আজ আমরা আলোচনা করব, ছবি এডিট করার সফটওয়্যার নিয়ে। আশা করি লেখাটি পড়লে ছবি ভালোভাবে এডিট করতে পারবেন। ছবি তুলার পরে যদি আপনার ছবি খারাপ আসে, তাহলে, ছবি এডিট করার সফটওয়্যার দিয়ে খুব সহজেই এডিট করে সুন্দর করে ফেলতে পারবেন।
৫টি ছবি এডিট করার সফটওয়্যার
১. Snapseed
বর্তমানে যে সফটওয়্যার বা অ্যাপটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি হচ্ছে Snapseed বা স্ন্যাপসিড। এখনকার সময়ে আপনি অধিকাংশ মানুষকেই যদি ছবি তুলতে দেখেন৷ তবে দেখতে পাবেন যে তারা Snapseed ব্যবহার করে ছবি এডিট করছে। এর মাধ্যমে আপনি আপনার ছবিকে সর্বচ্চো সুন্দরের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন।
এই অ্যাপে কিছু স্পেশাল ফিল্টার পেয়ে যাবেন। এখানে যে অ্যাপগুলোর সম্পর্কে আলোচনা করব, তার সবগুলোই আপনি গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।
Snapseed এর সুবিধা
- এখানে ৫০ টিরও বেশি ফিল্টার আছে।
- এখানে আপনি গ্ল্যামার লুক, স্মাইল লুকসহ আরো এক্সাইটিং সব ফিল্টার পাবেন। Lens Blur এর মতো ফিল্টারও।
- টেক্সট এড করার সুবিধা আছে।
- ছবি ক্রপ করতে পারবেন।
- ছবি রোটেট করতে পারবেন (বামে ডানে ঘোরানো)
- আপনার পছন্দমতো ব্যাকগ্রাউন্ডের কালার চেঞ্জ করে নিতে পারবেন।
- স্ন্যাপসিড সম্পূর্ণ ফ্রি এবং গুগল এল. এল. সি. এর বড় ধরণের একটি অ্যাপ।
Snapseed এর অসুবিধা
- ফটো কোলাজ সিস্টেম নেই
- টেমপ্লেট ও স্টিকার সিস্টেম নেই
- কিছু ডেকোরেটিভ এলিমেন্টস (যা গুরুত্বপূর্ণ) অনুপস্থিত
- খুব সাধারণ টাইপের কিছু উপকরণ। যেমন- ফটো ফ্রেম।
প্রথমেই গুগল প্লে স্টোরে ‘Snapseed’ লিখে সার্চ করবেন। অথবা উপরে দেয়া লিংকে ক্লিক করবেন। এরপর অ্যাপটি ইনস্টল হলে, অ্যাপে ক্লিক করলে নিচের ছবির মতো লেখা দেখবেন। তারা আপনার ছবি এডিট করার জন্য অনুমতি চাইবে। এই Allow লেখায় ক্লিক করে অনুমতি দিলেই হলো। Android App Permissions: ভুল অ্যাপে ভুল পারমিশন দিচ্ছেন না তো? এরপর আপনি আপনার ইচ্ছেমতো যেকোনো ছবি এডিট করতে পারবেন।

এখানে আপনাদের জন্য একটি ছবির Double Exopousre ইফেক্ট দিয়ে দেখানো হলো। প্রথমেই একটি ছবি এড করুন। এরপর সেখানে টুলস বাটনে ক্লিক করলে Double Exopousre অপশনে ক্লিক করুন। সেখান থেকে একটি ব্যাকগ্রাউন্ড পিকচার এড করুন।

এবার ব্লার অপশনে ক্লিক করে তা ১০০ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিন। এরপর নিচের মতো ছবি দেকতে পাবেন। মাঝখানের অপশনটিতে ক্লিক করুন।

এবার এখান থেকে আপনার সুবিধামতো কালার কমিয়ে বা বাড়িয়ে নিয়ে সবজায়গাতে ব্রাশ করে দেবেন।

তাহলেই আপনি Done বাটনের ক্লিক করার পর পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্খিত ছবিটি।
২. Photo Director
ছবি এডিট করার জন্য দারুন একটি অ্যাপ হচ্ছে এই ফটো ডিরেক্টর। মূলত বর্তমান সময়ে অনেকেই এই অ্যাপটি ব্যবহার করে থাকেন। এই অ্যাপটির একটি বড় সুবিধা হল এটিতে অনেকগুলো ফিল্টার রয়েছে, যা দিয়ে আপনি উন্নতমানের একটি ছবি সহজে তুলে ফেলতে পারবেন। আপনি যদি একজন দক্ষ ফটোগ্রাফার নাও হয়ে থাকেন তবে, এর সামান্য কিছু এডিটিং এর মাধ্যমেই আপনি আমার আপনার সামান্য ছবিকে করে তুলতে পারবেন অসাধারণ।
Photo Director এর সুবিধা
- এতে অ্যানিমেশন টুল ও অ্যানিমেটেড ওভার অল সিস্টেম আছে।
- কুইক অ্যাপ্লাই ফিল্টার অ্যান্ড এফেক্ট বিদ্যমান।
- Light And Colour সিস্টেম ও টুলস।
- ইনবিল্ট স্টক লাইব্রেরি
- Photo and Beauty Retouch Tool
- ALL Sky replacement ও Light ray tools
- এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ছবিগুলোকে অসাধারণ করে তুলতে পারবেন।
Photo Director এর অসুবিধা
- এই সফটওয়্যারটিতে আপনি টিথ হোয়াইটেনিং (Teeth Whitening) ফিচার বা অপশনটি পাবেন না।
- LUTs ফিল্টার এটিতে সাপোর্ট করে না

