ল্যাপটপ কি এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেরই জানা। কিন্তু ঝামেলা বাদে কম্পিউটার কিনতে গেলে। ডেস্কটপ কিনবো নাকি ল্যাপটপ। ল্যাপটপ দিয়ে কি কি কাজ করা যায়? আমার কাজের জন্য ল্যাপটপ কেনা কি পারফেক্ট হবে!
এখনকার সময়ে ল্যাপটপের ব্যবহার অহরহ। নিত্যকার ব্যবহার্য এই যন্ত্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো পোর্টেবিলিটি। যেটা তাকে ডেস্কটপ থেকে এগিয়ে রাখে কয়েক গুণ। কোভিডের কারণে অনলাইন নির্ভর এই জীবনে স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে অধিকাংশ পেশার মানুষদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হয়ে উঠেছে ল্যাপটপ।
জনপ্রিয় এই ডিভাইস সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই জ্ঞাত। তবুও করোনাকালিন এই সময়ে প্রযুক্তির জিনিসগুলোর সাথে অনেক মানুষই নতুনভাবে পরিচিত হতে শুরু করেছেন। ল্যাপটপ সম্পর্কে একেবারে অজানা, অল্প জানা কিংবা নতুন করে জানতে চাওয়া যে কারোর জন্যই এই আর্টিকেল।
যেটা পড়ে আপনি জানতে পারবেন ল্যাপটপ কি, ল্যাপটপ আবিষ্কারের ইতিহাস, এর ব্যবহার এবং সুবিধা-অসুবিধা, ল্যাপটপ দিয়ে কি কি কাজ করা যায় সবকিছু সম্পর্কে।
লেখার সূচিপত্র
ল্যাপটপ কি?
“ল্যাপটপ” এই শব্দটির অর্থগত বাংলা বিশ্লেষণ দাঁড়ায় এমন, ”কোলের উপর”। মানে নিজের কোলের উপর রেখে কাজ করা বলতে এটা ইঙ্গিত করা হয়েছে, যে কাজের সুবিধার্থে আপনি আপনার এই ল্যাপটপ আপনার ইচ্ছেমত যেকোন স্থানে নিয়ে যেতে পারবেন। মূলত ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি স্থানে বসে কাজ করার অসুবিধা থেকে বের হয়ে আসতেই ল্যাপটপের আবিষ্কার।
সরাসরি ল্যাপটপের সংজ্ঞা দিতে গেলে আমরা বলতে পারি, ল্যাপটপ হলো এসি পাওয়ারে চালিত এবং সহজে বহনযোগ্য একটি ব্যক্তিগত ছোট কম্পিউটার যেটার স্পেশালিটিই হলো তার পোর্টেবলিটি। মোটকথা ডেস্কটপ কম্পিউটারের একটি বিকশিত ছোট আকারের রূপ হলো ল্যাপটপ যেখানে আপনি কম্পিউটারে করা সবধরনের কাজই করতে পারছেন।
ল্যাপটপকে “নোটবুক” বলেও সম্বোধন করা হয়। LAPTOP শব্দটির পূর্ন রুপ হচ্ছে Lightweight Analytical Platform with Total Optimized Power.
