বিজ্ঞান বিভাগের অনেক শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম, ধাতু ও অধাতু। ধাতু ও অধাতু মনে রাখার কৌশল না জানার কারণেই তাদের, এই আতঙ্ক। অথচ, ধাতু ও অধাতু গুলো খুব সহজেই মনে রেখে, পরীক্ষা কিংবা অন্য যে কোন জায়গায় বাজিমাত করা সম্ভব।
আজ আমরা এই লেখায়, কীভাবে ধাতু ও অধাতু খুব সহজেই মনে রাখা যায় তা নিয়ে আলোচনা করব। এই লেখা, পড়ার পর আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, কত সহজে ধাতু ও অধাতুর নামগুলো মনে রাখা সম্ভব। যাই হোক, এদের মনে রাখর কৌশল সম্পর্কে জানতে হলে, প্রথমে জানতে হবে ধাতু ও অধাতু কাকে বলে।
লেখার সূচিপত্র
ধাতু কি?
যেসকল পদার্থ তাপ পরিবাহী ও বিদ্যুৎ পরিবাহী, আঘাত করার কারনে ঝনঝন শব্দ করে, সাথে তাদেরকে ঘষলে উজ্জ্বল দেখায় বা চকচক করে তারাই ধাতু। এদের তাপ ও বিদ্যৎ পরিবাহী হওয়ার কারন, এদের মুক্ত ইলেকট্রন বিদ্যমান।
উদাহরণঃ জিংক (Zn), সোডিয়াম (Na), লোহা (Fe), তামা (Cu)। তবে ধাতুর মধ্যে পারদই একমাত্র, যে তরল হয় এবং বাকিগুলো কঠিন এবং নরম ধরনের হয়।
অধাতু কি?
এসব পদার্থে মুক্ত ইলেকট্রন নেই। তাই এরা তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়। যেসকল পদার্থ তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়, অধিক নরম বা তরল বা গ্যাসীয় বলে আঘাত করার ফলে তেমন কোনো শব্দ হয় না, তাদেরকে বলা হয় অধাতু। এরা বেশিরভাগই গ্যাসীয়। তবে কিছু কিছু তরল।
উদাহরণঃ অক্সিজেন (O), কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), হাইড্রোজেন (H)।
ধাতু ও অধাতু মনে রাখার কৌশল
ধাতু ও অধাতু চেনার ৩টি কৌশল
- ধাতু ইলেকট্রন সর্বাবস্থায় ত্যাগ করে, তবে অধাতু সবসময় ইলেকট্রন গ্রহন করে।
- ধাতুর ইলেকট্রন বিন্যাস করলে সবসময় তাদের শেষ কক্ষপথে ১, ২, ৩ টি ইলেকট্রন থাকে, তবে অধাতুর ইলেকট্রন বিন্যাস করলে শেষ কক্ষপথে ৪, ৫ বা ৭ টি পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকে।
- ধাতব মৌলসমূহের নামের শেষে সবসময় ‘আম’ উচ্চারিত হয়। যেমনঃ সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম। তবে কিছু ব্যাতিক্রম রয়েছে। অধাতুর ক্ষেত্রে কোনো মৌলে ‘আম’ উচ্চারিত হয় না।
পর্যায় সারনি ও ইলেকট্রন বিন্যাস
ইলেকট্রন বিন্যাস শব্দটিকে অনেকেই নাও বুঝতে পারেন। পর্যায় সারনিতে ১১৮ টি মৌল রয়েছে। এবং তাদের মধ্যে ধাতু ও অধাতু মৌলের ভাগ রয়েছে। অর্ধধাতু বলতে অবশ্য আরও এজটি জিনিস আছে। এদের ইলেকট্রন বিন্যাস এদের কিছু বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে। নিচের লিঙ্কে গিয়ে পর্যায় সারনি ও ইলেকট্রন বিন্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ে আসতে পারেন।
পর্যায় সারণি (Periodic table)
ইলেকট্রন বিন্যাস
ধাতু মনে রাখার কৌশল
ধাতুকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়।
- ক্ষার ধাতু
- মৃৎক্ষার ধাতু
- মুদ্রা ধাতু
১. ক্ষার ধাতু মনে রাখার কৌশল
কিছু মৌল আছে যারা পানিতে দ্রবীভূত হয়, সাথে হাইড্রোজেন গ্যাস ও ক্ষার তৈরি করে। এদেরকেই বলা হয় ক্ষার ধাতু। ক্ষার ধাতু ৬ টি।
লিথিয়াম (Li), সোডিয়াম (Na), পটাশিয়াম (K), রুবিডিয়াম (Rb), সিজিয়াম (Cs), ফ্রানসিয়াম (Fr)।
অর্থাৎ, Li, Na, K, Rb, Cs, Fr.
তাহলে,
লিনাকে রিবা সাজায় ফ্রি তে।
লি (Li), না (Na), কে (K), রিবা (Rb), সাজায় (Cs), ফ্রিতে (Fr)।
২. মৃৎক্ষার ধাতু মনে রাখার কৌশল
যে ধাতুগুলোকে মাটিতে বিভিন্ন বিভিন্ন ধরনের যৌগ সমূহ হিসেবে পাওয়া যায় তাদেরকে মৃৎক্ষার ধাতু বলা হয়। এরা আবার ক্ষারও তৈরি করে। তবে প্রাথমিকভাবে বলতে গেলে মৃৎক্ষার ধাতু হিসেবেই এরা পরিচিত। এদের সংখ্যা ৬ টি। বেরিলিয়াম (Be), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), ক্যালসিয়াম (Ca), স্ট্রনশিয়াম (Sr), বেরিয়াম (Ba), রেডিয়াম (Ra) এই 6 টি মৌল নিয়ে মৃৎক্ষার ধাতু।
Be, Mg, Ca, Sr, Ba, Ra.
