কমদামের মোবাইল কেনার পর, কয়েকদিন পরেই প্রশ্ন জাগে মোবাইল স্লো হলে কি করব? সত্যি কথা বলতে, মোবাইল ব্যবহার করতে গিয়ে একদম কমন যে সমস্যার সম্মুখীন হই আমরা, সেটা হলো মোবাইল স্লো হয়ে যাওয়া।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্রাউজার আপডেট হয় বা ইন্টারনেটে যখন আমরা বিভিন্ন কাজ করতে যাই তখন মোবাইল স্লো থাকলে নানা রকম ঝামেলায় পড়তে হয়।
অনেক সময় মোবাইল পুরাতন হয়ে গেলেও, মোবাইল স্লো হয়ে যায়। কি কারণে মোবাইল স্লো হয় এবং মোবাইল স্লো হলে কি করব? এ সম্পর্কে আমরা আজ আলোচনা করব। কিছু কিছু উপায় সহজ হবে আবার কিছু উপায় কঠিন হবে। কিন্তু সব উপায়েই মোবাইলকে আগের চেয়ে দ্রুত করা যাবে।
লেখার সূচিপত্র
মোবাইল স্লো হওয়ার কারণ?
এটা ঠিক যে একটি মোবাইরের বয়স ২ বা ৩ বছর হয়ে গেলে ,তা নতুন মোবাইল এর মত এত ফাস্ট হবে না। কিন্তু তবুও ঠিক কি কি কারণে মোবাইল স্লো হয় তা জানা থাকলে তা সমাধান করা যায়। নিচে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো।
১. কম স্টোরেজ এবং কম র্যাম
মোবাইলের স্টোরেজ ক্ষমতার উপর মোবাইল স্লো হওয়া অনেকাংশে নির্ভর করে। আধুনিক মোবাইলগুলিতে যেই প্রসেসর ব্যবহার করা হয় সেগুলোতে নানা ধরনের টেকনিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেই কারণে মোবাইলের মেমোরি ফ্রি থাকে।
কিন্তু মোবাইলে বেশি বেশি ছবি, ভিডিও ইত্যাদি থাকলে আস্তে আস্তে মেমোরি স্টোরেজ কমতে থাকে এবং মোবাইল স্লো হতে থাকে। স্টোরেজ যখন ফুল হতে থাকবে তখন মোবাইলে একটি নোটিশ দেওয়া হয়ে থাকে তখন প্রয়োজনীয় জিনিস রেখে বাকি সব ফেলে দিতে হবে।
অপরদিকে একসাথে অনেক অ্যাপ রান থাকার কারণে, কম র্যামের ফোনগুলো স্লো হয়ে যায়। এছাড়া, অনেক ৩০০ টাকায় কিছু থার্ড ক্লাস মেমেরি কার্ড কিনে। মোবাইল স্লো করার জন্য এসব ম্যামরি কার্ড অনেকাংশে দায়ী।
২. স্লো প্রোসেসর
ফোন কেনার সময় অনেকেয় অনেক পুরতান এবং কম গিগাহার্জের প্রোসেসরওয়ালা মোবাইল কিনেন। সবসময় চেষ্টা করবেন, ভাল প্রোসেসরের ফোন কেনার জন্য।
কোয়ালকম স্নাপড্রাগনের প্রোসেসরগুলো বেশ ফাস্ট হয়। তবে, প্রোসেসর কত ন্যানমিটার ও গিগাহার্জও নির্ভর করে মোবাইল ফাস্ট হওয়ার জন্য।
৩. ব্যাটারি ক্ষয় হওয়া
মোবাইল এর বয়স যত বাড়তে থাকে, তত দেখা যায় যে ব্যাটারির ক্ষমতা কমতে থাকে। ব্যাটারি আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় নেয় চার্জ হতে এবং চার্জ ও বেশি সময় থাকে না। এটি আসলে এক ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া। মোবাইলের ব্যাটারি ভালো রাখার 10 টি উপায়।
