কোরিয়ার অনেক কিছুই আমাদের অজানা। কোরিয়ার মুলত দুটি ভাগ, উত্তর কোরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়া। আজকে এই লিখায় উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে অজানা তথ্য নিয়ে কিছু তথ্য আলোচনা করা হবে।
প্রতিটি তথ্য বিভিন্ন পত্রিকা সহ, কোরিয়ার বিভিন্ন বই ও ব্লগ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি তথ্য এত বেশী চমকপ্রদ, মাঝে মাঝে আপনার বিশ্বাস করতেও কষ্ট হবে। যেমন: জাপান সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলো জানার পর হয়েছিল।
উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
১. তাদের বিশ্বাস কোরিয়া একটি একক দেশ
উত্তর কোরিয়ানরা নিশ্চিত যে শুধুমাত্র একটি কোরিয়া আছে: তা হল উওর কোরিয়া, যে কোনও স্কুলের মানচিত্রে পিয়ংইয়ংয়ের রাজধানী সহ দক্ষিন কোরিয়া এবং উত্তর কোরিয়াকে একক দেশ হিসাবেই দেখানো হয়।
২. তারা আমেরিকানদের “বড় নাক” বলে অভিহিত করে।
উত্তর কোরিয়ানরা বিশ্বাস করে যে সমস্ত আমেরিকানদের বড় নাক, বিশাল চোখ এবং লোমশ বুক রয়েছে। ডিফেক্টরদের অ্যাকাউন্ট অনুযায়ী, তাদের স্কুল পিই ক্লাসে আমেরিকান সৈন্যদের হত্যা করতে শেখানো হয়। এর জন্য, তারা কার্ডবোর্ড ম্যানেকুইনগুলি ব্যবহার করে। যা সামরিক ইউনিফর্মের লোকদের মতো দেখায়, দৈত্যাকার নাক এবং প্রশস্ত-খোলা নীল চোখ সহ।

৩. উত্তর কোরিয়া কমিউনিস্ট নয়
সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, উত্তর কোরিয়া মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মতবাদ অনুসরণ করে। প্রকৃতপক্ষে, এটি ৫০-এর দশকে কমিউনিস্ট মতাদর্শকে ছেড়ে দিয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার ঐতিহাসিকদের মতে, মার্কস ও লেনিনের শিক্ষার ধারাবাহিকতায় ১৯২৬ সালের গোড়ার দিকে এই ধারণার উদ্ভব ঘটে।
সময়ের সাথে সাথে, কমিউনিজমের ধারণা উত্তর কোরিয়ার সংবিধান থেকে মুছে ফেলা হয়। ২০০৯ সালে গৃহীত এর শেষ সংস্করণে, এটি সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়।
৪. উত্তর কোরিয়ার কোনো ট্যাক্স নেই
বিশ্বের যে কয়টি দেশের বাসিন্দারা কোনো ট্যাক্স দেয় না, উত্তর কোরিয়া তার মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৪ সালে “পুরানো বিশ্বের” অংশ হিসাবে কর বাতিল করা হয়েছিল। শুধুমাত্র দেশের বাইরে অর্থ উপার্জনকারী সংস্থা এবং ব্যক্তিদের এটি থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না।
যাইহোক, সবকিছু শীঘ্রই পরিবর্তন হতে পারে: তবে এটি গুজব হিসেবে রচিত যে সরকার অদূর ভবিষ্যতে আয়কর পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করছে।
৫. আমেরিকান মুভি না বুঝেই দেখে
এই টা সত্যি যে, এইখানের মানুষরা হলিউডের মুভি দেখে না বুঝেই, যেমন: তারা যে টাইটানিক মুভি দেখে তা কিন্তু না বুঝেই দেখে, তারা জানে না এটা কি বুঝায় আর কোথায় এর শুটিং হয়েছে কি প্রেক্ষাপটে এই মুভি তৈরি হয়েছে। কারণ, তাদের এখানে অনেক কিছুই নিষিদ্ধ। কি দেখানো হবে কিংবা কি দেখবে সব নির্ধারণ করে সরকার।
৬. প্রধান সামুদ্রিক খাবার রপ্তানিকারক দেশ
উত্তর কোরিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হল, তার প্রতিবেশী চীন এবং এটি দেশের রপ্তানির প্রায় ৬০% পণ্য নিয়ে থাকে। প্রধান রপ্তানিকৃত আইটেমগুলির মধ্যে একটি হল মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক খাবার, যা বিদেশে বিক্রি হওয়া সমস্ত পণ্যগুলির এক চতুর্থাংশ তৈরি করে। এছাড়াও, উত্তর কোরিয়া মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানিকারী শীর্ষ ২০ টি দেশের মধ্যে রয়েছে।
৭. উত্তর কোরিয়ার প্রধান একজন মৃত ব্যক্তি
উত্তর কোরিয়াই বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্র, যেখানে এক অনন্য ধরনের শাসন ব্যবস্থা রয়েছে: নেক্রোক্রেসি। এর কারণ হলো, কিম ইল-সাংকে মরণোত্তর ডিপিআরকে’র শাশ্বত নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বাস্তবে, এর মানে হল যে উত্তর কোরিয়ার বর্তমান নেতা, কিম জং-উন, ডিপিআরকের সর্বোচ্চ নেতা, সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার এবং ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যানের উপাধি বহন করেন, তবে তিনি রাষ্ট্রপতির মর্যাদা রাখেন না। তবে, মারা যাওয়ার পর ও উনি নেতা থাকবেন।
৮. তাদের ক্যালেন্ডার কিম ইল-সুং এর জন্ম তারিখ থেকে

