ভার্চুয়াল অফিস (Virtual Office) কাগজ বিহীন অফিসও বলা যায়। করোনার পর এটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যদিও ভার্চুয়াল অফিসের ধারণা অনেক আগে থেকেই। তবে, আমরা অনেকেই এই ভার্চুয়াল অফিস কি সে সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না।
আজকের এই লেখাতে আমরা ভার্চুয়াল অফিস কি? ভার্চুয়াল অফিস কিভাবে কাজ করে? ভার্চুয়াল অফিসের সুবিধা ও অসুবিধা সহ বিস্তারিত সকল বিষয়ে সহজ ভাষায় আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এই লেখা পড়ার পর ভার্চুয়াল অফিস নিয়ে আপনার অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আশা করি।
ভার্চুয়াল অফিস কি?
প্রথমেই আমাদের জানতে হবে ভার্চুয়াল অফিস কী। “ভার্চুয়াল” শব্দটি বর্তমানে এই আধুনিক দুনিয়াতে বহুল পরিচিত এর মানে হচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক কিছু একটা, এটা আমরা সবাই জানি।
ভার্চুয়াল অফিস মানে এটাই, যে আপনি কোনো দালানকোঠা অর্থাৎ কোনো অফিসে বসে কাজ না করে, বাসায় বসে যেকোনো ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে (মোবাইল, কম্পিউটার যেকোনো কিছু হতে পারে) বাড়িতে বসেই কাজটা করছেন। এমনি ভাবে বাড়িতে বসে অফিস করাটাকেই ভার্চুয়াল অফিস বলা হয়।
এককথায় বলতে গেলে, যেটা আপনি প্রযুক্তির সাহায্যে, কোথাও না গিয়ে অন্য প্রান্তের কারো সাথে বসে অফিস করছেন। কেউ একজন যখন সশরীরে অফিসে উপস্থিত না হয়ে যেকেনো স্থানে বসে কেবলমাত্র কোনো এক ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনেই তার অফিসের কাজ করতে পারে এই ভার্চুয়াল অফিসের মাধ্যমে। ভার্চুয়াল অফিস এখন অনেক স্থানেই দেখা যায়।
ভার্চুয়াল অফিস বলতে ঠিক কি বোঝায়?
ভার্চুয়াল অফিস নাম শুনলে অনেকে হয়তো বুঝে যাবেন যে এটা অনলাইনের সাথে সম্পর্কিত। কারণ, ভার্চুয়াল মানেই তা “সরাসরি নয়”। ভার্চুয়াল অফিস এমন একটি সিস্টেম যেখান থেকে আপনি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের কোনো এক ব্যাক্তির সাহায্যে বসে কাজ করতে পারবেন। এই কাজ আপনি কেবল মাত্র আপনার বাড়িতে বসে দুইটি জিনিসের সাহায্যে করতে পারবেন-
- একটি ডিভাইস (কম্পিউটার, স্মার্টফোন যেকোনো কিছু)
- নেটওয়ার্ক কানেকশন
এছাড়া ,আপনার কিছু দক্ষতার প্রয়োজন পরে।
ভার্চুয়াল অফিস ঠিক কখন থেকে প্রচলিত?

এই প্রশ্নের উত্তর ক্লিয়ারলি দেয়াটা কষ্টকর। কারণ, যখন থেকে প্রযুক্তির সাথে নেটওয়ার্ক এর উন্নতি হতে শুরু হয়েছে, তখন থেকেই সবাই এই পদ্ধতিতে একটু একটি করে অভ্যস্ত। আর বড় বড় বিজনেস কোম্পানি (মাইক্রোসফট, অ্যাপল) এদের শুরু থেকেই ভার্চুয়াল অফিস সিস্টেমটিতে যুক্ত ছিলেন। যদিও ভার্চুয়াল অফিসের বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে ১৯৮৩ সালে।
তবে করোনা মহামারীর সময় যখন সারা বিশ্বে লকডাউনের শুরু হয়, তখন থেকেই ভার্চুয়াল অফিসের প্রসার ঘটে। তখন যেহেতু, বাহিরে বের হওয়া নিষিদ্ধ ছিল। তাই সবাই বাসায় বসেই অফিস করেছেন।
ভার্চুয়াল ভাবে এখন অনেক মানুষই বিভিন্ন দেশের হয়ে কাজ করছে। বিশেষ করে এখন কিছু বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং করছেন। এবং তারা দেশে বসেই বিদেশী অর্থ অর্থাৎ ডলার আয় করছেন, যাকে কিনা ভার্চুয়াল অফিস বললেও হয়। কারণ, তারা অনলাইনেই এটা করেন।
ভার্চুয়াল অফিস কীভাবে কাজ করে?
ভার্চুয়াল অফিসে কাজ করার নিয়ম একেক স্থানে একেক রকম। তবে সকল স্থানে প্রায় একই মাধ্যম ব্যবহার করা হয়।
- ভার্চুয়াল অফিসে অনেকজন কর্মীকে একসাথে যুক্ত হতে হয়। এই কারণে তারা জুম মিটিং (Zoom Meeting), গুগল মিট (Google Meet) এর মতো অ্যাপ গুলো ব্যহার করেন।
- Time Doctor Productivity Management করার জন্য, Slack Instant Messaging ও যোগাযোগের জন্য, Tandem টিম কোলাবেরেশনের জন্য। Trello হলো Project Management এর জন্য।
- এছাড়া তথ্য প্রদান করার জন্য তারা নিজস্ব ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ তৈরি করে নেন। সেখানে তার বিভিন্ন ধরণের আলাপ আলোচনা করতে পারেন।
- ম্যাসেঞ্জার (Messenger) এর মাধ্যমে গ্রুপ খুলে তারা একে অপরের সাথে সহজেই তারা অফিসিয়াল আলোচনা করতে পারেন।
- ই-মেইলের (Email) এর মাধ্যমে সহজেই এবং খুব দ্রুত গতিতে একে অন্যের সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য, গবেষণাপত্র, রিপোর্ট ইত্যাদি নানা কিছু শেয়ার করতে পারেন।
- টুইটার (Twitter), ইন্সটাগ্রাম (Instagram) লিংকড ইন (Linked-In), হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) – এগুলোর মাধ্যমেও তারা ভার্চুয়াল অফিসের অনেক কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।
এ থেকে বোঝা যায় ভার্চুয়াল অফিস হওয়ার জন্য কেবলমাত্র সকলকে একত্রে যুক্ত থাকাকেই বোঝায় না। বরং সকলে মিলে বিভিন্ন মাধ্যমে একে অপরের সাথে বিভিন্ন আলোচনা যে মাধ্যমেই করা হোক না কেন, তা যদি অফিসিয়াল কোনো কিছু বিষয়ক হয়, তবে তাই ভার্চুয়াল অফিস।
আবার, অন্যভাবে বলা যায়, যেখানে আপনি সশরীরে উপস্থিত না হয়ে সরাসরি অন্য মাধ্যমে যেকোনো অফিসিয়াল কাজ বা মিটিং এ অংশ নিতে পারবেন, সে অফিসকেই বলা হয় ভার্চুয়াল অফিস।
ভার্চুয়াল অফিসের জন্য কি প্রয়োজন?
আগেই বলেছি, ভার্চুয়াল অফিস করতে চাইলে আপানার একটি ডিভাইস ও তার সাথে ইন্টারনেট সংযোগ থাকা দরকার। তবে শুধু এর মাধ্যমে তো আর আপনি অফিস করতে পারবেন না! ইন্টারনেট ফাস্ট থাকতে হবে। আপনার ইন্টারনেট স্লো হলে, জেনে নিন ইন্টারনেট ফাস্ট করার উপায় লেখাটি পড়তে পারেন।
ভার্চুয়াল অফিসে যদি আপনি মোবাইল ফোনে যোগদান করতে চান, তবে কেবল জুম মিটিং এর সাহায্যে তা পারবেন। তবে এর জন্য আপনার একটি PC (Personal Computer) বা ব্যাক্তিগত কম্পিউটার থাকা ভালো। এর জন্য আপনার কম্পিউটারে দক্ষতা থাকাটাও খুবই জরুরী। কারণ, ভার্চুয়ালি অফিস করতে গেলে আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস বা বিভিন্ন ধরনের তথ্য তাতেই সংরক্ষিত থাকবে।
ভার্চুয়াল অফিস এর কাজ কি?
ভার্চুয়াল অফিসের কাজ বা মূল লক্ষ্য হলো সহজভাবে কোনো কাজকে সম্পাদন করা। ধরুন, আপনি একটি জ্যামে আটকা পড়লেন সকাল ৭ টার সময়। কিন্তু আপনাকে ৭ঃ৩০ এর মধ্যে অফিসের একটি কাজ কমপ্লিট করতে হবে। এমন সময় আপনি অফিসে যেতে না পারার কারণে কাজটি শেস করতে পারবেন না। তবে, আপনার কাছে নিশ্চয়ই কোনো ডিভাইস থাকবে। তাই অনলাইনেই এটা করে নেয়া সম্ভব। এটাই ভার্চুয়াল অফিসের সুবিধার মধ্যে অন্যতম।
ভার্চুয়াল অফিসের সুবিধা ও অসুবিধা
ভার্চুয়াল অফিস কি এর সুবিধা
- ভার্চুয়ালি অফিস করলে ইট পাথরের কোনো অফিস তৈরি করার প্রয়োজন হয় না। তাই গাছ পালা কেটে জমি গ্রহণের কোনো দরকার পড়ে না। ফলে এর মাধ্যমে অনেক পরিবেশ রক্ষা করা যায়।
- ভার্চুয়াল অফিস করার জন্য সশরীরে উপস্থিত থাকার দরকার পড়ে না।
- আবার, যারা ভার্চুয়ালি অফিস করেন তারা অনেক দক্ষ হন। কারণ, তারা কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং এসব নিয়ে অনেকটা ধারণা এবং জ্ঞান রাখেন।
- এর জন্য আপনি একটি দেশে বসে অন্য দেশের যেকোনো চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন। কারণ, এতে আপনাকে সরাসরি অফিসে উপস্থিত হতে হয় না।
- আপনি দিনে কোনো কাজ করতে না পারলে তা রাতেও করতে পারেন, কারণ আপনাকে অফিসে উপস্থিত হতে হচ্ছে না। আপনি সহজেই যেকোনো সময়ে আপনার সুবিধামতো কাজ করে নিতে পারেন।
- আপনি টেকনোলজির সাহায্যে সহজেই ফাইল দেওয়া নেওয়া করতে পারবেন।
ভার্চুয়াল অফিস এর অসুবিধা
- ভার্চুয়াল অফিসে কাজ করার জন্য যেহেতু কোনো ব্যাক্তি একা থাকেন, তাই তিনি কখনো কখনো একাকীত্ব অনুভব করেন, যা কিনা তার মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে।
- ভার্চুয়াল অফিসে কাজ করার জন্য আপনার ফোন কিংবা কম্পিউটার এর জন্য প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ খরচ হয়, এবং এর ডাটার জন্যও আপনাকে টাকা খরচ করতে হয়।
- আপনার এখানে কাজ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে দক্ষতা প্রয়োজন। আর নরমালি আপনি যদি ইট পাথরের অফিসে গিয়ে কাজ করেন তখন কিন্তু আপনার তেমন দক্ষতার প্রয়োজন পরে না।
- এসময় আপনাকে ভালো মানের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার আপডেট করতে হয়, এর জন্যও আপনাকে অনেক টাকা খরচ করতে হতে পারে।
পরিশেষে
এই লেখাতে ভার্চুয়াল অফিস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সুবিধা ও অসুবিধা সবকিছুরই আছে। তবে এর অসুবিধার থেকে সুবিধাই বেশি। আশা করি লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং কাজে আসবে।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ 🤟🥰, এতো সুন্দর একটা আর্টিকেল উপহার দেওয়ার জন্য 🥰❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️