মোবাইলে যে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি থাকে সেটির আয়নসমূহ অ্যানোড থেকে ক্যাথোডে প্রবাহিত হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই প্রবাহে একটি বাধার সৃষ্টি হয় এবং প্রবাহ কমতে থাকে। এই কারণেই সময়ের সাথে সাথে মোবাইলের ব্যাটারি ক্ষমতা কমতে থাকে।
মোবাইল চার্জ হতে সময় বেশি লাগে এবং ঘন ঘন চার্জ দিতে হয়। প্রতিটা ব্যাটারিরই একটি নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল থাকে। এই আয়ুষ্কাল কমতে থাকলেই আস্তে আস্তে মোবাইলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। মোবাইল গরম হয়ে যেতে পারে বা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৩. মোবাইল ভেঙে যাওয়া বা অন্য কোন উপাদান আঘাত পাওয়া
ব্যাটারি ক্ষয় হওয়া বা মেমোরি ফুল হয়ে যাওয়া, আস্তে আস্তে সময়ের সাথে সাথে হয়। কিন্তু মোবাইল যদি অন্য কোন ভাবে আঘাত পায় ,তাতেও স্লো হয়ে যেতে পারে।
মোবাইল হাত থেকে যদি বার বার পড়ে যায় বা অন্য কোন ভাবে আঘাত পায় বা পানি বা অন্য কিছু দ্বারা ভিজে যায়। তাতেও মোবাইলের ক্ষতি হতে পারে এবং স্লো হয়ে যেতে পারে।
৪. ব্লোটওয়্যার
ব্লোটওয়্যার হলো এমন এক ধরনের সফটওয়্যার যেটা আগে থেকেই মোবাইলে ইনস্টল করা থাকে। এটি অনেক বেশি জায়গা দখল করে এবং মোবাইল স্লো হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
এই যেমন ধরেন, আমাদের ফোনে গুগল ডু কিংবা কিছু আজাইরা অ্যাপস ইন্সটল করা থাকে যেগুলো সারা জীবনে খুলেও দেখা হয়না। অথচ, মোবাইল কোম্পানিগুলো অ্যাপ কোম্পানির থেকে টাকা খেয়ে এইগুলো প্রি-ইন্সটল করে দেয়।
মোবাইল থেকে সমস্ত অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস বাদ দিতে হবে, আন্সটল না হলে Force Stop/Disable করে রাখতে হবে। নতুন একটি ফটো এডিটিং অ্যাপস ডাউনলোড করলে আগেরটা রিমুভ করে দিতে হবে।
মোবাইল স্লো হলে কি করব?
মোবাইল যদি এর বাহ্যিক কোন ক্ষতির কারণে স্লো হয়ে থাকে যেমন ব্যাটারিজনিত কোন সমস্যা তাহলে দ্রুতই ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া যদি সফটওয়্যারগত কারণে হয়ে থাকে তখন বাকি সমস্যা সমাধান করতে হবে।
১. অ্যাপ অডিট এর সাহায্য নেয়া
অ্যাপ অডিট হচ্ছে এমন একটি অ্যাপের তালিকা, যেখানে মোবাইলের সমস্ত অ্যাপস একসাথে দেখানো থাকে। এর দুইটি সুবিধা হচ্ছে এখানে মোবাইলের সমস্ত অ্যাপস এর তালিকা থাকার পাশাপাশি কোন অ্যাপস কোন কাজ করবে তাও লিখা থাকবে।
এতে করে সহজেই অ্যাপসগুলোর কাজ সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় এবং একই ধরনের একাধিক অ্যাপস থাকলে সেটি রিমুভ করা যায়। পাশাপাশি যে অ্যাপসটি ব্যবহার করা হয়না সেটিও বাদ দেয়া যায়। সেটিংস থেকে App Manager এ গেলেই এটা পাবেন।

এখানে এক সাথে সব অ্যাপস দেখা যায় বলে আরেকটি সুবিধা হলো কোন অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস থাকলে সেটি সাথে সাথে রিমুভ করা যায়।
