নরওয়ে দেশটি অনেকের নিকটই অজানা। আর তাই, যদি নরওয়ে সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরি, অনেকেই অবাক হয়ে যাবেন। নরওয়েকে বলা হয় নিশীথ সূর্যের দেশ, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশ প্রচুর অর্থনৈতিক এবং প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। আজকে আমরা এই নরওয়ে সম্পর্কে চমৎকার কিছু তথ্য জানবো।
লেখার সূচিপত্র
নরওয়ে সম্পর্কে অজানা তথ্য
১. নরওয়ে নলকূপের পানি রপ্তানি করে
নরওয়েতে, পানি এত বিশুদ্ধ যে, আপনি কোনও সমস্যা ছাড়াই ট্যাপ থেকে তা পান করতে পারেন। তাদের পানি বেশিরভাগই হিমবাহ এবং প্রাকৃতিক ঝরণা থেকে আসে, যা খুব বেশি ফিল্টার করার প্রয়োজন হয় না।
এমনকি আপনি সেখানের রেস্টুরেন্টগুলোতে টেপের পানি ফ্রিতে পাবেন। এই ধরনের অবাধে পানি সরবরাহের কারণে, তারা বিশ্বের বাজারে এই পানি রপ্তানি বা বিক্রি করতে সফল হয়েছে। যেমনঃ ভস ব্র্যান্ডের পানি অনেক বিখ্যাত।
২. নরওয়ের মানুষ সুইডেন বা ফিনল্যান্ডে যায় সস্তায় মদ কিনতে
আপনি নরওয়েতে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করে থাকলে, সাথে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা নিয়ে যাবেন। যদিও এদেশ ভ্রমনের জন্য একটি চমৎকার একটি দেশ। তবে, থাকা, খাওয়া, পরিবহন এবং প্রায় সমস্ত কিছুর ক্ষেত্রে অত্যন্ত ব্যয়বহুল দেশ।
ন্যূনতম মজুরি প্রতি ঘন্টায় প্রায় ২৫ ডলার, তাই স্থানীয়দের জন্য অর্থ কোনও সমস্যা না হলেও ,তারা এখনও খাবার বা অ্যালকোহলের মতো সস্তা আইটেম অন্য দেশ থেকে কিনতে পছন্দ করে।
লোকেরা নরওয়ে এবং সুইডেনের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে ভ্রমণ করে কেবল মাত্র সস্তায় অ্যালকোহল এবং মুদি মালামাল ও জিনিস কিনতে। তাই, আপনাকে সাজেস্ট করা হচ্ছে আপনি নরওয়ে ভ্রমণ করতে গেলে, সাথে করে কিছু অ্যালকোহল এবং স্ন্যাক্স নিয়ে যাবেন। ওয়েট, ইসলাম ধর্মে সকল ধরণের সকল প্রকারের মদ হারাম। সুতরাং, মুসলমান হলে, এই কাজটি ভুলেও করবেন না।
৩. বিখ্যাত সিনেমা এবং টিভি সিরিজ নরওয়েতে চিত্রায়িত হয়েছে
ইউরোপে সম্প্রতি যে যে সিনেমা বা টিভি শো বানানো হয়েছে তার মেক্সিমাম গুলোর শুটিং হয়েছে নরওয়েতে। নরওয়েতে ড্যানিশ গার্ল, দ্য এম্পায়ার স্ট্রাইকস ব্যাক, হ্যারি পটার এবং হাফ ব্লাড প্রিন্স, এক্স মাচিনা বা গোল্ডেন কম্পাসের মতো চলচ্চিত্রগুলির সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে শুটিং করা হয়েছে।
৪. নরওয়েতে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের তহবিল রয়েছে
নরওয়েতে অল্প সংখ্যক জনসংখ্যা রয়েছে এবং এর উত্তর অংশ খুব বেশি জনবসতিপূর্ণ নয়। যেহেতু সারা বছর তুষারপাত হয় এবং তাপমাত্রা প্রায় সব সময় শূন্যের নিচে থাকে। এ কারণেই, জনসংখ্যার বেশিরভাগই অসলো, রাজধানী শহর বা আশেপাশের অঞ্চলে বাস করে যেখানে তারা জনমানবের কাছাকাছি থাকতে পারে।
দেশটি উত্তর সাগর থেকে তার তেল নিষ্কাশনের উপর খুব বেশি নির্ভর করে এবং আপনি জেনে অবাক হবেন যে, তেল শিল্প থেকে প্রাপ্ত লাভ একটি সম্পদ তহবিলে জমা হয় যা এখন ১ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের। এই অর্থ জনসংখ্যা এবং জনগণের উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৫. নরওয়েতে বিশ্বের দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গ
বিস্ময়কর ১৫ মাইল (২৪.৫ কিমি) দীর্ঘ, লিরদাল টানেল বিশ্বের দীর্ঘতম। ১ বিলিয়ন নরওয়েজিয়ান ক্রোনার নির্মাণের জন্য ব্যয় করে (এটি প্রায় ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সুড়ঙ্গটি লিরদাল এবং অরল্যান্ডের ছোট সম্প্রদায়গুলিকে সংযুক্ত করেছে।

