প্রতিনিয়ত ব্যবহার করার পরেও অনেকের মনে প্রশ্ন আসে, ইমেল কি? কিংবা এই ইমেইল কিভাবে কাজ করে? ইমেল হল ইন্টারনেটে সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং সার্ভিস বা যোগাযোগ সার্ভিস। যা বর্তমানে প্রায় সবাই ব্যবহার করে। যাদের ইন্টারনেট আছে তাদের সবাই ইমেইল ইউজ করে।
আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করেন তাহলে, আপনাকে অবশ্যই গুগলে অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন হয়। আর গুগলে অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে দরকার হয় একটি Gmail অ্যাকাউন্ট। যারা অ্যান্ড্রয়েড ইউজ করেন আর ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তারা ইমেইলে নিয়মিত না হলেও, তাদের অন্তত একটি ইমেল অ্যাকাউন্ট আছে।
কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, ইমেইল কিভাবে কাজ করে? আপনি মুহূর্তের মধ্যে আপনার একাউন্ট থেকে অন্য একাউন্টে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পাঠালেন , এই বিষয়টি কিভাবে কাজ করে, আপনি কি ভেবে দেখেছেন কখনো!
আজকের এই লিখায়, আমরা ইমেল কি এবং ইমেইল কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল ফাংশন নিয়েও আলোচনা করবো। আশা করি, এই লিখা থেকে আপনি ইমেল সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উত্তর পেতে পারেন, যা আপনার জানা দরকার।
লেখার সূচিপত্র
ইমেইল কি?
ইলেকট্রনিক মেইলের সংক্ষিপ্ত রূপ হল ইমেইল যা ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে একে অপরের সাথে মানুষকে সংযুক্ত করার একটি পদ্ধতি। আগে ইমেইল শুধুমাত্র টেক্সট করার জন্য ছিল, কিন্তু এখন অনেক নতুন ফিচার এইখানে যোগ করা হয়েছে। যেমন: মিডিয়া তথা, ইমেজ, ভিডিও, ফাইল পাঠানো, লেখাকে ফরমেটিং ও ডিজাই করে পাঠানো ইত্যাদি।
ইমেইল কিভাবে কাজ করে?
আপনি যখন আপনার পছন্দসই ইমেইলের ঠিকানায় ইমেল পাঠান, তখন একটি সাধারণ মেল স্থানান্তর প্রোটোকলের (মাধ্যম) সাহায্যে ইমেলটি একটি আূউটবক্স মেইল সার্ভারে যায়৷ এই সিম্পল মেইল ট্রান্সফার প্রোটোকল (SMTP) অনেকটা আপনার স্থানীয় পোস্ট অফিসের মতো যেখানে আপনি একটি চিঠি পোস্ট করেন এবং তারা আপনার চিঠিটি আপনার পছন্দসই ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। এই SMTP জিনিসটি ইমেইলের জন্য একইভাবে কাজ করে।
এই SMTP সার্ভার আপনার মেইল চেক করে এবং দেখে যে আপনি এই মেইলটি কোথায় পাঠাতে চান বা কোন ঠিকানায় পাঠাতে চান। তবে SMTP সার্ভার কোন ডোমেইন বুঝতে পারে না। কিন্তু সঠিক ঠিকানায় ইমেইল পাঠাতে হলে সেই ইমেইল সার্ভারের ডোমেইন জানতে হবে। ডোমেন নাম জানতে, এই SMTP সার্ভারটিকে ডোমেন নাম সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত করুন, যা আমরা DNS সার্ভার হিসাবে জানি।
