দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলো জানার পর আপনার চোখ কপালে উঠে যেতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে কম স্থূলকায় জনসংখ্যার দেশের মধ্যে একটি দেশ। মানে বিষয়টি হল এই, দেশে স্থূলকায় মানুষ কম, জনসংখ্যার মাত্র ৩% স্থূলতা বলে মনে করা হয়।
এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলির সাথে তুলনা করুন, যেখানে ৬০% এরও বেশি স্থূলতা হিসাবে বিবেচিত হয়। জাপানের পাশাপাশি, দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে কম স্থূলকায় দেশগুলির মধ্যে একটি। উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে অজানা তথ্য লেখাটি আমরা ইতোমধ্যে পাবলিশ করেছি।
লেখার সূচিপত্র
দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে অজানা তথ্য
১. অন্তত ২০ শতাংশ পুরুষ মেকআপ ব্যবহার করেন
আপনি কি ভাবেন? মেকাপ শুধু মেয়েরা ব্যবহার করে! No, বিশ্বব্যাপী পুরুষদের মধ্যে মেকাপ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে! তবে দক্ষিণ কোরিয়ার পুরুষরা মেকআপের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে, সবার থেকে। কমপক্ষে ২০% পুরুষ বলে যে, তারা প্রতিদিনই মেকআপ ব্যবহার করে। প্রতিবছর তারা মেকাপের পিছনে প্রায় ৯০০ মার্কিন ডলার খরচ করে। দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যান্ড বিটিএসকে দেখলেই বোঝার কথা!

২. প্লাস্টিক সার্জারি করা কমন
দক্ষিণ কোরিয়াকে প্লাস্টিক সার্জারির দেশও বলা যায়। এইখানে প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন মানুষ প্লাস্টিক সার্জারি করে। হয়তো, আপনার প্রিয় কোন কে-পপ স্টার প্লাস্টিক সার্জারি করেই যৌবন আর সুন্দর্য ধরে রেখেছে।
৩. কে-পপ দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি
কে-পপ, যা কোরিয়ান পপ নামেও পরিচিত, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্বকে ঝড়ের মুখে ফেলেছে। প্রথমটি ছিল Psy এর হিট “Gangnam Style” এর সাথে, যা ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও!
সাই-এর পর, অসংখ্য কে-পপ ব্যান্ড হিটের পর হিট দিয়েছে। মেয়ে এবং ছেলে ব্যান্ড উভয়ই জনপ্রিয়, এবং তাদের মধ্যে অনেকেই এখন আন্তর্জাতিকভাবে কনসার্ট করার প্রস্তাব পায়। জনপ্রিয় কিছু কে-পপ ব্যান্ডের নাম হলো:
- বিটিএস (ছেলেদের ব্যান্ড ২০১৩ সালে তৈরি হয়)
- ব্লাকপিংক (মেয়েদের ব্যান্ড ২০১৬ সালে তৈরি হয়)
- EXO (ছেলেদের ব্যান্ড ২০১২ সালে তৈরি হয়)
- TWICE (মেয়েদের ব্যান্ড ২০১৫ সালে তৈরি হয়)
- Seventeen (ছেলেদের ব্যান্ড ২০১৫ সালে তৈরি হয়)
- Girls’ Generation (মেয়েদের ব্যান্ড ২০০৭ সালে তৈরি হয়)
- Super Junior (ছেলেদের ব্যান্ড ২০০৫ সালে তৈরি হয়)
৪. দক্ষিণ কোরিয়ায় মানুষ কুকুরের মাংস খায়
দক্ষিণ কোরিয়ায় মানুষ মুরগির মাংস, শুয়োরের মাংস এবং গরুর মাংস খাওয়ার পাশাপাশি কিছু জায়গায়, তারা কুকুরের মাংসও খায়।
৫. কোরিয়ানদের নামগুলো অদ্ভুদ
কিম, লি এবং পার্ক সবচেয়ে কমন কোরিয়ান নাম। দেশটির অন্তত ২০ শতাংশ মানুষের নাম কিম। এছাড়াও লি এবং পার্ক আরও দুটি কমন নাম। অনেকের নামের মধ্যেই এই শব্দগুলো পাবেন। এই যেমন তাদের প্রধানমন্ত্রীর নাম, লি নাক ইয়ন।
৬. নিজস্ব বিউটি ব্রান্ড কে-বিউটি
যেমনটি ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক কোরিয়ান পুরুষ মেকাপ ইউজ করে। এটি মহিলাদের জন্যও সত্য, এবং তারা তাদের সৌন্দর্যের জন্য আলাদাভাবে রুটিন মেইনটেইন করে। তাদের কে-বিউটিতে তাদের নিজস্ব কিছু টেকনিক অনুসরণ করে। যার ফলে, কোরিয়ানদের চেহারা সুরত এত সুন্দর হয়।