বিধবা মায়ের ক্যাডার সন্তান বাদশাহ্ রুবাব।
বিধবা (Be), মায়ের (Mg), ক্যাডার (Ca), সন্তান (Sr), বাদশাহ্ (Ba), রুবাব (Ra)।
৩. মুদ্রা ধাতু
গ্রুপ ১১ এর এর মৌলে মুদ্রা ধাতু অবস্থিত। আগের কালের সময়ে যে সকল মৌল দিয়ে মুদ্রা তৈরি করা হতো, তাদেরকে বলা হয় মুদ্রা ধাতু। গ্রুপ ১১ তে কপার, সিলভর, গোল্ড, রন্টজেনিয়াম এই চারটি মৌল আছে। এদের মধ্যে প্রথম তিনটি দিয়ে আগের কালে মুদ্রা তৈরির প্রচলন ছিলো৷ তাই এই তিনটিকে মুদ্রা ধাতু বলে।
কপার (Cu), সিলভার (Ag), গোল্ড (Au).
কথা ছিল আসবে।
কথা (Cu), ছিল (Ag), আসবে (Au).
নরম ধাতু মনে রাখার কৌশল
লেড (Pb), সোডিয়াম (Na), পটাশিয়াম (K), ক্যালসিয়াম (Ca)।
পাবে না কে কে?
পাবে (Pb), না (Na), কে (K), কে (Ca)।
অধাতু মনে রাখার কৌশল
কিছু মৌল ইলেকট্রন গ্রহন করে অধাতু তে পরিনত হয়। এদের ক্রম অনুসারে নিচে দেখানো হলো-
F> O> Cl> N> Br> S> C> I> P> A> B> Si> Sb
মনে রাখতে হলে নিচের ছন্দটি কাজে লাগাতে পারেন।-
ফুল ও কলি নিজ বাড়ির সবাইকে ছেড়ে ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসেছে বাংলা শেখার সানন্দে।
ফুল (F), ও (O), কলি (Cl), নিজ (N) বাড়ির (Br), সবাইকে (S), ছেড়ে (C), ইংল্যান্ড (I), থেকে ফিরে (P), এসেছে (A), বাংলা (B) শেখার (Si), সানন্দে (Sb)।
এছাড়া আরও যেসকল মৌল অধাতু হিসেবে পরিচিত-
হাইড্রোজেন (H), হিলিয়াম (He), সেলেনিয়াম (Se)। এই তিনটিকে মনে রাখার কৌশল,
হ্যালো হিমি ও সিয়া।
হ্যালো (H), হিমি (He), সিয়া (Se)।
হ্যালোজেনসমূহ
গ্রুপ ১৭ এ যে ৬ টি মৌল অবস্থান করে তাদেরকে বলা হয় হ্যালোজেন। এরা হচ্ছে ফ্লোরিন (F), ক্লোরিন (Cl), ব্রোমিন (Br), আয়োডিন (I), অ্যাস্টাটিন (As), টেনেসিন (Ts)।
ফেল করিসনা ভাই, আইডিবি তে আয় তাড়াতাড়ি।
ফেল (F), করিসনা (Cl), ভাই (Br), আইডিবি তে (I), আয় (As), তাড়াতাড়ি(Ts)।
নিষ্ক্রিয় গ্যাস
গ্রুপ নম্বর ১৮ এর সকল মৌল নিষ্ক্রিয়। এদের নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলা হয়। এরা হলো- হিলিয়াম (He), নিয়ন (Ne), আর্গন (Ar), ক্রিপটন (Kr), জেনন (Xe), রেডন (Rn), ওগানেসন (Og)।
উল্লেখ্য, হিলিয়াম একমাত্র অধাতু যার শেষে ‘আম’ উচ্চারিত হয়। মনে রাখার কৌশল,
হেনা আর কেয়া যাবে রমনায় আজ।
হে (He), না (Ne), আর (Ar), কেয়া (Kr), যাবে (Xe), রমনায় (Rn), আজ (Og).
৪ নম্বর পর্যায়ের মৌলসমূহ মনে রাখার কৌশল
স্কুলটি ভাঙায় চেয়ারম্যান ফের কমিশন নিয়ে কাজে যাচ্ছেন।
স্কুল (Sc), টি (Ti), ভাঙায় (V),চেয়ার (Cr), ম্যান (Mn), ফের (Fe), কমিশন ( Co), নিয়ে (Ni), কাজে (Cu), যাচ্ছেন (Zn)।
অর্ধধাতু মনে রাখার কৌশল
সবাই সাবধান বিগ বস আসিতেছেন।
সবাই (Si), সাবধান (Sb), বি (Bi), গ (Ge), বস (B), আসি (As), তেছেন (Te)।
পরিশেষে
এই ছিল আমাদের আজকের ধাতু ও অধাতু মনে রাখার কৌশল নিয়ে আলেচনা। এখানে ধাতু, অধাতুদের নাম কীভাবে কৌশলে মনে রাখবেন তা আলোচনা করা হয়েছে সহজভাবে। আশা করি, লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে ও কাজে আসবে।
অসাধারন একেবারে সত্তিই অসাধারন🥰🥰