জার্মানি বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি। আর এই কারণে, জার্মানি সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলো জেনে রাখা ভাল। আপনি চাইলে জার্মানির মনোমুগ্ধকর বন বা বাভারিয়ান ব্রিউইয়িরিস ঘুরে দেখতে পারেন, এছাড়া ও জার্মানিতে মনোরঞ্জন করার মত অনেক জায়গা আছে।
আজকের এই লেখা অবশ্য, জার্মানি ভ্রমনের কাহিনী নিয়ে নয়। বরং, জার্মানি সম্পর্কে অজানা তথ্য নিয়ে আজকের এই লেখা।
জার্মানি সম্পর্কে অজানা তথ্য
১. জার্মানিতে ১,০০০ রকমের সসেজ আছে!
জার্মানিতে ১,০০০ এরও বেশি প্রজাতির সসেজ রয়েছে। কারণ, জার্মানরা সসেজ খুবই পছন্দ করে! জার্মানিতে আপনি যে ধরনের সসেজ পাবেন তা হল: ব্র্যাটওয়ার্স্ট, Blutwurst, Weisswurst, Knackwurst, Currywurst।

এই ধরনের সসেজগুলি বিভিন্ন প্রকার মশলা দিয়ে খুবই সুস্বাদু করে বানানো যার স্বাদ অত্যন্ত লোভনীয়।
২. সবচেয়ে জনপ্রিয় জার্মান নাম মুলার
মুলার জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় উপাধি বা সারনেম। জার্মানিতে ৯০০,০০০ এরও বেশি লোক রয়েছে যারা এই নামটি ব্যবহার করে। জার্মানিতে আরও কয়েকটি জনপ্রিয় নাম হল: স্মিডট, স্নাইডার, ফিশার, ওয়েবার, মেয়ার, ওয়াগনার, বেকার। জার্মানিতে জনপ্রিয় উপাধিগুলি পেশার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
- Schmidt জার্মান মিস্ত্রিদের জন্য ইউজ করা হয়,
- ওয়েবার শব্দটি যারা বুননের কাজ করে তাদের জন্য ইউজ করা হয়,
- বেকার যারা কেক বা বিস্কুট বেক করে তাদের জন্য ইউজ করা হয়।
জার্মান নামকরণ ইংরেজি নামকরণের সাথে খুব মিল রয়েছে।
৩. জার্মানিতে কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা বৈধ
জার্মানিতে, মুক্ত হওয়ার জন্য আপনি যা করতে পারেন তা করা একটি মৌলিক মানবিক প্রবৃত্তি হিসাবে বিবেচিত হয়। সুতরাং, যদি কোনও বন্দী কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করে তবে তারা এই কাজের জন্য অতিরিক্ত শাস্তি পাবে না।
তবে বন্দী যদি কোনও সম্পত্তির ক্ষতি করে, কাউকে আঘাত করে, কাউকে হত্যা করে, বা পালানোর চেষ্টা করার সময় অন্য কোনও অপরাধ করে তবে তাদের সেই অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হবে।
৪. জার্মানিতে ধূমপান নিষিদ্ধ কিন্তু মদ্যপানের বয়স ১৬ বছর
অন্যান্য দেশে যেমন ১৮ বছর হলে সবকিছু করা যায়, তেমনি জার্মানিতে ১৬ বছর হলে মদ্যপান করা যায়। মদ্যপান এইখানে খুবই জনপ্রিয় এবং কমন কালচার। তাই এইখানে বাচ্চাদের ১৮ বছর অবধি অপেক্ষা করতে হয় না। কিন্তু, জার্মানি সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো, এখানে ধূমপান নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
৫. জার্মানের মসজিদে আযান দেয়া যায় না
জার্মানির মসজিদগুলোতে আযান দেয়া নিষিদ্ধ। শুধু মাত্র ৩০টি মসজিদে আযান দেয়া যায়। বাকীগুলোতে দিতে দেয়া হয় না। তারা এটাকে শব্দ দূষণ বলে আখ্যা দেয়। যদিও গির্জার ঘন্টার ব্যপারে তারা কিছু বলে না।
৬. ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড় রেলস্টেশন
১০ বছর ধরে পাঁচ তলা রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়েছিল জার্মানিতে। বার্লিনের সবচেয়ে বড় এই ট্রেন স্টেশনটি খুঁজে পাবেন। আর তাদের এই ট্রেন স্টেশনটি গোটা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড়।

