ইংরেজি Diamonds শব্দের বাংলা অর্থ হীরা। পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান একটি পাথর। আর তাই এই হীরা চেনার উপায় নিয়েও রয়েছে বেশ মতভেদ। আমরা অনেকেই শখের বশে হীরার অলংকার পড়ে থাকি।
তবে আপনি যে হীরার অলংকার পড়ছেন, সেই হীরা আসল না নকল তা জানা অত্যন্ত জরুরি। আজকাল অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আছে, যারা নকল হীরাকে আসল বলে চালিয়ে দেয় এবং সে অনুযায়ী উচ্চ দাম দিয়ে বিক্রি করে।
বলতে পারেন, আরে ভাই নকল হীরা তো দেখলেই চেনা যায়! আপনি এটা ভেবে থাকলে, আপনার জন্য ১ মিনিট নীরবতা। বর্তমানে বাটপাররাও অনেক টেলেন্টেড। তার বেশ চাতুরতার সাথে হীরাকে নকল করে। তাই আপনি যে হীরা কিনছেন তা আসল না নকল, তা যাচাই করা জরুরী। আজকের এই লিখায় আসল হীরা চেনায় উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
হীরা চেনার উপায়
হীরা চেনার জন্য আপনার কাকাবাবু, কিংবা ব্যোমকেশ বকশি হওয়ার দরকার, আপনি সিম্পল কিছু পদ্ধতি ইউজ করে আসল হীরা চিনতে পারেন। হীরা চেনার সবচেয়ে সহজ এবং সঠিক উপায় হলো রঞ্জন রশ্মি দিয়ে যাচাই করা। কেননা হীরার ভিতর দিয়ে রঞ্জন রশ্মি যেতে পারে না। তবে এটা ছাড়াও হীরা চেনার উপায় আরও অনেকগুলো আছে, সেই তালিকা নিচে দেয়া হলো।
১. ফগ টেস্ট
হীরাটি আসল না নকল তা বোঝার জন্য আপনি ফগ টেস্ট করতে পারেন। ফগ টেস্ট খুবই সিম্পল। আমরা অনেক সময় দেখি আয়নার সামনে আমরা নিঃশ্বাস নিলে তা কাঁচের উপর ঘোলা করে দেয়, এই একই কাজটি আমরা হীরা পরীক্ষা করার জন্য করতে পারি।
প্রথমে যে হীরাটি পরীক্ষা করতে হবে, তা সামনে নিয়ে তার উপর দম ফেলুন, যদি দেখেন হীরাটি কিছুক্ষণ ঘোলা হয়ে আছে, তাহলেই বুঝবেন তা নকল হীরা। কারণ আসল হীরা কখনও বেশিক্ষণ ঘোলা থাকেনা, নিমেষেই তা পরিষ্কার হয়ে যায়।
২. হীরার সেটিং পরীক্ষা করা
আসল হীরা চেনার আরেকটি উপায় হল হীরাটির সেটিং পরীক্ষা করা। মনে রাখবেন আসল কখন সস্তা ধাতুতে বসানো যায় না। হীরা সবসময় সোনা, প্লাটিনাম, এসব ধাতুর উপর বসানো হয়।
আপনি যদি দেখেন আপনার অলংকারের ধাতুটি কম দামী, কম মানসম্পন্ন, তাহলেই বুঝে নিবেন, যে পাথরটি দেখছেন তা হীরা নয়। যদি তা ঝকঝকে পাথর হয় তাহলে বুঝে নিবেন সেটি হল নকল হীরার একটি চকচকে ভার্সন: কিউবি জিরকনিয়া বা সিনথেটিক হীরা।
৩. জুয়েলারি লুপ ব্যবহার করা
জুয়েলারি লুপ ইউজ করে আপনি আপনার হীরার খাঁদ পরীক্ষা করতে পারেন। যদি হীরায় কিছুটা খাঁদ মেশানো থাকে, তাহলে তা বের হয়ে যাবে। হীরাটিতে যদি প্রাকৃতিক ভাবে অসম্পূর্ণতা তাহলে তা লুপের মাধ্যমে বের হয়ে যাবে। আপনার কাছে যদি লুপ না থাকে, তাহলে দোকান থেকে ধাঁর নিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন।
৪. পাথরের রিফ্রাক্টিভি পরীক্ষা করা
আসল হীরাতে আলো সুন্দরমত রিফ্রাক্ট হয়, কিন্তু নকল পাথরে আলো রিফ্রাক্ট হয় না, আর নকল পাথর আসল পাথরের মত অতটা চকচকে ও হয়না।

এই রিফ্রাক্টিভিটি পরীক্ষা করার দুইটি পদ্ধতি রয়েছে, একটি হল আপনি খবরের কাগজের উপর আপনি হীরাটি রাখুন, যদি হীরার মধ্য দিয়ে খবরের কাগজের লিখা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে হীরাটি আসল নয়, কারণ আসল হীরার মধ্য দিয়ে আলো এমনভাবে বিকিরিত হয় যে তার মধ্য দিয়ে অন্য কোন কিছু দেখা যাওয়া সম্ভব না।