এইতো কিছু দিন আগে, ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া, স্নেইল (শামুক) ফেস ম্যাসাজের কথায় ধরুন। তারা, স্নেইল (শামুক) ফেস ম্যাসাজ ব্যবহার করে, কারণ, এতে ত্বক ও চেহারা সুন্দর হয়।
৭. শিশুর নাম রাখে এক্সপার্টদের থেকে পরামর্শ নিয়ে
দক্ষিণ কোরিয়ার 60% পরিবার তাদের বাচ্চাদের জন্য একটি নাম খুঁজে পেতে পেশাদারদের ব্যবহার করে। মানে তারা ডক্টর নার্সের মত নাম রাখার লোকও টাকা দিয়ে হায়ার করে থাকে।
৮. দক্ষিণ কোরিয়ার ভাষা
উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি ভাষার নাম হলো, কোরীয় ভাষা। পৃথিবীতে কোরীয় ভাষার লোক সংখ্যার পরিমাণ ৮ কোটি। কয়েক হাজার বছর আগে কোরীয় ভাাষা হাঞ্জা নামক চীনা অক্ষর লিপি দিয়ে লেখা হত।
কিন্তু পঞ্চদশ শতাব্দিতে কোরীয় রাজা সেজোং হাঙ্গুল্ নামের খুব সহজ বর্ণমালা প্রকাশ করে। আর এই বর্ণমালাই এখন সরকারী বর্ণমালা হিসাবে গৃহীত হয়েছে। অনেকে ভাষাবিদের মত, এই বর্ণমালা বেশ সহজ বর্ণমালা।

৯. কিম জং-উনের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া অবৈধ
উত্তর কোরিয়ার নেতা এমন কেউ নন যাকে আপনার তেল দিয়ে চলতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, আইন অনুযায়ী, তার এবং উত্তর কোরিয়ার শাসকদের প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার কেউ সহানুভূতিশীল হওয়া অবৈধ। এটি করলে আপনাকে জেলেও নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
১০. তারা রাশিয়ানদের চেয়ে দ্বিগুণ অ্যালকোহল পান করে
দক্ষিণ কোরিয়ানদের অ্যালকোহল পান করার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে এবং তারা “জাদুকরী” পানীয় বলে একটি পানীয় পান করে যা সোজু নামে পরিচিত। অবশ্যই, অন্যান্য ধরনের অ্যালকোহলও তারা পান করে, তবে সোজু এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয়।
১১. চেরি ফুল দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়
জাপান তার চেরি ফুলের জন্য বিখ্যাত। দক্ষিণ কোরিয়াতেও বিস্ময়কর এই চেরি ফুলের সমাহার রয়েছে। তাহলে, এখন জাপান থেকে ভিড় কমিয়ে আপনারা চেরি ব্লসম মৌসুমে এইখানে আসুন।