ল্যাপটপের যন্ত্রাংশ
মনিটর স্ক্রিন এবং কীবোর্ড এ্যাডজাস্টমেন্ট করেই ল্যাপটপের বডি স্ট্রাকচার তৈরি করা হয়। বাদবাকি হ্যার্ডওয়্যার, সিস্টেম, পোগ্রাম, ইনপুট -আউটপুট ডিভাইস সব কিছুই অনেকটা ডেস্কটপ কম্পিউটারেরর মত। যেমন,
- সিপিইউ
- ডিসপ্লে
- কীবোর্ড
- ট্যাচপ্যাড
- ইন্টারনাল স্টোরেজ
- মেমোরি
- মাদারবোর্ড
- ব্যাটারি এন্ড পাওয়ার সাপ্লাই
- কুলিং ফ্যান
- ইনপুট আইটপুট পোর্ট
- ফ্রন্ট ক্যামেরা, ইত্যাদি।
ল্যাপটপ আবিষ্কারের ইতিহাস
ল্যাপটপ যন্ত্রটার সাথে তো পরিচয় হলো, এবার জানি এই পার্সোনাল মিনি কম্পিউটারটির আবিষ্কারের ইতিহাস। ল্যাপটপ হলো কম্পিউটার জগতের তৃতীয় প্রজন্মের আবিষ্কার। ল্যাপটপ হুট করেই তৈরি হয়ে যায়নি।
বর্তমানে আমরা যেসব ল্যাপটপ দেখি সেগুলো প্রথম আবিষ্কারের পর থেকে এখনকার সময়ে এসে আকার, আকৃতি সুবিধা অসুবিধা সবকিছু পরিবর্তন হতে থাকা একটি পরিবর্তিত বিকশিত রূপ। ল্যাপটপ নামের ছোট এই নোটবুক আবিষ্কারের প্রস্তুতি পর্যায়ের সাল ছিলো
১৯৭০, এ্যালান কী ১৯৬৮ সালে সর্বপ্রথম ল্যাপটপের কল্পনা করেছিলেন এবং ১৯৭২ সালে অনেকটা লিখিত রুপে পেশ করেছেন। প্রথম আবিষ্কৃত ল্যাপটপটি হচ্ছে আইবিএম৫১০০, যখন সাল১৯৭৫। তখন থেকে আন অফিশিয়ালি ল্যাপটপের পথ চলা। অফিশিয়ালি ১৯৮১ সালে এপসন সর্বপ্রথম ল্যাপটপ আবিষ্কার করে Osborne-1 নামে।
ল্যাপটপ দিয়ে কি কি কাজ করা যায়
একটি ডেস্কটপ কম্পিউটারে যত ধরনের কাজ করা যায় ল্যাপটপ কম্পিউটারেও তাই করা যায়।ল্যাপটপের সাহায্য আমরা নানা ধরনের কাজ করতে পারি ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা থাকলে এই কাজের পরিধি হয় বিস্তৃত। উল্লেখ্যযোগ্য কাজগুলো হচ্ছে,
১. কম্পিউটার বেসিক স্কিল
কম্পিউটার বেসিক অ্যাপ্লিকেশনের উপর দক্ষতা রাখা প্রতিটি টেকনোলোজি সচেতন মানুষের জন্য জরুরি। এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট এসব দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে আপনি সাবলীলভাবে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারবেন। মাইক্রোসফট অফিসের পাশাপাশি গুগলেরও অফিস অ্যাপ্লিকেশন সুবিধা আছে, গুগল মামার অফিস অ্যাপ্লিকেশন এই লেখাটি পড়লে জানতে পারবেন।
২. বিনোদন ক্ষেত্রে
সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গেমিং ছাড়াও ইউটিউব ভিডিও, মুভি, ওয়েব সিরিজ ইত্যাদি উপভোগের ক্ষেত্রে ল্যাপটপই হতে পারে আপনার উত্তম চয়েজ। যদি কম্পিউটার কেনার মূল উদ্দেশ্য থাকে বিনোদোন। তাহলে, ল্যাপটপের বিকল্প কিছু নেই।
৩. ডাটা এন্ট্রি
এন্ড্রয়েড ফোনে ডাটা এন্ট্রির কাজ শিখা কিংবা করা গেলেও প্রফেশনাল কাজ থেকে শুরু করে অনলাইন ডাটা এন্ট্রির কাজ ভালোভাবে করতে চাইলে আপনাকে ল্যাপটপের সরনাপন্ন হতেই হবে। এ ক্ষেত্রে ল্যাপটপ সেরা।
৪. ফ্রিল্যান্সিং
আপনি যদি একজন দক্ষ ফ্রিলান্সার হতে চান আপনার জন্য ল্যাপটপ হচ্ছে আবশ্যক টাইপের ডিভাইস। কারন দীর্ঘক্ষণ অনলাইনে কাজ করার জন্য একজায়গায় ডেস্কটপে সারাক্ষণ বসে কাজ করাটা বোরিং এবং কঠিন বটে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সব ধরনের কাজে ল্যাপটপের ব্যববহার অনেক বেশি। কিভাবে ওয়েবসাইট থেকে আয় করা হয়।
৫. অনলাইন ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট
করোনাকালিন লকডাউনের সমগুলোতে ল্যাপটপ ক্রয় এবং ব্যবহার অনেক বেড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষাদানের বিষয়টি হয়ে গেছে অনলাইন ভিত্তিক। অনলাইনন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, সব ক্ষেত্রেই ল্যাপটপের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।
৬. সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার
ল্যাপটপে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রাম, ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
৭. অডিও ভিডিও কল
এখনকার সময়ে অনলাইন এ্যাপগুলোতে ভিডিও কল ব্যবহার করে আপনি সবসময় চাইলেই যোগাযোগ করতে পারেন সবার সাথে। বাসে বসে আছেন হুট করে মনে হলো স্কাইপে মিটিং করা জরুরি, মুহূর্তেই ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করে কাজ সেরে নিতে পারবেন।
ভাইবার,স্কাইপি, মেসেঞ্জার কল সবক্ষেত্রেই আপনি ভিডিও আর অডিও কলে কথা বলে নিতে পারবেন নির্দিষ্ট ইন্টারনেট বিল দিয়েই। ইমু সফটওয়্যার কিভাবে ব্যবহার করবেন?