আরেকটি পদ্ধতি হল ডট পদ্ধতি, এর মানে হল আপনি সাদা কাগজে একটি ডট আঁকবেন, তার উপর আপনার পাথরটি রাখবেন, যদি পাথরের মধ্য ডট টি দেখা যায় তাহলে বুঝবেন হীরাটি নকল, যদি আসল হয় তাহলে আপনি ডটটি স্পষ্টভাবে দেখতে পারবেন না।
৫. পাথরের রিফ্লেকশন পরীক্ষা করা
পাথরের রিফ্লেকশন পরীক্ষা করে আসল বা নকল হীরা যাচাই করা একটি অভিনব পদ্ধতি। আপনি যখন রিফ্লেকশন পরীক্ষা করবেন, যদি আসল হীরা হয় তাহলে আপনি রিফ্লেশনে ধূসর রঙ্গের বিভিন্ন শেডস দেখতে পাবেন, কিন্তু যদি নকল হীরা হয় তাহলে আপনি রংধনু টাইপের রিফ্লেকশন দেখতে পাবেন। আপনি এই রিফ্লেশন টি পরীক্ষা করতে মোবাইলের টর্চ বা কলমের যে টর্চ থাকে তা ইউজ করতে পারেন।
৬. পাথর গরম করে পরীক্ষা করা
হীরা আসল না নকল তা বোঝার জন্য আপনি আপনার লাইটার দিয়ে পাথরটিকে ৩০ সেকেন্ডের জন্য গরম করুন, তারপর এটিকে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানিতে ছেঁড়ে দিন, যদি নকল হয় তাহলে তা সংকুচিত হয়ে যাবে বা ভেঙ্গে যাবে। যদি আসল হয় তাহলে কিছুই হবে না। আরেকটি বিষয় হল আসল হীরা কখনও এত সহজে গরম হবেনা।
৭. প্রফেশনাল হীরা বিশেষজ্ঞকে দেখানো
যারা হীরা নিয়ে কাজ করে তাদের কাছে হীরা পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ডিভাইস থাকে, তাদের কাছে হীরা হিট করার ও আলাদা যন্ত্র থাকে, তাছাড়া তারা হীরার রিফেক্টিভিটি স্পেশাল লেজার লাইট দিয়ে পরীক্ষা করে, তাদের কাছে হীরা পরীক্ষা করার মাইক্রোস্কোপ ও থাকে যার মাধ্যমে তারা নিখুঁতভাবে হীরা পরীক্ষা করতে পারে।
এছাড়া কম্বিনেশন টেস্টার নামে একটি ডিভাইস আছে, যা দিয়ে হীরা খুব ভালমত পরীক্ষা করা যায়, আপনি চাইলে এটি অনলাইনে অর্ডার দিতে পারেন ,এটি আপনি বাসায় রাখতে পারেন, আপনি যদি হীরা বাইরে গিয়ে পরীক্ষা না করাতে চান, তাহলে আপনি বাসায় একটি কম্বিনেশন টেস্টার কিনে রাখুন।
৮. ওজন করা
আসল হীরা নকল হীরা ওজনের খুব নিখুঁত পার্থক্যের মাধ্যমে বোঝা যায়, হীরার ওজন মাপার জন্য একটি সেন্সিবল স্কেল ইউজ করা হয়। নকল হীরা মূলত আসল হীরা থেকে ভারি হয়, আমরা যে সিনথেটিক হীরার কথা জানি সে হীরা আসল হীরা থেকে প্রায় ৫৫% ভারী হয়।
৯. আলট্রাভায়োলেট রেতে পাথর পরীক্ষা করা
আপনি হীরা আসল কি না নকল তা অনেক সময় আলট্রাভায়োলেট রেতে পরীক্ষা করে বোঝা যায়, যদি পাথর আসল হয় তাহলে তা রের নিচে নীলাভ বর্ণ ধারণ করবে, যদি নকল হয় তাহলে সে পাথর সহজে নীলাভ বর্ণ ধারণ করবেনা।
১০. এক্সরের মাধ্যমে পরীক্ষা করা
নকল হীরা সহজেই এক্সরেতে ভিসিবল হয় কিন্তু আসল হীরা হয় না, আপনি যদি এক্সরে করে আপনার পাথরের অবয়ব দেখতে পান তাহলে বুঝবেন যে আপনার হীরাটি নকল।সবচেয়ে ভাল হয় যদি আপনি সিনথেটিক হীরা আর প্রাকৃতিক হীরার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন্ তবে এর জন্য আপনাকে হীরা বিশারদ হতে হবে।
শেষ কথা
আশা করি আজকের লিখা পরে আপনি হীরা চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন, এখন থেকে কোনটি আসল হীরা আর কোনটি নকল হীরা চিনতে কোন অসুবিধা হবে না। আর কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না, লেখাটি কেমন লেগেছে। আর জেনে অবাক হবেন, দুবাইতে কিন্তু বেশ ভাল হীরা পাওয়া যায়। দুবাই সম্পর্কে চমৎকার কিছু তথ্য জানতে দুবাই সম্পর্কে অজানা তথ্য লেখাটি পড়তে পারেন।