নাসা কি? এরকম প্রশ্ন কমবেশি সবার মনেই আসবে। কারণ, আমরা অনেকেই ‘নাসা’ নামটি শুনে থাকি নিয়মিত। এই তো কয়েক দিন আগেই, নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে তোলা ছবি নিয়ে সারা পৃথিবীতে হুলস্থর হয়ে গিয়েছিলো।
যাইহোক, নাসার সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত না জানলেও এতটুকু বুঝতে পারি যে, এটি মহাকাশ নিয়ে গবেষনা সম্পর্কিত একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে বিমান, রকেট, এবং মহাকাশযান সকল কিছু মিলিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়। আজ এই লেখায় নাসা কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এবং নাসার ইতিহাস সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হবে।
লেখার সূচিপত্র
নাসা কী?
সর্বপ্রথম খুব ভালোভাবে জেনে নিই নাসা কী। নাসা হলো এক ধরনের গবেষনা সংস্থা। এর পূর্নরূপ ‘ ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স এন্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ( National Aeronautics And Space Ministration) (NASA)। এটি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে। এটি এক প্রকার স্বাধীন সংস্থা। এখানে বিমানচালিতবিদ্যা নিয়ে গবেষনা করা হলেও এর মূল লক্ষ্য মহাকাশ বিষয়ে গবেষণা করা।
নাসার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
নাসাকে বলা হয় ‘মার্কিন জাতীয় বিমানচালনবিদ্যা ও মহাকাশ প্রশাসন’। আজ থেকে (২০২২) প্রায় ৬৪ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৫৮ সালের ২৯ জুলাই নাসা গঠিত হয়। এর আগের নাম ছিল National Advisory Committee For Aeronautics (NACA)। এই নাম ছিল ১৯৫৮ সাল থেকেই। পরে এটা পরিবর্তন করে নাসা করা হয়।
এর প্রকার হলো স্পেস এজেন্সি। নাসা এর সদর দপ্তর হলো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে। এর অধিক্ষেত্র ‘ইউনাইটেড স্টেটস ফেডারেল গভর্নমেন্ট’ (United States Federal Government)।
এটা হচ্ছে নাসার ওয়েবসাইটঃ www.nasa.gov। এখানে গিয়ে ঘুরে নাসা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেন। নাসাতে মোট ১৭৯০০ জন মানুষ কর্মরত আছেন। তবে এর হিসাব নির্দিষ্ট নয়। কারন, নিয়মিত নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছে। ২০২০ সালের প্রদত্ত হিসাব অনুযায়ী নাসার বার্ষিক বাজেট ২২.৬২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বর্তমানে এর পরিমান আরও বেশি।
এর প্রথম তিনটি মহাকাশ বন্দর হলো:
- জন এফ কেনেডি স্পেস সেন্টার ( John F Kennedy Space Centre)
- কেইপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন (Cape Canaveral Space Force Station )
- ভ্যান্ডেনবার্গ এয়ার ফোর্স বেইজ ( Vandenberg Air Force Base)
নাসার ইতিহাস
নাসার ইতিহাস আমাদের প্রায় সবারই অজানা। খুব কম মানুষই এ সম্পর্কে জানেন। ১৯৫৮ সালে গঠন করা হয় ন্যাশনাল অ্যাডভাইসরি কমওটি ফর অ্যারোনেটিকস National Advisory Committee For Aeronautics (NACA)। তখন একে ‘নাকা’ বলে ডাকা হতো। তবে এর নাম পরিবর্তন করে নাসা রাখা হয়। কারন, তাঁরা চাইছিলেন যে এক ধরনের নতুন সংস্থা গড়তে, যা মহাকাশ, বিমান- বিদ্যা সবকিছু নিয়ে গবেষনা করবে।
সবাই মিলে আশা করছিলেন এমন একটি সংস্থা গড়ার, যা কিনা সব ধরনের মহাকাশ ভিত্তিক বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবে এবং মহাকাশ গবেষনায় এক ধরনের বিস্ময়কর পরিবর্তন এনে পৃথিবীর বিপ্লব ঘটাবে। এই ভাবনা থেকেই শুরু। নাসার গবেষনার মধ্যে রয়েছে সায়েন্স মিশন (Science Mission) ডিরেক্টরেটরের হেলিওফিজিক্স (Heliophysics) গবেষনা কার্যক্রম এর মাধ্যমে এর অগ্রগতি তে সাহায্য করা। যা সত্যিই এখন আমাদেরকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে।
