কম্পিউটার চালাতে গিয়ে আমাদের কম্পিউটার বিভিন্ন ভাইরাসের কবলে পরলে, ভাইরাস কাটার সফটওয়্যার ডাউনলোড করার প্রয়োজন হয়।
কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে নানান সমস্যা হয়। কম্পিউটারে রাখা আমাদের বিভিন্ন ফাইল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকগুরুত্বপূর্ণ ডাটা হ্যাকারদের নিকট চলে যায়। এছাড়া, কম্পিউটার বা মোবাইল স্লো হয়ে যেতে পারে।
এর থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের ভাইরাস দূর করার সফটওয়্যার সম্পর্কে জানতে হবে এবং কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে তা দ্রুত দূর করতে হবে।
লেখার সূচিপত্র
কম্পিউটার ভাইরাস কি?
কম্পিউটার ভাইরাস হচ্ছে এক ধরনের ম্যালওয়্যার ( ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যার )। এটি এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে এটি অটোমেটিক নিজে নিজে তৈরি হতে পারে। এটি একটি কম্পিউটারে কানেক্ট হয়ে, নিজের অনেকগুলো রেপ্লিকা তৈরি করতে পারবে।
কম্পিউটার ভাইরাস অনেকটা আসল ভাইরাসের মতই। একটি ভাইরাস অনেকগুলো ভাইরাস তৈরি করে পুরো কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে।
কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এটি ধীর হয়ে যায় এবং কাজ করার গতি কমিয়ে দেয়। ঠিকভাবে কাজ করা যায় না। ভাইরাস কাটার সফটওয়্যার ডাউনলোড করে ভাইরাস রিমুভ করতে হবে।
৩টি পদ্ধতিতে কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
১. ইউএসবি ডিস্ক থেকে
কম্পিউটারে কোন ইউএসবি ব্যবহার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে। এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ব্যবহার করা সময় এই ইউএসবি ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে। অনেক সময় হ্যাকাররা ইচ্ছা করেই বিভিন্ন কম্পিউটারে এইসব ভাইরাস রেখে যায়। ভাইরাস আক্রান্ত কম্পিউটার থেকে তখন ভালো একটা কম্পিউটারে এই ইউএসবি দ্বারা ভাইরাস ট্রান্সফার হয়।
২. ইন্টারনেট থেকে কিছু ডাউনলোড করার মাধ্যমে
আননোন সোর্স থেকে কিছু ডাউনলোড করলে অনেক সময় ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে। এইজন্য বিশ্বস্ত উৎস থেকে ডাউনলোড করতে হবে যেমন প্লে স্টোর বা অ্যাপলস অ্যাপ স্টোর। তবে আপনাদের একটা টিপস দিয়ে রাখি।
ইন্টারনেট থেকে কিছু ডাউনলোড করার পূর্বে সেই সফটওয়্যারটি আগে অনলাইনে ফ্রি স্ক্যান করে নিন। স্ক্যান করার পর ভাইরাস পেলে সেটা ইন্সটল করার দরকরা নেই। অনলাইনে স্ক্যান করার দুটি ওয়েবসাইট:
ভালমতো বোঝার জন্য নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
৩. বিভিন্ন লিংক বা কোন অ্যাটাচমেন্ট থেকে অথবা কোন স্প্যাম ইমেইল থেকে
না জেনেই কোন লিংকে ক্লিক করলে অনেক সময় সেই লিংক থেকে ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, তা বোঝার উপায়?
কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে তা বোঝার অনেকগুলো লক্ষণ আছে। প্রথমতই হলো কম্পিউটর স্লো হয়ে যাওয়া। কম্পিউটারটি যদি বরাবরের চেয়ে কাজ করতে বেশি সময় নেয় বা কোন ফাইল ওপেন হতে সময় লাগে তাহলে বুঝতে হবে এটি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
দ্বিতীয়ত হলো যদি দেখা যায় কম্পিউটারে এমন কোন অ্যাপস আছে যেটি অপরিচিত। তাহলে সাথে সাথে সেটি রিমুভ করতে হবে। তারপর ভাইরাস স্ক্যান করতে হবে।
আবার অনেক সময় দেখা যায় কোন প্রোগ্রাম বা অ্যাপস অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এর থেকেও বুঝা যায় যে কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এটি গরম হয়ে যায় দ্রুত।
ভাইরাস কাটার সফটওয়্যার ডাউনলোড
কম্পিউটার থেকে ভাইরাস দূর করার উপায়
কম্পিউটার ভাইরাস দেখা যায়না। এন্টি ভাইরাস না থাকলে বুঝা যায় না যে কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এই জন্য কম্পিউটারে এন্টি ভাইরাস থাকা জরুরি।
কম্পিউটার যদি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে হবে।কম্পিউটার ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আমাদের পূর্বের লেখাটি পড়তে পারেন।
ধাপ: ১ – ভাইরাস স্ক্যানার ডাউনলোড ও ইনস্টল করা
একটি ভাইরাস স্ক্যানার ডাউনলোড করতে হবে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই জন্য Kaspersky Virus Removal Tool ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও কিছু ভাইরাস কাটার সফটওয়্যার ডাউনলোড লিংক:
- ESET’s Free Online Scanner
- Sophos Virus Removal Tool