যেহেতু ডিএনএস সার্ভারে সব ধরনের ডোমেনের আইপি ঠিকানা রয়েছে, তাই ইমেইল পাঠানোর জন্য অবশ্যই ডিএনএস সার্ভারের প্রয়োজন হবে। আপনি যদি ডিএনএস সার্ভার সম্পর্কে বিস্তারিত না জানেন তবে লিখার নিম্নলিখিত অংশ থেকে আপনি একটি ধারণা পেতে পারেন। আশা করি, লেখার এই অংশটি অনেকের মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। মাথার উপর দিয়ে গেলেও সমস্যা নাই। মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
ইমেইলের কার্যকারিতা
যখন আমরা একটি নতুন মেইল পাঠাই, তখন আমাদের সামনে একটি ইন্টারফেস থাকে এবং এটি মেইল করার প্রধান অংশ। এখানে কিছু ফাংশন আছে,

১. প্রাপক বা প্রতি
আপনি যদি কাউকে ইমেল পাঠাতে চান তবে আপনাকে “TO” বক্সে তাদের ইমেল ঠিকানা লিখতে হবে। প্রাপক একাধিক হলে তাদের প্রত্যেকের ইমেল ঠিকানা এখানে দেওয়া যেতে পারে। ধরুন আপনি “TO” বক্সে আপনার নির্দিষ্ট রিসিভারের মেইল ঠিকানাটি লিখবেন। এই ক্ষেত্রে, আপনি যদি এই ইমেইল সম্পর্কে আরও ব্যক্তিকে জানাতে চান, তাহলে আপনাকে “CC” বক্সে তাদের মেইল ঠিকানা লিখতে হবে।
২. CC (কার্বন কপি)
যখন আপনাকে একটি ইমেলের কপি এক সময়ে আরও কয়েকজনকে পাঠাতে হবে, তখন আপনাকে “CC” ব্যবহার করতে হবে। এই ইমেলে থাকা প্রত্যেকেই অন্য ব্যক্তির ইমেল ঠিকানা দেখতে পাবে। প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজেদের যোগাযোগ করার জন্য “CC” ব্যবহার করা নিরাপদ, যেখানে একে অপরের ই-মেইল ঠিকানা জানতে কোনো সমস্যা নেই।
৩. BCC (ব্লাইন্ড কার্বন কপি)
“BCC” এ দেওয়া প্রতিটি ইমেল ঠিকানা একই ইমেল পাবে, কিন্তু “BCC” “CC” ইমেল ঠিকানা দেখতে পারবে না।
৪. Subject (সাবজেক্ট বা বিষয়)
আপনাকে সাবজেক্ট বা “বিষয়” এ আপনার ইমেল সম্পর্কে একটি ছোট শিরোনাম লিখতে হবে। অনেকের মনে হতে পারে যে “সাবজেক্ট” তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সাবজেক্ট “বিষয়” জায়গা খালি থাকার জন্য আপনার গুরুত্বপূর্ণ ইমেল দেখতে পায় না।
৫. Message (বার্তাংশ)
আপনি প্রাপকের কাছে যা পাঠাতে চান, তা অবশ্যই মেসেজের বডিতে লিখতে হবে। এখানে কিছু বিভাগ আছে.যেমনঃ
শুভেচ্ছা (প্রিয় মিঃ এক্স)
মেসেজ বডি (হ্যালো, কেমন আছেন? আগামীকাল, আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই।)
সমাপ্তি (ধন্যবাদ)
স্বাক্ষর (মি. ওয়াই)
উত্তর
ধরুন, একটি ইমেইল থ্রেডে অনেকগুলো ই-মেইল ডেলিভারি করা হয়েছে। কেউ আপনাকে বিশেষভাবে একটি মেইল পাঠিয়েছে এবং “CC” এর মাধ্যমে আরও ১০ জনকে পাঠিয়েছে। ইমেল পাওয়ার পর, আপনি শুধু প্রদানকারীর উত্তর দিতে চান। এই ক্ষেত্রে, আপনি শুধুমাত্র “উত্তর” অপশন ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি এই মেইলের প্রত্যেককে উত্তর দিতে চান তবে আপনি “অল রিপ্লাই” অপশন ব্যবহার করতে পারেন।
৬. ফরোয়ার্ড
ধরুন, আপনি “Person X” কে একটি ইমেল পাঠিয়েছেন। এখন আপনাকে এই ইমেলটি “ব্যক্তি Y” কে পাঠাতে হবে তাহলে আপনি ফরওয়ার্ড অপশনটি ব্যবহার করতে পারেন৷ অথবা, আপনি একটি কোম্পানি বা আপনার কলেজ শিক্ষকের কাছ থেকে একটি মেইল পেয়েছেন, এখন আপনি এই মেইল সম্পর্কে সমস্ত তথ্য আপনার বন্ধুকে পাঠাতে চান, তারপর আপনি ফরওয়ার্ড অপশনের মাধ্যমে এটি করতে পারেন।
কিভাবে ইমেইল পাঠাতে হয়?

