চীন জনবহুল একটি দেশ এবং বিশ্বের বৃহত্তম দেশগুলির মধ্যে একটি। চীন সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলো জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। দেশটি এতটাই বৈচিত্র্যময় যে, আপনি এর ইতিহাস পর্যালোচনা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন; কিন্তু তা ও তা শেষ হবেনা।
আজকে আমরা চীন সম্পর্কে অজানা তথ্যগুলো জানবো। প্রত্যেকটি তথ্য জানার পর, মনে হবে আরে এই বিষয়টাতো জানতাম না।
লেখার সূচিপত্র
চীন সম্পর্কে অজানা তথ্য
১. চাইনিজ বর্ষবরণ
আপনি জানেন, চীনে বর্ষবরণের উৎসব ১৫ দিন ধরে উদ্যাপিত হয়, এতটাই বর্ণিল তাদের সংস্কৃতি। এখানে বর্ষবরণ বড়দিনের থেকেও বেশি জনপ্রিয়, অনেক জায়গা থেকে মানুষ এইখানে আসে তাদের বর্ষবরণে অংশ নেওয়ার জন্য। চাইনিজ বর্ষবরণের আরও মজার কিছু ফ্যাক্ট:
- প্রত্যেকটি বর্ষবরণে তারা প্রতীক হিসেবে প্রাণী নির্বাচন করে। তারা মোট ১২ টি প্রাণী সিলেক্ট করে রেখেছে যেমন: ইঁদুর, অক্স, বাঘ, খরগোশ, ড্রাগন, সাপ, ঘোড়া, ছাগল, বানর, মোরগ, কুকুর এবং শূকর। ২০২২ সালটি বাঘের প্রতিনিধিত্ব করার বছর। এখানে কিছু চীনা নববর্ষের ঐতিহ্য রয়েছে!, বছর ঘুরে এই ১২ টি প্রাণী থেকে কাঙ্ক্ষিত একটি প্রাণী প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সিলেক্ট করা হয়।
- Guo Nian Hao অর্থ হলো শুভ নববর্ষ।
- এই দিন বাচ্চাদেরকে লাল খামে টাকা উপহার দেওয়া হয়।
- নববর্ষের আগে তারা ঘর পরিষ্কার করে। কারণ, তারা মনে করে, এতে তাদের ঘর থেকে খারাপ ভাগ্য দূর হয়ে যায়।
- এই দিন, সিংহ ও ড্রাগনের নিত্য খুব জনপ্রিয়।
- রাতের বেলা আতশবাজি হয়।
- এটাকে Spring Festival হিসাবেও ডাকা হয়।
- চীনা এ উৎসবে লোকেরা ড্রাগন ডিজাইনের নৌকাতে রেস করে।
২. বেইলং এলিভেটর
এই এলিভেটর ৩০০ মিটার উপর থেকে ভিজিটর বহন করে, যা এক কথায় অবিশ্বাস্য এবং রোমাঞ্চকর। আপনাকে অবশ্যই চীন ঘুরতে গেলে, এই এলিভেটরে চড়ার জন্য সাজেস্ট করা হল। এই লিফটটি বিশ্বের সবচেয়ে ভারী লিফট।
৩. আজব আইসক্রিম
আমরা সাধারণত ভ্যানিলা,স্ট্রবেরি, আম,চকলেট এই সব ফ্লেভারের আইসক্রিম পাই, কিন্তু চীনে আপনি গ্রিন বিন ফ্লেভারের আইসক্রিম পাবেন, যা আসলেই আজব।
৪. নিষিদ্ধ নগরী
চীনে একটি প্যালেসকে নিষিদ্ধ নগরী বলে অভিহিত করা হয়, এই প্যালেসে প্রায় ৯,০০০ টি কক্ষ রয়েছে। এটি ইউনেস্কোর একটি সাইট এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম এবং প্রাচীনতম রাজকীয় প্রাসাদগুলির মধ্যে একটি।
৫. চীন একটি বহু-ধর্মীয় দেশ
এর বিশাল জনসংখ্যার কারণে, এইখানে বিশ্বের অনেক ধর্ম মেনে চলা হয়। যাইহোক, বেশিরভাগ চীনারা সাধারণত তাওবাদ, কনফুসীয়বাদ এবং বৌদ্ধধর্ম অনুশীলন করে।
৬. টাইম জোন
অনেক বড় দেশ হওয়ার সত্ত্বেও , চীন আশ্চর্যজনকভাবে শুধু একটি টাইমজোন ফলো করে। সবাই বেইজিংয়ের সরকারি সময়কে ব্যবহার করে থাকে।
৭. ৪ মানে মৃত্যু
চীনারা “৪” সংখ্যাটি ব্যবহার করা বা উল্লেখ করা এড়িয়ে চলে। কারণ, তারা মনে করে এটি মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত।
৮. ফুটবলের জন্মদাতা
না, ফুটবল (সকার) ইউরোপে উদ্ভাবিত হয়নি। ২,২০০ বছর আগে চীনে এই খেলা সম্পর্কে প্রথম রেকর্ড করা তথ্য ছিল। প্রাচীন চীনারা চামড়ার তৈরি বিশ্বের প্রথম ফুটবল বল তৈরি করেছিল। বলটি পালক এবং চুলে ভরা ছিল এবং খেলাটি ‘সু’ চু নামে পরিচিত ছিল, যার অর্থ ‘লাথি মারার বল’।
৯. চপস্টিকের ব্যবহার
আমরা সকলেই জানি চপস্টিক দিয়ে চাইনিজরা খাবার খায়। কিন্তু কেন এই চপস্টিক? চীনের দার্শনিক, কনফুসিয়াসের মাধ্যমে এই চপস্টিকের সূচনা। তিনি ছিলেন একজন, নিরামিষভোজী।
তিনি বিশ্বাস করতেন, খাবার টেবিলে স্টিল বা লোহার চামচ বা এই জাতীয় কিছু রাখলে, ভোজন কারীকে কসাই তথা প্রাণী হত্যার কথা মনে করিয়ে দেবে। তিনি আরও ভাবতেন, ছুরি সহিংসতা এবং যুদ্ধের উদ্রেক করে! তাই, তিনি সবসময় চপস্টিক দিয়ে খাবার রান্না করতেন ও খেতেন।
১০. রক্তের আবিষ্কার
১৬২৮ সালে ইউরোপীয় বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্ভে ঘোষণা করেন ২,০০০ বছর আগে প্রাচীন চীনা চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রক্ত আবিষ্কার করেছিল।
১১. আইসক্রিমের জন্মদাতা
প্রায় ৪,০০০ বছর আগে চীনে আইসক্রিম আবিষ্কৃত হয়েছিল। চীনারা তখন দুধ, চালের মিশ্রণ এবং বরফকে একত্রিত করে সুস্বাদু মিষ্টান্ন তৈরি করেছিল।
১২. আকাশচুম্বী ভবন
চীন প্রতি পাঁচ দিনে একটি নতুন আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণ করে। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই, যারা চীনের মতো দ্রুত বর্ধনশীল। গত এক বছরে চীন কমপক্ষে ৭৩টি নতুন আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণ করেছে।
১২. একই খাবার দ্বিতীয়বার খায় না
চীনে একই খাবার দুইবার খান না। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে তাদের নিজস্ব খাবার, স্বতন্ত্র স্বাদ এবং রন্ধনপ্রণালি রয়েছে। উপরন্তু, চীনা খাবার প্রায় সবসময় তাজা পরিবেশন করা হয়।
১৩. লাল বিয়ের পোশাক
চীনা নববধূরা সাদার পরিবর্তে লাল পোশাক পরেন। চীনে লাল রংকে একটি ভাগ্যবান রং হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৪. কেচাআপ
কেচআপ একটি আমেরিকান মশলা হিসেবে পরিচিত, তবে এর উৎপত্তি আমেরিকায় নয়। কেচআপ এসেছে হোক্কিয়েন চাইনিজ শব্দ “kê-tsiap” থেকে, যা ফার্মেন্টেড মাছ থেকে উদ্ভূত একটি সসের নাম।
১৫. বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়
চীনে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। গত বুধবার, ২রা সেপ্টেম্বর প্রকাশিত টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র র্যাংকিং-এ, ৭টি চীনা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের শীর্ষ ২০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হল সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়, ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়, চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়, সাংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয় এবং নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়।
১৬. পাণ্ডার দেশ
সমগ্র বিশ্বে বসবাসকারী প্রতিটি পান্ডা চীনের অন্তর্গত। দু’জন ছাড়া! বিশ্বের একমাত্র দুটি পান্ডা যারা চীনের অন্তর্গত নয়, তারা মেক্সিকোর মেক্সিকো সিটির চ্যাপলটেপেক চিড়িয়াখানায় বাস করে। মেক্সিকান পান্ডাদের নাম জিন জিন এবং শুয়ান শুয়ান, কিন্তু তারা চীনের অন্তর্গত নয়।
১৭. গুহায় পাখির বাসা
চীনা মোনাল পাখিরা মাঝে মাঝে গুহায় বাসা বাঁধে।
১৮. বহুভাষী দেশ
ম্যান্ডারিন চীনের একমাত্র ভাষা নয়। ইউ, উ, মিনবেই, মিন্নান, জিয়াং, গান এবং হাক্কার মতো আরও অনেক ভাষা আছে। চীনের কিছু অঞ্চলের নিজস্ব উপভাষাও রয়েছে।
১৯. নারকেল সংস্কৃতি
চীনকে নারকেল সংস্কৃতির দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চাইনিজদের দেখলে মনে হয় তারা খুব রুড আর কঠিন স্বভাবের মানুষ কিন্তু না তারা ভেতর থেকে খুবি অতিথিপরায়ণ এবং জলি।
২০. পুরনো সুপের পাত্র
২০১০ সালে চীনের জিয়ানে ২,৪০০ বছরের পুরনো একটি স্যুপের পাত্র আবিষ্কৃত হয়।
২১. একত্রে বসবাস
এক বাড়িতে বসবাসকারী পরিবারের সদস্যরা চীনা সাফল্যের প্রতিফলন। চীনে প্রবীণরা অত্যন্ত সম্মানিত। তরুণ প্রজন্মও তাদের বৃদ্ধ পরিবারের সদস্যদের নিয়মিত যত্ন নেয় । এমনকি তাদের একটি বয়স্ক অধিকার আইন আছে!
২২. যুদ্ধের ইতিহাস
চীনের বেশির ভাগ মানুষই মনে করে নিজ দেশে সংঘটিত যুদ্ধের কথা। ইতিহাস তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে গভীরভাবে সন্নিবেশিত যে এমনকি তাদের জেনারেল জেড ও চীনা ইতিহাস খুব ভালোভাবে জানে।
২৩. দীর্ঘ রেললাইন
আপনি যদি চীনের সমস্ত রেল লাইনকে একত্র করেন তাহলে আপনি দুই বার পুরো বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারবেন।
২৪. আঠালো চালের মর্টার
গ্রেট ওয়ালের পাথরগুলি বাঁধতে ব্যবহৃত মর্টারটি আঠালো চাল দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
২৫. ইউনেস্কোর সাইট
ইতালিসহ চীনেও ইউনেস্কোর সাইট বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। চীনের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা ইউনেস্কো সাইটগুলির মধ্যে রয়েছে: বেইজিংয়ের নিষিদ্ধ শহর, চীনের গ্রেট ওয়াল, বেইজিংয়ের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ এবং বেইজিংয়ের স্বর্গের মন্দির এবং বিশ্ববিখ্যাত টেরাকোটা আর্মি।
পরিশেষে
এই ছিল আজকে চীন সম্পর্কে অজানা তথ্য। এরকম বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে পারবেন, আমাদের অজানা তথ্য ক্যাটাগরিতে।