মেটাভার্স কি? এই প্রশ্নের উত্তর একটু পরে দিচ্ছি। একবার ভাবুন তো, আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এবং কোন জিনিস নিয়ে চিন্তা করছেন। সাথে সাথে দ্রুত একটি ভেন্ডিং মেশিন আপনার সামনে এসে সে জিনিসটি দিয়ে গেল, আপনি ও তা সাথে করে বাসায় নিয়ে গেলেন। চিন্তা করুন বিষয়টা কতটা মনোমুগ্ধকর। আপনার মনের সাথে পুরো দুনিয়াটা তাল মেলাচ্ছে, এই ধারণাকেই বলে মেটাভার্স।
সহজ কথায়, মেটাভার্স একটি একরকম ডিজিটাল জীবন, যেখানে মানুষ তাদের সাধারণ কাজ কর্ম চালিয়ে যেতে পারে। এই মেটাভার্স এর দুনিয়ায় আপনি ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে অনেক কাজ দ্রুত করতে পারবেন। নিচে metaverse কি এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আলোচনা করছি।
লেখার সূচিপত্র
মেটাভার্স কি?
“মেটাভার্স” শব্দটি প্রথম ১৯৯২ সালে স্নো ক্র্যাশে চালু করা হয়েছিল। নিল স্টিফেনসন তার একটি সাই-ফাই উপন্যাসে এমন এক বাস্তবতার কথা তুলে ধরেছিলেন। যেখানে প্রকৃত বিশ্ব ভার্চুয়ালিটির মধ্যে বাস্তবতার একটি মেলবন্ধন তৈরি করেছেন।
‘Meta’ শব্দটির গ্রিক অর্থ ওপর বা পরে। ভার্স শব্দটি মূলত ইউনিভার্সের সংক্ষিপ্তরূপ। আর মেটা এবং ভার্স শব্দদ্বয় একত্রে মিলিত হয়ে মেটাভার্স শব্দটি পাওয়া যায়। সুতরাং এই মেটাভার্স শব্দের অর্থ দাড়ায় – পৃথিবীর বাইরের জগৎ।
মেটাভার্স আসলে ডিজিটাল বিশ্বের অন্যতম জটিল ধারণা। তবে এটি কোটি কোটি মানুষের জন্য বিভিন্ন সুযোগ নিশ্চিত করে; যা আগে অকল্পনীয় ছিল। মেটাভার্সের সঠিক অর্থ এখনও সেভাবে বলা যায়নি, বিষয়টা অনেকটা এরকম যে, আপনার অন্তর আত্নার সাথে সংযুক্ত, ইন্টারনেট আপনার চাহিদা বুঝে আপনাকে আপনার প্রয়োজন মিটাতে সহায়তা করে।
মার্ক জাকারবার্গের মতে, মেটাভার্স ধারণাটি ভার্চুয়াল জগতে বিনিয়োগ করার জন্য একটি বিশাল সুযোগ। যদিও তার এই প্রজেক্ট এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মেটাভার্সকে আপনি শিক্ষা ক্ষেত্রে , কাজের ক্ষেত্রে, এমনকি দৈনন্দিন জীবনেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন: অনলাইনে ক্লাস, অনলাইন অফিস, অনলাইন শপিং মেটাভার্সের বিভিন্ন উদাহরণের মধ্যে পরে।
মেটাভার্সটি এমন একটি সিস্টেম, যেখানে আমরা ঘরে বসে ভার্চুয়ালি সব কাজ করতে পারবো। এই যেমন, বর্তমানে আমরা ই-কমার্স ওয়েবসাইটে গিয়ে মাউস স্ক্রোল করে একটা একটা প্রডাক্টের ইমেজ দেখি। কিন্তু মেটাভার্সে আমরা, সরাসরি সুপারশপ দেখে যেইভাবে দেখে দেখে কিন্তু পারি, একইভাবে চোখে VR বক্স পরে থ্রিডি সেস্টেমে দেখে সেটা কিনতে পারবো।
মেটাভার্স কিভাবে কাজ করে?

মেটাভার্স এর মূলে রয়েছে সুপার ফাস্ট ইন্টারনেট। আপনি আপনার ঘরে বসে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন। আপনি চাইলে অডিও কল বা ভিডিও কল দিতে পারেন। এই ধরনের যোগাযোগ আপনাকে বাস্তব জীবনের থেকে বেশি একটিভ রাখে। আপনি সব কিছু করতে পারবেন, যদি আপনার ইন্টারনেট সংযোগ থাকে, এইজন্যই বলা হয়েছে মেটাভার্স এর মূলে রয়েছে ইন্টারনেট।
আপনি যে শুধু সামাজিকতা রক্ষা করতে পারবেন তাই নয়, আপনি বিনোদনও উপভোগ করতে পারনে, যেমনঃ আপনি অনলাইনে লাইভ কনসার্ট দেখা, গেমিং, মার্কেটিং, ডেটিং এসবও করতে পারেন। আপনি ঘরে বসে, ঘরের পরিবেশে আপনার মন মত জায়গায় ঘুরে আসতে পারবেন, এটাই আসলে মেটাভার্সের মূল উদ্দেশ্য।
এখন অডিও ভিজুয়াল কোয়ালিটি এত বেশি উন্নত হয়েছে, আপনি যখন গেম খেলেন; যদি হেড সেট ইউজ করেন। তাহলে মনে হবে আপনি সত্যি সত্যি সেই গেমের দুনিয়ায় আছেন। মেটাভার্স এমন একটি প্রযুক্তি যা আপনাকে আপনার কল্পনা এবং পর্দার জগতে বাস্তবে ফিল করতে সহায়তা করবে।