উপরে, ইমেল কার্যকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কিভাবে ইমেইল পাঠাবেন? এটা খুবই সহজ একটি বিষয়। ইমেইল পাঠাতে হলে, আপনাকে ইমেল বক্সে সব তথ্য দিতে হবে। এটি করার পরে, আপনি শুধু “সেন্ড” বাটন ক্লিক করতে হবে। যদি আপনার সব তথ্য সঠিক হয় বিশেষ করে আপনার প্রাপকের ইমেল ঠিকানা যদি ঠিক তাহলে সাথে সাথে সেন্ড হয়ে যায়।
বিভিন্ন ওয়েব ক্যাটাগরি ইমেইল সাইট
অনেক প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে ওয়েবভিত্তিক ই-মেইল সেবা প্রদান করে থাকে। যেমন, মাইক্রসফট আউটলুক , ইয়াহু মেইল, জি মেইল প্রভৃতি।
১. Gmail (জিমেইল)
Gmail হল একটি জনপ্রিয় ইমেইল সার্ভিস ৷ এছাড়াও, Gmail ইউজ করা সহজ। এটি ১৫ GB সেভিং স্পেস দেয়, ক্লাউড স্টোরেজ কি ? এটি ব্যবহারের সুবিধা। । এটি আপনাকে স্প্যাম ফিল্টারে অ্যাক্সেস এবং মোবাইল ডিভাইসে ও অ্যাক্সেস দেয়। ভয়েস চ্যাট এবং ভিডিও চ্যাটের পাশাপাশি টেক্সটের মাধ্যমে নিয়মিত চ্যাট করার অনুমতি দেয়।
২. Outlook (আউটলুক)
আউটলুক আরেকটি জনপ্রিয় ইমেল সার্ভিস, মাইক্রোসফ্ট দ্বারা বিকাশিত। এটি শুধুমাত্র মেইলের জন্যই ব্যবহৃত হয় না, এতে একটি ক্যালেন্ডার, টাস্ক ম্যানেজার, কন্টাক্ট ম্যানেজার এবং অন্যান্য অনেক অফিস অ্যাপ্লিকেশনও রয়েছে। আউটলুকের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে Clutter।
ধরুন আপনার মেইলবক্সে অনেক মেইল আছে তার মধ্যে কিছু অপ্রয়োজনীয় মেইল আছে। আউটলুক সেই অপ্রয়োজনীয় ইমেলগুলিকে আপনার ইনবক্স থেকে আলাদা রাখে। এছাড়াও, আপনি যদি ভুল করে একটি মেল মুছে ফেলেন তবে আপনি সহজেই এটি পুনরায় পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
৩. Yahoo (ইয়াহু)
ইয়াহু মেল হল একটি ইমেল সার্ভিস যা 1997 সালে আমেরিকান কোম্পানি ইয়াহু দ্বারা চালু করা হয়েছিল। ইয়াহু মেইল চারটি ভিন্ন ইমেল প্ল্যান অফার করে: এর মধ্যে তিনটি হল ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এবং একটি ব্যবসার জন্য।
২০১১ পরিসংখ্যান অনুযায়ী , Yahoo! মেইল সার্ভিসটির ২৮১ মিলিয়ন ব্যবহারকারী ছিল। Yahoo আপনার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য 1tb স্টোরেজ অফার করে এবং একটি ইন্টারনাল ওয়েব সার্চ টুল, ক্যালেন্ডার এবং গুগলের মতো নোটপ্যাডও অফার করে
শেষ কথা
এই ছিল আজকে ইমেল কি এবং ইমেল কীভাবে কাজ করে এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। আমাদের বর্তমান সময়ে ইমেল খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই যাদের ইমেল সম্পর্কে ধারণা নেই তাদের এই লেখাটি অনেক উপকারে আসবে বলে আশা করছি। আর মেইলে অবশ্যই টু স্টেপ ভেরিফিকেশন দিবেন। না বুঝলে, টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কিভাবে কাজ করে? লেখাটি পড়তে পারেন।