আমরা হয়তো ২০২২ সালে বাস করছি, কিন্তু উত্তর কোরিয়ার লোকেদের জন্য এটি এখনও ১১১ তম জুচে বছর। উত্তর কোরিয়ার জুচে ক্যালেন্ডার শুরু হয় ১৫ এপ্রিল, ১৯১২ সাল থেকে। মূলত, কিম ইল-সুং এর জন্ম তারিখ থেকে গণনা করা হয়।
৯. মাত্র ৩টি টিভি চ্যানেল
আমাদের দেশেতো কতটি টিভি চ্যানেল আছে তার কোন হিসাব নেই। কিন্তু উত্তর কোরিয়াতে কিন্তু মাত্র ৩টি টিভি চ্যানেল। আর কখন কি অনুষ্টান দেখাবে, সেটাও সরকার নির্ধারণ করে দিবে। মানে বুঝতাছেন, সরকার যদি চায়, সারাক্ষন হিরো আলমের জ্ঞান চলবে! তাহলে, টিভিতে আপনাকে হিরো আলমের জ্ঞানই শুনতে হবে।
১০. ২৮টি স্টাইলে চুল কাটতে পারবেন
আপনি যদি সেলুনে চুল কাটতে যান কিংবা নিজেই কাটতে চান তাহলে, কোরিয়ার সরকারের অনুমোদন করা ২৮টি স্টাইলের যেকোন ১টি স্টাইলে কাটতে হবে।

১১. ২৮টি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে পারবেন
উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো, তারা মাত্র ২৮টি ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারে। যেগুলো সরকার কতৃক নির্ধারিত। শুধু তাই নয়, সে দেশে কম্পিউটার অনেক ব্যয়বহুল। কোন কম্পিউটার কিনতে হলে আপনাকে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।
১২. কর্মচারীদের গড় বেতন ৫ ডলার
রেডিও, ইন্টারনেট এবং টেলিভিশনের চ্যানেল যে শুধু সীমিত এমন নয়। সাধারণ উত্তর কোরিয়ানদের জীবনযাত্রা আরও বেশী কঠিন। প্রতি মাসে ৫ ডলারেরও কম বেতন পায় সে দেশের কর্মচারীরা। তাই, দেশের নাগরিকরা অপুষ্টির শিকার এবং সুষম খাদ্য থেকে বঞ্চিত। বাধ্যতামূলক ছয় দিন কাজ করার পাশাপাশি শ্রমিকদের সপ্তম দিন স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করতে হয়।
১৩. সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়া বাধ্যতামূলক
যদিও অনেক দেশ বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে, উত্তর কোরিয়ার মতো দীর্ঘ নয়। আগে, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষদের অবশ্যই ১৩ বছর পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হবে। তবে, ২০০৩ এর পরে এটা ১০ বছর করা হয়। ২০১৫ সালে, সরকার একটি মেমো প্রকাশ করেছে যে, উত্তর কোরিয়ার মহিলারা স্নাতক পাশ করার পরে, তাদের অবশ্যই ২৩ বছর না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করতে হবে।
১৪. রাজধানীতে থাকতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হয়
রাজধানীতে থাকতে হলে, অবশ্যই সরকারের অনুমতি নিতে হবে। আসলে, বুঝতেই পারছেন, উত্তর কোরিয়াতে একদম, চুল কাটা থেকে শুরু করে বসবাস সব কিছুই সরকার নিয়ন্ত্রন করে।
১৫. মানুষের পায়খানা সার হিসাবে ব্যবহার করা হয়
২০০৮ সালে দক্ষিন কোরিয়া যখন সার রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। তখন উত্তর কোরিয়া সার সংকটে ভুগতে থাকে। আর তখন নিয়ম করে, মানুষের পায়খানাগুলো যেন অথরিটিকে দিয়ে দেয়া হয়, তারা সেগুলোকে সার হিসাবে তৈরি করে দিবে।
পরিশেষে
এই ছিল আজকে, উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে অজানা তথ্য। আশা করি, প্রতিটি তথ্য আপনাদের বিষ্ময়ের সৃষ্টি করেছে। আমাদের অজানা তথ্য ক্যটেগিরিতে এরকম আরও চমৎকার লেখা পাবেন।