৭. জার্মানিতে পড়াশুনা ফ্রি
জার্মানিতে পড়াশুনা করতে কোন টাকা পয়সা লাগে না। এমনকি, বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্যেও কোন টাকা-পয়সা লাগে না। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অনেকেই জার্মান ভাষা শিখে জার্মানিতে পড়াশুনা করতে যায়।
৮. জার্মানের হাইওয়ে রাস্তাগুলোতে নির্দিষ্ট গতি মানতে হয় না
জার্মানির হাইওয়েতে আপনি আপনার ইচ্ছামত স্পিডে গাড়ি চালাতে পারবেন। কেউ আপনাকে বাধা দিবে না। তাদের রাস্তাগুলো এমনভাবে তৈরি যে, আপনি যত স্পিডেই গাড়ি চালান দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভবনা কম।
৯. বিয়ার খাবারের অংশ
জার্মানিরা বিয়ারকে খাবার পানীয় হিসেবে বিবেচনা করে। একজন ব্যক্তি প্রতি বছর প্রায় ১৫০ লিটার বিয়ার পান করে। বাভারিয়ানরা জার্মানির অন্য যে কোনও রাজ্যের চেয়ে বেশি বিয়ার পান করে। যেমন, আমরা যেভাবে ভাত খাই প্রতিদিন।
১০. জার্মানরা রুটি ভালোবাসে
জার্মানি সম্পর্কে আরেকটি মজার তথ্য হল যে, এইখানে ৩০০ টিরও বেশি ধরনের রুটি রয়েছে। এইখানে ১২০০ টিরও বেশি ধরনের পেস্ট্রি, কেক এবং অন্যান্য বেকড ফুড রয়েছে। আপনি যদি ভোজনরসিক হন তাহলে, সাংস্কৃতিক খাবারের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে জার্মানিতে যেতে পারেন। জার্মানির কিছু বিখ্যাত রুটির নাম হল,
- Brötchen,
- প্রেটজেল,
- Vollkornbrot,
- Milchbrötchen
এছাড়াও এরা কাঁকড়া খুব পছন্দ করে।
১১. প্রথম Oktoberfest
Oktoberfest হলো জার্মানির বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিয়ার উৎসব। এই উৎসব অবশ্য শুরু হয়, সেপ্টেম্বরে। এই উৎসবের দিন, আনলিমিটেড বিয়ার, ওয়াইন খাওয়া হয়। এছাড়া, নাচ, গান, আনন্দ র্যালি সহ আরও অনেক প্রোগ্রাম হয়।

তবে, ১৮১০ সালের ১২ অক্টোবর প্রথম Oktoberfest অনুষ্ঠিত হয়। এটি পাঁচ দিনের জন্য স্থায়ী হয়েছিল এবং বাভারিয়ার ক্রাউন প্রিন্স (যিনি পরে রাজা লুডভিগ প্রথম হয়েছিলেন) রাজকুমারী থেরেসা ফন স্যাচসেন-হিল্ডবার্গহাউসেনের সাথে বিবাহ উদ্যাপন করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল।
এটি অবশেষে একটি বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়ে যায়। যার মধ্যে একটি বার্ষিক কৃষি মেলা, সঙ্গীত এবং খাদ্য বিক্রেতারা সামিল থাকত। সময়ের সাথে সাথে, বুথগুলি বিয়ার হল হয়ে ওঠে এবং যা এখন ৬০০০ এর বেশি লোককে ধারণ করার ক্ষমতা রাখে।
প্রতি বছর, Oktoberfest সময় প্রায় ২ মিলিয়ন গ্যালন বিয়ার খাওয়া হয়। এটি এমন একটি উৎসব যাতে প্যারেড, বিনোদন রাইড, গেম এবং নাচ ও থাকে। প্রতি বছর ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ Oktoberfest উদ্যাপন করতে আসে। নরওয়েতে হয় কাদা উৎসব। নরওয়ে সম্পর্কে অজানা তথ্য লেখাটি পড়লেও অনেক কিছু জানতে পারবেন।
১২. জার্মানিতে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাথিড্রাল
কলোন ক্যাথিড্রাল জার্মানির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার কলোনে অবস্থিত। এটি উত্তর ইউরোপের বৃহত্তম গথিক গির্জা। এটি দ্বিতীয়-লম্বা স্পাইরগুলির আবাসস্থল। এই বিশাল spires সমগ্র বিশ্বের বৃহত্তম গির্জা জন্য তৈরি করে।

