক্যাটাগরি সিলেক্ট করার পর সেটি আপনার সামনে ওপেন হবে। এরপর আপনি আপনার পছন্দের নাম, আইকন এড করতে হবে। তারপর Next এ ক্লিক করতে হবে।
ধাপ ৩ – সেটিং ঠিক করা
বিভিন্ন সেটিংস নিজের মতো করে সিলেক্ট করে নিবেন। বিভিন্ন সেটিংস এর জন্য অপশন দেয়া থাকবে। নিজের পছন্দ মতো অপশন গুলো ফিলাপ করতে হবে। এবার এপ্সটি আপনার মোবাইলে ডাউনলোড করার জন্য একটি একাউন্ট তৈরি করার অপশন দেখাবে।
ধাপ ৪ – এপ্স ক্রিয়েট
একাউন্ট তৈরি করে আপনার মোবাইলে ডাউনলোড করে এপটি ইন্সটল করে নিবেন।
এই এপ্সটি আপনি আপনার আশে-পাশের অন্য মোবাইল এও শেয়ার করার মাধ্যমে ইন্সটল করে ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন উইন্ডোজ বা অপারেটিং সিস্টেম এপ ফ্রী তে তৈরি করা যায়। আবার অনেক পেইড ওয়েবসাইট থেকেও মোবাইল এপ্স তৈরি করা যায়।
কি কি ধরনের এপ্স তৈরি করতে পারবেন
আপনি বিভিন্ন ধরনের এপ্স তৈরি করতে পারবেন। গেম খেলার জন্য গেমিং এপ্স, ইনকাম করার জন্য আর্নিং এপ্স, বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রচারণার জন্য শিক্ষামূলক এপ্স, ভিডিও এডিট বা ছবি এডিট করার জন্য এডিটিং এপ্স।
এছাড়াও আপনি নিজের পছন্দমতো যেকোনো ধরনের মোবাইল এপ্স তৈরি করতে পারবেন। এই সাইট ছাড়াও আরও অনেক নন পেইড ওয়েবসাইট আছে যেগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের মোবাইল এপ তৈরি করা যায়। আবার উইন্ডোজ বা অপারেটিং সিস্টেমের এপ ও তৈরি করে ফেলা যায়।
অনেকে প্রফেশনাল এপ বানিয়ে আয় করে। সবচেয়ে বেশি গেমিং, আর্নিং ইত্যাদি এপ দেখা যায়।
কিভাবে আর্নিং এপ্স তৈরি করবেন?
আর্নিং এপ্স তৈরি করার জন্য প্রথমেই আপনাকে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। এরপর আপনার এপ্স এর মধ্যে আপনাকে যেকোনো কোম্পানির এড যুক্ত করতে হবে।
আপনার এপ্স ব্যবহারকারি সকলের সামনে এই এড দেখানো হবে। আপনার এপ্স ইউজাররা এই এড দেখলেই আপনার আর্নিং হবে। তারা যত বেশি এপ্স ইউজ করবে এবং এড দেখবে আপনার তত বেশি আর্নিং হবে। আর্নিং এর জন্য আর একটি ভালো এপ্স হবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এপ্স।
আপনি এই এপ্স তৈরি করে লিংক শেয়ারের মাধ্যমে আপনার ইউজার বাড়াতে পারবেন। এই লিংক শেয়ারের মাধ্যমে আপনি খুব ভালো একটি এমাউন্ট আর্ন করতে পারবেন।
এছাড়াও কোন গেমিং এপ্স তৈরি করে আপনি তাতে এড যুক্ত করে ইনকাম করতে পারবেন। গেমিং এপ্স মানুষ অনেক বেশি ইউজ করে। ফলে এডগুলো তাদের কাছে বেশি দেখানো হবে এবং আপনার বেশি বেশি ইনকাম হবে।
কিভাবে এপ্স তৈরি করার পর পাবলিশ করবেন?
পছন্দের এপ্সটি তৈরি করা হয়ে গেলে এখন প্রশ্ন আসে এটি কিভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা যাবে?
এপ্সটি তৈরি করার পর
- সেটি গুগল প্লে স্টোর এ পাবলিশ করার জন্য প্রদান করতে হবে।
- পাবলিশ করার জন্য গুগল প্লে স্টোর কনসলে গিয়ে আগে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।
- এড যুক্ত করার জন্য গুগল এডমব ব্যবহার করতে হবে।
- এরপর এড রান হয়ে গেলে এপ্সটি যত বেশি মানুষ ইউজ করবে এবং এড দেখবে তত বেশি ইনকাম হবে।
কিভাবে এপ্স তৈরির মাধ্যমে আর্নিং করবেন?