যখন নাসা প্রতিষ্ঠিত হয়, তা বিভিন্ন মিশনকে সাহায্য করতে শুরু করে। এটি তখন মহাকাশ অনুসন্ধানের নেতৃত্বে খুবই চমকপ্রদ ভূমিকা পালন করে। অ্যাপোলো মুন ল্যান্ডিং মিশনকেও নাসা বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। স্কাইল্যাব স্পেস স্টেশন এবং স্পেস শাটল মিশন এর অনুসন্ধানের সাহায্যে ও নাসার অবদান ছিল অনেক।
এছাড়া যে বিখ্যাত ইন্টারন্যাশনাল স্পেসগুলো রয়েছে তাদেরকেও নাসা সহযোগিতা করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওরিয়ন স্পেসক্রাফট। এছাড়া স্পেস লঞ্চ সিস্টেমের বিশেষভাবে তদারকি করেছে। বর্তমানে আর্থ অবজারভিং সিস্টেমের মাধ্যমে নাসা পৃথিবীকে উন্নত করার লক্ষে নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
পেছন থেকে দেখা
সময়টা তখন 1946 সাল। সে সময় তখন রকেট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে নাকা অর্থাৎ ন্যাশনাল অ্যাডভাইসরি কমওটি ফর অ্যারোনেটিকস National Advisory Committee For Aeronautics (NACA)। তখন কয়েক প্রকার রকেট নিয়ে শুরু হয় গবেষণা। তবে এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল একটি রকেট। সেটির নাম হচ্ছে সুপারসনিক রেল এক্স- ওয়ান (Supersonic Rell Ex – 1)।
এটি নিয়ে তারা একটু বেশিই স্পেশাল ভাবে গবেষণা চালাচ্ছিলেন। এই গবেষণা চলতে থাকে। 1950 সালের দশকের প্রথম দিকে তখন। জিওগ্রাফিক্যাল বর্ষ। এর সময়কাল 1957 থেকে 1958 সাল। তখন নাকা কমিটির উপর এক বিরাট ধরনের গুরু- দায়িত্ব এসে পড়ে। তা ছিল কৃত্রিম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দায়িত্ব। এই প্রযুক্তির নাম দেয়া হয় ভ্যানগর্ড ( Vangord)। 1957 সাল তখন সময়টা।
4 অক্টোবর সেদিন। ইতোমধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়ে গেছে একটি কৃত্রিম স্যাটেলাইট। এটা দেখে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ জাগে আরও প্তরচুর বেশী। তখন তারা দ্রুত একটি কৃত্রিম স্যাটেলাইট তৈরির জন্য প্রচেষ্টা চালাতে শুরু করেন। তখন মূলত সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের ঘোর বিরোধী। এখনো এই বিরোধ বেঁচে আছে প্রতিহিংসা রূপে।
তো, সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার জন্য খুব তাড়াহুড়ো শুরু করে। এ বিষয়ে খুব তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হতে থাকে। এটি এক পর্যায়ে রূপ নেয় মিটিং আকারে। এটা ঘটে ইউ. এস. কংগ্রেসে। তখন সেখানকার রাষ্ট্রপতি ছিলেন ডিওয়ার্ড ডি. আইজেনহাওয়ার (Deword D. Eizenhour)। এবং তখন তিনি এবং তার উপদেষ্টারা সকলে মিলে একটি মিটিংয়ে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন।
1958 সালের 14 জানুয়ারি সে সময়। কমিটির প্রধান ছিলেন হিউজ ড্রাইডেন (Huge Dryden)। সেদিন তিনি মিটিংয়ে আসেন এবং একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন সকলের সামনে। পরিকল্পনার নাম দেন “এ ন্যাশনাল রিসার্চ প্রোগ্রাম ফর টেকনোলজি” (A National Research Programme For Technology)। পরিকল্পনা প্রকাশ করার পর তিনি একটি বক্তব্য পেশ করেন। তা ছিল এরকম-
It is a matter of great urgency and importance to our country from the point of view of national honour and military necessity that this challenge is met by a vigorous research program and development in the field of space conquest…It is proposed that scientific researches be under the National Civilian Agency. should be NAKA is capable of… through accelerated, enhanced and comprehensive efforts to lead space technology.