৩. ফটোশপ এক্সপ্রেস (Photoshop Express)
এই অ্যাপটি তৈরি করেছে অ্যাডোবি ফটোশপ (Adobe INC)। ২০১৬ সাল থেকে এটি চালু হয়। এই অ্যাপ দিয়ে আপনি যেকোনো নরমাল ছবিকে সুন্দর, আকর্ষনীয় ও প্রফেশনাল করে তুলতে পারবেন।
Photoshop Express এর সুবিধা
- এখানে অনেক ইম্পর্ট্যান্ট ফিচার রয়েছে। এর মধ্যে JPEG, Raw, Line, PNG এগুলো অন্যতম। এর মাধ্যমে আপনি আপনার ছবিকে সুন্দর পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন।
- সেলফিতে কোনো ধরণের দাগ বা স্পট দেখা দিলে তা আপনি এই অ্যাপের Shot healing function এর সাহায্যে রিমুভ করতে পারবেন।
- আপনার ছবির কালার নয়েস (Noise) কম করার জন্য আর ছবি শার্প (Sharp) করার জন্য অনেক অপশন আছে।
- একত্রে অনেকগুলো ছবি যুক্ত করার জন্য স্পেশাল Collage সিস্টেম আছে।
- ব্লার অপশন আছে। এর মধ্যে ফুল ব্লার (Full Blur), রেডিয়াল ব্লার (Rediul Blur) অন্যতম।
Photoshop Express এর অসুবিধা
- এটিতে কিছু রিটাচ অপশন লিমিটেড।
- আবার, আপনি অন্যগুলোতে যেমন সব ফিল্টার ফ্রি ইউজ করতে পারেন, এটিতে তা পারবেন না। এখানে কিছু ফিল্টার ব্যবহার করতে হলে আপনাকে পেমেন্ট করতে হবে।
৪. AirBrush
অনেকেই সেলফি তুলতে অনেক পছন্দ করেন। তাদের জন্য এই অ্যাপটি দারুণ। এখানে অনেকগুলো এডিটিং ও বিউটিফাইং টুলস আপনি পেয়ে যাবেন। যেগুলোর মাধ্যমে দারুণ সব ছবি পেয়ে যাবেন আপনি।
এছাড়া এখনে অনেক ধরণের ফিল্টার আছে, যেগুলোর সাহায্য অথেন্টিক সব ছবি আপনি তুলতে পারবেন। ইন্সটা রেডি ছবি তুলতে চাইলে এখানে সহজেই পারবেন। কারণ, এখানকার ক্লাসিক রিটাচ টুল, হেয়ার স্টাইল অপশন ও ভার্চুয়াল মেক-আপ সিস্টেম। এই অ্যাপে কিছু ইউনিক ফিচারও আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রিজম। এছাড়াও আছে রিলাইট।
AirBrush এর সুবিধা
- এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি চাইলেই ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করতে পারবেন।
- আপনার ছবি থেকে আপনি অবজেক্ট রিমুভ করতে পারবেন।
- My kit option থেকে এডিটিং টুলসগুলো আপনি অনেক সহজেই অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
- ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস আছে।
- রিটাচ এবং মেক-আপ টুলসের মাধ্যমে খুবই দ্রুত সময়ে সেলফি ও ছবি এডিট করা যায়।
- পোট্রের্ট সিস্টেম আছে।
AirBrush এর অসুবিধা
- উন্নতমানের টুলসগুলো ব্যবহার করতে চাইলে আপনাকে সাবস্ক্রিপশন করতে হবে।
- ব্যাকগ্রাউন্ড চেঞ্জ করতে সাবস্ক্রিপশন দরকার।
- সাধারণ ছবি এডিট করার টুলস খুব বেশি নেই।
৫. Instasize
অনেকেই এখন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করেন। আর, ইনস্টাগ্রামে ছবি ক্রপ করে পোস্ট করতে হয়। তবে আপনি যদি তা না করতে চান, তাহলে এই অ্যাপটি আপনার জন্য। এখানে আপনি অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে যাবেন। এখানে রিসাইজ করার অপশন আছে।
অনেকগুলো ফিল্টার, টেক্সট ফিচার বা অপশন, বিউটিফায়িং টুলস, কোলাজ সিস্টেম, কমন অ্যাডজাস্টমেন্ট, Basic Frame এর মতো অনেকগুলো অপশন ও ফাংশন আপনি পাবেন। এগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার একটি ছবিকে অসাধারণ করে তুলতে পারবেন। তাছাড়াও, এটার একটা সুবিধা হলো, এটি আপনাকে যেকোনো ভিডিও এডিটও করতে দেয়।
Instasize এর সুবিধা
- ইন্টারফেস সোজা ও ইউজার ফ্রেন্ডলি।
- এই অ্যাপ ছবি এডিট করাতে দারুণভাবে পারদর্শী।
- কোলাজ সিস্টেম আছে।
- খুব সহজেই সোশাল কন্টেন্টগুলো তৈরি করা সম্ভব।
Instasize এর অসুবিধা
- এই অ্যাপে কিছু ফিল্টার ব্যবহার করার জন্য আপনাকে প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন নিতে হবে।
- এখানে অবজেক্ট রিমুভাল সিস্টেম অনুপস্থিত।
- স্টিকার সিস্টেম নেই।
- অ্যানিমেশন টুলস নেই।
পরিশেষে
এই লেখাটিতে আপানাদেরকে ৫ টি দারুণ ছবি এডিট করার সফটওয়্যার এর কথা বললাম। এগুলোর মাধ্যমে একটি সাধারণ ছবিকে অসাধারণ করে তুলতে পারবেন আপনি। আশা করি লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে ও কাজে আসবে।