এর নকশা সারা বিশ্ব জুড়ে প্রশংসিত হয়েছে, কারণ এটি ড্রাইভারের উপর মানসিক চাপ কমাতে করতে সহায়তা করে , কারণ প্রতি ৬ কিলোমিটার অন্তর রাস্তার বিভিন্ন অংশ আলাদা করার জন্য গুহা রয়েছে এবং প্রতি গুহায় বিভিন্ন রঙের আলো লাগানো হয়।
৬. অসলোতে নোবেল শান্তি পুরষ্কার প্রদান করা হয়
নরওয়ের রাজধানী ১৯০১ সাল থেকে প্রতি বছর (মাত্র কয়েকটি ব্যতিক্রম) নোবেল শান্তি পুরষ্কার অনুষ্ঠানের স্থান হয়ে উঠেছে। সুইডেনের স্টকহোমে রসায়ন, সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান এবং ফিজিওলজি বা মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।
৭. বিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী দ্বীপ নরওয়েজিয়ান অঞ্চলে অবস্থিত
তবে এ খবরটি আপনাকে অবাক করে দিতে পারে যে, এটি উত্তরে নয়! এটা আসলে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে। ১৯২৯ সাল থেকে নরওয়ে দ্বারা পরিচালিত, দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের বুভেট দ্বীপটি পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী দ্বীপ।
এটি অ্যান্টার্কটিকার উপকূল থেকে প্রায় ১,৭০০ কিলোমিটার উত্তরে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূল থেকে ২,৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর সবচেয়ে নিকটতম জনবসতিপূর্ণ জায়গা একটি ব্রিটিশ অঞ্চল যার নাম ত্রিস্তান দা কুনহা, যা ২,০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ত্রিস্তান ও একটি অত্যন্ত দূরবর্তী জায়গা, যেখানে কোন বিমানবন্দর নেই। একমাত্র বিজ্ঞানীরা তাদের রিসার্চের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কেউ এইখানে আসেনা।
৮. নরওয়েই প্রথম দেশ যারা গাছ কাটা নিষিদ্ধ করেছে
প্রাকৃতিক দৃশ্যকে প্রকৃতি মাতার ইচ্ছানুযায়ী রাখার জন্য, এখানকার সরকার একটি কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা একটি আইন পাস করে; সারা দেশ জুড়ে গাছ কাটা নিষিদ্ধ করে। গাছ কাঁটা বা বন উজাড় করা একটি বড় সমস্যা। এখনো অনেক অঞ্চলে অবাধে গাছ কাঁটা হয়; যা জলবায়ুকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করছে।
৯. পেঙ্গুইনকে নাইট উপাধি দিয়েছিল
ব্রিগেডিয়ার স্যার নিলস ওলাফ যা একটি কিং পেঙ্গুইন , এটি বর্তমানে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ চিড়িয়াখানায় আছে এবং এটি একই সাথে নরওয়েজিয়ান কিংসগার্ডের ম্যাসকট এবং কর্নেল-পজিশনে ইন-চিফ হিসেবে অব্যাহত আছে।

ওলাফ বিশ্বের প্রথম পেঙ্গুইন যা কিনা ২০০৮ সালে নাইট উপাধি পেয়েছিল এবং সে অনুযায়ী ২০১৬ সালে তার পদোন্নতিও হয়েছিল , এতে তার পজিশন হয়েছিল ব্রিগেডিয়ার। এই পেঙ্গুইন প্যারেডের সামনে খুবি ভাব নিয়ে হাঁটত। বিষয়টি আসলেই অদ্ভুত।
১০. তেল খুব ব্যয়বহুল
নরওয়ে তার বেশিরভাগ অর্থ এবং তেল শিল্প থেকে লাভ করে। তারা উত্তর সাগর থেকে তেল নিষ্কাশন করে এবং তারপরে তারা এটি এত সহজেই রপ্তানি করে। নরওয়েতে বিশ্বের সর্বোচ্চ তেলের দাম রয়েছে, এক গ্যালন। পেট্রোলের দাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। তেলের দেশ, দুবাই সম্পর্কে অজানা তথ্য কিংবা সৌদি আরব সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলো জানতে পারেন।
১১. টিউশন ফি ছাড়া পড়াশোনা
দেশের ৩০ শতাংশের বেশি মানুষ উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছে। নরওয়ের বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি চার্জ করে না।
১২. প্রথম স্কি জাম্পারের আবিষ্কারক নরওয়ে

নরওয়েতে পাওয়া ভেফসন নর্ডল্যান্ড স্কি, খুব ভুল না হলেও ৫১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পাওয়া গিয়েছিল। স্কিয়িং নরওয়ের প্রাচীনতম খেলার মধ্যে একটি।
১৩. কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৫ সালের দুর্নীতি উপলব্ধি সূচকে নরওয়ে ১৬৮টি দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি।
১৪. অফিশিয়াল ধর্ম
দেশটির কোনো অফিশিয়াল ধর্ম নেই।
১৫. মানব উন্নয়ন সূচক
নরওয়ে ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ৯ বার মানব উন্নয়ন সূচক (একটি পরিসংখ্যানগত টুল যা একটি দেশের সামগ্রিক অর্জনকে তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক মাত্রা পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়) তালিকার শীর্ষে রয়েছে।
এটি ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে আইসল্যান্ডকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। জীবনকাল, শিক্ষার স্তর এবং মাথাপিছু জিডিপি হল তিনটি মাত্রা যার উপর ভিত্তি করে এইচডিআই গণনা করা হয়।
১৬. ইউরোপের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত
বিশ্বের ষষ্ঠ উচ্চতম এবং ইউরোপের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত – ভিনুফোসেন যার ৮৬০ মিটার উচ্চতা তা নরওয়েতে অবস্থিত।
১৭. বৃহত্তম হিমবাহ
দেশটি ইউরোপের বৃহত্তম হিমবাহও রয়েছে – জোস্টেডালব্রেন, যা ৪৮৭ বর্গ কিলোমিটার।

পরিশেষে
এই ছিল আজকে, নরওয়ে সম্পর্কে অজানা তথ্য। আমাদের অজানা তথ্য ক্যটেগিরিতে এরকম আরও বেশ কিছু তথ্য পাবেন। চাইলে, পড়ে দেখতে পারেন।