অনুবাদঃ জাতিগত সম্মান ও সামরিক প্রয়োজনীয়তা বিবেচনার দিক থেকে আমাদের দেশের জন্য এটি একটি মহা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে এই চ্যালেঞ্জটি একটি শক্তিশালী গবেষণা কার্যক্রম এবং মহাকাশ বিজয়ের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে…এটা প্রস্তাবিত যে বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলো জাতীয় সিভিলিয়ান সংস্থার অধীনস্থ হওয়া উচিত। নাকা সক্ষম… মহাকাশ প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দানের ক্ষেত্রে দ্রুত, বর্ধিত এবং বিস্তৃত প্রচেষ্টার মাধ্যমে।
এর থেকেই শুরু হয়েছিল নাসার পদযাত্রা। আমরা পৃথিবীতে বাস করি। আর এই পৃথিবীতে দিন দিন ঘটে চলেছে অসাধারণ সব বিপ্লব। যা পৃথিবীকে নিয়ে যাচ্ছে সভ্যতার উন্নত এক শিখরে। আর আমরা যদি ভালভাবে লক্ষ করি তবে বর্তমানের সময়ে বিজ্ঞানের অবদান ঠিক কতটা, তা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হব।
এই নাসা এর মধ্যে অন্যতম এবং চমকপ্রদ এক সংস্থা। কারন, নাসা এ পর্যন্ত চাঁদ, মঙ্গল সহ আরও অনেক জায়গার মাটিতে পা রেখেছে। সেখানে দেখেছে তার সৌন্দর্য, বৈচিত্র্যময় পরিবেশ। পেয়েছে প্রানের অস্তিত। আর এ সকল কিছুই মানবজীবনে উন্নয়ন বয়ে নিয়ে আসছে।
একদিকে মানুষ অর্জন করছে বিপুল পরিমানে জ্ঞান, অন্যদিকে জানতে পারছে বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ সম্পর্কে অজানা এবং বিচিত্র সকল ধরনের তথ্য। এখন ২০২২ সাল। একদিন হয়তো নাসা আরও উচ্চ পর্যায়ে যাবে। সেদিন হয়তো পৃথিবীর আরও অনেক মানুষ পাবে ভিন্ন গ্রহের স্বাদ।
Frequently Asked Questions
-
নাসা এর পূর্ণরূপ কি?
ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। ইংরেজি: National Aeronautics and Space Administration (NASA)।
-
নাসা কি ধরনের প্রতিষ্ঠান?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বাধীন সংস্থা।
-
নাসার বর্তমান চেয়ারম্যান কে?
স্টিভ জুর্কজিক
-
নাসার প্রতিষ্ঠাতা কে?
Dwight D. Eisenhower
-
নাসা কোথায় অবস্থিত?
ওয়াশিংটন, ডিসি। তবে তাদের, আমেরিকাতে ২০টি কেন্দ্র আছে।
-
নাসা কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
১লা অক্টোবরে ১৯৫৮ সালে।
পরিশেষে
আজ আমাদের আলোচনা ছিল এই নাসা কী? এবং নাসার ইতিহাস সম্পর্কে। আশা করি আপনারা এই লেখা থেকে নাসা সম্পর্কে সহজভাবে বিস্তারিত ধারনা পাবেন এবং এই লেখা আপনাদের কাজে আসবে।