এপ্স তৈরি করার পর তা থেকে আয় কিভাবে হবে এমন একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়! এখন আমি আপনাদের জানাব কিভাবে আপনার পছন্দের তৈরি করা এপ্স থেকে আপনি আয় করতে পারবেন।
আপনার এপ্সটি তৈরি করা হয়ে গেলে তাতে আপনি মনিটাইজেশন অন করে দিবেন।আপনার এপ্স এর মনিটাইজেশন এর সব শর্ত পুরন হয়ে গেলে আপনি তা অন করতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারবেন।
এতে করে আপনি গুগলের এড দেখানোর মাধ্যমে খুব ভালো ইনকাম করতে পারবেন। আপনার এপ্স ইউজাররা যত বেশি এপ্স ইউজ করবে এবং যত বেশি এড দেখবে আপনার তত বেশি আয় হবে।
কেন এপ্স দিয়ে আর্নিং করব?
ফ্রিতে এপ বানিয়ে আয় করার কোন বিকল্প নেই। আজকাল মানুষ ঘরে বসে আয় করতে বেশি পছন্দ করে। একটি মোবাইল এপ বানিয়ে তা দিয়ে মানুষ ঘরে বসে আয় করতে পারবে।
অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা নিজেরা আয় করতে চায় তাদের জন্য এটি একটি বেস্ট আর্নিং এর পথ। এপ বানিয়ে ফ্রিতে খুব ভালো ইনকাম করা যায়।পার্ট টাইম কাজ হিসেবেও এটি লাভজনক। ঘরে বসে যখন খুব সহজেই এপ থেকে আয় করা যাবে তখন এই বিষয়ে চর্চা করা উচিত।
এটি শিক্ষার্থীদের জন্য খুব ভালো একটি সুযোগ। সহজে ইনকাম করার জন্য ফ্রীতে এপ্স তৈরি করে আর্নিং করা যেতে পারে।
এপ্স তৈরি করতে কেমন খরচ হবে?
একটি প্রফেশনাল এপ্স তৈরি করতে খরচ অনেক হবে এটাই স্বাভাবিক। এই ধরনের এপ্স তৈরি করতে একজন ভালো দক্ষ এপ ডেভেলপার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ৫,০০০ থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।
তবে আপনি যদি আমার দেয়া ধাপ অনুযায়ী এপ্স তৈরি করেন তবে আপনি বিনামূল্যে আপনার এপ্সটি বানাতে পারবেন এবং সহজেই ইনকাম করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি প্রফেশনাল পর্যায়ের এপ্স তৈরি করতে চান তবে অবশ্যই আপনার একজন প্রফেশনাল ডেভেলপার প্রয়োজন হবে। আপনার এপ্সটি আপনি কিভাবে সাজাতে চান তা আপনার উপর নির্ভর করে।
মোবাইল এপ্স তৈরিতে সতর্কতা
বর্তমানে যেসকল এপ্স ডেভেলপার আছেন তারা শুধু সোর্স কোড ব্যবহার করবে। একটা সাধারন এপ্স তৈরি করে অনেক বেশি পেমেন্ট চেয়ে থাকেন। তাই কাউকে দিয়ে এপ্স তৈরি করার পূর্বে অবশ্যই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
বেশীর ভাগ সোর্স কোড গুগল সার্চ করলে পাওয়া যায় আর গিটহাব তো আছেই। এছাড়া, CodeCanyon থেকে অনেকে সোর্স কোড কিনে সেটা বিভিন্ন দামে বিক্রি করে। তাই, অ্যাপ তৈরির আগে অবশ্যই জেনে নিবেন, তারা কি একদম স্কেচ থেকে অ্যাপ তৈরি করে দিবে নাকি সোর্স কোড ডাউনলোড করে কাস্টমাইজ করে দিবে। কাস্টমাইজ করে দিলে খরচ কম হবে তবে নিশ্চিত হয়ে নিবেন, সোর্স কোড সে কোথা থেকে সংগ্রহ করেছে। যদি CodeCanyon হয় তাহলে ভাল।
প্রথমেই জেনে নিবেন আসলে একটি মোবাইল এপ্স তৈরি করার নিয়ম কিভাবে এবং একটি এপ্স তৈরি করতে সোর্স কোড অনুযায়ী সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ হতে পারে।
পরিশেষে
উপরোক্ত আলোচনা থেকে মোবাইল এপস তৈরি করার নিয়ম জেনে আপনিও শুরু করতে পারেন অনলাইনে ইনকাম। তবে এপ্স তৈরি এবং প্রচারে অবশ্যই কোন প্রতারনা করা যাবেনা এবং অন্যের প্রতারনা থেকে বাচতে হবে।