২. ক্যাশ ক্লিন করা
মোবাইল প্রতিনিয়ত ব্যাবহার করার সাথে সাথে স্টোরেজে কিছু ক্যাশ মেমোরি জমা হয়। এগুলা মোবাইলে অনেকটা জায়গা দখল করে থাকে। এই জন্য মোবাইল অনেক সময় স্লো হয়ে যায়। তাই এসব ক্যাশ মেমোরি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

এই জন্য মোবাইলে সেটিংসে গিয়ে স্টোরেজ এ ক্লিক করতে হবে। সেখান থেকে ‘ক্লিয়ার ক্যাশ’ অপশনটি চেপে ক্যাশ মেমোরি ক্লিন করা যাবে।
উপরোক্ত পদ্ধতি দুটি হলো মোবাইল ফাস্ট করার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায়। এছাড়া আরো কিছু ছোট ছোট উপায় রয়েছে সেগুলো নিম্নরূপ।
৩. অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করা
অপারেটিং সিস্টেম পুরনো হয়ে গেলে অনেক সময় মোবাইল স্লো হয়ে যায়। তাই সময়ের সাথে সাথে এটি আপডেট করতে হবে।

৪. অ্যাপস আপডেট করা
মোবাইলের সবগুলো অ্যাপস ও আপডেট হওয়া প্রয়োজন। পুরাতন অ্যাপস ও অনেক সময় মোবাইল স্লো এর কারণ হয়ে থাকে। playstore এর সেটিংসে গিয়ে অ্যাপস অটো আপডেট সিলেক্ট করে দিতে হবে।
৫. অটো আপডেট অফ করে দেয়া
যদিও সব কিছুই আপডেট হওয়া জরুরি। কিন্তু অনেক সময় অটো আপডেট সমস্যাও সৃষ্টি করে থাকে। কারণ পুরাতন মোবাইল হলে সেখানে স্টোরেজ কম থাকবে তাই বার বার অ্যাপসগুলো অটো আপডেট হয়ে গেলে তা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করবে।
এই জন্য একসাথে সব অটো আপডেট না দিয়ে নিজের প্রয়োজনমত একটা একটা করে অ্যাপস আপডেট করা যাবে। উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো ছাড়াও আরো কিছু উপায় আছে যা ব্যবহার করে মোবাইল স্লো হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়। একেবারেই উপরের কোন উপায় কাজে না লাগলে নিচের কাজগুলো করা যাবে।
৭. ফ্যাক্টরি রিসেট
যদি এমন হয় যে কোন উপায়েই মোবাইল ফাস্ট করা যায়না তখন সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ফ্যাক্টরি রিসেট। এই উপায়ে মোবাইল একদম নতুন কেনার পর যেমন ছিল তেমন হয়ে যাবে। ফোনের সমস্ত ডাটা মুছে যাবে।
সেটিংসে গিয়ে ব্যাকআপ এন্ড রিসেট ক্লিক করে ফ্যাক্টরি রিসেট অপশন ক্লিক করতে হবে।
৮. কাস্টম রম
কাস্টম রম! হ্যাঁ, আপনার ফোনের রম পরিবর্তন করলেও, ফোন ফাস্ট হবে। যদিও এই কাজটা নতুনদের জন্য না, যাদের বাসায় কম্পিউটার আছে তারা ইউটিউব ঘাটিয়ে ফোনে কাস্টম রিকোবারি কিংবা রুট করে কাস্টম রম দিতে পারেন।
এছাড়া, ডোভোলপার অপশন অন করে সেখান থেকে Animation অফ করে দিলেও ফোন কিছুটা ফাস্ট মনে হবে।
উপসংহার
এই ছিল আজকে মোবাইল স্লো হলে কি করব টাইপের প্রশ্নের উত্তর। আর মোবাইল স্লো হওয়ার কারণে যদি ফোন ঠিক করতে চান তাহলে, মোবাইল রিপেয়ারিং করতে দেওয়ার আগে করণীয়। এই লেখাটি পড়ে নিতে পারেন।