৮. গেইমিং
ল্যাপটপকে অনেকে গেমিং এর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করে থাকেন। পাবজি, ফোর্টনাইট, ফ্রী ফায়ার, এই ধরনের হাই কোয়ালিটির গেম খেলতে পারবেন অনায়াসেই। ফ্রি ফায়ার রেডিম কোড আজকের আপডেট।
৯. অনলাইন আয়
কন্টেন্ট রাইটিং, ফ্রিল্যান্সিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং, অনলাইন মার্কেটিং, ইউটিউব ইনকাম এই জাতীয় সব কাজ করে আপনি অনলাইনে টাকা আয় করতে পারবেন আর এসব কাজ আপনি ল্যাপটপ দিয়ে করতে পারবেন চমৎকারভাবে। ইউটিউবে কী কী বিষয়ে ভিডিও তৈরী করলে ভালো হবে?
১০. অনলাইন সেবা
সরকারি বেসরকারি সব ধরনের অনলাইন সেবা গ্রহণ করতে ল্যাপটপের ব্যবহার সুবিধাজনক। এই উল্লেখ্য কাজগুলো ছাড়াও ল্যাপটপের সাহায্যে আপনি অন্যান্য অনেক কাজ করতে পারবেন।
১১. গ্রাফিক্স ডিজাইন
বর্তমানে প্রযুক্তিক দক্ষতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হচ্ছে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং। গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ ঠিকভাবে করতে জানলে এটি হতে পারে আপনার আয়েরও মাধ্যম। আর ল্যাপটপে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনের সব কাজ করতে পারবেন সহজেই। আশা করি ল্যাপটপ দিয়ে কি কি কাজ করা যায় এর উত্তর পেয়ে গিয়েছেন। আরেকটা কথা যদি ভিডিও এডিটিং শিখতে চান তাহলে অবশ্যই ভাল এডিটিংয়ের ল্যাপটপ কিনতে হবে। সেটা best laptop for video editing in Bd এখানে বিস্তারিত পাবেন।
ল্যাপটপের সুবিধা
ছোট আকার: ডেস্কটপ কম্পিউটারের আলাদা আলাদা যন্ত্রাংশ থাকায় এটা খুবই বৃহৎ পরিসর জুড়ে থাকে। তাই এটি হ্যান্ডেল করা কষ্টসাধ্য। কিন্তু ল্যাপটপ হলো মিনি কম্পিউটার যা স্থানান্তর, বহন, হ্যান্ডেলিং সব ক্ষেত্রে সুবিধা।
পোর্টেবিলিটি: ল্যাপটপের সবচেয়ে প্রধান সুবিধা হলো এর পোর্টেবিলিটি বা বহনযোগ্যতা। ল্যাপটপের আবিষ্কারই হয়েছে এই গুণের জন্য যে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে কাজ করার বিরক্তি থেকে বাঁচা এবং যখন যেখানে সুবিধা সেখান থেকে কাজ করা। ল্যাপটপ আপনাকে সেই বহনযোগ্য সুবিধাটুকু দিচ্ছে।
চার্জ ব্যাকআপ: ডেপস্কটপে কাজ করছেন হুট করে বিদ্যুৎ চলে গেলো কিন্তু যে ফাইলে কাজ করছেন সেটা সেভ করা হয়নি, ব্যাস সেটা আর পাবেন না। কিন্তু ল্যাপটপ যেহেতু ব্যাটারি চালিত তাতে এমন কোন সমস্যা নেই।
বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়: ল্যাপটপ ইউজ করতে সবসময় বিদ্যুৎ সংযোগ করতে হয় না বলে বিদ্যুৎ বিলের সাশ্রয় হয়। যদিও চার্জের জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। তবে সেটা ডেস্কটপের তুলনায় কম।