১২. বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলির মধ্যে একটি
এটি বেশ আকর্ষণীয় যে কীভাবে এই দেশটি যুদ্ধ এবং দারিদ্র্য থেকে উত্থিত হয়েছে এবং বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনীতি হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি এখন বিশ্বের ১১ তম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং এশিয়ার চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
- Samsung Electronics (রেভিনিউও 197,6 বিলিয়ন ডলার)
- Hyundai Motor (রেভিনিউও 90.5 বিলিয়ন ডলার)
- LG Electronics (রেভিনিউও 52.5 বিলিয়ন ডলার)
- Kia Motors (রেভিনিউও 50.8 বিলিয়ন ডলার)
১৩. আজব ট্র্যাফিকের দেশ
এখানেই মানুষ ট্র্যাফিকে যখন লাল আলো জ্বলতে দেখে তখন গাড়ির মত, তারাও থেমে যায়। এমনকি যদি এটাও হয় যে, ৫ মিনিট ধরে তারা কোন গাড়ি দেখছেনা, তাও তারা লাল আলো জ্বলাকালীন হাঁটবে না।
১৪. ইউনেস্কোর ১২টি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রয়েছে
দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট ১২টি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট রয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে চ্যাংদেওকগুং প্যালেস কমপ্লেক্স, জেজু ভলকানিক দ্বীপ এবং লাভা টিউবস, কোরিয়ার ঐতিহাসিক গ্রাম: হাহো এবং ইয়াংডং এবং গিয়ংজু ঐতিহাসিক অঞ্চল।
১৫. অপরাধীদের নতুন করে অপরাধ করানো
এটি অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলোর মধ্যে একটি। এখানে, পুলিশ অপরাধীদের ধরার পর তারা যে অপরাধটি করেছিল সেটিকে পুনরায় করতে বাধ্য করে। যাতে করে সাংবাদিকরা ছবি তুলতে এবং ভিডিও তৈরি করতে পারে।
১৬. বার্ষিক কাদা উৎসব হয়

প্রতি গ্রীষ্মে, ১৪ দিন ধরে, বোরিয়ং-এ কাদা উৎসব হয়। উৎসবের শেষ সপ্তাহান্তে সাধারণত জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহান্তে হয় এবং এখানেই বেশিরভাগ লোক উৎসবে অংশ নেয়।
এটি দেশের পশ্চিমা জনগোষ্ঠীর মধ্যে খুব জনপ্রিয়, তবে অনেক স্থানীয় লোকও এতে অংশ নেয়। উৎসবটি এই অঞ্চল থেকে কাদা যুক্ত প্রসাধনী পণ্য বিক্রি করার জন্য একটি বাণিজ্যিক স্টান্ট হিসাবে শুরু হয়েছিল।
১৭. কিমচি
একটি ছবি তোলার সময়, দক্ষিণ কোরিয়ানরা “চিজ” এর পরিবর্তে “কিমচি” বলে। এতে তারা মনে করে যে তাদের ছবি অনেক ভাল আসবে। এছাড়াও তারা বিশ্বাস করে যে আপনার রক্তের ধরণ আপনার ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে সম্পর্কিত।
১৮. ফুড সার্ভিস
বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ বিতরণ সার্ভিস সরবরাহ করে এবং তারা এমনকি আসল প্লেটগুলির সাথে খাবার নিয়ে আসে। মানে তারা ওয়ান টাইম প্লেট ইউজ করে না। আরেকটি মজার বিষয় হল টয়লেট পেপার সাধারণত স্টলের বাইরে রাখা হয়।
১৯. আজব জন্মদিন
বাচ্চাদের জন্মানোর দিনই তাদের এক বছর হয়েছে বলে ধরা হয়। সুতরাং, আপনার কোন বন্ধু বা বান্ধবী যদি একই দিনে আপনার সাথে কোরিয়াতে জন্ম নেয়। তাহলে ধরে নিবেন, সে আপনার থেকে ১ বছরের সিনিয়র।
২০. ৪ সংখ্যা অশুভ নাম্বার
দক্ষিণ কোরিয়াতে যাওয়ার পর, ৪ নাম্বার আপনাকে হারিকেন দিয়ে খুঁজতে হবে। লিফটে উঠার পর ৪ নাম্বার পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ ৪ সংখ্যাকে অশুভ মনে করে। আপনার কোন বাড়ির নাম্বার যদি ৪ হয়, তাহলে সেটা বিক্রি তো দূরে থাক কেউ কিনবে কিনা, সন্দেহ আছে।
পরিশেষে
এই ছিল আজকে, দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে অজানা তথ্য। আমাদের অজানা তথ্য ক্যটেগিরিতে এরকম আরও অজানা তথ্য নিয়ে লেখা আছে, চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।