মেটাভার্সের পূর্ণ ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে আরও অনেক বেশি সময় লাগবে, অনেকেই এখন এই ধারণার ব্যাপারে অজ্ঞাত। সহজ ভাষায় অনেকে এইটা বুঝে যে, অনলাইনে জীবনের বিভিন্ন ধারার ব্যাপক অগ্রগতিই মেটাভার্সের মূল উপাদান এবং লক্ষ্য।
তাও বিষয়টি সহজ করে বুঝানোর আপনাদের কিছু বিষয় আলোচনা করা হলঃ
১. মাইক্রোসফট
মাইক্রোসফট ইতিমধ্যে হলোগ্রাম এবং এক্সআর অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণের লক্ষ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, যার ফলে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অগমেন্টেড এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাথে বাস্তব বিশ্বকে একত্রিত করা যায়। মাইক্রোসফট এই মাসের শুরুতে মাইক্রোসফ্ট টিম তাদের এই ধরনের পদক্ষেপের পেছনে উদ্দেশ্যগুলি দেখিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হলোগ্রাম এবং ভার্চুয়াল ব্যাক্তি।
মার্কিন সেনাবাহিনী এখন মাইক্রোসফটের সাথে একটি অগমেন্টেড রিয়েলিটি হোলোলেন্স ২ হেডসেট নিয়ে কাজ করছে যা সৈন্যরা প্রশিক্ষণ, অনুশীলন এবং যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করবে। আর, Xbox লাইভ ইতিমধ্যে সারা বিশ্ব জুড়ে লক্ষ লক্ষ গেমারদের যুক্ত করে রেখেছে। ফলে, ভবিষ্যতে গেমারদের একদম বাস্তব জীবনের মত যুদ্ধ করার অনুভূতি দিতে মাইক্রোসফট উঠে পরে লেগেছে।
২. মেটা
প্রাক্তন ফেসবুক-মালিকানাধীন প্রযুক্তি সংস্থা ইতিমধ্যে বড় ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ইনভেস্ট করেছে, মানে তৈরি করেছে। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালের অকুলাস একুইজিশন। মেটা এমন একটি ভার্চুয়াল বিশ্বের কল্পনা করছে, যেখানে ডিজিটাল মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট ব্যবহার করে লাইভ অফিস, দেশ-বিদেশ ভ্রমণ এবং বিনোদনের জন্য ইন্টারঅ্যাক্ট করা যাবে। মানে মনে হবে, আপনি সেখানেই আছেন।
৩. Roblox
এই প্ল্যাটফর্মটি ২০০৪ সালে চালু করা হয়েছিল, এটি মুলত গেমার সোসাইটি তৈরি করে। Roblox এখন 45 বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের। ডেভিড বাসজুকি এই প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও।
Roblox ভ্যানস ওয়ার্ল্ড নামে একটি ভার্চুয়াল স্কেটিং পার্ক ক্রিয়েট করেছে। যেখানে খেলোয়াড়রা নতুন ভ্যানস গিয়ারে পোশাক পরতে পারে। এমনকি শপিংও করতে পারে। সব কিছু গেমিং দুনিয়ায় হলেও আপনার মনে হবে আপনি বাস্তবেই এসব করছেন।
৪. এপিক গেমস

এপিক গেমসের সিইও টিম সুইনি, তিনি ফোর্টনাইট তৈরি করেছিল। মজার বিষয় হলো এই গেমে, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের আইকনিক 1963 “আই হ্যাভ এ ড্রিম” বক্তৃতার রিমেক রয়েছে। এটা দেখার পর, গেমের মধ্যে আপনি ভাববেন যে বিষয়গুলো আপনার চোখের সামনেই হচ্ছে।
এছাড়া ও বেশ কয়েকটি স্বল্প-পরিচিত সংস্থা তাদের নিজস্ব ভার্চুয়াল জগত চালু করেছে। সেকেন্ড লাইফ যা ২০০৩ সালে চালু হওয়া একটি অনলাইন ফ্যান্টাসি জগত, যার বয়স দুই দশক হতে চলল।
মেটাভার্স আসলে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি তৈরি করে একদিকে যেমন আপনার জীবন যাত্রা কে সহজ করেছে। তার পাশাপাশি গেমিং এর দুনিয়ায় আপনাকে নিমজ্জিত করে আপনাকে অনেকটা ডিভাইস ফ্রেন্ডলি করে তুলেছে, যা বর্তমান ডিজিটাল জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।