শব্দহীন ব্যবহার: আমরা যখন ডেস্কটপ কম্পিউটারের সিপিইউ চালু করি তখন এতে একধরনের শো শো শব্দ হয় যেটা ভেতরকার মাদারবোর্ডের গরম হওয়া থেকে বাঁচাতে লাগানো কুলিং ফ্যান থেকে আসে যা বিরক্তিকর। কিন্তু ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় এমন শব্দ হয় না। তাই শব্দহীন ভাবে কাজ করা যায়।
কিছু ইনপুট আউটপুট ডিভাইস সুবিধা: ল্যাপটপ হলো “অল ইন ওয়ান ” টাইপ ছোট নোটবুক। ডেস্কটপ কমম্পিউটারে যেখানে কীবোর্ড, সাউন্ডবক্স, সিপিইউ, মাউস, ক্যামেরা, নানা ধরনের যন্ত্রাংশ আলাদা আলাদা সেখানে ল্যাপটপে কীবোর্ড এ্যাটাচ মনিটর, টাচপ্যাড থাকায় বাড়তি অনেক ধরনের ইনপুট আউটপুট ডিভাইস কেনা থেকে বাঁচা যায়।
পৃথিবীতে প্রত্যেক জিনিসের সুবিধা অসুবিধা দুটো দিকই থাকে তেমনি ল্যাপটপের অনেক সুবিধার পাশাপাশি এক আধটু অসুবিধাও আছে।
ল্যাপটপের অসুবিধা
কার্যক্ষমতা: ডেস্কটপের তুলনায় ল্যাপটপের কর্মক্ষমতা কিছুটা কম। অনেক বেশি ডাটা সংক্রান্ত কোন ফাইল নিয়ে কাজ করতে গেলে, তিন চারটার বেশি ট্যাব একসাথে ব্রাউজিং করতে গেলে ল্যাপটপ হ্যাং করে মাঝে মাঝে। তাই যারা ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স বা বড় ধরণের কাজ করতে চান তাদের হাই বাজেটের ল্যাপটপ কিনতে হবে। তা না হলে ডেস্কটপ।
পোর্টেবিলিটির অসুবিধা: পোর্টবিলিটি যেমন ল্যাপটপের সবচেয়ে বড় সুবিধা তেমনি অসুবিধাও বটে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বার বার বহন করা হয় বলে দেখা যায় এটার উপর প্রেশার পড়ে এবং নানানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এটার স্থায়িত্ব কমে যায়।
স্টোরেজ এর স্বল্পতা: ডেস্কটপের তুলানায় ল্যাপটপের স্টোরেজ স্বল্প। সেক্ষেত্রে অডিও, ভিডিও, মুভি, ফাইল, ইত্যাদি সেভ রাখার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থেকে যায়। অনেক ক্ষেত্রে র্যামও কম থাকে। রেমের আলাদা স্লট থাকলে লাগিয়ে নিতে হয়।
ব্যাটারি ড্যামেজ: ল্যাপটপ ব্যাটারি চালিত, অধিকাংশ সময় ল্যাপটপ ড্যামেজের কারণে ল্যাপটপ ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে।
এই দুই একটি অসুবিধা এড়িয়ে চলতে পারলে ল্যাপটপ আসলেই একটি “অল ইন ওয়ান” ডিভাইস। আপনার প্রয়োজনীয় সব কাজ আপনি করতে পারবেন এই ল্যাপটপ দিয়ে।
উপসংহার
এই ছিল আজকে ল্যাপটপ কি এবং ল্যাপটপ দিয়ে কি কি কাজ করা যায়। ল্যাপটপ নিয়ে কৌতূহল নিয়ে যদি এই লেখাটি পড়ে থাকেন তাহলে আমি আশা করছি আপনি আপনার সব উত্তর পেয়েছেন এই আর্টিকেলে।