- F‑Secure Scanner
- Malwarebytes
- Online Antivirus Panda Security
উপরের লিংক থেকে যেকোন একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে হবে।
আর সবসময় একটি প্রিমিয়াম এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন, যদি আপনি কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন হয়ে থাকেন। Eset Antivirus ব্যবহার করতে পারেন।
ধাপ: ২ – ইন্টারনেট সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করা
যখন কম্পিউটার থেকে ভাইরাস দূর করা হবে তখন এর ইন্টারনেট সংযোগটি বন্ধ রাখা উচিত। কারণ অনেক ভাইরাস ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়ায় এবং কম্পিউটারের ক্ষতি বেশি করে থাকে। তবে, উপরের সফটওয়্যার ডাউনলোড করলে দরকার নেই।
যদি প্রিমিয়াম তথা পেইড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করেন তাহলে, এই ধাপ অনুসরণ করবেন।
ধাপ: ৩ – সেফ মোডে কম্পিউটার রিবুট করা
কম্পিউটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভাইরাস দূর করার সময় একে সেফ মোডে রিবুট করতে হবে। নিম্নোক্ত উপায়ে এক সেফ মোডে রিবুট করা যাবে।

- প্রথমে Windows logo key + I চাপুন অথবা Settings এ যান।
- তারপর Update & Security > Recovery সেখান থেকে Advanced startup এবং Restart now তে ক্লিক করুন।
- তারপর পিসি রিস্টার্ট হবে। এবার Choose an option থেকে Troubleshoot > Advanced options > Startup Settings > Restart ক্লিক করুন।
ধাপ: ৪ – টেম্পোরারি ফাইল ডিলিট করা
Disk clean up থেকে সমস্ত টেম্পোরারি ফাইল ডিলিট করতে হবে। নিম্নোক্ত উপায়ে এটি করা যাবে।
- Windows logo তে ক্লিক করতে হবে।
- তারপর Temporary Files টাইপ করতে হবে।
- তারপর বাছাই করতে হবে Free up disk space by deleting unnecessary files
- Disk clean up list এর files to delete থেকে Temporary internet Files বাছাই করতে হবে এবং তারপর Ok ক্লিক করতে হবে।
- সবশেষে Delete files কনফার্ম করতে হবে।
কিছু কিছু ভাইরাস কম্পিউটার বুট আপ হওয়ার সময় তৈরি হতে থাকে। এই জন্য টেম্পোরারি ফাইল গুলো ডিলিট করে দিলে ভাইরাসসহ ডিলিট হয়ে যায়। যদিও এইগুলো করেও অনেক সময়কম্পিউটার ভাইরাসমুক্ত করা যায়না। এই জন্য নিচের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে হবে।
ধাপ: ৫ – কম্পিউটার স্ক্যান করা
এবার এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে পিসি স্ক্যান করুন। স্ক্যান করার পর ভাইরাস পাওয়া গেলে তা ডিলিট করতে হবে। তারপর আবার রি স্ক্যান করতে হবে এবং দেখতে হবে আর কোন ভাইরাস আছে কিনা। আবার পাওয়া গেলে আবার ডিলিট করতে হবে।
সব ভাইরাস ডিলিট করার পর কম্পিউটার রিবুট করতে হবে। নরমাল যেভাবে কম্পিউটার অফ করা হয় সেভাবেই করতে হবে এবং এইবার সেফ মোডে চালু করার প্রয়োজন নেই।

ধাপ: ৬ – সকল পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা
পুনরায় যাতে আর ভাইরাস আক্রমন না করতে পারে তাই সকল পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে। এটি করতে হবে যদি বুঝা যায় যে পাসওয়ার্ড গুলো ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
তাহলে আগেই এটি করে নেয়া ভালো নয়তো আবার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এন্টি ভাইরাসের ওয়েবসাইট থেকেও এটি চেক করা যায় অথবা টেকনিক্যাল সাপোর্ট টিম এর সাহায্য ও নেয়া যেতে পারে।
সফটওয়্যার, ব্রাউজার ও অপারেটিং সিস্টেম রি-ইন্সটল করা
উপরের ধাপগুলো প্রাথমিক ধাপ। তবে, সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হলো নতুন করে উইন্ডোজ সেটআপ দেয়া। আপনার হার্ডডিস্কের সকল ড্রাইভ ফরমেট করে নতুন করে উইন্ডোজ দেয়াটা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।
সমসময় সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখবেন। আর সবকিছু আপডেট করা থাকলে নতুন করে আবার ভাইরাস আক্রমন হবার সম্ভাবনা কম থাকবে। নয়তো দেখা যাবে আগের কোডগুলো ব্যবহার করে আবার ম্যালওয়্যার আক্রমন হতে পারে।
উপসংহার
এই ছিল আজকে ভাইরাস কাটার সফটওয়্যার ডাউনলোড নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। আশা করি ভাইরাস নিয়ে টেনশন কিছুটা কমেছে। সবসময় ট্রাস্টেড সাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করবেন। অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার রিমুভ করে দিবেন। কম্পিউটারের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার এই লেখাটি পড়লে বুঝতে পারবেন।