স্থপতিরা যখন কলোন ক্যাথিড্রাল নির্মাণ শুরু করেন, তখন এটি ১২৪৮ সালে ফিরে আসে। ক্যাথিড্রালের নির্মাণ কাজ ১৮৮০ সাল পর্যন্ত শেষ হয়নি। এইজন্য একে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাথিড্রাল বলা হয়।
১৩. জার্মানরা প্রাসাদ ভালোবাসে
জার্মানি বিশ্বের সবচেয়ে চমৎকার প্রাসাদ রয়েছে। জার্মানিতে ২০,০০০ এরও বেশি প্রাসাদ রয়েছে। তাই আপনি চাইলে জার্মানিতে গিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন এই প্রাসাদগুলি। জার্মানির বিখ্যাত প্রাসাদগুলি হল Neuschwanstein প্রাসাদ, Hohenzollern প্রাসাদ, Schwerin প্রাসাদ, হাইডেলবার্গ প্রাসাদ, ওয়ার্টবার্গ প্রাসাদ, মারবুর্গ প্রাসাদ।
১৪. জার্মানিতে হাজার হাজার অবিস্ফোরিত বোমা রয়েছে
আপনি জানেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ৭০ বছরেরও বেশি সময় পরে, প্রতি বছর ২,০০০ টনেরও বেশি অবিস্ফোরিত বোমা আবিষ্কৃত হয়। এই বোমাগুলি আবিষ্কার করাও কোনও ছোট ব্যাপার নয়।
২০১৩ সালে, পশ্চিম জার্মানির ডর্টমুন্ড শহরে ৪,০০০ পাউন্ডের একটি ব্লকবাস্টার বোমা আবিষ্কৃত হলে, ২০০ এরও বেশি লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে শান্তিতে আছে, কিন্তু তাদের বম্ব স্কোয়াড বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় কারবার।
১৫. জার্মানি প্রথমবারের মত ডেলাইট সেভিংস করে
১৯১৬ সালে জার্মানি প্রথম দেশ হিসেবে ডেলাইট সেভিংস টাইম প্রকল্প গ্রহণ করে। ডেলাইট সেভিংস প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় শুরু হয়েছিল। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, প্রবণতাটি বন্ধ হয়ে যায়। ডেলাইট সেভিংস মানে হলো, সময়কে তথা ঘড়ির কাটাকে ১ ঘন্টা পিছিয়ে দেয়া। যাতে, করে দিনের আলোটা পাওয়া যায়।
১৬. জার্মানির উদ্যাপন ধারা
আধুনিক ক্রিসমাস ট্রি আসলেই জার্মানিতে প্রথম বানানো হয়েছিল। কিন্তু আমরা এখন জানি যে চিরহরিৎ গাছের প্রতীকী ব্যবহার প্রাচীন মিশর এবং রোমে শুরু হয়েছিল। জার্মানি ঐতিহ্য অব্যাহত রেখেছে এবং শীতকালীন সূর্যাস্ত উদ্যাপনের জন্য সাজসজ্জায় নতুন সরঞ্জাম হিসেবে মোমবাতি যুক্ত করেছে।
১৭. জার্মানিতে ৪০০ টিরও বেশি চিড়িয়াখানা রয়েছে
জার্মানিতে ৪১৪টি চিড়িয়াখানা রয়েছে। এর মানে হল যে, জার্মানিতে পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি চিড়িয়াখানা রয়েছে। বার্লিন জুলিশার গার্টেন জার্মানির প্রাচীনতম ও বৃহত্তম চিড়িয়াখানা। এটি বিশ্বের বৃহত্তম প্রাণী সংগ্রহ করে।
বার্লিন চিড়িয়াখানায় ১৯,৫০০ টি প্রাণী এবং ১,৫০০ টি প্রজাতি রয়েছে, যা ৮৪ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত। এটি প্রতি বছর অনেক পর্যটক এইখানে ঘুরতে আসে। চিড়িয়াখানা এবং অ্যাকোয়ারিয়াম দেখতে প্রতি বছর ৩ মিলিয়নেরও বেশি লোক আসে।
জার্মানি ১১.৪ মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি মূল্যের বনের মধ্যে আচ্ছাদিত। যা জার্মানির মোট আয়তনের ৩২% কে কভার করে। আপনি যদি প্রকৃতি প্রেমিক হয়ে থাকেন তাহলে জার্মানি ঘুরে আসতে ভুলবেন না।
পরিশেষে
এই ছিল আমাদের, জার্মানি সম্পর্কে অজানা তথ্য নিয়ে লেখা। আমাদের অজানা তথ্য ক্যটেগিরিতে এরকম আরও চমৎকার লেখা পাবেন। এই লেখাতে আপনার কোন কোন পয়েন্টটি দারুণ লেগেছে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন।